চারদিক- নজরুল কর্নার by তানজিল রিমন
ছোট্ট একটা টেবিল। তাতে থরে থরে সাজানো বেশ কিছু বই। বিখ্যাত বিখ্যাত সব কবিতার বই, গল্পের বই, উপন্যাসের বই, গানের বই। পাশেই কবিতা ও গানের সিডি শোভা পাচ্ছে। একটা গানের বই বেশ ওজন, নাদুসনুদুসও বটে! সাড়ে তিন হাজারের বেশি গান রয়েছে এতে। সব গানই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা।
বইয়ের শিরোনাম নজরুল সংগীত সংগ্রহ। নজরুল ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন বই, সিডি ও ক্যাসেট পাওয়া যাচ্ছে নজরুল কর্নারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজারে এই নজরুল কর্নার চালু করা হয়েছে। ২৫ মে কবির ১১৩তম জন্মবার্ষিকীর দিনে এটি চালু করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ আর চারুকলা অনুষদের মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এক পাশে মসজিদের আজানের সুর, অন্য পাশে চারুকলার শিল্পীদের শিল্পচর্চা কবির মাজারকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। মাজারের ফটক গলে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে তিনটি ছোট গ্যালারি। একটি গ্যালারিকে নজরুল কর্নার হিসেবে প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলামের সব ধরনের বই, কবিতা ও গানের সিডি পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিল্টন এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর কাছে। যাওয়ার পথে নজরুল কর্নারে ঢুঁ মারেন এবং নজরুলের কবিতা আবৃত্তির একটি সিডি কেনেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। খুব সহজেই নজরুলের রচিত বই, গানের সিডি সংগ্রহ করতে পারব এখন।’
বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সেই তুলনায় নজরুল ইনস্টিটিউটের বইয়ের দাম অনেক কম। কিন্তু মানে অন্য সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো। এমনটিই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। তাঁর মতে, নজরুলের যেকোনো বই অন্য প্রকাশনীর ক্ষেত্রে দাম অনেক বেশি রাখা হয়। আর নজরুল ইনস্টিটিউটের বইগুলো সবার সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।
জাতীয় কবির সমাধিসৌধে চালু হওয়া এই নজরুল কর্নারে লোকজনের আনাগোনাও বেশ চোখে পড়ার মতো। নজরুলপ্রেমী যাঁরা ঢুঁ মারছেন, কেউ না কেউ কিছু একটা কিনে তবেই ফিরছেন। জাতীয় কবি যেমন লেখায় পারদর্শী ছিলেন, তেমনি আবৃত্তিও করতেন। এখানে পাওয়া যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তির সিডি। লেটোর দলের এই অভিনেতা নিজেই গান লিখেছেন হাজার হাজার, গানের সুর করেছেন, আবার গেয়েছেনও। তাঁর কণ্ঠে গানের সিডিও বিক্রি হচ্ছে নজরুল কর্নারে।
জাতীয় কবির অনেক কবিতা ও গান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে পেয়েছেন নতুন উদ্যম, শক্তি, লড়াইয়ের তাগিদ। কবির কবিতাসমগ্র ও সংগীতসমগ্র পাওয়া যাচ্ছে।
বেশ চাহিদা রয়েছে নজরুলসংগীতের স্বরলিপির। ৩৪ খণ্ড পর্যন্ত প্রকাশিত এই স্বরলিপিগুলো এখনো দেদার কিনছেন নজরুলভক্তরা। এমনটাই জানালেন নজরুল কর্নারে থাকা নজরুল ইনস্টিটিউটের বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি আরও জানান, এখানে রয়েছে নির্বাচিত নজরুলসংগীতের ৩০টি সিডির একত্র সংকলন। এগুলোয় যাঁরা কণ্ঠ দিয়েছেন, তাঁরা সবাই কবির সান্নিধ্যধন্য এবং আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে ধারণ করা হয়েছে গানের কণ্ঠ। আবার শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলসংগীতের ১১টি সিডির গুচ্ছ সংকলন পাওয়া যাচ্ছে। বেশ বিক্রি হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ছবিসংবলিত দুটি পোস্টার।
শিক্ষা ভবনে কাজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে বাড়ি ফিরছিলেন জামালপুরের আতিকুর রহমান। নজরুলের গানের অন্ধ ভক্ত বলা যায়! যেসব গানের সিডি তাঁর সংগ্রহে নেই, তার সবই কিনলেন। কিনলেন নজরুলসংগীত সমগ্রও। তিনি বলেন, ‘গ্রামে এসব বই কিংবা সিডি কোনোটাই কিনতে পাওয়া যায় না। অনেক আগে একবার বইমেলা থেকে কিছু সিডি আর স্বরলিপির বই কিনেছিলাম।’ এ ছাড়া স্বল্প মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে নজরুলসংগীতের ক্যাসেট। কাজী নজরুল ইসলাম দ্য রিবেল পয়েট নামের একটি আকর্ষণীয় অ্যালবাম পাওয়া যাচ্ছে, যাতে নজরুলের বিভিন্ন সময়ের ছবি ও বিভিন্ন তথ্য রয়েছে।
জাতীয় কবির মাজার দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন। আর নজরুলভক্তরা তো প্রায়ই আসেন। সবার জন্য এখন নজরুলকে চেনার সুযোগটা আরও বেড়ে গেল। এখানে এলেই নজরুলের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশুতোষ রচনা, গানসহ সব ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে। আবার নজরুল-গবেষকদের লেখা বইও রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে নজরুল ইনস্টিটিউটের পত্রিকা, নজরুল জন্মশতবর্ষ বক্তৃতামালা, স্মারকগ্রন্থ নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সবকিছু। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাচ্ছে নজরুলভক্তদের। মাজার দেখাও হলো, আবার তাঁর সম্পর্কে কিছু জানতে হলে কিংবা তাঁর রচিত কিছু কিনতে চাইলে তা-ও সম্ভব।
নজরুল কর্নারের দুয়ার রোববার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত খোলা থাকছে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ১ বৈশাখসহ বিশেষ দিনগুলোতে খোলা থাকবে নজরুল কর্নার।
তানজিল রিমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ আর চারুকলা অনুষদের মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এক পাশে মসজিদের আজানের সুর, অন্য পাশে চারুকলার শিল্পীদের শিল্পচর্চা কবির মাজারকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। মাজারের ফটক গলে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে তিনটি ছোট গ্যালারি। একটি গ্যালারিকে নজরুল কর্নার হিসেবে প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলামের সব ধরনের বই, কবিতা ও গানের সিডি পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিল্টন এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর কাছে। যাওয়ার পথে নজরুল কর্নারে ঢুঁ মারেন এবং নজরুলের কবিতা আবৃত্তির একটি সিডি কেনেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। খুব সহজেই নজরুলের রচিত বই, গানের সিডি সংগ্রহ করতে পারব এখন।’
বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সেই তুলনায় নজরুল ইনস্টিটিউটের বইয়ের দাম অনেক কম। কিন্তু মানে অন্য সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো। এমনটিই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। তাঁর মতে, নজরুলের যেকোনো বই অন্য প্রকাশনীর ক্ষেত্রে দাম অনেক বেশি রাখা হয়। আর নজরুল ইনস্টিটিউটের বইগুলো সবার সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।
জাতীয় কবির সমাধিসৌধে চালু হওয়া এই নজরুল কর্নারে লোকজনের আনাগোনাও বেশ চোখে পড়ার মতো। নজরুলপ্রেমী যাঁরা ঢুঁ মারছেন, কেউ না কেউ কিছু একটা কিনে তবেই ফিরছেন। জাতীয় কবি যেমন লেখায় পারদর্শী ছিলেন, তেমনি আবৃত্তিও করতেন। এখানে পাওয়া যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তির সিডি। লেটোর দলের এই অভিনেতা নিজেই গান লিখেছেন হাজার হাজার, গানের সুর করেছেন, আবার গেয়েছেনও। তাঁর কণ্ঠে গানের সিডিও বিক্রি হচ্ছে নজরুল কর্নারে।
জাতীয় কবির অনেক কবিতা ও গান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে পেয়েছেন নতুন উদ্যম, শক্তি, লড়াইয়ের তাগিদ। কবির কবিতাসমগ্র ও সংগীতসমগ্র পাওয়া যাচ্ছে।
বেশ চাহিদা রয়েছে নজরুলসংগীতের স্বরলিপির। ৩৪ খণ্ড পর্যন্ত প্রকাশিত এই স্বরলিপিগুলো এখনো দেদার কিনছেন নজরুলভক্তরা। এমনটাই জানালেন নজরুল কর্নারে থাকা নজরুল ইনস্টিটিউটের বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি আরও জানান, এখানে রয়েছে নির্বাচিত নজরুলসংগীতের ৩০টি সিডির একত্র সংকলন। এগুলোয় যাঁরা কণ্ঠ দিয়েছেন, তাঁরা সবাই কবির সান্নিধ্যধন্য এবং আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে ধারণ করা হয়েছে গানের কণ্ঠ। আবার শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলসংগীতের ১১টি সিডির গুচ্ছ সংকলন পাওয়া যাচ্ছে। বেশ বিক্রি হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ছবিসংবলিত দুটি পোস্টার।
শিক্ষা ভবনে কাজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে বাড়ি ফিরছিলেন জামালপুরের আতিকুর রহমান। নজরুলের গানের অন্ধ ভক্ত বলা যায়! যেসব গানের সিডি তাঁর সংগ্রহে নেই, তার সবই কিনলেন। কিনলেন নজরুলসংগীত সমগ্রও। তিনি বলেন, ‘গ্রামে এসব বই কিংবা সিডি কোনোটাই কিনতে পাওয়া যায় না। অনেক আগে একবার বইমেলা থেকে কিছু সিডি আর স্বরলিপির বই কিনেছিলাম।’ এ ছাড়া স্বল্প মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে নজরুলসংগীতের ক্যাসেট। কাজী নজরুল ইসলাম দ্য রিবেল পয়েট নামের একটি আকর্ষণীয় অ্যালবাম পাওয়া যাচ্ছে, যাতে নজরুলের বিভিন্ন সময়ের ছবি ও বিভিন্ন তথ্য রয়েছে।
জাতীয় কবির মাজার দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন। আর নজরুলভক্তরা তো প্রায়ই আসেন। সবার জন্য এখন নজরুলকে চেনার সুযোগটা আরও বেড়ে গেল। এখানে এলেই নজরুলের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশুতোষ রচনা, গানসহ সব ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে। আবার নজরুল-গবেষকদের লেখা বইও রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে নজরুল ইনস্টিটিউটের পত্রিকা, নজরুল জন্মশতবর্ষ বক্তৃতামালা, স্মারকগ্রন্থ নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সবকিছু। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাচ্ছে নজরুলভক্তদের। মাজার দেখাও হলো, আবার তাঁর সম্পর্কে কিছু জানতে হলে কিংবা তাঁর রচিত কিছু কিনতে চাইলে তা-ও সম্ভব।
নজরুল কর্নারের দুয়ার রোববার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত খোলা থাকছে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ১ বৈশাখসহ বিশেষ দিনগুলোতে খোলা থাকবে নজরুল কর্নার।
তানজিল রিমন
No comments