পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার পাপ কখনো ক্ষমাযোগ্য হবে না
১১৫. ওয়া মান ইয়্যুশা-কি্বকি্বর্ রাসূলা মিম্বা'দি মা তাবাইয়্যানা লাহুলহুদা ওয়া ইয়াত্তাবি' গাইরা ছাবীলিল মু'মিনীনা নুওয়ালি্লহী মা-তাওয়াল্লা ওয়া নুস্লিহী জাহান্নামা; ওয়া ছা-আত্ মাসীরা। ১১৬. ইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াগ্ফিরু আন ইয়্যুশ্রাকা বিহী ওয়া ইয়াগ্ফিরু মা-দূনা যা-লিকা লিমান ইয়্যাশা-উ; ওয়া মান ইয়্যুশ্রিক বিল্লাহি ফাক্বাদ দ্বাল্লা দ্বালা-লাম্ বায়ী'দা।
১১৭. ইন ইয়্যাদ্ঊ'না মিন দূনিহী ইল্লা ইনা-ছান; ওয়া ইন ইয়্যাদ্ঊ'না ইল্লা শাইত্বা-নাম্ মারীদা।
১১৮. লাআ'নাহুল্লাহু, ওয়া ক্বা-লা লাআত্তাখিযান্না মিন্ ই'বা-দিকা নাসীবাম্ মাফরূদ্বা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১১৫-১১৮]
অনুবাদ
১১৫. যে ব্যক্তি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করবে তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার অর্থাৎ মুসলমান হওয়ার পরও এবং মুসলমানদের পথ ছেড়ে ভিন্নপথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ধাবিত করব, যেদিকে সে যেতে চায়। আর পরিণতিতে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে পোড়াব, সেই জাহান্নাম কত না নিকৃষ্ট আবাসস্থল।
১১৬. আল্লাহ তায়ালা তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না, এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দিতে পারেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করল সে চরমভাবে বিপথগামী হয়ে ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে গেল।
১১৭. আল্লাহ ছাড়া আর কার শরণাপন্ন হয় তারা! তারা ডাকে কোনো দেবীকে অথবা নিকৃষ্ট শয়তানকে।
১১৮. সেই শয়তানের ওপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। সে আল্লাহকে বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের এক অংশকে নিজের দলে শামিল করেই ছাড়ব।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলো আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায়ই এসেছে। যারা জাগতিক স্বার্থের প্রয়োজনে অথবা দুষ্কর্মের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.)-কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করল বা তাঁর আদেশ অমান্য করল অথবা তাঁর বিরোধিতা শুরু করল এবং মুসলমানদের পথ ছেড়ে পাপ-পঙ্কিলতার ভিন্নপথ অনুসরণ করতে শুরু করল, তারা কোনো দিন হেদায়েতের পথ পাবে না। তারা চিরদিনের জন্য বিপথগামী বা 'মুরতাদ'-এ পরিণত হবে। তাদের কৃতকর্মের জন্যই আল্লাহ তায়ালা তাদের সেই পাপ-পঙ্কিলতার পথে ছেড়ে দেবেন। আসলে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য সেই অভিশপ্ত পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন এমন নয়, বরং তারাই সেই পথ বেছে নিয়েছে। সেই পথ জাহান্নামের পথ, সেই পথ অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথ।
১১৬-১৭ ও ১৮ নম্বর আয়াতে তাওহিদ বা একত্ববাদের মর্মকথা উল্লেখ করে একত্ববাদে দৃঢ়চিত্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এখানে মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহ বলছেন, একমাত্র আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার মতো পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য যেকোনো পাপ সেটা ছোট পাপই হোক, বা বড় পাপই হোক, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার মতো পাপ কাউকে ক্ষমা করবেন না। যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তারা আসলে বিপথগামী হয়ে যায়। বিপথগামী হয়ে তারা সত্য থেকে অনেক দূরে সরে যায়। যারা সত্য থেকে দূরে সরে যায়, তারা খণ্ডিতভাবে কখনো কোনো ভালো কাজ করলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা বিপথগামীই থেকে যায়। যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তারা আসলে কী করে? তারা হয়তো কোনো দেবীর পূজা করে; আর তারা যখন ডাকে তখন আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘনকারী শয়তানকেই ডাকে। এ শয়তান আসলে কে? আল্লাহ তায়ালা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, এ শয়তান হচ্ছে সেই অভিশপ্ত সত্তা, যে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে আল্লাহর কোনো কোনো বান্দাকে সে নিজের অভিশপ্ত পথে এনেই ছাড়বে। আসলে মুশরিকরা সেই শয়তানকেই অনুসরণ করে এবং তার পূজা করে। ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে যারা বিচ্যুত হয়ে যায়, তারা শয়তানেরই অনুসারী। ইসলামের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায়ের আলো দেখার পরও যারা বিপথগামী হয়ে গেছে, সেই মুরতাদদের করুণ পরিণতি সম্পর্কে এ আয়াতগুলোতে স্পষ্ট আভাস দেওয়া হয়েছে। এসব হতভাগ্যের ঘাড়ের ওপর পা রেখেই শয়তান তার চ্যালেঞ্জ পূরণ করবে। আর ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার মূল কারণ বা তারা মৌলিকভাবে যে জায়গাটাতে পথভ্রষ্ট সেটা হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments