ডেসটিনি কো-অপারেটিভের ১৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম- রফিকুল আমীনসহ ১৪ কর্মকর্তা দায়ী by আবুল হাসনাত
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির দেড় হাজার কোটি টাকার অনিয়মের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ১৪ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে সমবায় অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন একাই ১২৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
ত১৪ কর্মকর্তার মধ্যে কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২ জন এবং ডেসটিনি গ্রুপের দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের অনুমোদন না নিয়ে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ, অনুমোদনহীনভাবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণ ও সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা, সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো, বাজেটবহির্ভূত এবং অনুমোদনহীন বিভিন্ন ব্যয়ের মাধ্যমে এসব আর্থিক অনিয়ম হয়। ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের হিসাব খতিয়ে দেখে এ অনিয়মের তথ্য পায় কমিটি।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ ওঠায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের নির্দেশে গত এপ্রিলে সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমিয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সোমবার সমবায় বিভাগে প্রতিবেদন জমা দেয়।
সমবায় অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সমবায় সমিতির সব সিদ্ধান্ত ও তার অনুমোদন যেহেতু ব্যবস্থাপনা কমিটিই দিয়ে থাকে, সে জন্য কোনো অনিয়মের দায় কমিটির সব সদস্যের ওপর সমহারে নির্ধারণ করে থাকে অধিদপ্তর। এই প্রক্রিয়াতেই ডেসটিনির কর্মকর্তাদের দায় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রফিকুল আমীন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি গোফরানুল হক সোসাইটির শুরু থেকেই কমিটিতে থাকায় তাঁদের দায় অন্য সদস্যদের চেয়ে বেশি।
সমবায় আইনের ৮৩ ধারায় বলা আছে, সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি যদি অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণামূলকভাবে সমিতির সম্পত্তি আটকে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকে তবে সমিতিকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক। তা যদি না করে তবে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড এবং দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
রফিকুল আমীনের যত অনিয়ম: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমবায় আইন লঙ্ঘন করে নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ডেসটিনি ২০০০-এর পরিবেশকদের যে কমিশন দেওয়া হয়েছে তার দায় রফিকুল আমীনের ওপরও বর্তায়। ডিআইবিসি ও আইএনডিপি প্যাকেজ, সঞ্চয় আমানত খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রসারের কমিশন দেওয়ার মাধ্যমে সোসাইটির ৬৭ কোটি ৩০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৫ টাকা মূলধন অবক্ষয় বা নষ্ট করেছেন রফিকুল আমীন।
সোসাইটির নিট লাভ না হওয়ার পরও সদস্যদের প্রলুব্ধ করতে লভ্যাংশ দেওয়ায় ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮০ টাকার দায় বর্তায় রফিকুল আমীনের ওপর।
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ডেসটিনি ডেভেলপারস লিমিটেডের প্রকল্পে অনুমোদনহীনভাবে ঋণ দেওয়ায় সোসাইটির যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে এক কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬৬ টাকার জন্য দায়ী রফিকুল আমীন। এ ছাড়া অনুমোদনহীনভাবে ডেসটিনি কনফিগার হাউজিং লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে নয় কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার ১৭৭ টাকা; ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড ও এর প্রকল্পগুলোতে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তিন কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৭ টাকা; নিহাজ জুট স্পিনার্সের শেয়ার কেনার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তিন কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৪২৪ টাকা; বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ১৫ কোটি ৬২ লাখ পাঁচ হাজার ২৬৮ টাকা; ডেসটিনি সাসকো লিমিটেডের শেয়ার কেনা বাবদ চার কোটি ৮৩ লাখ তিন হাজার ৩৩৪ টাকা ও সাসকো প্রকল্পের ঋণের জামিনদার হিসেবে দুই কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ টাকা; ডেসটিনি এনভায়রনমেন্ট সেভিংস এনার্জি লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্প ঋণের মাধ্যমে সাত কোটি ৪৭ লাখ চার হাজার ২৪৯ টাকা; হাইটেক ফুড প্রডাক্টসের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে এক কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ২৯০ টাকার আর্থিক অনিয়মের দায়ভার তাঁর ওপরে বর্তায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইবিসি রাজশাহী প্রকল্পে বিধিবহির্ভূত ঋণ দিয়ে ১৭ লাখ চার হাজার ৯০৬ টাকা ও একই প্রকল্পের পরামর্শ ব্যয় হিসেবে ১৬ লাখ ছয় হাজার ৬৬৭ টাকা; ডেসটিনি মিডিয়া ও পাবলিসিটি লিমিটেডের বিধিবহির্ভূত প্রকল্পে ঋণ দিয়ে তিন কোটি ৩৯ লাখ ছয় হাজার ৩৪৭ টাকা; ডায়মন্ড ডিপ্লোমেটিক টাওয়ারে ভবন ও স্পেস কিনতে গিয়ে ছয় কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ২৭ টাকার অর্থ আত্মসাৎ ও সোসাইটির মূলধন কমানোর জন্যও দায়ী রফিকুল আমীন।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিধিবহির্ভূত শেয়ার কেনার কারণে ছয় কোটি ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৩ টাকা এবং ১৭ কোটি ২৯ লাখ দুই হাজার ৪৬০ টাকার বিধিবহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের জন্য রফিকুল আমীনকে দায়ী করেছে কমিটি।
যোগাযোগ করা হলে রফিকুল আমীন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনো আমি পাইনি। অদৃশ্য কোনো বিষয় নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।’
প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের জন্য তাঁকেসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্যকে কত টাকা অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে তা পড়ে শোনানো হলে রফিকুল আমীন বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া।’
অন্য কর্মকর্তাদের অনিয়ম: তদন্ত প্রতিবেদনে ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৯ টাকা আর্থিক অনিয়মের জন্য মো. গোফরানুল হককে দায়ী করা হয়েছে। সাবেক সম্পাদক জাকির হোসেনের দায় চিহ্নিত করা হয়েছে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৩ টাকার। সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজাদ রহমানের দায় ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮১ টাকার। সাবেক কোষাধ্যক্ষ আকবর হোসেনকে ১১৯ কোটি দুই লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ টাকার অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৭ টাকা; শিরীন আক্তার ও রফিকুল ইসলাম সরকারকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৪ টাকা; মজিবর রহমানকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার হাজার ৬৭২ টাকা; সুমন আলী খান ও মো. সাইদুল ইসলাম খানকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭০ টাকা; ইরফান আহমেদকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৪ টাকার জন্য দায়ী করা হয়েছে। আবুল কালাম আজাদকে গতকাল দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডেসটিনি সাসকো লিমিটেডের প্রকল্প ঋণের জামিনদার হওয়ায় ডেসটিনি গ্রুপের একজন পরিচালক মো. সায়েদুর রহমানকে দুই কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ টাকা এবং বিধিবহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের কারণে ৮৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৭ টাকা অনিয়মের জন্য দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।
সংশোধনী: ‘ডেসটিনির আরও দেড় হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের মূল্য ৭৪ হাজার আট লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা ছাপা হয়। আসলে তা ৭৪ কোটি আট লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা।
সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের অনুমোদন না নিয়ে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ, অনুমোদনহীনভাবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণ ও সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা, সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো, বাজেটবহির্ভূত এবং অনুমোদনহীন বিভিন্ন ব্যয়ের মাধ্যমে এসব আর্থিক অনিয়ম হয়। ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের হিসাব খতিয়ে দেখে এ অনিয়মের তথ্য পায় কমিটি।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ ওঠায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের নির্দেশে গত এপ্রিলে সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমিয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সোমবার সমবায় বিভাগে প্রতিবেদন জমা দেয়।
সমবায় অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সমবায় সমিতির সব সিদ্ধান্ত ও তার অনুমোদন যেহেতু ব্যবস্থাপনা কমিটিই দিয়ে থাকে, সে জন্য কোনো অনিয়মের দায় কমিটির সব সদস্যের ওপর সমহারে নির্ধারণ করে থাকে অধিদপ্তর। এই প্রক্রিয়াতেই ডেসটিনির কর্মকর্তাদের দায় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রফিকুল আমীন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি গোফরানুল হক সোসাইটির শুরু থেকেই কমিটিতে থাকায় তাঁদের দায় অন্য সদস্যদের চেয়ে বেশি।
সমবায় আইনের ৮৩ ধারায় বলা আছে, সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি যদি অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণামূলকভাবে সমিতির সম্পত্তি আটকে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকে তবে সমিতিকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক। তা যদি না করে তবে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড এবং দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
রফিকুল আমীনের যত অনিয়ম: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমবায় আইন লঙ্ঘন করে নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ডেসটিনি ২০০০-এর পরিবেশকদের যে কমিশন দেওয়া হয়েছে তার দায় রফিকুল আমীনের ওপরও বর্তায়। ডিআইবিসি ও আইএনডিপি প্যাকেজ, সঞ্চয় আমানত খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রসারের কমিশন দেওয়ার মাধ্যমে সোসাইটির ৬৭ কোটি ৩০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৫ টাকা মূলধন অবক্ষয় বা নষ্ট করেছেন রফিকুল আমীন।
সোসাইটির নিট লাভ না হওয়ার পরও সদস্যদের প্রলুব্ধ করতে লভ্যাংশ দেওয়ায় ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮০ টাকার দায় বর্তায় রফিকুল আমীনের ওপর।
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ডেসটিনি ডেভেলপারস লিমিটেডের প্রকল্পে অনুমোদনহীনভাবে ঋণ দেওয়ায় সোসাইটির যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে এক কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬৬ টাকার জন্য দায়ী রফিকুল আমীন। এ ছাড়া অনুমোদনহীনভাবে ডেসটিনি কনফিগার হাউজিং লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে নয় কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার ১৭৭ টাকা; ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড ও এর প্রকল্পগুলোতে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তিন কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৭ টাকা; নিহাজ জুট স্পিনার্সের শেয়ার কেনার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তিন কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৪২৪ টাকা; বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ১৫ কোটি ৬২ লাখ পাঁচ হাজার ২৬৮ টাকা; ডেসটিনি সাসকো লিমিটেডের শেয়ার কেনা বাবদ চার কোটি ৮৩ লাখ তিন হাজার ৩৩৪ টাকা ও সাসকো প্রকল্পের ঋণের জামিনদার হিসেবে দুই কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ টাকা; ডেসটিনি এনভায়রনমেন্ট সেভিংস এনার্জি লিমিটেডের শেয়ার কেনা ও প্রকল্প ঋণের মাধ্যমে সাত কোটি ৪৭ লাখ চার হাজার ২৪৯ টাকা; হাইটেক ফুড প্রডাক্টসের শেয়ার কেনা ও প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে এক কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ২৯০ টাকার আর্থিক অনিয়মের দায়ভার তাঁর ওপরে বর্তায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইবিসি রাজশাহী প্রকল্পে বিধিবহির্ভূত ঋণ দিয়ে ১৭ লাখ চার হাজার ৯০৬ টাকা ও একই প্রকল্পের পরামর্শ ব্যয় হিসেবে ১৬ লাখ ছয় হাজার ৬৬৭ টাকা; ডেসটিনি মিডিয়া ও পাবলিসিটি লিমিটেডের বিধিবহির্ভূত প্রকল্পে ঋণ দিয়ে তিন কোটি ৩৯ লাখ ছয় হাজার ৩৪৭ টাকা; ডায়মন্ড ডিপ্লোমেটিক টাওয়ারে ভবন ও স্পেস কিনতে গিয়ে ছয় কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ২৭ টাকার অর্থ আত্মসাৎ ও সোসাইটির মূলধন কমানোর জন্যও দায়ী রফিকুল আমীন।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিধিবহির্ভূত শেয়ার কেনার কারণে ছয় কোটি ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৩ টাকা এবং ১৭ কোটি ২৯ লাখ দুই হাজার ৪৬০ টাকার বিধিবহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের জন্য রফিকুল আমীনকে দায়ী করেছে কমিটি।
যোগাযোগ করা হলে রফিকুল আমীন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনো আমি পাইনি। অদৃশ্য কোনো বিষয় নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।’
প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের জন্য তাঁকেসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্যকে কত টাকা অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে তা পড়ে শোনানো হলে রফিকুল আমীন বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া।’
অন্য কর্মকর্তাদের অনিয়ম: তদন্ত প্রতিবেদনে ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৯ টাকা আর্থিক অনিয়মের জন্য মো. গোফরানুল হককে দায়ী করা হয়েছে। সাবেক সম্পাদক জাকির হোসেনের দায় চিহ্নিত করা হয়েছে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৩ টাকার। সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজাদ রহমানের দায় ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮১ টাকার। সাবেক কোষাধ্যক্ষ আকবর হোসেনকে ১১৯ কোটি দুই লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ টাকার অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৭ টাকা; শিরীন আক্তার ও রফিকুল ইসলাম সরকারকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৪ টাকা; মজিবর রহমানকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার হাজার ৬৭২ টাকা; সুমন আলী খান ও মো. সাইদুল ইসলাম খানকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭০ টাকা; ইরফান আহমেদকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৪ টাকার জন্য দায়ী করা হয়েছে। আবুল কালাম আজাদকে গতকাল দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডেসটিনি সাসকো লিমিটেডের প্রকল্প ঋণের জামিনদার হওয়ায় ডেসটিনি গ্রুপের একজন পরিচালক মো. সায়েদুর রহমানকে দুই কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ টাকা এবং বিধিবহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের কারণে ৮৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৭ টাকা অনিয়মের জন্য দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।
সংশোধনী: ‘ডেসটিনির আরও দেড় হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের মূল্য ৭৪ হাজার আট লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা ছাপা হয়। আসলে তা ৭৪ কোটি আট লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা।
No comments