বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-যথাযথ বাস্তবায়নে দূরদর্শিতা দরকার

শেষ মুহূর্তে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে হিড়িক পড়ে যাওয়া কোনো নতুন চিত্র নয়। সময়ের কাজ কেন অসময় পর্যন্ত গড়ায় অতীতে এ নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠলেও এডিপি বাস্তবায়নে শম্বুকগতির অবসান ঘটানো যায়নি। ১২ জুন সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশ, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৭ শতাংশ।


কিন্তু বছর শেষের দিকে এসে এপ্রিল-মে দুই মাসে বাস্তবায়ন হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৪ শতাংশ। এর আগে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ হার ছিল ৬০ শতাংশ। পর্যালোচনাক্রমে দেখা গেছে, এক মাসে বাস্তবায়ন হার বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এ অবস্থায় সংগত কারণেই এডিপি বাস্তবায়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দাঁড়ায়। এডিপি শতভাগ বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) শেষ মাস, অর্থাৎ জুনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের ২৬ শতাংশ। গুণগত মান বজায় রেখে স্বল্প সময়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য কঠিন। এর ফলে উন্নয়ন-অগ্রগতি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রা স্পর্শ করবে না এবং এমনটি প্রত্যাশিতও নয়।
বরাবরই লক্ষ করা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে শ্লথগতি। এই শ্লথগতির পেছনের কারণ, প্রকল্প গ্রহণে অসতর্কতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা। এডিপি দ্রুত ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের সংস্কৃতি জোরদার করার তাগিদ ইতিপূর্বে বহুবার দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে চিত্র এখনো তথৈবচ। মহাজোট সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অন্য রকম। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা-দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রত্যাশা এ সরকারের কাছে মানুষের বেশি হলেও তা হোঁচট খেয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে এ সরকারের আমলেও তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের এই অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড শুধু কাজের গুণগত মানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা বরাবরই দেখে আসছি, এডিপি বাস্তবায়নে বিভিন্নমুখী জটিলতা বিরাজ করে। এডিপি বাস্তবায়নে ধীর বা শ্লথগতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি অনুদানের টাকা ফেরত যায়। কেন যথাসময়ে এডিপি বাস্তবায়নে এই অপারগতা এবং কারা এ জন্য দায়ী, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এ সমস্যাটি নতুন নয়। প্রতিবছরই এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু কোনো সরকারই এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না।
অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক সরকারগুলো বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প প্রণয়নের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রকল্প হাতে নিয়ে থাকে। আর এসব প্রকল্পের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা রাজনৈতিক চাপও লক্ষ করা যায়। এ কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া ঝুলে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়; কিন্তু ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। ফলে সরকার এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। এ ধরনের সমন্বয়হীনতার কারণেও এডিপির বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে। বিষয়টি বৃহৎ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিধায় এর নিয়মিত তদারকি দরকার। প্রশাসনে গতিশীলতা দরকার এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্প প্রণয়ন না করে বিদ্যমান বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। উচ্চাভিলাষ পরিহার করতে হবে। চিরাচরিত শ্লথগতি থেকে বেরিয়ে এসে যথাসময়ে বরাদ্দ অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.