এখন ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে by কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদের জন্ম হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। বিশেষ করে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। চুক্তির যে খসড়া তৈরি হয়েছিল, তাতে দুই দেশই মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিল।
দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকেও এই ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হতে যাচ্ছে।
কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় আগমনের এক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানান। এমনকি তিনি মনমোহনের সঙ্গে ঢাকায় আসতেও রাজি হননি। এটি তীরে এসে তরী ডোবানোর মতো। এই ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই হতাশ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিট বা আন্তসংযোগ প্রশ্নে যে সম্মতিপত্র সই হওয়ার কথা ছিল, তা-ও সম্ভব নয়।
শেষ পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও আন্তসংযোগ সম্মতিপত্র সই ছাড়াই মনমোহন সিংয়ের সফর শেষ হয়েছে। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, ছিটমহল বিনিময় এবং সহযোগিতার রূপরেখা নামে যে চুক্তি সই হয়েছে, তা সামনে এগোনোর ভিত্তি হতে পারে।
তবে আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কোনো কমতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আরও স্পষ্ট করে বললে, সেখানকার আমলাতন্ত্রের একাংশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চায় না। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টনের সময়ও তারা নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে সেবার তারা সফল হয়নি।
২০১০ সালে নয়াদিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ সেই অনুযায়ী কাজ করেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে ভারতের যে উদ্বেগ ছিল, তা কাটাতে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। আন্তসংযোগের ক্ষেত্র তৈরি করতেও যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চাই। অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারতের ধীরে চলা নীতি আমাদের হতাশ করেছে। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
এই সফরে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার পুরো মিল ঘটেনি সত্য, কিন্তু এটাই তো শেষ সফর নয়। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। এই সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে দুই দেশকে সামনে এগোতে হবে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা ভারতকেই দূর করতে হবে।
সবশেষে বলব, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আমাদের সবাইকে একযোগেই কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্যে সার্ক ইকোনমিক ইউনিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইকোনমিক ইউনিয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সব দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে একযোগে এগোনোর কথা ভাবতে হবে। আমরা যে সহযোগিতার কথা এত দিন বলে আসছি, তা বাস্তবে রূপ দিতে হলে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ করে, বৃহৎ দেশগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অন্যথায় সার্কের মতো প্রস্তাবিত দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়নও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না।
আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, এই অঞ্চলের পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান করতে যৌথ ব্যবস্থাপনার ওপরই জোর দিতে হবে। সুযোগ ও সম্ভাবনাকে সমান ভাগে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
কাজীখলীকুজ্জমান আহমদ: অর্থনীতিবিদ ও চেয়ারম্যান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন।
কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় আগমনের এক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানান। এমনকি তিনি মনমোহনের সঙ্গে ঢাকায় আসতেও রাজি হননি। এটি তীরে এসে তরী ডোবানোর মতো। এই ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই হতাশ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিট বা আন্তসংযোগ প্রশ্নে যে সম্মতিপত্র সই হওয়ার কথা ছিল, তা-ও সম্ভব নয়।
শেষ পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও আন্তসংযোগ সম্মতিপত্র সই ছাড়াই মনমোহন সিংয়ের সফর শেষ হয়েছে। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, ছিটমহল বিনিময় এবং সহযোগিতার রূপরেখা নামে যে চুক্তি সই হয়েছে, তা সামনে এগোনোর ভিত্তি হতে পারে।
তবে আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কোনো কমতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আরও স্পষ্ট করে বললে, সেখানকার আমলাতন্ত্রের একাংশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চায় না। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টনের সময়ও তারা নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে সেবার তারা সফল হয়নি।
২০১০ সালে নয়াদিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ সেই অনুযায়ী কাজ করেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে ভারতের যে উদ্বেগ ছিল, তা কাটাতে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। আন্তসংযোগের ক্ষেত্র তৈরি করতেও যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চাই। অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারতের ধীরে চলা নীতি আমাদের হতাশ করেছে। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
এই সফরে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার পুরো মিল ঘটেনি সত্য, কিন্তু এটাই তো শেষ সফর নয়। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। এই সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে দুই দেশকে সামনে এগোতে হবে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা ভারতকেই দূর করতে হবে।
সবশেষে বলব, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আমাদের সবাইকে একযোগেই কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্যে সার্ক ইকোনমিক ইউনিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইকোনমিক ইউনিয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সব দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে একযোগে এগোনোর কথা ভাবতে হবে। আমরা যে সহযোগিতার কথা এত দিন বলে আসছি, তা বাস্তবে রূপ দিতে হলে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ করে, বৃহৎ দেশগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অন্যথায় সার্কের মতো প্রস্তাবিত দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়নও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না।
আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, এই অঞ্চলের পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান করতে যৌথ ব্যবস্থাপনার ওপরই জোর দিতে হবে। সুযোগ ও সম্ভাবনাকে সমান ভাগে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
কাজীখলীকুজ্জমান আহমদ: অর্থনীতিবিদ ও চেয়ারম্যান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন।
No comments