জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-যুক্তিপূর্ণ বিচক্ষণ অবস্থানেই সমাধান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০০৫ সালে 'কলেজ' শব্দটি বাদ গেলে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিল। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা ছিল বড় ধরনের উৎসবের উপলক্ষ।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭(৪) ধারায় বলা হয় : 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌনঃপুনিক ব্যয় জোগানে সরকার কর্তৃক প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবে এবং পঞ্চম বৎসর হইতে উক্ত ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে।' চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ আইনটি প্রণীত হয় এবং তাতে যে বিষবৃক্ষের চারা রোপণ করা ছিল, সম্ভবত সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা তেমন গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেননি। এমন ধারণাও হতে পারে যে পাঁচ বছর পর 'শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে' শব্দ-সমষ্টির কী অর্থ দাঁড়াতে পারে এবং তার পরিণতিতে অভাবিত কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে কি-না, তা নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে করেননি, কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গেও করেননি। এমনও হতে পারে যে আলোচনা হলেও কোনো তরফেই বিষয়টি সুরাহার জন্য তেমন জোরালো অবস্থান গ্রহণ করা হয়নি। রোববার রাজপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ ও ভাংচুর এ উদাসীনতারই পরিণতি। যে শিক্ষার্থীদের ওপর বিপুল ব্যয়ের বোঝা নেমে আসবে, তারা ক্ষুব্ধ হতেই পারে। তারা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সম্পর্কে ভাসা ভাসা জেনেছে কিংবা আদৌ জানেনি। এমনও হতে পারে তারা মনে করেছে, সরকারকে দাবি মেনে নিতেই হবে। তাদের কাছে এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা, রাজশাহী কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পাবলিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে নামমাত্র ব্যয়ে পড়াশোনা করা যায়। প্রতিষ্ঠানটির নবযাত্রা যে ভিন্ন শর্তে হয়েছে এবং সেটা যে এক দশক আগে সংশ্লিষ্ট সবাই মেনে নিয়েছিল, সে বিষয়টিও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ প্রতিষ্ঠানটির আদি যাত্রাও তাদের অজানা কিংবা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অনেকেই তা আমলে আনতে রাজি নয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল চৌধুরী তার বাবার নামে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন এবং ১৯৬৮ সালে কলেজটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার আগে বহু বছর বিবেচিত হয়েছে 'বেস্ট ইক্যুয়িপ্ট প্রাইভেট কলেজ' হিসেবে। এখন স্পষ্টতই এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং তার দায়-দায়িত্ব অনেকের ওপরেই বর্তানো যায়। তবে সবার আগে প্রয়োজন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা। এজন্য শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সবার আন্তরিকতা চাই। পুলিশি ব্যবস্থা কিংবা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পেশিশক্তিতে এর সমাধান নেই, তাতে বরং জটিলতা বাড়বে। আরও দুটি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও একই ধরনের ধারা রয়েছে এবং সেখানেও একই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়া স্বাভাবিক। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ 'সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পথ বের করা হবে' বলে জানিয়েছেন। ছাত্রদের পক্ষ হয়ে দেশবাসীর কাছে ভাংচুরের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। এমন যুক্তিপূর্ণ ও বিচক্ষণ অবস্থান থাকলে সমস্যার সমাধান সূত্র মিলবেই এবং সেজন্য চাই সবার তরফে ধৈর্য ও সহনশীলতার মনোভাব।
 

No comments

Powered by Blogger.