বাসের ধাক্কায় ঢাবি ছাত্র নিহত- শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, আগুন

রাজধানীর শাহবাগে গতকাল মঙ্গলবার বাসের ধাক্কায় তৌহিদুজ্জামান নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাতে রাস্তায় নেমে শাহবাগ মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন চারপাশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন এবং শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেন।


পুলিশ অবরোধ প্রত্যাহারের চেষ্টা ও ভাঙচুরে বাধা দিলে ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ ও রূপসী বাংলা মোড়ের পুলিশ বক্সেও আগুন ধরিয়ে দেন।
শাহবাগসহ সার্ক ফোয়ারা, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার ও মিরপুর রোডসহ আশপাশের এলাকায় রাত ৮টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সড়ক অবরোধ করায় শাহবাগ, রমনা, টিএসসি চত্বর, দোয়েল চত্বর, বাংলামোটর, এলিফ্যান্ট রোডসহ ক্যাম্পাস-সংলগ্ন চারপাশের বিভিন্ন রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। ভাঙচুরের সময় একটি বাস সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের ছাত্রী শামীমা সুলতানা লাবুর পায়ের ওপর দিয়ে গেলে তিনি গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া এলিফ্যান্ট রোডে গাড়ি ভাঙচুরের সময় একজন প্রাইভেট কার মালিক গুলিবর্ষণ করলে সংস্কৃতি বিভাগের সাঈদ বারী আহত হন বলে জানা গেছে। পুলিশের ধাওয়া ও লাঠিচার্জে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআরআই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হলের ২০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বিকেলে রাস্তা পার হওয়ার সময় রাজধানী এক্সপ্রেসের একটি বাস ধাক্কা দিলে তিনি আহত হন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, শাহবাগ মোড়ে বিকেল ৫টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হন তৌহিদুজ্জামান। গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাঁকে গ্রীন রোডের গ্রীন লাইফ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। লাশ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই লাশ দাফন করা হবে বলে পারিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদুজ্জামান রাজু জানান, বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বাস তৌহিদুজ্জামান ও তাঁর এক বন্ধুকে ধাক্কা দিলে তৌহিদুজ্জামান পড়ে যান। পথচারীদের বেশ কয়েকজন ধরাধরি করে আহত দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তৌহিদুজ্জামানের বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ফয়সাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান জানান, তৌহিদুজ্জামানকে চাপা দেওয়া রাজধানী পরিবহনের বাস ও চালক আনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়েছে। চালকের কাছে কোনো লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। রাতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শাহবাগ ও রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে যানবাহন ভাঙচুর করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রনেতাদের সহযোগিতায় পুলিশ একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে সন্ধ্যার পরপরই পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
ব্যাপক ভাঙচুর : শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত ৮টার পর থেকে কয়েক দফায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়, রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে ও নিউ মার্কেট এলাকায় চলাচলরত যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। শতাধিক গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা দুটি পুলিশ বক্স ও কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীরা রূপসী বাংলা হোটেলের সামনের পুলিশ বক্স, ওই সড়কে চলাচলরত ১২টি বাস, একটি তেলবাহী লরি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিআরটিসির টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেট এলাকায় ৮-১০টি বাস ভাঙচুর করেন এবং মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় শাহবাগে ফুলের দোকানগুলোর পাশের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। কাঠ ও কাগজ জড়ো করে রাত ১০টার দিকে শাহবাগ মোড়ে আগুন ধরান ছাত্ররা। পরে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি পৌঁছে আগুন নেভায়।
যানজট : যানবাহন ভাঙচুর শুরু হওয়ার পরপরই পুলিশ শাহবাগ ও রূপসী বাংলা হোটেলের দিকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। শাহবাগমুখী যানবাহন বাংলামোটর মোড়ে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা পৌঁছে শাহবাগ মোড়ে, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট ও মিরপুর রোডে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে রাত ১১টা পর্যন্ত ফার্মগেট, কাকরাইল ও মিরপুর রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.