চারদিক-ভাদ্রের বিকেলে, আড়িয়ল বিলে

শুধু মমতাকে দোষারোপ করলে সত্য আড়ালে থেকে যাবে। তিনি দায়টা প্রকাশ্যে কাঁধে নিয়েছেন মাত্র। আরও মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে মমতা সমালোচিত (তাও বামদের একাংশ সোচ্চার) হয়েছেন শিষ্টাচার না দেখানোর প্রশ্নে। বাংলাদেশে মমতার যাওয়া এবং আগেই বলা উচিত ছিল, এটুকুই সারকথা।


তবে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় তাঁর ঘুম নাই ভাবমূর্তির রোশনাই আরও বেড়েছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুতি কতটা ভঙ্গুর ও সন্দেহপূর্ণ ছিল, তা বুঝতে গতকালের আনন্দবাজার পত্রিকায় জয়ন্ত ঘোষালের প্রতিবেদনের একটি বাক্য যথেষ্ট। জয়ন্ত লিখেছেন, ‘মমতার আপত্তি দূর করাই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের বড় মাথাব্যথা। ভারতের বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই গতকালই জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনো অঙ্গরাজ্যের সম্মতি ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তি করা সম্ভব নয়।’ তাহলে কি তাঁরা মমতাকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করার প্রস্তুতি নিয়েছিল? এটাই কি বাংলাদেশ সফরে মনমোহনের ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ প্রদানের নমুনা?
ভারতীয় ও ঢাকার পত্রপত্রিকায় মমতাকেন্দ্রিক বিরক্তি প্রকাশ যে ত্রুটিপূর্ণ, তার স্বরূপ উদ্ঘাটন জরুরি। মমতার নির্বাচনী বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুলের তোড়া পৌঁছাতে বেবী মওদুদকে কালিঘাটে দেখেছিলাম, তিনি এখন মহাকরণে ছুটে গেছেন মমতার মান ভাঙাতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে ২৫ শতাংশের বেশি পানি দেওয়ার বিরোধিতায় মমতা ও বামরা এককাট্টা। বহুদিন বাদে পশ্চিমবঙ্গে বাঘে-মহিষে একঘাটে জল খাচ্ছে, অন্তত প্রকাশ্যে। কংগ্রেস বাদ্যি বাজাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের গোটা সংবাদমাধ্যম ‘রাজ্যের স্বার্থ’ দিদির দূরদর্শিতায় অল্পের জন্য রক্ষে পাওয়ায় যারপরনাই সন্তুষ্ট। মমতার তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী বামফ্রন্ট মতৈক্যে পৌঁছেছে। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও সাক্ষ্য দিলেন, ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীকে কলকাতায় তিনি স্মারকলিপি দেন। তখন তিস্তা প্রকল্প দ্রুত শেষ করা ও পূর্ণাঙ্গভাবে সমাপ্ত করার অনুরোধ তাঁকে তিনি জানান। বিধানসভায় সেচ দপ্তরের বাজেট-সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। সেচমন্ত্রীকে বলেছিলেন রাজ্যের সরকারপক্ষ ও বিরোধীরা একসঙ্গে গিয়ে কেন্দ্রকে তিস্তা সম্পর্কে মতামত জানাতে। এরপর দিল্লিতেও তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে একই কথা বলেছিলেন।
৬ সেপ্টেম্বর বামফ্রন্টের মুখপত্র দৈনিক গণশক্তির একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম: ‘এত দিন দৃঢ় আপত্তি জানিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারই/ কেন্দ্রের প্রস্তুতির অভাব/ প্রশ্ন উঠছে মমতার শেষ মুহূর্তের চমক নিয়েও।’ গণশক্তির সুরে মমতার তিস্তানীতি ভক্তি খুবই স্পষ্ট। বামদের সাবেক সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর গণশক্তিকে বলেন, ‘সেচমন্ত্রী থাকাকালে আমি নিজে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে গেছি, দিল্লিতেও গেছি। রাজ্যের স্বার্থে আমরা দৃঢ় ছিলাম। ২০১০ সালেও আমরা যে লিখিত প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠিয়েছিলাম, তাতে ২৫ শতাংশের বেশি জল ছাড়ায় আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছিলাম। ১৫ বছরের জন্য চুক্তি হবে। জাতীয় প্রকল্পঘোষিত হওয়ায় তার মধ্যে তিস্তা প্রকল্পের কাজ অনেক এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিস্তায় যদি জলই না থাকে তাহলে আমাদের কী লাভ হবে?’
পশ্চিমবঙ্গের নেতারা রাজ্যের স্বার্থ দেখলেন। তিস্তা চুক্তির পানির ভাগাভাগি প্রশ্নে ন্যায্যতা বা সমতার প্রশ্ন তুললেন না। তাঁরা চুক্তি চান। বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান। কিন্তু খোদ বিরোধী দলনেতাই বলছেন, ‘দেশের ও রাজ্যের ক্ষতি করে জলবণ্টন করার আমরা বিরোধী ছিলাম। নতুন খসড়ায় কী আছে, তা আমরা বলতে পারব না। তবে আমরা ভারতের প্রাপ্য জলের পরিমাণ ৫০-৫২ শতাংশে নামিয়ে আনার বিরোধী ছিলাম, এখনো আছি।’
এ রকমের মনোভাব ‘সালিস মানি, তালগাছটা আমার’ ধরনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে মমতা-কাণ্ডের পরে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের নেতারা যে ধরনের মন্তব্য করছেন, তাতে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশকে কোনো আন্তর্জাতিক নদীর ন্যায্য হিস্যা নয়, কোনোভাবে শুভেচ্ছা (নয় অনুকম্পা) দেখানোই তাদের বাসনা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক নদী’ শব্দের তেমন কোনো উল্লেখ নেই। এটা যে কাবেরির পানি নিয়ে দুই চির বিবদমান অঙ্গরাজ্য কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর বিষয় নয়, ভাটিতে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র—তার কোনো লক্ষণ আমরা দেখি না।
বড় জিজ্ঞাসা, মমতার সঙ্গে না হয় আলোচনা হয়নি, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস কেন নাখোশ? তারা কেন মমতার পাশেই দাঁড়াল? কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৬ সেপ্টেম্বরের একটি শিরোনাম: কংগ্রেস মনে করে মমতার তিস্তা ভূমিকা বৈধ। এর বক্তব্য: ‘মমতার প্রতি কংগ্রেসের কোনো বিরাগ নেই। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতারা মেনে নিয়েছেন যে তাঁর অবস্থান যুক্তিসংগত।’ টেলিগ্রাফ আরও জানায়: এমনকি একজন কংগ্রেস নেতা এই বলে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন যে, ‘জাতীয় স্বার্থ রাজ্যের স্বার্থের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হতে পারে না। প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে সার্বিকভাবে সকল ইস্যুকে সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়নি। কংগ্রেসের একজন মন্ত্রী বলেছেন, আমরা বৃহৎ রাষ্ট্র। আমাদের উচিত হবে অধিকতর ঔদার্য প্রদর্শন। এর বিনিময় মিলবে বিশাল। কিন্তু আমরা মমতাকে তাঁর রাজনৈতিক মূল্যায়ন পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারি না, যদি তিনি মনে করেন যে, তিস্তা চুক্তি জনগণকে ক্ষুব্ধ করবে।’ টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনের শেষ বাক্যটি ছিল—পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস মমতার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। তারাই কেন্দ্রীয় সরকারকে মমতার দাবি মানতে বাধ্য করে।
অথচ ওই দিনই টেলিগ্রাফ-এর আরেকটি রিপোর্টে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে অন্তত দুবার কথা বলেছেন। এবং মমতাকে তখন খুবই অনুকূল দেখা গেছে। ‘বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক চমৎকার। এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব যে তাঁর অনুভবে ভালোই আছে, সেটাও তিনি বুঝিয়ে দেন। তবে মমতার কর্মকর্তারাও কেন্দ্রকে ধারণা দেননি যে সমঝোতাটা গ্রহণযোগ্য নয়। শেষ মুহূর্তে কিছু একটা ঘটে গেছে। এটা ভালো হতো যদি পশ্চিমবঙ্গের কর্মকর্তারা গোড়াতেই তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করতেন।’ দ্য টেলিগ্রাফ এরপর লিখেছে, পানিসম্পদমন্ত্রী পবন বানশাল, যিনি মাত্র কদিন আগেই বলেছেন, তিস্তা চুক্তি হতে যাচ্ছে, তিনি আজ দোনোমনো করছেন। কেন উল্টাল, তার কারণ তিনি বললেন না। যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে মমতার তিস্তা-বিরোধিতা কি খুব জোরালো? বানশাল বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারি না। কিন্তু রাজ্যের আপত্তি উপেক্ষা করে নিশ্চয়ই এই চুক্তি হতে পারে না। আমাদের অবশ্যই ফেডারেল কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ এখন এই ‘ফেডারেল কাঠামো’ কথাটির মানে কী, তা বুঝতে হবে আগে। রঞ্জন মাথাই ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম যেদিন মিডিয়ায় দুঃসংবাদটি দেন সেদিনও তিনি খোঁড়া যুক্তি দেন। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া তাঁকে প্রশ্ন করেনি যে, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে যৌথ ইশতেহার সই এবং মমতার না উচ্চারণের মধ্যবর্তী কোন ক্ষণে তাঁরা ফেডারেলিজমের মাহাত্ম্য হূদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছিলেন? আমরা এই প্রশ্নের জবাব পাই না যে, পররাষ্ট্রনীতি কি রাজ্যের বিষয়? গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের আগে অর্ধ ডজন রাজ্য পেরিয়ে এসেছে। ওই সব রাজ্যের সব মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি নিতে হলে গঙ্গা চুক্তি হতো? মমতা নিজেই তো ফারাক্কার উজানে পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিস্তা প্রশ্নে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ বিরোধে জড়ালে কেন্দ্র কী বলবে?
ভারতে একটা সাধারণ ধারণা হলো, পানি হলো রাজ্য সরকারের বিষয়। কিন্তু সাংবিধানিক অবস্থাটি আসলে ততটা সরল নয়। সংবিধানের সপ্তম তফসিলের ১৭ নম্বর এন্ট্রিতে পানি যদিও রাজ্যের বিষয় বলে উল্লেখ রয়েছে; কিন্তু তা শর্তমুক্ত নয়। এটা নির্দিষ্টভাবেই ৫৬ নম্বর এন্ট্রি, অর্থাৎ কেন্দ্রের বিষয় বলেও যুক্ত করে দেওয়া আছে। এর ফলে পার্লামেন্ট যেকোনো আন্তরাজ্য নদীর বিষয়ে আইন করতে পারে। গত জুনে হিন্দুতে ভারতের সাবেক পানিসচিব রামস্বামী কে আয়ার লিখেছেন, পার্লামেন্ট যদি বিবেচনা করে যে গঙ্গা, যমুনা কিংবা নর্মদার মতো আন্তরাজ্য নদীগুলোর ‘নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন’ ‘জনস্বার্থে ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন’, তাহলে তা কেন্দ্রীয় সরকার করতলগত করতে পারে।’ সংসদ সে জন্য সংবিধানের ২৬২ অনুচ্ছেদের আওতায় আইন করবে। তখন সংশ্লিষ্ট নদীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আইনগত ও নির্বাহীগত যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে এ ধরনের আইন ভারতের পার্লামেন্ট কখনো তৈরি করেনি। এখন ফেডারিলিজম বা প্রকারন্তরে সাংবিধানিক বাধার দোহাই দিয়ে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার ভবিষ্যৎ অঙ্গরাজ্যের কাঁধে চাপালে তা কীভাবে যৌক্তিক হতে পারে?
গত মে মাসে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এক প্রাক-নির্বাচনী সংবাদ সম্মেলনে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশ সংক্রান্ত রাজ্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বামফ্রন্ট তার নীতিতে কি কোনো পরিবর্তন এনেছে? সংবাদ সম্মেলনের পরও তাঁর সঙ্গে কথা বলি। তিনি উষ্মা প্রকাশ করেই বলেছিলেন, আমি কি করে এমন প্রশ্ন করলাম। তাঁর যুক্তি ছিল: বাংলাদেশের সঙ্গে কি হবে না হবে তা তো বিদেশনীতির বিষয়। এটা তো দিল্লি ঠিক করবে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, আপনার কথা যথার্থ। কিন্তু আমি বুঝতে চাইছি পানি, ট্রানজিট ইত্যাদি ইস্যুতে রাজ্য সরকারের অবস্থান। দিল্লির কাজ দিল্লি করবে। এখন তিনি দিল্লির বিপরীতে তাঁর ঘোর শত্রু মমতার তিস্তানীতির নিন্দা জানাতে অপারগ। প্রথম আলোতে গতকাল তাঁর উক্তি ছাপা হয়েছে: ‘চুক্তি করার আগে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।’ আলবৎ হওয়া উচিত। কিন্তু বিদেশসচিব মাথাই যেমনটা বলছেন, সেটা কোথায় লেখা আছে যে, রাজ্যের সম্মতি ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তি করা যাবে না।
ভারতে পানির হিস্যা নিয়ে আন্তরাজ্য বিরোধ লেগেই আছে। প্রতিটি রাজ্য নদীর বিষয়ে সর্বোচ্চ স্পর্শকাতরতা দেখিয়ে থাকে। বিশেষ করে, কাবেরির পানি নিয়ে উজানের কর্ণাটক ও ভাটির তামিলনাড়ুর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি রূপকথার মতো। সে জন্য কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও তার সংসদীয় কমিটি দীর্ঘদিন ধরে সংবিধান শুধরে পানি কনকারেন্ট লিস্টে আনতে সচেষ্ট। তারা জানে পানি ইউনিয়ন লিস্ট অর্থাৎ কেন্দ্রের মুঠোয় আনা আবশ্যক, না পেরে কনকারেন্ট লিস্টের কথা বলে। কনকারেন্ট লিস্টে এলে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে আইন করতে পারবে। কিন্তু তা-ও করা হয়নি।
এখন প্রশ্ন হলো, তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ কী? পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে আমরা একটা ভালো চুক্তি পেতে যাচ্ছি।’ ন্যায্যতার রূপ কী? ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯১ সালের এক রায়ে বলা হয়েছে, ‘নদী তীরবর্তী রাজ্যগুলোর মধ্যে নদীর পানি ভাগাভাগি হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ইক্যুইটেবল শেয়ারের পরিমাণ কী হবে, তা নির্ভর করবে প্রতিটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।’ বোঝাই যাচ্ছে, পানির অনুপাত নিয়েই গোল বেধেছে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস মনে করে বলেই ২৫ শতাংশ পানি হবে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা?
দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের ২৫তম বৈঠকে অস্থায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তিস্তার পানি ভারত ৩৯, বাংলাদেশ ৩৬ এবং বাকি ২৫ শতাংশ অবণ্টিত থাকবে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তা-ই চলেছিল। সেটা চুক্তি বা সমঝোতার আদলে নয়, নদী কমিশনের সভার কার্যবিবরণীতে লেখা হয়েছিল। (সূত্র: কনফ্লিক্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন অন সাউথ এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল রিভারস: এ লিগ্যাল পারস্পেকটিভ, সালমান এম এ সালমান ও কিশোর উপরিত, বিশ্বব্যাংক, ২০০২, পৃ. ১৬৩) ১৯৮৩ সালে রাজীব গান্ধী সামরিক জান্তা জেনারেল এরশাদের সঙ্গে ৩৬ শতাংশে রাজি হতে পারলেন। তখন কি ভূমিকা ছিল পশ্চিমবঙ্গের বামদের। আর এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে ২৫ ভাগই দিতে হবে?
দিল্লির বাংলাদেশ বৈরী ও অনুদার আমলাতন্ত্র ড. মনমোহনের ঢাকা সফরকে এতটা গুরুত্বই দিয়েছে যাতে অল্প কিছু দিয়েই সবটা পেতে চেয়েছে। দিল্লিতে বিরোধী দলের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা এখন অর্থহীন মনে হয়। পরীক্ষিত বন্ধুর সঙ্গে এত বড় প্রহসনও যে ঘটে যেতে পারে, তা ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে। এটা আমাদের অনেকের জন্যই ‘নেত্রপল্লব উন্মিলনীয়’। তবে আরও একটি সত্য উদ্ভাসিত, ভারতের রাজনৈতিক মহলে আমরা প্রায় বন্ধুশূন্য। সেই দায় মুখ্যত আমাদের রাজনীতিকদের। আমেরিকায় ইসরায়েল লবি কেন শক্তিশালী, কেন ফিলিস্তিনের লবি নেই, সে জন্য বুক চাপড়িয়ে ফায়দা নেই। তেমনি ‘ভারতীয় নৃপতিগণ এমনই’ মনে করে হাল ছাড়ারও মানে নেই। আমাদের একেবারে অন্ধ ভারতবিরোধী গোষ্ঠীকেও ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ওঠাবসায় অভ্যস্ত হতে হবে। তবে ট্রানজিটকে তিস্তায় ডোবাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বাহাদুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর সরকারের এই হুঁশ বহু বিলম্বিত। তবু বলব, শাবাশ, জননেত্রী শেখ হাসিনা।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.