সৌদি নারীর ভোটাধিকার-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের পথে রক্ষণশীল সমাজ by মার্টিন চুলভ
৮৭ বছর বয়সী বাদশাহ সৌদি নারীদের পরবর্তী শূরা কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ শূরা দেশের আইন প্রণয়ন তত্ত্বাবধান করে। বাদশাহ আবদুল্লাহ তার মৌলবাদী রাষ্ট্রটিতে তার ভাষায় 'সতর্ক সংস্কার' বাস্তবায়ন করছেন।
এখানে নারীরা কড়াকড়িভাবেই নাগরিক
স্বাধীনতাবিহীন
সৌদি আরবের নারীরা শেষ পর্যন্ত ভোটাধিকার লাভ করতে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বাদশাহ আবদুল্লাহ গত রোববার নারীর এসব অধিকারের স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় অত্যন্ত রক্ষণশীল গোঁড়া এ মুসলিম দেশটিতে ব্যাপক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সূচিত হবে, শুরু হবে নতুন যুগ। তবে কাউন্সিল নির্বাচন-২০১৫ সালের আগে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। তাই আগামী বৃহস্পতিবার মিউনিসিপ্যালিটির যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে কোনো নারী প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাবে না বা তাদের ভোটকেন্দ্রে লাইন দিয়ে ভোট দিতেও দেখা যাবে না। তবে ৮৭ বছর বয়সী এ বাদশাহ সৌদি নারীদের পরবর্তী শূরা কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ শূরা দেশের আইন প্রণয়ন তত্ত্বাবধান করে। বাদশাহ আবদুল্লাহ তার মৌলবাদী রাষ্ট্রটিতে তার ভাষায় 'সতর্ক সংস্কার' বাস্তবায়ন করছেন। এখানে নারীরা কড়াকড়িভাবেই নাগরিক স্বাধীনতাবিহীন ও রাষ্ট্রীয়-রাজনীতিতে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
বাদশাহ তার ভাষণে বলেন, আমরা এতদিন শরিয়ার দোহাই দিয়ে নারীকে প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছি। এখন শরিয়া অনুসরণ করেই নারীর প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বাদশাহ সিনিয়র ওলেমা, অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নারীদের পরবর্তী টার্ম থেকে শূরা কাউন্সিলের সদস্য করার ব্যাপারে আলোচনা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘোষণায় বলেন, নারীরা শুধু মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন তা নয়_ তারা ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবেন।
এ ঘোষণার প্রতি সৌদি পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তারা এও বলেছেন যে, সৌদি আরবকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে বৃহত্তর সংস্কারে যেতে হবে।
একজন সৌদি নারী তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, এ ঘোষণার পর তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা ভোট দিতে পারবেন। এতে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। এখানে যেহেতু নারীদের অভিভাবকবিহীন কোনো বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই তিনি নাম প্রকাশ করতে পারছেন না।
বর্তমান আইন অনুযায়ী সৌদি নারীকে ঘরের বাইরে পা রাখতে হলে বাবা, ভাই বা সন্তানকে সঙ্গে নিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। রিয়াদে এ বছরের প্রথম দিকে কিছু নারী গাড়ি চালনার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের দাবিতে অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ধরনের প্রচেষ্টাকে উস্কানিমূলক মনে করে কয়েক নারীচালককে গ্রেফতার করে। প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের মেলামেশা কড়াকড়িভাবেই সৌদি আরবে নিষিদ্ধ।
কিছু সৌদি পর্যবেক্ষক মনে করেন, সাম্প্রতিক আরব গণজাগরণের ফলে সৌদি নারীর এ অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে সৌদি আরবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখনও স্বপ্নই মনে হবে। দেশটি পূর্ণ বাদশাহিতন্ত্র শাসিত ও কোরআন হলো দেশের একমাত্র সংবিধান।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সৌদি বাদশাহর সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়। দু'বছর আগে তিনি যখন একদল ছাত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন, তখন নারীর অধিকারের ব্যাপারে তার কিছুটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলে মনে করা হতে থাকে। এ তরুণীদের অধিকাংশেরই সৌদি রক্ষণশীল হিজাব প্রথা অনুযায়ী নেকাবে মুখ পুরোপুরি ঢাকা ছিল না।
তখন থেকেই তিনি অপৃথককৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে মহিলাদের বেশি করে নিয়োগের কথা বলেন। এসব পদক্ষেপ সিনিয়র মাওলানা, এমনকি তার নিজ পরিবারের কোনো কোনো সদস্যের সমালোচনার মুখে পড়ে।
রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষাবিদ মনে করেন, ২০১৫ সালের মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি আদৌ কার্যকর হবে কি-না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। তার মানে নারীরা ভোটদানের অধিকার পেলে তিনি অত্যন্ত খুশি হবেন। তবে নির্বাচনে প্রথম দিকে মহিলা প্রার্থী খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার মতে, সৌদি বাদশাহ দেশে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন এবং এটা অবশ্যই নারীকে উৎসাহিত করবে। সৌদি নারীরা উলি্লখিত অধিকার কাগজে-কলমে পেলেও তার বাস্তবায়ন সহজ হবে না।
এক নারী শিক্ষাবিদ মনে করেন, চারপাশে যখন ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে চলেছে তখন সৌদি আরব অনড় অবস্থানে রয়েছে, যা কি-না তাদের জন্য খুবই লজ্জাকর।
তিনি দাবি করেন, তাই বলে গড়পড়তা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে উত্তর আফ্রিকা ও সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেন ও বাহরাইনে যেমনটা দেখা যাচ্ছে_ তেমনটা সৌদি আরবে সম্ভব নয়। কারণ সৌদিরা তাদের বাদশাহি পরিবারতন্ত্রকে পরিবর্তন করতে আগ্রহী নয়। তারা মনে করে, যে কোনো পরিবর্তনই হতে হবে বাদশাহি পরিবারকে রেখেই।
ক্ষমতাসীন বাদশাহি পরিবারের জেদ্দাভিত্তিক কয়েক নারী সদস্যের মতে, জনগণ এখানে যেটুকু পেয়েছে তাতেই খুশি। তারা জানে কতটা দাবি উত্থাপন করা উচিত আর কতটা উচিত নয়। বাদশাহ যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন।
মার্টিন চুলভ : লন্ডন থেকে প্রকাশিত গার্ডিয়ানের সাংবাদিক; ভাষান্তর সুভাষ সাহা
স্বাধীনতাবিহীন
সৌদি আরবের নারীরা শেষ পর্যন্ত ভোটাধিকার লাভ করতে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বাদশাহ আবদুল্লাহ গত রোববার নারীর এসব অধিকারের স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় অত্যন্ত রক্ষণশীল গোঁড়া এ মুসলিম দেশটিতে ব্যাপক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সূচিত হবে, শুরু হবে নতুন যুগ। তবে কাউন্সিল নির্বাচন-২০১৫ সালের আগে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। তাই আগামী বৃহস্পতিবার মিউনিসিপ্যালিটির যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে কোনো নারী প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাবে না বা তাদের ভোটকেন্দ্রে লাইন দিয়ে ভোট দিতেও দেখা যাবে না। তবে ৮৭ বছর বয়সী এ বাদশাহ সৌদি নারীদের পরবর্তী শূরা কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ শূরা দেশের আইন প্রণয়ন তত্ত্বাবধান করে। বাদশাহ আবদুল্লাহ তার মৌলবাদী রাষ্ট্রটিতে তার ভাষায় 'সতর্ক সংস্কার' বাস্তবায়ন করছেন। এখানে নারীরা কড়াকড়িভাবেই নাগরিক স্বাধীনতাবিহীন ও রাষ্ট্রীয়-রাজনীতিতে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
বাদশাহ তার ভাষণে বলেন, আমরা এতদিন শরিয়ার দোহাই দিয়ে নারীকে প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছি। এখন শরিয়া অনুসরণ করেই নারীর প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বাদশাহ সিনিয়র ওলেমা, অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নারীদের পরবর্তী টার্ম থেকে শূরা কাউন্সিলের সদস্য করার ব্যাপারে আলোচনা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘোষণায় বলেন, নারীরা শুধু মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন তা নয়_ তারা ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবেন।
এ ঘোষণার প্রতি সৌদি পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তারা এও বলেছেন যে, সৌদি আরবকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে বৃহত্তর সংস্কারে যেতে হবে।
একজন সৌদি নারী তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, এ ঘোষণার পর তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা ভোট দিতে পারবেন। এতে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। এখানে যেহেতু নারীদের অভিভাবকবিহীন কোনো বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই তিনি নাম প্রকাশ করতে পারছেন না।
বর্তমান আইন অনুযায়ী সৌদি নারীকে ঘরের বাইরে পা রাখতে হলে বাবা, ভাই বা সন্তানকে সঙ্গে নিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। রিয়াদে এ বছরের প্রথম দিকে কিছু নারী গাড়ি চালনার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের দাবিতে অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ধরনের প্রচেষ্টাকে উস্কানিমূলক মনে করে কয়েক নারীচালককে গ্রেফতার করে। প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের মেলামেশা কড়াকড়িভাবেই সৌদি আরবে নিষিদ্ধ।
কিছু সৌদি পর্যবেক্ষক মনে করেন, সাম্প্রতিক আরব গণজাগরণের ফলে সৌদি নারীর এ অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে সৌদি আরবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখনও স্বপ্নই মনে হবে। দেশটি পূর্ণ বাদশাহিতন্ত্র শাসিত ও কোরআন হলো দেশের একমাত্র সংবিধান।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সৌদি বাদশাহর সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়। দু'বছর আগে তিনি যখন একদল ছাত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন, তখন নারীর অধিকারের ব্যাপারে তার কিছুটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলে মনে করা হতে থাকে। এ তরুণীদের অধিকাংশেরই সৌদি রক্ষণশীল হিজাব প্রথা অনুযায়ী নেকাবে মুখ পুরোপুরি ঢাকা ছিল না।
তখন থেকেই তিনি অপৃথককৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে মহিলাদের বেশি করে নিয়োগের কথা বলেন। এসব পদক্ষেপ সিনিয়র মাওলানা, এমনকি তার নিজ পরিবারের কোনো কোনো সদস্যের সমালোচনার মুখে পড়ে।
রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষাবিদ মনে করেন, ২০১৫ সালের মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি আদৌ কার্যকর হবে কি-না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। তার মানে নারীরা ভোটদানের অধিকার পেলে তিনি অত্যন্ত খুশি হবেন। তবে নির্বাচনে প্রথম দিকে মহিলা প্রার্থী খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার মতে, সৌদি বাদশাহ দেশে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন এবং এটা অবশ্যই নারীকে উৎসাহিত করবে। সৌদি নারীরা উলি্লখিত অধিকার কাগজে-কলমে পেলেও তার বাস্তবায়ন সহজ হবে না।
এক নারী শিক্ষাবিদ মনে করেন, চারপাশে যখন ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে চলেছে তখন সৌদি আরব অনড় অবস্থানে রয়েছে, যা কি-না তাদের জন্য খুবই লজ্জাকর।
তিনি দাবি করেন, তাই বলে গড়পড়তা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে উত্তর আফ্রিকা ও সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেন ও বাহরাইনে যেমনটা দেখা যাচ্ছে_ তেমনটা সৌদি আরবে সম্ভব নয়। কারণ সৌদিরা তাদের বাদশাহি পরিবারতন্ত্রকে পরিবর্তন করতে আগ্রহী নয়। তারা মনে করে, যে কোনো পরিবর্তনই হতে হবে বাদশাহি পরিবারকে রেখেই।
ক্ষমতাসীন বাদশাহি পরিবারের জেদ্দাভিত্তিক কয়েক নারী সদস্যের মতে, জনগণ এখানে যেটুকু পেয়েছে তাতেই খুশি। তারা জানে কতটা দাবি উত্থাপন করা উচিত আর কতটা উচিত নয়। বাদশাহ যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন।
মার্টিন চুলভ : লন্ডন থেকে প্রকাশিত গার্ডিয়ানের সাংবাদিক; ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments