বিশেষ সাক্ষাৎ কার-এমন কিছুই করব না যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় by মনমোহন সিং

ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবে, ১৯৩২ সালে। দেশভাগের পর সপরিবারে চলে আসেন বর্তমান ভারতের অমৃতসরে। তিনি পড়াশোনা করেন ভারতের চণ্ডীগড়ে এবং কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।


অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী মনমোহন সিং কিছু সময় দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। মনমোহন সিং ১৯৯১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ওই বছরই প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সরকারের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার সূচিত হয়। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত বছরের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এক রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন আজ। এ উপলক্ষে ৩ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে তাঁর এই বিশেষ সাক্ষাৎ কার নেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান

মতিউর রহমান  ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ মোকাবিলায় ঢাকা দিল্লির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতকে ট্রানজিটের সুবিধা দিতেও বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। কিন্তু ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো তেমন কিছু পায়নি। আপনার কি মনে হয় না, এই অবস্থা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাকে দীর্ঘায়িত করবে?
মনমোহন সিং  ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আমাদের যে সহযোগিতা দিয়েছে, সে জন্য আমরা অতিশয় কৃতজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের পরিপক্বতা প্রতিফলিত হয়। এসব সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উভয় দেশের নিজ নিজ স্বার্থ সম্পর্কে সচেতনতা থেকে। এগুলো উভয় দেশের নিরাপত্তা বাড়াবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অনুকূল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
আমার মনে হয় না, বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমুখী ক্ষেত্রে সম্পর্কোন্নয়নের প্রয়াসে আমাদের পদক্ষেপগুলোতে কোনো ঘাটতি আছে। এই পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং সব ক্ষেত্রেই আমরা এ লক্ষ্যে আরও এগিয়ে যাব।
২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় যেসব সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম, সেসব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতগুলো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে নদীর পানি বণ্টনসংক্রান্ত বিষয়, ইছামতী ও অন্যান্য নদ-নদী খনন (ড্রেজিং), ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আন্তগ্রিড বিদ্যুৎ -সংযোগ, বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূরীকরণ, স্থলবন্দর, সীমান্ত হাট স্থাপনের মতো সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, তিনবিঘা করিডরসহ অন্যান্য এলাকায় ২৪ ঘণ্টা চলাচলের সুবিধা ইত্যাদি।
সুতরাং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা আমি দেখছি না।
মতিউর রহমান  বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আপনার সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসুবিধা (লাইন অব ক্রেডিট) প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছরেও এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার এই ধীরগতি সম্পর্কে আপনার সরকারের মূল্যায়ন কী? এতে কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে না?
মনমোহন সিং  বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসুবিধা প্রদানের প্রস্তাব কোনো দেশের প্রতি ভারতের এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় ঋণপ্রস্তাব। বাংলাদেশ সরকারের চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর জন্য এই ঋণসুবিধার পরিপূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
খোলামেলা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকল্পগুলো যাতে দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয়সাপেক্ষ বেশ কিছু প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে ড্রেজার, বাস, রেলপথ অবকাঠামো, বগি, লোকোমোটিভ ইত্যাদি। বাস ও রেলওয়ে বগি সরবরাহের জন্য ইতিমধ্যে দুটি চুক্তি (কনট্র্যাক্ট) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামোসংক্রান্ত কতগুলো প্রকল্প বিবেচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এসব উদ্যোগ ও প্রকল্প ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
মতিউর রহমান  অভিন্ন বড় নদীগুলোর কোনো একটিরও উজানে যদি পানি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে ভাটি অঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সব অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ফর্মুলায় পৌঁছাতে আপনার সরকার কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে?
মনমোহন সিং  পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, উভয় দেশের জনগণের জীবনযাপনে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। অভিন্ন নদীগুলো আমাদের দুই দেশের সাধারণ ও মূল্যবান ঐতিহ্য। উভয় দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীগুলোর ওপর চাপ বেড়ে গেছে। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা পরস্পরের চাহিদা এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানির বৈধ ব্যবহারের প্রয়োজন উপলব্ধি করি। ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি আমাদের সহযোগিতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত এবং তা ভালোভাবেই কাজ করছে।
তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টনসহ অন্যান্য নদীর বিষয়েও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইছামতী নদীর খনন সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে, নদীর তীর রক্ষা ও বাঁধ মেরামতের কাজও ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে।
অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগিসহ অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজতে যৌথ নদী কমিশন, বিশেষজ্ঞদের যৌথ কমিটি ও কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে বিশদ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছি এবং আমি এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতির ব্যাপারে আশাবাদী।
আমরা এমন কিছুই করব না, যার কারণে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মতিউর রহমান  বলা হচ্ছে, ছিটমহল বিনিময়, অপদখলীয় জমি, সাড়ে ছয় কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়ের মীমাংসা করতে উভয় দেশই উদ্যোগী হয়েছে। এই সমস্যাগুলো আপনারা কীভাবে সমাধান করতে চান? দিল্লির পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও সীমান্তে ‘নিরস্ত্র’ বাংলাদেশিদের হত্যা চলছেই। কবে আমরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে একটি ‘জিরো কিলিং’ সীমান্ত হিসেবে দেখতে পাব?
মনমোহন সিং  অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে বহু বছরেও এই সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট নই; এ থেকে কোনো দেশই লাভবান হচ্ছে না। এ কারণেই ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি স্থলসীমান্তবিষয়ক সব অনিষ্পন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একমত হয়েছিলাম। আমরা এগুলোর সমাধান করতে চাই ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির আলোকে।
তার পর থেকে অনেক কাজ হয়েছে, বিভিন্ন অনিষ্পন্ন সমস্যা সমাধানের পথে তাৎ পর্যপূর্ণ অগ্রগতিও সাধিত হয়েছে। অপদখলীয় জমি ও সীমান্তের অচিহ্নিত অংশগুলোতে যৌথ জরিপ চালানোর কাজে উভয় পক্ষ উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে উভয় দেশের ছিটমহলগুলোতে মাথা গণনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সাড়ে ছয় কিলোমিটার অচিহ্নিত অংশের মধ্যে কিছু অংশ ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকিটাও হওয়ার পথে এবং চিহ্নিত অংশগুলোর গুচ্ছ মানচিত্র (বাউন্ডারি স্ট্রিপ ম্যাপ) স্বাক্ষরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এসবই ইতিবাচক অগ্রগতি, উভয় তরফ থেকেই এগুলোকে স্বাগত জানানো উচিত।
সীমান্তের [হত্যার] ঘটনাগুলো সম্পর্কে বলতে গেলে, আমি আপনাদের আবারও নিশ্চয়তা দিতে চাই যে অত্যধিক বলপ্রয়োগ আমরা একদমই সহ্য করব না (জিরো টলারেন্স)। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গত এক বছরে সীমান্তের [হত্যার] ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফল্যের সঙ্গে ঢাকা সফর করেছেন এবং আমি আনন্দিত যে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একটি সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলোর ফলে উভয় পক্ষের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে এবং সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড দমনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ যদি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না-ও হয়, ন্যূনতম মাত্রায় নেমে আসবে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে হতে হবে শান্তি ও মৈত্রীর সীমান্ত। এ লক্ষ্যে উভয় পক্ষকে একত্রে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে, ধৈর্য ও সংযম রাখতে হবে।
মতিউর রহমান  দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য ভারতের সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে? দীর্ঘদিনের অশুল্ক বাধা অপসারণ করা হবে কীভাবে?
মনমোহন সিং  গত অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৬৮ শতাংশ; তবে এর পরও ব্যাপক বাণিজ্যবৈষম্য রয়ে গেছে। সম্প্রতি সাফটার আওতায় বাংলাদেশকে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে; সার্কের সব স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) জন্য ৪৮০টি বাদে সব পণ্যের জন্য বিনা শুল্কে প্রবেশাধিকার রয়েছে। ২০০৮ সালের এপ্রিলে ভারত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য যে শুল্কছাড় কর্মসূচি (ডিউটি ফ্রি ট্যারিফ প্রেফারেন্স স্কিম) চালু করেছে, বাংলাদেশ তা-ও গ্রহণ করার যোগ্যতা রাখে। ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি উৎ সাহিত করতে আমরা আরও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
আমি স্বীকার করি, দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের বাণিজ্যকে টেকসই করতে হলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যবৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারি যৌথ প্রয়াস দ্বারা, বাজারে প্রবেশগম্যতা বাড়ানো, বিনিয়োগবান্ধব নীতিসহ উভয় পক্ষের জন্য পরিপূরক নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে।
উভয় পক্ষে অশুল্ক বাধার সমস্যাও আমাদের দূর করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো গড়ে তুলছি; সেসবের মধ্যে রয়েছে সাড়ে ১২ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে স্থল শুল্কবন্দর, যেগুলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়ক হবে। বাংলাদেশেরও রয়েছে একই ধরনের পরিকল্পনা। সীমান্ত হাট, বন্দর অবকাঠামো, সমন্বিত তল্লাশিচৌকি (ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট) প্রভৃতি উদ্যোগও দ্বিমুখী বাণিজ্য বাড়াতে সহায়ক হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, মেঘালয়ের কালাইচর-বালিয়ামারীতে ২০১১ সালের জুলাই মাসে সীমান্ত হাট উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অধীন পণ্যদ্রব্য পরীক্ষার ব্যবস্থাগুলো উন্নতকরণে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। আধা-শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো নিরসনের ব্যাপারে বাণিজ্যবিষয়ক একটি যৌথ কার্যকরী দল (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ) গঠন করা হয়েছে।
মতিউর রহমান  প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখা হয় সরকারকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আপনি কি মনে করেন, আপনার সরকার ও শেখ হাসিনার সরকার এমন একটা টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যা স্থায়ী হবে? আপনার আসন্ন ঢাকা সফর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কী গুণগত পরিবর্তন আপনি আশা করছেন?
মনমোহন সিং  একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রতিবেশী; আমাদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো একই রকমের। আমাদের তাকানো উচিত ভবিষ্যতের দিকে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল; আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা দীর্ঘমেয়াদি ও পারস্পরিক লাভজনক অংশদারি চাই, যেখানে উভয় পক্ষ পরস্পরের সমস্যা ও উন্নয়ন-প্রত্যাশার প্রতি সংবেদনশীল থাকবে।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ভারত সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই আসন্ন বাংলাদেশ সফর। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি এক নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের জনগণের ঐকান্তিক শুভ কামনা ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার এই সফরের মধ্য দিয়ে যদি সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক আস্থার বন্ধন দৃঢ়তর হয়, তবেই আমি খুশি হব।
মতিউর রহমান  আপনাকে ধন্যবাদ।
মনমোহন সিং  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.