শঙ্কা ও সংকটে মোড়া জনজীবন-সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির। এর চরম বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। নানা শঙ্কাও তাড়া করছে সংগতভাবেই। দেশে একের পর এক যেসব ঘটনা ঘটছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তা অস্বাভাবিকতার মাত্রা অতিক্রম করেছে। কোনো কিছুতেই সরকারের সুস্পষ্ট এবং অনেক ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও মিলছে না।


রাজনৈতিক অঙ্গনে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব প্রকট রূপ নিয়েছে। সব কিছুর সঙ্গে সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ায় শঙ্কা ও উদ্বেগজনক প্রশ্নের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ডাকা আজকের হরতালে জনজীবনে শঙ্কার নতুন তীর বিদ্ধ হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। হরতালের কারণে আজকের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জনজীবন গভীর সংকটে নিপতিত।
একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত থাকে কিংবা হয়ে ওঠে, এর অপচ্ছায়া পড়ে দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে এখানে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংকট শুধু গণতন্ত্রের জন্যই হুমকি নয়, জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটায়। বাংলাদেশের ঘটনাবলি এরই সাক্ষ্যবহ। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তা আরো প্রকট করল। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এসব বিষয়ে যে এলোমেলো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তাঁদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, পাশাপাশি সমাজবিরোধী শক্তিও আশকারা পায়। দেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত প্রায় ২৭ মাস ১৯ দিনে সারা দেশে ১০০ মানুষ অপহৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনের লাশ মিলেছে, তিনজন মুক্তি পেয়েছেন, ৭৬ জন এখনো নিখোঁজ। উল্লিখিত পরিসংখ্যানে রাষ্ট্রের বিবর্ণ চিত্রই ফুটে উঠেছে। শুধু যে সমাজবিরোধী শক্তিই মানুষ খুন কিংবা অপহরণ করছে তা-ই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারাও এমন ঘটনা ঘটছে- এ অভিযোগ স্পষ্ট। স্বজন হারানো মানুষদের অবস্থাটা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা কতটা অনুভব করতে পারছেন, এ প্রশ্নও বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এ অবস্থায় জবাবদিহির পাট চুকিয়ে ফেলার কোনোই অবকাশ নেই। রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেন অপরাধ কিংবা অপরাধীরা স্থান না পায়, তা নিশ্চিত করার সর্বাগ্রে দায় সরকারের। পাশাপাশি বিরোধী দলকে দেশ-জাতির কথা বিবেচনায় রেখে অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে ওঠার পথ সন্ধান করতেই হবে। সম্মিলিতভাবেই শঙ্কা, সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ বের করতে হবে।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যেন আরো সংঘাতময় হয়ে না ওঠে সে জন্য সরকার ও বিরোধী পক্ষকে সহনশীলতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। সব অশুভ কর্মকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং এর যবনিকাপাত ঘটানোর দায় সর্বাগ্রে সরকারের। দেশ ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকরা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হন তাহলে এর মাসুল সবাইকে গুনতে হবে। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। কাজেই সরকার ও বিরোধী পক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.