নষ্টের গোড়া মমতা-দ্য হিন্দু

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে প্রতিশ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় কেবল বাংলাদেশে নয়, ভারতের গণমাধ্যমও ব্যাপক সমালোচনা করেছে। এখানে ভারতের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকীয় মন্তব্যের সারাংশ তুলে ধরা হলো )


প্রতিবেশী কোনো দেশের সংলগ্ন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই ভারতকে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে—এ অবস্থানের সঙ্গে কোনো বিবাদ থাকতে পারে না। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগ করা প্রসঙ্গে তো এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি কিভাবে বণ্টিত হবে তা নিয়ে নয়াদিল্লির প্রস্তাবিত চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের থাকা দরকার ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোল বাধানো ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। চুক্তির ব্যাপারে কাজ চলছে, এ কথা রাজ্য সরকার আগেভাগেই পরিষ্কার জানত। আর চুক্তির বিধিমালার সঙ্গে পূর্বপরিচয়ও তাদের ছিল। গত ৩১ আগস্ট জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। অনেক দিন ধরেই নয়াদিল্লি তিস্তা চুক্তিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের অন্তত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। তাহলে এটা তাঁর কাছে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করতে মমতা কেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলেন? যদিও কোন কোন জায়গায় আপত্তি তা পরিষ্কার নয়, তবে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকার চুক্তিটিকে পশ্চিমবঙ্গের ‘স্বার্থহানিকর’ হিসেবে দেখছে। মমতার এ সিদ্ধান্তের পেছনে রাজ্যের আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর মতভিন্নতাও কাজ করেছে বলে জল্পনা আছে। মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর থেকে নাটকীয়ভাবে মমতার নিজেকে প্রত্যাহারে নয়াদিল্লি যেভাবে ধাক্কা খেল, তাতে বোঝা যায়, মমতার মতভিন্নটার বিষয়টি কেন্দ্র আগেভাগে জানত না। মমতা নাটক এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের ওপর ছায়া ফেলল—চুক্তিটি এখন স্থগিত হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার সরকারকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইতিমধ্যেই কল্পিত ‘ভারতপন্থী’ ঝোঁকের জন্য তাঁকে টার্গেট করেছে। উলফাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এবং ভারতবিরোধী ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর ওপর ক্রেকডাউন চালানোর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করার কারণে তাঁকে সমালোচিত হতে হয়েছে। শেখ হাসিনা হয়তো আশা করেছিলেন, তিস্তা চুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সমালোচনা প্রতিহত করবেন। ফেনী নদীর জন্যও একই ধরনের আরেকটি চুক্তি সম্পাদনও প্রত্যাশিত ছিল। এ নদী ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। অন্যদিকে নয়াদিল্লির প্রত্যাশা ছিল, তিস্তা চুক্তির ফলস্বরূপ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো এবং এগুলো পেরিয়ে আরও দূর পর্যন্ত সংযোগ স্থাপিত হবে। ঢাকা সফরের প্রতিনিধিদলে এই অঞ্চলের চারজন মুখ্যমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি এরই সাক্ষ্য দেয়। এসবই এখন অনিশ্চিত। বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফর জটিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভেতর ‘নতুন ছাঁচ গড়ে দেবে’। সীমান্ত ও প্রত্যর্পণ-সম্পর্কিত সম্ভাব্য চুক্তির কারণে সফরটিকে একেবারে অকাজের বলে দেওয়া যায় না। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা দিল্লি থেকে যাত্রা শুরুর আগেই হতাশার অনুভূতি স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল।

No comments

Powered by Blogger.