পেনশনের টাকা-৩৯ বছর অনেক সময়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ৩৩ বছর কেটে যাওয়ার পরও কথা না রাখার কথা বলেছিলেন তার কবিতায়। সে কবিতা কালে কালে এদেশে অনেকের মনের কথায় পরিণত হয়েছিল। কারণ, কথা দিয়ে কথা না রাখা লজ্জাজনক হলেও আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত এর শেকড় বিস্তৃত।
রাজনীতিকরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পূরণ করেন না এমন অভিযোগ বিস্তর, রাজনীতিকদের কথার ফুলঝুরিতে লোকে তেমন আস্থাও পায় না। আস্থা জাগে না বলে লোকের হতাশাও হয়তো গভীর রেখাপাত করে না। কিন্তু কেউ যদি রাষ্ট্রের কাছে তার পাওনা না পেয়ে গুমরাতে থাকেন তবে তাকে কী বলা হবে? প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেয়াদ শেষ হলে অবসরে যান। অবসরে গেলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া। রাষ্ট্রের পক্ষে সে দায়িত্ব পালন করার কথা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই। কিন্তু বাস্তবে তেমন দায়িত্ব পালনের নজির দেখা যায় না। অবসরে যাওয়ার পর প্রাপ্য আদায়ের জন্য বয়স্ক, রুগ্ণ, অভাবী মানুষের হয়রানি বোধহয় পৃথিবীর করুণতম দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি। এ দৃশ্য মানুষকে অশ্রুসিক্তও করতে পারে। কিন্তু পেনশনপ্রার্থীদের আকুতি কঠিন হৃদয় সরকারি কর্মকর্তাদের কি সামান্য দোলা দিয়েও যায় না? নইলে এত ভোগান্তির গল্প শুনি কেন আমরা। উৎকোচ না হলে হয়রানি, অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতার কঠিন জালে আবদ্ধ মানুষ পেনশনের আশা ছেড়েই দেন। তবু ভোগান্তি, হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতার পরও ৩৯ বছরে পেনশন না পাওয়ার ঘটনা একটু বেশি ভোগান্তি বলেই বিবেচিত হবে। ২৬ সেপ্টেম্বরের সমকালে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একজন স্বাস্থ্য সহকারী পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর জীবিত অবস্থায় প্রাপ্য আদায়ের অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর তার স্ত্রী কঠিন সংগ্রাম শুরু করেন প্রাপ্য আদায়ের জন্য। তার সংগ্রামের বয়স ৩৯ বছর হলো। প্রশ্ন হলো, এই মর্মান্তিক গল্পের শেষ কোথায়? ভোগান্তি, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার ৪০ বছর পূর্তির আগে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ কেউই কি নিতে পারে না?
No comments