এক আগস্ট মাসে দুই বিপরীত রাজনীতি by মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
অনেকটা অস্তমিত সূর্যের মতো আগস্ট মাস এখন বিদায় নিচ্ছে। দুই দিন পর নতুন মাসের যাত্রা শুরু হবে। তবে আগস্টের বিদায় নিয়ে বিবেকসম্পন্ন কারও মনে দুঃখ থাকার কোন কারণ নেই, বরং মাসব্যাপী বয়ে বেড়ানো নানা শোক, কষ্ট আর যন্ত্রণা সাময়িক বিরতি থেকে পরিত্রাণ নেই কোন মতেই।
বছর ঘুরে আবার আগস্ট আসবে, একই কষ্ট এবং যন্ত্রণার গ্লানিতে আচ্ছন্ন হতে হবে গোটা বিবেকসম্পন্ন জাতিকে এ যেন বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের এক অশুভ নিয়তিকাল। না, আমি কুসংস্কারে বিশ্বাসী কোন মানুষ নই। কিন্তু বিশ্বাস- অবিশ্বাসের বাইরেও সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে কিছু সময় এমনভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে যখন আনন্দের চাইতে বেদনা যেন পালা করে এসেছে, আবার আনন্দ ও সুখের অনুভূতিও বিশেষ বিশেষ সময়ের জন্য যেন নির্ধারিত হয়েছে। যেমন ডিসেম্বর এবং মার্চ মাসকে যখন সমাগত হতে দেখি তখন যেন উদ্দীপনা, অর্জন ও উচ্ছ্বাসের ধারাবাহিকতা দেখি, আগস্ট মাস এলে ঠিক তার বিপরীত চিত্রটিই দেখি। ডিসেম্বর মার্চ সময়ে বাংলাদেশে শুভ শক্তির উত্থান ও বিজয় যেন অনেকটা অবধারিত হতে তাকে, তখন অশুভ শক্তি নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, গর্তে লুকিয়ে থাকার অবস্থানে চলে যায়, আবার আগস্ট মাস এলে এরাই যেন শক্তি খুঁজে পায়, মাসটাই যেন তাদের বলে ধরে নেয়, ভাবতে চায়। এই আগস্ট মাসে রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছে কারা? ১৭ আগস্ট ঘটিয়েছে কারা? ২১ আগস্ট ঘটিয়েছে কারা? তারা কারা? কেন তারা আগস্ট মাসকে রক্তাক্ত করার জন্য বারবার উপযুক্ত মনে করেছে? এর কি কোন মনস্তাত্ত্বিক দিক ছিল বা আছে? নাকি কাকতালীয়ভাবে এসব আগস্ট মাসেই ঘটেছে। আর এই আগস্ট মাসেই বানোয়াট জন্মদিনে বিশাল কেক কেটে উল্লাস প্রকাশ করারও একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিষয়গুলোকে আমি কোন জ্যোতিষীর দৃষ্টিতে দেখতে চাচ্ছি না, তবে আগস্ট মাসটা বাংলাদেশের-রাজনীতিতে দুটো পরস্পর বিপরীত ধারার রাজনীতির দুই বিপরীত মনোভাব, অবস্থান ও আদর্শের চিত্রকে যেন বহন করে, যেখানে প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শক্তির যুদ্ধ শেষে হতাহতের শবদেহের ওপর দাঁড়িয়ে এক পক্ষের বিজয় উল্লাস প্রকাশের দৃশ্য কল্পনা করা যায়, অন্য পক্ষের জীবন ও সম্পদের মূল্য যেন কেবলি দুর্বলের শোচনীয় পরাজয় হিসেবে ভাবা হয়, দেখা হয়। আগস্ট মাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি বা আমরা প্রতিবছর এমন নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, হত্যাযজ্ঞের প্রতিযোগিতা, নবজন্মের উল্লাস দেখে এর অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক আদর্শকে কতটা উন্মোচন করার চেষ্টা করছি সেই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবÑ আমার গতানুগতিক শোকানুষ্ঠান পালন করছি মাত্র, কিছু পুরনো কথা বলছি কেবল, কিন্তু যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় অশুভ আগস্ট শক্তির অবস্থান থাকে তখন সব কিছুই সীমিত হয়ে যায়, আগস্টের এত সব হত্যাকা- নিয়ে মাসব্যাপী শোকের বা মূল্যায়নের কোন নজির দেখা যায় না।
ফিরে আসি সংহারের আগস্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের হত্যাকে নিছক কোন হত্যাকা- ভাবার কারণ ছিল না, এটি কয়েকজন বিপথগামী সাবেক বা কর্মরত সেনা সদস্যের দুষ্কর্মের মধ্যে সীমিত করে দেখার বিষয়ও নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও অনেকেই ১৫ আগস্টের এমন লোমহর্ষক হত্যাকা-কে সাবেক কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার দুষ্কর্ম হিসেবেই অভিহিত করে আসছে। যে সব সাবেক কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকা-ে যুক্ত ছিল তারা ছিল উপলক্ষ মাত্র, নেপথ্যের নায়ক, ঘটক, অনুঘটক ইত্যাদি মিলিয়ে ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে কত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, দেশী-বিদেশী শক্তি, অপশক্তি জড়িত ছিল তার সঠিক চিত্র আজও তুলে ধরা যায়নি বা হয়নি। এখানে শুধু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্টতা দিয়ে দেখলেই হবে না, গুরুত্ব দিতে হবে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও অবস্থানকে। গত সাড়ে তিন দশকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা, আদর্শগত অবস্থানের বিস্তার দেখে স্পষ্ট বলে দেওয়া যায়, এই হত্যাকা-ের পেছনে যারা জড়িত ছিল, যারা পরবর্তীকালে রাজনীতির মঞ্চে এসে নিজেদের চেহারা প্রদর্শন করেছে, ১৫ আগস্টকে ‘বিশিষ্টতা’ দানে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্র চরিত্রকে ক্ষমতার সুযোগ পেলেই পাকিস্তানের ধারায় নিয়ে যেতে যত ধরনের দুষ্কর্মের প্রয়োজন হয়, তা করতে মোটেও দ্বিধা করেনি, করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না, তাদের রাজনৈতিক চরিত্র নিরূপণ করার জন্য বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়ছে না, তাদের চেহারা, কর্মকা-, আচরণ, বিশ্বাসবোধ ও অবস্থানই বলে দিচ্ছে তারা রাজনৈতিকভাবে কারা, তাদের রাজনৈতিক কেবলা কোন্ দিকে অবস্থিত, তাদের বেশভূষার ভেতরে অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে, তাদের রাজনীতির পা দুটো সম্মুখে চলে না, চলে চিংড়ির মতো পেছনের দিকে, তাদের শাসনের আড়াই দশকে বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের নতুন এক চরিত্র দান করা ছাড়া আধুনিক গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শের কোন উদ্যোগ, আইনকানুন, নিয়মনীতি ও সংস্কৃতি উপহার দিতে পারেনি, ববং এসব ক্ষেত্রে যেটুকু অর্জন ছিল সে সবকে একে একে পরিত্যাজ্য করেছে, মানুষকে মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও চিন্তা-ধারায় নিয়ে যাওয়ার সুড়ঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচরিত্রকে ধারণ করার কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এ শক্তিই ১৫ আগস্টের হত্যাকা-কে নানাভাবে যৌক্তিক বলার চেষ্টা করছেÑ এক সময় রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে বেশ দাপটের সঙ্গে তারা তা বলেছে, এখন অবশ্য ধূর্ততার সঙ্গে বলছে। কিন্তু হত্যাকা-ের মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের সুযোগ গ্রহণ করে তাদের মনোজগতের বৈকল্য বা বিকারগ্রস্ততাকে আধুনিক কোন ধ্যান জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনায় আনা যায় কি? গণতন্ত্রের প্রধান শিক্ষাই হচ্ছে জনমতের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুবা বিদ্রোহ, বিপ্লবের মাধ্যমে ঘটতে পারে। রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনে হত্যা ক্যু হচ্ছে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বাভাবিক নজির। তেমন রাষ্ট্র থেকে মানব সভ্যতা গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাচ্ছে নানা পন্থায়, যেগুলোর মধ্যে জনঅংশগ্রহণ ও সমর্থন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের সমর্থকগণ এখনও যখন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনকে এই হত্যাকা-ের মূল কারণ বলে দাবি করে, তখন একটি রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সৃজনশীলতার নিরীক্ষাকে বোঝার অক্ষমতা হিসেবেই দেখতে হবে। আধুনিক রাষ্ট্র গঠন গণতন্ত্রের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ঘটে থাকে। বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এর উপরি কাঠামো এবং ভিত্তিমূলে দেশীয় বাস্তবতায় নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলেনÑ তাঁর রাষ্ট্র রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে কেউ যদি বুঝতে অক্ষম হন তা হলো তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া অন্য কিছু করার থাকে না। তাদের রাজনীতির গ-ি কতটুকু তাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটি পরিষ্কার, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার পথে পা রাখেন তখনই বিশ্ব রাজনীতির মোড়লরা বুঝে নিয়েছিল শেখ মুজিবের গন্তব্য কোন্ দিক মোড় নিতে যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক, আদর্শগত ও শ্রেণী স্বার্থগত নানা বিবেচনা থেকে মুজিবকে যে কোন উপায়ে উৎখাত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণে তারা যাদের যোগ্য ও প্রয়োজনীয় মনে করেছিল তাদেরই তারা বাছাই করেছিল, ব্যবহার করেছিল। সে ক্ষেত্রে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার অনুভূতির সঙ্গে মিশে থাকা আগস্টকে যারা পূতপবিত্রতা দিয়ে দেখে, বিশ্বাস করে তাদেরই উজ্জীবিত করেছে, রাষ্ট্র চরিত্রকে সেদিকে ফিরিয়ে নিতে আগস্টকে বেছে নিয়েছিল, আগস্ট তাদের কাছে পাকিস্তান সৃষ্টির সহায়ক সময় হিসেবে এসেছে, যেমনিভাবে মার্চ এবং ডিসেম্বর মাস স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের অনুভূতির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। বিষয়টি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে ছিল গোপন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা হিসেবে, এর ‘সাফল্য’ ও ব্যর্থতা অনেকটাই তখন অনিশ্চিত ছিল, যেহেতু বঙ্গবন্ধু এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মোটেও সচেতন ছিলেন না, বিষয়টিকে তিনি সরলীকরণভাবে উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। তাই ষড়যন্ত্রকে সফল করতে পরিকল্পনাকারীদের তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি, তারা ‘সফল’ হলো, ভাগ্যলক্ষ্মী তাদের দিকেই তাকিয়েছিল, আগস্ট মাসকে তারা ১৯৪৭ সালের প্রথম সফলতা দিয়ে ১৯৭৫ সালেও আশ্বস্ত হয়েছে, রাজনীতিতে তাদের ‘পুনর্জন্মের’ পথ প্রশস্ত হয়েছে, ১৯৭৫- পরবর্তী ইতিহাস তাদের শক্তি-বৃদ্ধিরই ইতিহাস বলে ধরে নিয়েছে, একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্বের মূল অংশকে ১৫ আগস্ট, ৩ নবেম্বর জেলহত্যা, পরবর্তী সময়ে কোণঠাসার মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে, যাকে এক কথায় মই চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পাকিস্তানী ভাবাদর্শবাদী, উগ্র ডান, উগ্র বাম, সুবিধাবাদী, ভোগবাদীসহ নানা জাতের পরগাছারা রাজনীতির জমিতে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে, ১৯৭১- এর বাংলাদেশকে রাষ্ট্র-চরিত্র এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অপমানিত করে অনেকটাই বিদায় করতে সক্ষম হয়। পুরো বিষয়টিই ছিল একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এর মৌল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার জন্য ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র আদলে বাংলাদেশকে নতুন মোড়কে ঢেলে সাজানো। সেটি অনেকটাই তারা করতে সক্ষম হলো, বাংলাদেশের নির্বাচনের রাজনীতিতে তারা বৈধতা পেয়েও গেল, নির্বাচিত হওয়ার পর্বে উন্নীত হওয়া সম্ভব হলো। ১৯৯১ সালে তেমন বাংলাদেশ ও রাজনীতির বিজয় ঘটার পর ১৫ আগস্টকে সেই রাজনীতির জন্ম দিন হিসেবে ধরে রাখার জন্যই ঘটা করে নেত্রীর জন্মদিন পালনের সূচনা হয়।
আগস্টই এই রাজনৈতিক শক্তির প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বৈধতা পাওয়ার বাস্তবতা তাদের ২০০১ সালে নতুন পর্বে উন্নীত করে। অভূতপূর্ব সেই সাফল্য যেন জানান দিল যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মৃত্যু ঘটে গেছে, সাম্প্রদায়িকতাই এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসে জায়গা করে নিয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করেই জঙ্গীবাদের শক্তিবৃদ্ধি, বোমা হামলা, অবশেষে ১৭ আগস্ট ৬৩টি জেলায় পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গোটা আওয়ামী নেতৃত্বকে আর্জেস গ্রেনেড ছুড়ে সমূলে ‘খতম’ করে দেওয়াÑএসবই ‘পবিত্র’ আগস্টবাদীদের মনোজগতের রাজনীতি। কেননা আগস্টকে তারা তাদেরই উত্থান ও সাফল্যের মাস হিসেবে দেখছে, বিবেচনা করছে। এই মাস সফল তারা কমবেশি হয়েছেও। তাদের পায়ের নিচে মাটি না থাকলে এত বড় এক একটি হত্যাযজ্ঞ ঘটানো সম্ভব হতো কিনা প্রশ্ন জাগে। আগস্ট মাসে যেসব হত্যাযজ্ঞ, বোমা হামলা ঘটানো হয়েছে- তা আসলে একই সূত্রে গাথা। তাদের বিশ্বাসের জগত ১৯৪৭ সালের আগস্ট থেকে উৎসারিত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তস্নাত রজনী থেকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম লাভের সুযোগ করে দিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে নেত্রীর জন্মদিন পালনের ধারা ২০০৪ ও ২০০৫ সালে আগস্ট মাসেই সেই সব গোষ্ঠীর বোমা হামলা, হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে আগস্ট মাসকে তারা কতটা আপন করে নিয়েছে, তাদের একান্ত ভাবছে, ‘শুভ’ মনে করছে প্রশ্ন হচ্ছে তারা কারা এবং কারা তাদেরকে এ দেশের রাজনীতির মানুষরাই বা কতটা চিনতে পেরেছে, গণতন্ত্রের বিশ্বাসী মানুষইবা কিভাবে দেখছে। আগস্ট মাস আসলে এখন আমাদের তিনটি শোকাবহ দিবসকে স্মরণ করতে হচ্ছে। কিন্তু অন্যপক্ষ তা মোটেও মনে করে না, তারা বরং একদিন দলীয় প্রধানের জন্মদিন হিসেবে কেক কেটে তা পালন করে, অন্য দুই দিন তারা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে।
গোটা দেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাস এলে একদিকে শোকের আবহ, অন্য দিকে ভাবলেশহীন অবস্থা। বাংলাদেশের রাজনীতির দুই পরস্পরবিরোধী ধারার অবস্থান এভাবেই স্পষ্ট হয়ে যায় গোটা আগস্ট মাসে, চেনা যায় কে আগস্টে মনে মনে হাসে, খুশি হয়, নিজেকে রাজনীতির বিশেষ অবস্থানে দেখে প্রীত হয়, কে শোকে আবৃত হয়ে পড়ে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হারানোর বিষণœতায় ভোগে। এ যেন পদ্মা ও মেঘনার রেখাচিহ্ন যার একদিকে ষোলাটে, অন্যদিকে স্বচ্ছ কালো জল। আগস্ট এলে বাংলাদেশ তেমন বিভক্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায়। আগস্ট কারও কাছে প্রেরণার শক্তি, কারও কাছে শোকের কালো ছায়া। তবে যাদের কাছে প্রেরণার শক্তি তারা তা প্রকাশ্যে বলছে না, বলতে পারছে না, ভবিষ্যতে সেভাবে কোন দিন তা পারবেও না। রাজনীতির অপশক্তিদের আশ্রয় ও অবলম্বন হচ্ছে অপরাধকে আপন ভাবা। মনে রাখতে হবে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চাই কেবল অপশক্তির শক্তিকে অকার্যকর করতে পারে। সে জন্য আগস্টে শোকাবহ শক্তিকে মেধা, মনন, সততা ও ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতির চর্চায় এগিয়ে নিতে হবে, অন্য কোন উপায়ে অপশক্তিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাঠ থেকে অপসারণ করা সম্ভব নয়। ডিসেম্বর-মার্চÑসেই রাজনীতির পাঠই আমাদের জন্য রেখেছে।
লেখক : অধ্যাপক ও কলামিস্ট
ফিরে আসি সংহারের আগস্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের হত্যাকে নিছক কোন হত্যাকা- ভাবার কারণ ছিল না, এটি কয়েকজন বিপথগামী সাবেক বা কর্মরত সেনা সদস্যের দুষ্কর্মের মধ্যে সীমিত করে দেখার বিষয়ও নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও অনেকেই ১৫ আগস্টের এমন লোমহর্ষক হত্যাকা-কে সাবেক কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার দুষ্কর্ম হিসেবেই অভিহিত করে আসছে। যে সব সাবেক কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকা-ে যুক্ত ছিল তারা ছিল উপলক্ষ মাত্র, নেপথ্যের নায়ক, ঘটক, অনুঘটক ইত্যাদি মিলিয়ে ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে কত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, দেশী-বিদেশী শক্তি, অপশক্তি জড়িত ছিল তার সঠিক চিত্র আজও তুলে ধরা যায়নি বা হয়নি। এখানে শুধু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্টতা দিয়ে দেখলেই হবে না, গুরুত্ব দিতে হবে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও অবস্থানকে। গত সাড়ে তিন দশকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা, আদর্শগত অবস্থানের বিস্তার দেখে স্পষ্ট বলে দেওয়া যায়, এই হত্যাকা-ের পেছনে যারা জড়িত ছিল, যারা পরবর্তীকালে রাজনীতির মঞ্চে এসে নিজেদের চেহারা প্রদর্শন করেছে, ১৫ আগস্টকে ‘বিশিষ্টতা’ দানে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্র চরিত্রকে ক্ষমতার সুযোগ পেলেই পাকিস্তানের ধারায় নিয়ে যেতে যত ধরনের দুষ্কর্মের প্রয়োজন হয়, তা করতে মোটেও দ্বিধা করেনি, করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না, তাদের রাজনৈতিক চরিত্র নিরূপণ করার জন্য বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়ছে না, তাদের চেহারা, কর্মকা-, আচরণ, বিশ্বাসবোধ ও অবস্থানই বলে দিচ্ছে তারা রাজনৈতিকভাবে কারা, তাদের রাজনৈতিক কেবলা কোন্ দিকে অবস্থিত, তাদের বেশভূষার ভেতরে অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে, তাদের রাজনীতির পা দুটো সম্মুখে চলে না, চলে চিংড়ির মতো পেছনের দিকে, তাদের শাসনের আড়াই দশকে বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের নতুন এক চরিত্র দান করা ছাড়া আধুনিক গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শের কোন উদ্যোগ, আইনকানুন, নিয়মনীতি ও সংস্কৃতি উপহার দিতে পারেনি, ববং এসব ক্ষেত্রে যেটুকু অর্জন ছিল সে সবকে একে একে পরিত্যাজ্য করেছে, মানুষকে মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও চিন্তা-ধারায় নিয়ে যাওয়ার সুড়ঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচরিত্রকে ধারণ করার কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এ শক্তিই ১৫ আগস্টের হত্যাকা-কে নানাভাবে যৌক্তিক বলার চেষ্টা করছেÑ এক সময় রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে বেশ দাপটের সঙ্গে তারা তা বলেছে, এখন অবশ্য ধূর্ততার সঙ্গে বলছে। কিন্তু হত্যাকা-ের মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের সুযোগ গ্রহণ করে তাদের মনোজগতের বৈকল্য বা বিকারগ্রস্ততাকে আধুনিক কোন ধ্যান জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনায় আনা যায় কি? গণতন্ত্রের প্রধান শিক্ষাই হচ্ছে জনমতের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুবা বিদ্রোহ, বিপ্লবের মাধ্যমে ঘটতে পারে। রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনে হত্যা ক্যু হচ্ছে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বাভাবিক নজির। তেমন রাষ্ট্র থেকে মানব সভ্যতা গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাচ্ছে নানা পন্থায়, যেগুলোর মধ্যে জনঅংশগ্রহণ ও সমর্থন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের সমর্থকগণ এখনও যখন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনকে এই হত্যাকা-ের মূল কারণ বলে দাবি করে, তখন একটি রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সৃজনশীলতার নিরীক্ষাকে বোঝার অক্ষমতা হিসেবেই দেখতে হবে। আধুনিক রাষ্ট্র গঠন গণতন্ত্রের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ঘটে থাকে। বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এর উপরি কাঠামো এবং ভিত্তিমূলে দেশীয় বাস্তবতায় নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলেনÑ তাঁর রাষ্ট্র রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে কেউ যদি বুঝতে অক্ষম হন তা হলো তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া অন্য কিছু করার থাকে না। তাদের রাজনীতির গ-ি কতটুকু তাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটি পরিষ্কার, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার পথে পা রাখেন তখনই বিশ্ব রাজনীতির মোড়লরা বুঝে নিয়েছিল শেখ মুজিবের গন্তব্য কোন্ দিক মোড় নিতে যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক, আদর্শগত ও শ্রেণী স্বার্থগত নানা বিবেচনা থেকে মুজিবকে যে কোন উপায়ে উৎখাত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণে তারা যাদের যোগ্য ও প্রয়োজনীয় মনে করেছিল তাদেরই তারা বাছাই করেছিল, ব্যবহার করেছিল। সে ক্ষেত্রে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার অনুভূতির সঙ্গে মিশে থাকা আগস্টকে যারা পূতপবিত্রতা দিয়ে দেখে, বিশ্বাস করে তাদেরই উজ্জীবিত করেছে, রাষ্ট্র চরিত্রকে সেদিকে ফিরিয়ে নিতে আগস্টকে বেছে নিয়েছিল, আগস্ট তাদের কাছে পাকিস্তান সৃষ্টির সহায়ক সময় হিসেবে এসেছে, যেমনিভাবে মার্চ এবং ডিসেম্বর মাস স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের অনুভূতির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। বিষয়টি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে ছিল গোপন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা হিসেবে, এর ‘সাফল্য’ ও ব্যর্থতা অনেকটাই তখন অনিশ্চিত ছিল, যেহেতু বঙ্গবন্ধু এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মোটেও সচেতন ছিলেন না, বিষয়টিকে তিনি সরলীকরণভাবে উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। তাই ষড়যন্ত্রকে সফল করতে পরিকল্পনাকারীদের তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি, তারা ‘সফল’ হলো, ভাগ্যলক্ষ্মী তাদের দিকেই তাকিয়েছিল, আগস্ট মাসকে তারা ১৯৪৭ সালের প্রথম সফলতা দিয়ে ১৯৭৫ সালেও আশ্বস্ত হয়েছে, রাজনীতিতে তাদের ‘পুনর্জন্মের’ পথ প্রশস্ত হয়েছে, ১৯৭৫- পরবর্তী ইতিহাস তাদের শক্তি-বৃদ্ধিরই ইতিহাস বলে ধরে নিয়েছে, একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্বের মূল অংশকে ১৫ আগস্ট, ৩ নবেম্বর জেলহত্যা, পরবর্তী সময়ে কোণঠাসার মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে, যাকে এক কথায় মই চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পাকিস্তানী ভাবাদর্শবাদী, উগ্র ডান, উগ্র বাম, সুবিধাবাদী, ভোগবাদীসহ নানা জাতের পরগাছারা রাজনীতির জমিতে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে, ১৯৭১- এর বাংলাদেশকে রাষ্ট্র-চরিত্র এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অপমানিত করে অনেকটাই বিদায় করতে সক্ষম হয়। পুরো বিষয়টিই ছিল একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এর মৌল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার জন্য ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র আদলে বাংলাদেশকে নতুন মোড়কে ঢেলে সাজানো। সেটি অনেকটাই তারা করতে সক্ষম হলো, বাংলাদেশের নির্বাচনের রাজনীতিতে তারা বৈধতা পেয়েও গেল, নির্বাচিত হওয়ার পর্বে উন্নীত হওয়া সম্ভব হলো। ১৯৯১ সালে তেমন বাংলাদেশ ও রাজনীতির বিজয় ঘটার পর ১৫ আগস্টকে সেই রাজনীতির জন্ম দিন হিসেবে ধরে রাখার জন্যই ঘটা করে নেত্রীর জন্মদিন পালনের সূচনা হয়।
আগস্টই এই রাজনৈতিক শক্তির প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বৈধতা পাওয়ার বাস্তবতা তাদের ২০০১ সালে নতুন পর্বে উন্নীত করে। অভূতপূর্ব সেই সাফল্য যেন জানান দিল যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মৃত্যু ঘটে গেছে, সাম্প্রদায়িকতাই এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসে জায়গা করে নিয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করেই জঙ্গীবাদের শক্তিবৃদ্ধি, বোমা হামলা, অবশেষে ১৭ আগস্ট ৬৩টি জেলায় পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গোটা আওয়ামী নেতৃত্বকে আর্জেস গ্রেনেড ছুড়ে সমূলে ‘খতম’ করে দেওয়াÑএসবই ‘পবিত্র’ আগস্টবাদীদের মনোজগতের রাজনীতি। কেননা আগস্টকে তারা তাদেরই উত্থান ও সাফল্যের মাস হিসেবে দেখছে, বিবেচনা করছে। এই মাস সফল তারা কমবেশি হয়েছেও। তাদের পায়ের নিচে মাটি না থাকলে এত বড় এক একটি হত্যাযজ্ঞ ঘটানো সম্ভব হতো কিনা প্রশ্ন জাগে। আগস্ট মাসে যেসব হত্যাযজ্ঞ, বোমা হামলা ঘটানো হয়েছে- তা আসলে একই সূত্রে গাথা। তাদের বিশ্বাসের জগত ১৯৪৭ সালের আগস্ট থেকে উৎসারিত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তস্নাত রজনী থেকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম লাভের সুযোগ করে দিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে নেত্রীর জন্মদিন পালনের ধারা ২০০৪ ও ২০০৫ সালে আগস্ট মাসেই সেই সব গোষ্ঠীর বোমা হামলা, হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে আগস্ট মাসকে তারা কতটা আপন করে নিয়েছে, তাদের একান্ত ভাবছে, ‘শুভ’ মনে করছে প্রশ্ন হচ্ছে তারা কারা এবং কারা তাদেরকে এ দেশের রাজনীতির মানুষরাই বা কতটা চিনতে পেরেছে, গণতন্ত্রের বিশ্বাসী মানুষইবা কিভাবে দেখছে। আগস্ট মাস আসলে এখন আমাদের তিনটি শোকাবহ দিবসকে স্মরণ করতে হচ্ছে। কিন্তু অন্যপক্ষ তা মোটেও মনে করে না, তারা বরং একদিন দলীয় প্রধানের জন্মদিন হিসেবে কেক কেটে তা পালন করে, অন্য দুই দিন তারা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে।
গোটা দেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাস এলে একদিকে শোকের আবহ, অন্য দিকে ভাবলেশহীন অবস্থা। বাংলাদেশের রাজনীতির দুই পরস্পরবিরোধী ধারার অবস্থান এভাবেই স্পষ্ট হয়ে যায় গোটা আগস্ট মাসে, চেনা যায় কে আগস্টে মনে মনে হাসে, খুশি হয়, নিজেকে রাজনীতির বিশেষ অবস্থানে দেখে প্রীত হয়, কে শোকে আবৃত হয়ে পড়ে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হারানোর বিষণœতায় ভোগে। এ যেন পদ্মা ও মেঘনার রেখাচিহ্ন যার একদিকে ষোলাটে, অন্যদিকে স্বচ্ছ কালো জল। আগস্ট এলে বাংলাদেশ তেমন বিভক্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায়। আগস্ট কারও কাছে প্রেরণার শক্তি, কারও কাছে শোকের কালো ছায়া। তবে যাদের কাছে প্রেরণার শক্তি তারা তা প্রকাশ্যে বলছে না, বলতে পারছে না, ভবিষ্যতে সেভাবে কোন দিন তা পারবেও না। রাজনীতির অপশক্তিদের আশ্রয় ও অবলম্বন হচ্ছে অপরাধকে আপন ভাবা। মনে রাখতে হবে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চাই কেবল অপশক্তির শক্তিকে অকার্যকর করতে পারে। সে জন্য আগস্টে শোকাবহ শক্তিকে মেধা, মনন, সততা ও ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতির চর্চায় এগিয়ে নিতে হবে, অন্য কোন উপায়ে অপশক্তিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাঠ থেকে অপসারণ করা সম্ভব নয়। ডিসেম্বর-মার্চÑসেই রাজনীতির পাঠই আমাদের জন্য রেখেছে।
লেখক : অধ্যাপক ও কলামিস্ট
No comments