সমালোচকদের প্রশ্ন ও ইউনূস সেন্টারের জবাব- গ্রামীণ ব্যাংক দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান

সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ নামধারী কোম্পানিসমূহ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যমে নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এসব প্রশ্ন সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার ইউনূস সেন্টার থেকে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।


‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে সমালোচকদের কিছু প্রশ্ন ও প্রকৃত তথ্য’ শীর্ষক এই ব্যাখ্যায় ২৯টি প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। কিছু প্রশ্নের উত্তর সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে সরকারের তদন্ত সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংক একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান বলেই সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংক নিবিড়ভাবে গ্রামীণ ব্যাংক পরিদর্শন করেছে। প্রতিবছর দুটি আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক নিরীক্ষা করে এসেছে। কোনো নিরীক্ষা দল (অডিট টিম) কোনো অনিয়মের কথা কখনো বলেনি।
গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ড. ইউনূস সরকারি কর্মচারী, এমন ধারণা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যায় বলা হয়, বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের কোনো সরকার, এমনকি আগের আওয়ামী লীগ সরকারও কোনো দিন এ রকম দাবি করেনি। গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯০ সালের পর থেকে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবেই কাজ করে এসেছে। এর ভিত্তিতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বহিঃনিরীক্ষক (এক্সটারনাল অডিটর) বা অন্য কারও কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন আসেনি।
অধ্যাপক ইউনূসের ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৯০ সালে মালিকানা হ্রাস পাওয়ায় অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনপত্রের ধারাবাহিকতায় কোনো বয়সসীমা উল্লেখ না করে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনই ইউনূসের বয়স ৬০ বছর উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকার এ নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, ড. ইউনূস যে ১১ বছর দায়িত্ব পালন করলেন, এটা কি তাঁর অপরাধ, নাকি যাঁরা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তাঁদের অপরাধ, নাকি যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়ে এই নিয়োগকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে তাদের অপরাধ—এটা স্থির করতে হবে। এই ১১ বছরে ড. ইউনূস ৫২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বেতন-ভাতা নিয়েছেন। আর বাড়িভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কেটে রাখার পর তিনি নগদ পেয়েছেন ৩৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর প্রভাব খাটিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়ে কি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ করেননি? সমালোচকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনূস সেন্টার থেকে বলা হয়, ড. ইউনূসের বিরোধিতা করার তো প্রশ্নই আসে না। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর প্রভাব খাটিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন, এ গল্প যাঁরা বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। যাঁরা এই গল্প প্রচার করেন, তাঁরা এটাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বলেন যে তিনি সরাসরি চাপ না দিলেও তাঁর বন্ধু হিলারিকে দিয়ে চাপ দিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের কঠিন জগৎ দুই বন্ধুর খায়েশের ওপর নির্ভর করে না। ড. ইউনূস যত বড় মাপের লোকই হোন না কেন, তাঁর সঙ্গে পরাক্রমশালী ব্যক্তির সখ্য থাকুক না কেন, তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প তাঁর আবদারের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে না।
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া হয় কি না? নাকি মুনাফার টাকা ড. ইউনূস ও তাঁর সঙ্গীরা হজম করে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংক বরাবর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। গ্রামীণ ব্যাংকে যেহেতু অধ্যাপক ইউনূস বা তাঁর সহকর্মীদের কোনো শেয়ার নেই, তাঁরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোনো লভ্যাংশ নিতে পারেন না। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে তাঁরা শুধু বেতন-ভাতা পান। শুধু সেটুকুই তাঁরা নিয়েছেন।
গ্রামীণ নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, গ্রামীণ নামের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আইনের সেকশন ২৮ দ্বারা গঠিত। এ আইনে গঠিত কোম্পানির কোনো মালিক থাকেন না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা নিতে পারেন না। গ্রামীণ নামধারী ৫৪টি কোম্পানিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো বিনিয়োগ নেই। আর এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর দেয়, বার্ষিক নিরীক্ষা হয়।

No comments

Powered by Blogger.