পবিত্র কোরআনের আলো-কুকর্ম করে অন্যের ওপর দোষ চাপানো এবং রাসুলকে বিভ্রান্ত করা জঘন্য পাপ
১১২. ওয়া মাইঁয়্যাকছিব খাত্বীআতান আও ইছমান ছুম্মা ইয়ার্মি বিহী বারীআন ফাক্বাদিহ্ তামালা বুহ্তা-নাওঁ ওয়া ইছমাম্ মুবীনা-। ১১৩. ওয়া লাওলা- ফাদ্বলুল্লাহি আ'লাইকা ওয়ারাহ্মাতুহূ লাহাম্মাত্ ত্ত্বা-য়িফাতুম্ মিনহুম আইঁয়্যুদ্বিল্লূকা; ওয়ামা- ইউদ্বিল্লূনা ইল্লা- আনফুছাহুম ওয়ামা- ইয়াদ্বুর্রূনাকা মিন্ শাইয়িন; ওয়া আনযালাল্লাহু আ'লাইকাল কিতাবা ওয়ালহিকমাতা ওয়া আ'ল্লামাকা মা-লামতাকুন তা'লামু; ওয়া কা-না ফাদ্বলুল্লাহি আ'লাইকা আ'য্বীমা-
১১৪. লা-খাইরা ফী কাছীরিম্ মিন্ নাজওয়া-হুম্ ইল্লা- মান্ আমারা বিসাদাক্বাতিন আও মা'রূফিন আও ইসলাহিম্ বাইনান্নাছি; ওয়া মাইঁয়্যাফআ'ল্ যা-লিকাব্ তিগা-আ মারদ্বাতিল্লাহি ফাছাওফা নু'তীহি আজরান আ'য্বীমা-।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১১২-১১৪]
অনুবাদ : ১১২. যে ব্যক্তি একটি ভুল বা পাপ কাজ করল, এরপর দোষ চাপিয়ে দিল একজন নির্দোষ মানুষের ওপর, সে ভীষণ অন্যায়ভাবে একটি অপবাদ চাপাল এবং জঘন্য পাপ কাজ করল।
১১৩. এ অবস্থায় যদি আপনার ওপর আল্লাহ প্রদত্ত সৌভাগ্য ও দয়া না থাকত, তাহলে এদের একদল লোক তো আপনাকে বিভ্রান্ত করেই ফেলেছিল। যদিও তারা এমন আচরণ করে নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি এবং এভাবে আপনার কোনো ক্ষতিও সাধন করতে পারেনি। আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপর কিতাব ও প্রজ্ঞা নাজিল করেছেন এবং আপনাকে জ্ঞান দান করেছেন_এমন জ্ঞান, যা এর আগে আপনি জানতেন না। আপনার ওপর আল্লাহর দেওয়া সৌভাগ্য ছিল অনেক বড়।
১১৪. এদের অধিকাংশ গোপন শলাপরামর্শের মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত নেই। তবে যদি কেউ এর মাধ্যমে কোনো দান-খয়রাত বা সৎ কাজ অথবা মানবসমাজে সংশোধন আনয়নের লক্ষ্যে কাজ করে, তা ভিন্ন কথা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যদি কেউ কাজ করে, তবে আমি অতি শিগগিরই তাদের মহাপুরস্কার দেব।
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলো জনৈক আনসার মুসলমানের চুরির ঘটনাকে প্রসঙ্গ করেই এসেছে। সেই মুসলমান ব্যক্তিটি চৌর্যবৃত্তির কাজ করেছিল, সেটি একটি অপরাধ। পরে সে এর চেয়ে বড় আরো একটি অপরাধ করেছে চুরির দায়টি অপর একজন নির্দোষ ব্যক্তির ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। এরপর সে মহা-অপরাধ করেছে রাসুল (সা.)-কে মিথ্যা কসম খাওয়ার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে বিচারের ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এখানে এ কথাগুলোই বলা হয়েছে। চৌর্যবৃত্তি একটা ঘৃণ্য অপরাধ। কিন্তু কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর অপরাধের অপবাদ চাপানো এর চেয়েও অনেক বড় অপরাধ। আর বিচারের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা তো অবশ্যই মহা-অপরাধ। আবার এসবই করা হয়েছে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিয়ে একজন অমুসলিম ইহুদির ওপর। ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার এ ধরনের অপব্যবহারও একটি জঘন্য অপরাধ। কার্য পরম্পরায় কিছু মুসলমান এ ধরনের কতগুলো অপরাধ সংঘটিত করে ফেলেছে। এখানে এ অবস্থাটার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এ ধরনের আচরণগুলো করে তারা কিন্তু কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি এবং রাসুল (সা.)-এর কোনো ক্ষতিও করতে পারেনি। অবশ্য এটা সম্ভব হয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বা নবুয়তপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে। আল্লাহ তায়ালা ওহির মাধ্যমে সত্যটা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, যা তাঁর আগে জানা ছিল না। রাসুল (সা.) নিজেও মনে করেছিলেন যে হয়তো ইহুদি লোকটিই চুরি করেছে। কারণ প্রকৃত চোর এবং তার মুসলিম স্বজনরা যেভাবে জোটবদ্ধ হয়ে মিথ্যা কসম খাচ্ছিল, তাতে এ রকম মনে হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক।
১১৪ নম্বর আয়াতে গোপন পরামর্শের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সাধারণত অধিকাংশ গোপন পরামর্শই হয়ে থাকে অসৎ উদ্দেশ্যে, অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। গোপন পরামর্শের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার পর বলা হয়েছে, কোনো কোনো সৎ কাজের পরামর্শ গোপনেও হয়। নিভৃতে দান-খয়রাত করা বা সমাজ সংস্কারের জন্য গোপনেও শলাপরামর্শ হতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা গোপনে কাজ করে তাদের জন্য অনেক বড় ধরনের প্রতিদান আল্লাহর হাতে রয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments