একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু এবং চলমান ছাত্ররাজনীতি by দেলাওয়ার জাহান
১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের কোন্দলের বলি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ৩য় বর্ষের (পঞ্চম সেমিস্টারের) মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। স্বপ্নের স্বপ্নলোকে চিরনিদ্রায় মধুপুরের নির্জনতায় ঘুমিয়ে গেছে আবু বকর সিদ্দিক।
এখন শুধু শোনা যায় একজন মায়ের আহাজারি—আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ধরে ঘটে চলেছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। সোনালি স্বপ্নের অপমৃত্যুগুলো ভোরের নির্মল বাতাসকে নিদারুণ ভারি করে চলেছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ৭৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে এই বিদ্যাপীঠে। বিচার হয়েছে মাত্র দুটির। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পরও ক্ষমতার জোরে অপরাধীরা বেরিয়ে গেছে আইনের ফাঁক গলে। দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের রুট। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বত্র বন্দি সরকার দলীয় ক্ষমতাসীনদের হাতে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ছাত্র সংগঠনগুলোর রূপ। বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে হল ছেড়ে চলে গিয়েছিল ছাত্রলীগ। এবার ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটা। প্রতিশোধপরায়ণ এ রাজনীতির বদৌলতে মহাজোট ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই লেজ গুটিয়ে পালাতে হয়েছে ছাত্রদলকে। দেশের সব কটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটাই স্বাভাবিক চিত্র!
হল দখল, হলের রুম আর সিট দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে প্রাণ হারাতে হলো এক মেধাবী ছাত্রকে, দেশ হারাল আগামীর সম্ভাবনাময় এক নাগরিক। এসব ঘটনা আগের মতো দেশের মানুষকে নাড়া দিতে পারছে না। প্রশাসনও যেমন নাচাও তেমনি নাচি কায়দায় চলছে। ফলে অপরাধী ছাত্ররা বার বার ‘হত্যার নাটকে অভিনয়ের রিহার্সেল’ দিয়েই চলেছে। আমাদের ভাববার বোধকরি সঠিক সময় হয়েছে আজ। দরিদ্র পিতা তিলে তিলে যা কিছু সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করেছিলেন তার মুনাফা তিনি পেলেন না। পেলেন প্রিয় সন্তানের লাশ, তারই সতীর্থদের হাতে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ওই হল শাখার সভাপতিসহ ২৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলেছেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারসহ যথাযথ শাস্তি প্রদানের ‘ঘোষণা’ দিয়েছেন। কিন্তু ভিসির এ ঘোষণার বাস্তবায়ন ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার বলয় যে ভেদ করতে পারবে না অতীত ইতিহাসই তা সাক্ষ্য দেয়। এর আগের ৭৩টি হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার কি কেউ পেয়েছে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ বক্তৃতায় প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। সত্যিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পারবেন কি আমাদের ক্যাম্পাসে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের নজির দেখাতে? আমরা তার কাছ থেকে এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে নিতে চাই। গত্বাঁধা আর গতানুগতিক কথায় জাতিকে ভুলিয়ে রাখার ‘কৌশল’ বাদ দিতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং পদত্যাগ করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রধানের পদ থেকে। তবুও থেমে থাকেনি তাদের সহিংসতা। একের পর এক শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন রয়েছে। তাই বলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, ঘের দখল আর ভাংচুরের রাজনীতি কি ছাত্রদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কিংবা কাম্য হতে পারে? ‘তারা বানরের পিঠাভাগ’ করবে আর সাধারণ ছাত্ররা কেন এর বলি হতে থাকবে? একটি সিটের জন্য তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকার মতো মানসিক কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। এই পিঠা ভাগাভাগি নিয়েই যত সব কোন্দল আর সহিংসতার সৃষ্টি। সরকারি কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে ভর্তি নিয়ে রমরমা বাণিজ্য। ছাত্রলীগ ভর্তি আসন নিয়ে মামার বাড়ির আবদার তুলেছে। মেধাবীদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তারা তাদের ‘মনোনীত প্রার্থী’ ভর্তির সুপারিশ করলে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজসহ ঢাকার অনেক নামকরা কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তারা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা তাদের পছন্দমত আসন দাবি করছে। অনার্সের আসন ২০ ভাগ ছাত্রলীগের জন্য বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পত্রপত্রিকার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকা ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে আদায় হবে বলে জানা গেছে। সরকারের প্রিয় সংগঠনটির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ‘আসন কোটা’ বরাদ্দ রাখা হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
ছাত্র সমাজের কাছে এ দেশ চিরঋণী হয়ে আছে। ৫২’-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব কটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তারা মাঠে থেকে এদেশ ও জাতিকে করেছে সম্মানিত। নিজেদের স্বার্থের কাছে বন্দি না থেকে দেশমাতৃকার সেবার মনোভাব নিয়েই তারা এগিয়ে এসেছিল সেদিন। ফলে তারাও হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার। তখনকার বাঘা বাঘা সব নেতা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, সেই চেতনা আর বিশ্বাস থেকে। কিন্তু স্বীকার করতে হবে যে, আজকের ছাত্র সমাজ সেই চেতনা আর আদর্শ থেকে অনেক দূরে। বড় কোনো আদর্শ, চেতনা কিংবা বিশ্বাস তাদের মাঝে দানা বাঁধতে পারে না। মৌলিক পড়াশোনা আর গবেষণাও তেমন আর হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ফলে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকার তলানিতেও ঠাঁই হয়নি এ প্রতিষ্ঠানটির। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি এ করুণ অবস্থা হয় তাহলে অন্যগুলোর অবস্থান প্রশ্নসাপেক্ষ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হল দখল, হলের রুম আর সিট দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে প্রাণ হারাতে হলো এক মেধাবী ছাত্রকে, দেশ হারাল আগামীর সম্ভাবনাময় এক নাগরিক। এসব ঘটনা আগের মতো দেশের মানুষকে নাড়া দিতে পারছে না। প্রশাসনও যেমন নাচাও তেমনি নাচি কায়দায় চলছে। ফলে অপরাধী ছাত্ররা বার বার ‘হত্যার নাটকে অভিনয়ের রিহার্সেল’ দিয়েই চলেছে। আমাদের ভাববার বোধকরি সঠিক সময় হয়েছে আজ। দরিদ্র পিতা তিলে তিলে যা কিছু সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করেছিলেন তার মুনাফা তিনি পেলেন না। পেলেন প্রিয় সন্তানের লাশ, তারই সতীর্থদের হাতে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ওই হল শাখার সভাপতিসহ ২৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলেছেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারসহ যথাযথ শাস্তি প্রদানের ‘ঘোষণা’ দিয়েছেন। কিন্তু ভিসির এ ঘোষণার বাস্তবায়ন ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার বলয় যে ভেদ করতে পারবে না অতীত ইতিহাসই তা সাক্ষ্য দেয়। এর আগের ৭৩টি হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার কি কেউ পেয়েছে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ বক্তৃতায় প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। সত্যিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পারবেন কি আমাদের ক্যাম্পাসে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের নজির দেখাতে? আমরা তার কাছ থেকে এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে নিতে চাই। গত্বাঁধা আর গতানুগতিক কথায় জাতিকে ভুলিয়ে রাখার ‘কৌশল’ বাদ দিতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং পদত্যাগ করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রধানের পদ থেকে। তবুও থেমে থাকেনি তাদের সহিংসতা। একের পর এক শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন রয়েছে। তাই বলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, ঘের দখল আর ভাংচুরের রাজনীতি কি ছাত্রদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কিংবা কাম্য হতে পারে? ‘তারা বানরের পিঠাভাগ’ করবে আর সাধারণ ছাত্ররা কেন এর বলি হতে থাকবে? একটি সিটের জন্য তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকার মতো মানসিক কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। এই পিঠা ভাগাভাগি নিয়েই যত সব কোন্দল আর সহিংসতার সৃষ্টি। সরকারি কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে ভর্তি নিয়ে রমরমা বাণিজ্য। ছাত্রলীগ ভর্তি আসন নিয়ে মামার বাড়ির আবদার তুলেছে। মেধাবীদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তারা তাদের ‘মনোনীত প্রার্থী’ ভর্তির সুপারিশ করলে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজসহ ঢাকার অনেক নামকরা কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তারা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা তাদের পছন্দমত আসন দাবি করছে। অনার্সের আসন ২০ ভাগ ছাত্রলীগের জন্য বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পত্রপত্রিকার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকা ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে আদায় হবে বলে জানা গেছে। সরকারের প্রিয় সংগঠনটির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ‘আসন কোটা’ বরাদ্দ রাখা হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
ছাত্র সমাজের কাছে এ দেশ চিরঋণী হয়ে আছে। ৫২’-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব কটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তারা মাঠে থেকে এদেশ ও জাতিকে করেছে সম্মানিত। নিজেদের স্বার্থের কাছে বন্দি না থেকে দেশমাতৃকার সেবার মনোভাব নিয়েই তারা এগিয়ে এসেছিল সেদিন। ফলে তারাও হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার। তখনকার বাঘা বাঘা সব নেতা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, সেই চেতনা আর বিশ্বাস থেকে। কিন্তু স্বীকার করতে হবে যে, আজকের ছাত্র সমাজ সেই চেতনা আর আদর্শ থেকে অনেক দূরে। বড় কোনো আদর্শ, চেতনা কিংবা বিশ্বাস তাদের মাঝে দানা বাঁধতে পারে না। মৌলিক পড়াশোনা আর গবেষণাও তেমন আর হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ফলে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকার তলানিতেও ঠাঁই হয়নি এ প্রতিষ্ঠানটির। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি এ করুণ অবস্থা হয় তাহলে অন্যগুলোর অবস্থান প্রশ্নসাপেক্ষ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
No comments