হেনার মৃত্যু-এখনো গেল না আঁধার by আয়শা খানম
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের কিশোরী হেনার মৃত্যু আবারও গোটা সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার সবাইকে জানান দিয়ে গেল, বাংলাদেশের সমাজের ভেতরে এখনো অনেক কুসংস্কার, অনেক নারী ও মানবাধিকারবিরোধী ধারণা বিদ্যমান। ১০০ বছর আগে রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত নারীর মানবসত্তার অধিকার দিতে প্রস্তুত নয় একদল মানুষ।
রোকেয়া সাখাওয়াৎ থেকে আজ এগিয়েছি অনেক। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সমাজমানসের ভেতরে যে আলোর প্রসার, যে মনুষ্যত্বের চেতনাবোধের বিকাশ দরকার, তা এখনো সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক স্তরেই দেখা যায় না। অনেক অর্জন, অনেক মৌলিক অর্জনের পাশাপাশি অনেক পশ্চাৎ পদ চিন্তাচেতনা—পশ্চাৎ পদতা বিদ্যমান।
হেনার ওপর যে নির্যাতন হলো, সেই নির্যাতনকারী এ ধরনের ঘটনা এর আগেও একাধিকবার ঘটিয়েছে। প্রতিবারই তার এলাকার মানুষজন ক্ষমা করেছে নিজস্ব বিবেচনায় তাকে মৃদু তিরস্কার বা অর্থদণ্ড প্রদান করে বা হালকা শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। কখনো তারা আইন-আদালতের কাছে যায়নি।
তাদের বিচার সব সময় নির্যাতনকারীর পক্ষে, নির্যাতনের শিকার নারী-কিশোরীর বিপক্ষে। এবারও তাই হয়েছে। ধর্ষক হিসেবে তার শাস্তি প্রথমে ২০০টি দোররা মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারপর তা কমে যায়; ১০০টি দোররা মারার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ধর্ষণের যে শিকার, তাকেও দোররা মারা হয়। ধর্ষণকারী ও ধর্ষণের শিকার দুজনকেই একই মাত্রার শাস্তি দেওয়ার এই বিধান তারা কোথায় পেল? পুরো প্রক্রিয়াটি আইন ও বিচারবহির্ভূত।
দোররা মারার ফতোয়া প্রদান আইনত দণ্ডনীয়। এই ফতোয়া তারা কীভাবে দেয়? উল্লেখ্য, বিচার প্রদানের জন্য যে পাঁচজন তারা ঠিক করল, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আছেন, ইমাম আছেন!
নারীর অধিকার, নারীর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুরুষের একার নয়, এ ক্ষেত্রে নারীসমাজেরও করণীয় আছে। ধর্ষক পুরুষের স্ত্রী হয়ে হেনার ধর্ষণকারীর স্ত্রী যে ভূমিকা নিলেন, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়।
হেনার মর্মান্তিক অকালমৃত্যু ও তার এই ঘটনায় হেনা বা তার পরিবার অপমানিত হয়নি। অপমানিত হয়েছি আমরা যারা কয়েক দশক ধরে সকল প্রকার ফতোয়া, দোররা মারা এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলছি এবং বিশেষ করে যারা দুই বছর আগে ফতোয়া, মৌলবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদানের জন্য সংগ্রাম করে, রিট পিটিশন করে রায় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অপমানিত হয়েছে সমাজসত্তা।
অপমানিত হয়েছে গোটা সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্র, যেখানে সমাজ ধর্ষকের পক্ষে ওকালতি করে তার পাশে দাঁড়ায়। রাষ্ট্র ও সরকার তাদের দায়দায়িত্ব কীভাবে পালন করছে, তা পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখবেন। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমাদের আত্মপর্যালোচনা করা দরকার, কোন পদ্ধতিতে কীভাবে আমাদের প্রচার ও জনমত গঠনের কাজ করা দরকার, যাতে সমাজমানস পরিবর্তিত হয় দ্রুত নারীর মানবাধিকারের পক্ষে। গড়ে ওঠে মানবাধিকারের সংস্কৃতি।
সরকারের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী সদস্য থাকা যেমন জরুরি এবং অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের সূচক, তেমনি পাশাপাশি ব্যাপক গণনারীর জীবনের বিস্তৃত প্রসারিত পরিসর, নিরাপদ পরিসর তৈরি রাষ্ট্র-সরকার ও সমাজের জরুরি কর্তব্য। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলিত হয়েছে, বিভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়েছে হেনার ক্ষেত্রে। হেনার নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র। এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এর দায় আমাদের স্বীকার করতে হবে।
উদ্বেগজনক হলেও সত্য, ২০১০ সালে বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের চিত্র হচ্ছে, মোট পাঁচ হাজার ৭৪০ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৫৯৩ জন।
সুতরাং সমাজ-উন্নয়ন ও নানামুখী অগ্রসরমাণতার চিত্র ও তথ্য আশান্বিত করতে পারে না। সরকার, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের কাছে আমার বিনীত সুপারিশ হচ্ছে:
হাইকোর্টের রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারাবাহিক প্রচার করা হোক। তথ্য অধিকার কমিশন, মানবাধিকার কমিশন নিজেরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে এবং এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করবে।
এই কাজে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সংস্কৃতি, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচেতন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং যার যার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে যথেষ্ট সক্রিয় করে তুলবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সার্কুলার দিয়ে এই রায়গুলো জানিয়ে দেবে।
ইমাম প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচি নতুন করে ঢেলে সাজান। ইমাম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রামীণ-সাধারণ নারীর অধিকার রক্ষায় কতটুকু কাজে লাগছে, তার মূল্যায়ন দরকার।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, তাদের আইন ও বিচারের অধীনে আনবে।
সালিসকারীদের যেভাবেই হোক দ্রুত আইনানুগ বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
সমাজকে ধর্ষকের পক্ষে নয়, ধর্ষণের শিকার, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াতে হবে—এই চেতনা জাতীয়ভাবে আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হোক, এই সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পাক।
সংগঠিত ঘটনার এলাকার সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান মেম্বরদের সচেতন দায়িত্বশীল ভূমিকা আরও পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে এখনো।
নারী সমাজকে ধর্ষণসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতন-সক্রিয়ভাবে দাঁড়াতে হবে।
হেনার নির্যাতনকারীদের বিচার চাই, শাস্তি চাই আমরা সবাই।
আমরা আজ বিবেকের দংশনে জর্জরিত।
জাতীয় সংসদের নারী সাংসদদের নিয়ে নারী-আন্দোলনকর্মী সংগঠকদের একটা ‘উইমেন কক্কাস’ গঠনের পরিকল্পনা ও পরামর্শ ছিল গত নির্বাচনের আগে। সেই উইমেন কক্কাস গঠন প্রয়োজন। এই কক্কাস শুধু নারীর প্রতি বিরাজমান বৈষম্য দূর করার পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণের কাজেই প্রয়োজন নয়, প্রয়োজন হয় এ ধরনের সময় সময় গজিয়ে ওঠা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে, নারী সাংসদেরা (১৯ জন নির্বাচিত, ৪৫ জন মনোনীত—মোট ৬৪ জন) মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের কর্মী-সংগঠকদের নিয়ে সারা দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৭২টি উপজেলায় কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং একটা প্রতিজ্ঞা বা শপথ গ্রহণ করা হবে যে, কোনোমতেই আর এই দেশে কোনো নিষ্ঠুর আচরণ নারীর প্রতি নয়, কিশোরীর প্রতি নয়, শিশুর প্রতি নয়। কোনো প্রকার ফতোয়া নয়; ফতোয়াদান, বেত্রাঘাত বা কোনো বিচারকার্য নিজের হাতে নেওয়া নয়।
পাশাপাশি নারী সমাজের আরও যথাযথভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আমরা আজ গভীরভাবে ব্যথিত, মর্মাহত, উদ্বিগ্ন যে আমাদের সমাজমানস এবং এর ভেতরের সত্তা এখনো সচেতন-শিক্ষিত ও যথাযথভাবে আলোকিত হয়ে উঠছে না।
আয়শা খানম: সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
হেনার ওপর যে নির্যাতন হলো, সেই নির্যাতনকারী এ ধরনের ঘটনা এর আগেও একাধিকবার ঘটিয়েছে। প্রতিবারই তার এলাকার মানুষজন ক্ষমা করেছে নিজস্ব বিবেচনায় তাকে মৃদু তিরস্কার বা অর্থদণ্ড প্রদান করে বা হালকা শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। কখনো তারা আইন-আদালতের কাছে যায়নি।
তাদের বিচার সব সময় নির্যাতনকারীর পক্ষে, নির্যাতনের শিকার নারী-কিশোরীর বিপক্ষে। এবারও তাই হয়েছে। ধর্ষক হিসেবে তার শাস্তি প্রথমে ২০০টি দোররা মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারপর তা কমে যায়; ১০০টি দোররা মারার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ধর্ষণের যে শিকার, তাকেও দোররা মারা হয়। ধর্ষণকারী ও ধর্ষণের শিকার দুজনকেই একই মাত্রার শাস্তি দেওয়ার এই বিধান তারা কোথায় পেল? পুরো প্রক্রিয়াটি আইন ও বিচারবহির্ভূত।
দোররা মারার ফতোয়া প্রদান আইনত দণ্ডনীয়। এই ফতোয়া তারা কীভাবে দেয়? উল্লেখ্য, বিচার প্রদানের জন্য যে পাঁচজন তারা ঠিক করল, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আছেন, ইমাম আছেন!
নারীর অধিকার, নারীর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুরুষের একার নয়, এ ক্ষেত্রে নারীসমাজেরও করণীয় আছে। ধর্ষক পুরুষের স্ত্রী হয়ে হেনার ধর্ষণকারীর স্ত্রী যে ভূমিকা নিলেন, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়।
হেনার মর্মান্তিক অকালমৃত্যু ও তার এই ঘটনায় হেনা বা তার পরিবার অপমানিত হয়নি। অপমানিত হয়েছি আমরা যারা কয়েক দশক ধরে সকল প্রকার ফতোয়া, দোররা মারা এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলছি এবং বিশেষ করে যারা দুই বছর আগে ফতোয়া, মৌলবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদানের জন্য সংগ্রাম করে, রিট পিটিশন করে রায় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অপমানিত হয়েছে সমাজসত্তা।
অপমানিত হয়েছে গোটা সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্র, যেখানে সমাজ ধর্ষকের পক্ষে ওকালতি করে তার পাশে দাঁড়ায়। রাষ্ট্র ও সরকার তাদের দায়দায়িত্ব কীভাবে পালন করছে, তা পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখবেন। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমাদের আত্মপর্যালোচনা করা দরকার, কোন পদ্ধতিতে কীভাবে আমাদের প্রচার ও জনমত গঠনের কাজ করা দরকার, যাতে সমাজমানস পরিবর্তিত হয় দ্রুত নারীর মানবাধিকারের পক্ষে। গড়ে ওঠে মানবাধিকারের সংস্কৃতি।
সরকারের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী সদস্য থাকা যেমন জরুরি এবং অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের সূচক, তেমনি পাশাপাশি ব্যাপক গণনারীর জীবনের বিস্তৃত প্রসারিত পরিসর, নিরাপদ পরিসর তৈরি রাষ্ট্র-সরকার ও সমাজের জরুরি কর্তব্য। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলিত হয়েছে, বিভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়েছে হেনার ক্ষেত্রে। হেনার নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র। এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এর দায় আমাদের স্বীকার করতে হবে।
উদ্বেগজনক হলেও সত্য, ২০১০ সালে বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের চিত্র হচ্ছে, মোট পাঁচ হাজার ৭৪০ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৫৯৩ জন।
সুতরাং সমাজ-উন্নয়ন ও নানামুখী অগ্রসরমাণতার চিত্র ও তথ্য আশান্বিত করতে পারে না। সরকার, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের কাছে আমার বিনীত সুপারিশ হচ্ছে:
হাইকোর্টের রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারাবাহিক প্রচার করা হোক। তথ্য অধিকার কমিশন, মানবাধিকার কমিশন নিজেরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে এবং এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করবে।
এই কাজে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সংস্কৃতি, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচেতন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং যার যার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে যথেষ্ট সক্রিয় করে তুলবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সার্কুলার দিয়ে এই রায়গুলো জানিয়ে দেবে।
ইমাম প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচি নতুন করে ঢেলে সাজান। ইমাম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রামীণ-সাধারণ নারীর অধিকার রক্ষায় কতটুকু কাজে লাগছে, তার মূল্যায়ন দরকার।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, তাদের আইন ও বিচারের অধীনে আনবে।
সালিসকারীদের যেভাবেই হোক দ্রুত আইনানুগ বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
সমাজকে ধর্ষকের পক্ষে নয়, ধর্ষণের শিকার, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াতে হবে—এই চেতনা জাতীয়ভাবে আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হোক, এই সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পাক।
সংগঠিত ঘটনার এলাকার সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান মেম্বরদের সচেতন দায়িত্বশীল ভূমিকা আরও পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে এখনো।
নারী সমাজকে ধর্ষণসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতন-সক্রিয়ভাবে দাঁড়াতে হবে।
হেনার নির্যাতনকারীদের বিচার চাই, শাস্তি চাই আমরা সবাই।
আমরা আজ বিবেকের দংশনে জর্জরিত।
জাতীয় সংসদের নারী সাংসদদের নিয়ে নারী-আন্দোলনকর্মী সংগঠকদের একটা ‘উইমেন কক্কাস’ গঠনের পরিকল্পনা ও পরামর্শ ছিল গত নির্বাচনের আগে। সেই উইমেন কক্কাস গঠন প্রয়োজন। এই কক্কাস শুধু নারীর প্রতি বিরাজমান বৈষম্য দূর করার পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণের কাজেই প্রয়োজন নয়, প্রয়োজন হয় এ ধরনের সময় সময় গজিয়ে ওঠা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে, নারী সাংসদেরা (১৯ জন নির্বাচিত, ৪৫ জন মনোনীত—মোট ৬৪ জন) মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের কর্মী-সংগঠকদের নিয়ে সারা দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৭২টি উপজেলায় কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং একটা প্রতিজ্ঞা বা শপথ গ্রহণ করা হবে যে, কোনোমতেই আর এই দেশে কোনো নিষ্ঠুর আচরণ নারীর প্রতি নয়, কিশোরীর প্রতি নয়, শিশুর প্রতি নয়। কোনো প্রকার ফতোয়া নয়; ফতোয়াদান, বেত্রাঘাত বা কোনো বিচারকার্য নিজের হাতে নেওয়া নয়।
পাশাপাশি নারী সমাজের আরও যথাযথভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আমরা আজ গভীরভাবে ব্যথিত, মর্মাহত, উদ্বিগ্ন যে আমাদের সমাজমানস এবং এর ভেতরের সত্তা এখনো সচেতন-শিক্ষিত ও যথাযথভাবে আলোকিত হয়ে উঠছে না।
আয়শা খানম: সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
No comments