এখন বাংলাদেশের যা করা উচিত-মনমোহনের ঢাকা সফর
বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দাবি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের প্রধান দাবি ট্রানজিট-সংক্রান্ত সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেনি। সফরটি চূড়ান্ত বিচারে অসফল; তবে বাংলাদেশের জন্য নানা বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা, বিচার-বিবেচনা করার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
প্রথমত, এখন আমাদের উপলব্ধি, ভারত আমাদের প্রধান দাবি না মিটিয়েই তাদের প্রধান দাবিটি আদায়ের লক্ষ্যে তত্পর হয়েছিল। এটা বন্ধুসুলভ মনোভাবের পরিচায়ক নয়; উভয় পক্ষের কল্যাণ হোক—এই মনোভঙ্গির প্রকাশ নয়। দ্বিতীয়ত, এই সুবাদে আমাদের কাছে পরিষ্কার হলো, আমাদের সরকার ট্রানজিটের ব্যাপারে যথেষ্ট হিসাব-নিকাশ ও বোঝাপড়া না করেই ভারতকে এই সুবিধা দিতে প্রস্তুত হয়েছিল। জাতীয় সংসদ, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ না করে, মূলত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর দুজন উপদেষ্টার মধ্যেই ট্রানজিট-সম্পর্কিত সব আলোচনা, চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সীমাবদ্ধ রেখেছিল। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। আর পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে যা হয়, ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার সুবিধা-অসুবিধা, বা ফলাফল-পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা কোনো পর্যায়েই গড়ে ওঠেনি। সর্বোপরি, এ বিষয়ে জনসাধারণের মনোভাব জানা-বোঝার চেষ্টাও আমাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে ছিল না।
তবে এটা বলতেই হবে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর থেকে ভারতের অপ্রত্যাশিতভাবে পিছিয়ে যাওয়ার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের সরকার ট্রানজিট চুক্তির সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর না করে যথার্থ কাজটিই করেছে। এর ফলে ভারতের কাছে দীর্ঘ অমীমাংসিত অনেকগুলো বিষয়ের ন্যায্য সুরাহা আদায়ে বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্রটি রক্ষা পেয়েছে। এই সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করার সুযোগ এল, শুধু বন্ধুত্বের আবেগ, শুভেচ্ছা-শুভকামনা দিয়ে ভারতের সঙ্গে সমস্যার সমাধান অতীতে হয়নি, বর্তমানেও হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার নয়। বাস্তবিক দেওয়া ও নেওয়ার হিসাব-নিকাশই এ ক্ষেত্রে প্রকৃত নির্ধারক। এ ব্যাপারে দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়ে মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সর্বোপরি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। সবকিছু করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, ব্যাপক আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে।
ভারতের সঙ্গে আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব চাই; চাই এমন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, যার ফলে সত্যিই উভয় পক্ষের জনগণ উপকৃত হবে। আমরা ভারতের দীর্ঘদিনের প্রধান দাবি—উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে ও সীমান্ত নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করা—পূরণ করেছি; আমাদের দাবিগুলোও ভারতকে পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বোঝাতে হবে, তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য ভাগাভাগির ব্যবস্থা না করে, ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন তথা অপদখলীয় জমি ও ছিটমহলগুলোর সমস্যা অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রেখে ট্রানজিট-সুবিধা পাওয়া যাবে না।
তবে এটা বলতেই হবে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর থেকে ভারতের অপ্রত্যাশিতভাবে পিছিয়ে যাওয়ার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের সরকার ট্রানজিট চুক্তির সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর না করে যথার্থ কাজটিই করেছে। এর ফলে ভারতের কাছে দীর্ঘ অমীমাংসিত অনেকগুলো বিষয়ের ন্যায্য সুরাহা আদায়ে বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্রটি রক্ষা পেয়েছে। এই সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করার সুযোগ এল, শুধু বন্ধুত্বের আবেগ, শুভেচ্ছা-শুভকামনা দিয়ে ভারতের সঙ্গে সমস্যার সমাধান অতীতে হয়নি, বর্তমানেও হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার নয়। বাস্তবিক দেওয়া ও নেওয়ার হিসাব-নিকাশই এ ক্ষেত্রে প্রকৃত নির্ধারক। এ ব্যাপারে দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়ে মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সর্বোপরি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। সবকিছু করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, ব্যাপক আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে।
ভারতের সঙ্গে আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব চাই; চাই এমন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, যার ফলে সত্যিই উভয় পক্ষের জনগণ উপকৃত হবে। আমরা ভারতের দীর্ঘদিনের প্রধান দাবি—উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে ও সীমান্ত নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করা—পূরণ করেছি; আমাদের দাবিগুলোও ভারতকে পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বোঝাতে হবে, তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য ভাগাভাগির ব্যবস্থা না করে, ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন তথা অপদখলীয় জমি ও ছিটমহলগুলোর সমস্যা অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রেখে ট্রানজিট-সুবিধা পাওয়া যাবে না।
No comments