টেন্ডারবাজি ক্ষমতাসীনদের অধিকার নয়-প্রতিমন্ত্রীর এপিএসের দৌরাত্ম্য

সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের আরেক নায়ক হলেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এপিএস। মাঝেমধ্যেই দুর্নীতি, টেন্ডারবাজির খবরের সঙ্গে তাঁদের কারও কারও নাম আসতে দেখা যায়। এরই সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো রংপুরে ২৩ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাঙ্গামা।


আশ্বস্ত হওয়ার মতো ব্যাপার, এ ঘটনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এপিএসসহ আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশকে সাধুবাদ, তবে সব ক্ষেত্রে তারা এভাবে দায়িত্ব পালন করলে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হতো।
রংপুরের ঘটনায় পাউবোর ২৩ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাগিয়ে নিতে প্রতিমন্ত্রীর এপিএস ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ সরাসরি জড়িত ছিল। তারা পাউবো চত্বরে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে প্রতিযোগী দরপত্র দাখিলকারীদের দূরে রাখে। পুলিশ খবর পেয়ে সেখান থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে, তার মধ্যে ওই এপিএসও রয়েছেন। এ ঘটনায় পাউবো প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সরকারি কাজের টেন্ডারে ভাগ বসানো যেন সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে কখনো দলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত হয়, কখনো সাধারণ ঠিকাদারদের বিতাড়ন করা হয়। টেন্ডারবাজিকে তারা যেন ‘অধিকার’ মনে করে। এই ‘অধিকার’ চর্চায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যখন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস জড়িত হয়ে পড়েন, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্যাধিটি কত গভীর। যে বিবেচনাতেই নিয়োগ পান না কেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে তাঁর তো কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত। সেগুলো না মানলে সরকারদলীয় ক্যাডারই থেকে যান। এ রকম ব্যক্তি কোনোভাবেই নিজেকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিতে পারেন না। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এপিএসদের এভাবে ‘ক্ষমতা চর্চা’ যেমন অনৈতিক তেমনি বেআইনি। এপিএস পদটি সরকারি এবং সরকারের কোষাগার থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হলেও তাঁরা নিয়োগ পান দলীয় সূত্রে। সাধারণত মন্ত্রী-এমপিদের আস্থাভাজন স্থানীয় নেতাদেরই এই পদ দেওয়া হয়।
সরকারি টেন্ডার সবই অনলাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এটা অনুসরণ করলে জোরজবরদস্তির সুযোগ কমে আসে। পাশাপাশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অবশ্যই তাঁদের এপিএস ও তাঁদের নির্বাচনী এলাকার দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; তাঁদের ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধি থেকে বিরত থাকতে হবে। রংপুরে টেন্ডারবাজির ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের শুধু গ্রেপ্তার নয়, শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.