শুধু মিছিল মিটিংয়ের কর্মসূচি দিল বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আগামী দুই মাস জনসভা, গণমিছিল, বিক্ষোভসহ জনসংযোগের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আগামী ৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মহানগর, জেলা-উপজেলায় গণমিছিল, বিক্ষোভ, জনসভা এবং জোট নেতাদের গণসংযোগ চলবে।


২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা সফর করবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি জেলাগুলোতে অনুষ্ঠেয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন।
গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহালের দাবি পূরণ করতে বিএনপি এর আগে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করেছিল, তা না হলে সরকার পতনের এক দফার কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। কিন্তু বিরোধী দলের ওই আলটিমেটামকে সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
ঈদের পর কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে জনসংযোগের কর্মসূচি দেওয়ার কারণ কী- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'যেকোনো আন্দোলন সফল হয় জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে। তাই আমরা এমন কোনো কর্মসূচি দিতে চাই না, যাতে জনগণের দুর্ভোগ হয়, দেশে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।' ঢিলেঢালা কর্মসূচি দিয়ে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সময় পার করতে চাইছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঢিলেঢালা বা কঠিন কর্মসূচির মতো কোনো শব্দে আমরা বিশ্বাসী না।' তিনি বলেন, 'আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে সারা দেশে জনমতকে আরো শক্তিশালী করতেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করছি। একই দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি দিয়েছে শরিক দলগুলো। দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হলে আবার জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে এই কর্মসূচি থাকলেও পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যু যুক্ত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদ এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মিছিল হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির প্রতিবাদে ৯ সেপ্টেম্বর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি; বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও কৃষি উপকরণের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে ১৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানসহ গুম-হত্যার প্রতিবাদে ২৩ সেপ্টেম্বর এবং খালেদা জিয়াসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে ৩০ সেপ্টেম্বর মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত রবিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ও পরের দিন সোমবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। সংগ্রাম কমিটি করার বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, জেলায় সংগ্রাম কমিটি করার জন্য কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে অনেক জায়গায় কমিটি হয়েছে, অনেক জায়গায় হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি ও ডেসটিনির সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং পদ্মা সেতুর দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোক জড়িত। এক প্রশ্নের জবাবে হাইকোর্টে স্পিকারের রুলিং নিয়ে দেওয়া সাম্প্রতিক রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা শুধু সরকারের ব্যর্থতা নয় বরং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পারস্পরিক সঙ্ঘাতের মধ্যে ঠেলে দেওয়ারও অসৎ উদ্দেশ্য।
গত রবি ও সোমবার দলের ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি কেবল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে বিরোধী দল আলোচনায় বসতে পারে- এমন আলোচনা হয় বৈঠকে। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন বেগবান করার সিদ্ধান্ত হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার, হামিদুর রহমান আযাদ, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, এনডিপি সভাপতি খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামারুজ্জামান খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, পিপলস লীগের সভাপতি গরীব নেওয়াজ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.