২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট-বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে

গত বছরের ধারাবাহিকতায় সংসদে ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের মতে, বরাবরের মতো এবারের বাজেটও গণমুখী। বিরোধী দলের মতে গতানুগতিক। এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার এই বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।


গত বছরের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের পরিকল্পনার ধারা মনে করা হলেও এতে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এবারের বাজেটে রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহীদের আনা হয়েছে করের আওতায়। কর দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তাদেরও। এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসনে। সঞ্চয়পত্রে সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। শিল্পে বিনিয়োগে সারা দেশে কর অবকাশের সুবিধার ঘোষণা আছে। শিক্ষা খাতে এ বছরের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় বেশি। এবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে কমেছে কৃষিতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি। বাড়ানো হয়েছে করমুক্ত আয়ের সীমা। অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেই বাজেটের সঙ্গে বিরোধী দলের প্রস্তাবিত বাজেটের মিল-অমিল_দুটোই লক্ষণীয়। প্রতিবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব হচ্ছে বাজেট। প্রতিবছর বাজটের পর কোন জিনিসের দাম বাড়ল আর কোন জিনিসের কমল, এটা নিয়ে নানা আলোচনা হয়। কোন জিনিসের দাম বাড়বে, কোন জিনিসের কমবে, তা নিয়ে এবারের বাজেটেও নির্দেশনা রয়েছে। বাজেটে এলপি গ্যাসের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এবারের বাজেটেও অর্থনীতির চাকা সচল করার নানা পদক্ষেপের উল্লেখ আছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিষয়ে গত বছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল। এবারও বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। প্রতিবছর দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। গত বছর বাজেটে পিপিপির যে বরাদ্দ ছিল, তার অনেকটাই অলস পড়ে ছিল। বাজেট বাস্তবায়নে শুধু আন্তরিক হলেই চলবে না, দক্ষতার পরিচয়ও দিতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাটাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি। গত বছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটের ওপর। সেটা এবার কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। বাজেটে সরকারের আগামী বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা ফুটে উঠেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সহনশীল রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও শিল্পায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আগের বছরগুলোতে কৃষিতে ভর্তুকি কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহী করেছিল। এবার কৃষিতে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, এ বিষয়টি সরকারের দেখা দরকার। বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের শেষ ভরসা। কৃষকরা উৎসাহ হারালে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব সরকারকেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংকট মোকাবিলার জন্য নির্ভর করতে হয়েছে বিদেশি ঋণ বা সাহায্যের ওপর। অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণেই বাজেটের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এবারের বাজেটে আরো বড় কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এবারও সরকার কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হবে বলে অনেকে মনে করছেন। যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটাকে এককথায় বলা যায় 'ভালো-মন্দ মিলায়ে সকলি'। এর বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে দেশের অর্থনীতির ভালো-মন্দ। আর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সরকারের দক্ষতার ওপর। কাজেই এ ব্যাপারে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.