ফিরে ফিরে আসে হরতাল by আদিত্য আরাফাত
দেশের রাজনীতিতে আবারও ফিরে এল হরতালের সংস্কৃতি। হরতালের মধ্য দিয়ে দেশ আবার সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে? এমন প্রশ্নই দেখা দিয়েছে এখন। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিঁখোজ হওয়াকে কেন্দ্র করে এখন উত্তপ্ত রাজনীতির ময়দান।
এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান সরকার দিতে না পারলে লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল দেওয়া হবে।’ দেশের রাজনীতিতে হরতালের সংস্কৃতি ফিরে আসায় দেশের সাধারণ মানুষ আতংকিত। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বিরোধী দল ক্ষমতায় থাকলেই হরতালকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। বলা হয়ে থাকে জনগণের জন্যই হরতাল। কিন্তু আদৌ কি হরতালের সুফল পায় জনগণ? হরতালের ওপর একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আদিত্য আরাফাত
১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট উপমহাদেশে প্রথম হরতাল ডেকেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে মহাত্মা গান্ধী। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এ হরতাল পালিত হয়। তবে মহাত্মাগান্ধী প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এদেশে হরতাল ডাকেন ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল। ওই হরতালে ৩০০ ভারতীয়র মৃত্যু এবং বিপুল সংখ্যক আহত হওয়ার কারণে গান্ধী আর হরতালের মতো কর্মসূচি দেননি।
আমাদের দেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হরতাল পালিত হলেও তা ছিল মা, মাটি ও মাতৃভূমির স্বার্থে। সে সব হরতালে ছিল জনসমর্থন। স্বাধীনতার পর আশির দশকে দেশে ক্রমাগত হরতাল বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে হরতালের অন্যতম ভূমিকা থাকলেও এরপরের হরতালগুলো ছিল দেশের অর্থনীতি ধংস করার প্রধান হাতিয়ার। নব্বইয়ের পর থেকেই হরতাল আমাদের দেশে ধংসাত্মক রূপ নেয়।
বর্তমানে হরতালের অপর নাম হয়েছে গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালানো-পোড়ানো, নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা, সংকট আর আতঙ্ক এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার প্রধান অস্ত্র। হরতালের অসহায় শিকার সাধারণ জনগণ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেখা যায় যখন যারা ক্ষমতায় আসেন তারা হরতালের বিরোধিতা করেন আবার ক্ষমতায় গেলে তারাই এ অস্ত্র প্রয়োগ করেন।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বমন্দা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ও বাড়ছিল, রাজস্ব আদায় টার্গেট অতিক্রমের সাফল্য দেখিয়েছে, রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের রফতানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে পরিমাণগত ও মূল্যগত উভয় দিকে। দেশের দারিদ্র্যসীমা ২০১০ সালে ৩১.৫ শতাংশে নেমেছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি এবং এস অ্যান্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ সালে দেশের জিডিপি অনুপাত ১২.৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সে সঙ্গে এ রিপোর্টে দেশের প্রকৃত মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক অবস্থা বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক কিন্তু রাজনীতির চাকায় আবারও পিষ্ট হতে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক খাত। গার্মেন্ট শিল্পে নানা অস্থিরতার মধ্যেও যখন এ সেক্টরে ঈর্ষণীয় উন্নতি হচ্ছে, একসময়ের সোনালি আঁশ পাট যখন আবার ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, অর্থনীতির সূচকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন হরতাল থামিয়ে দিচ্ছে দেশের উন্নয়নের গতিকে। যার দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এভাবে হরতাল হলে দেশের অর্থনীতির পঙ্গু হয়ে পড়বে।
একদিনের হরতালে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা!
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) গতবছর এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে এফবিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, ‘এক দিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপন করা না গেলেও দেশের ৬৪ জেলায় মোট ক্ষতির পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে হবে না।’
তিনি জানিয়েছেন, হরতালের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয় এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
হরতালে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় বর্তমানে বড় কোনো সংস্থার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও ২০০৫ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) এক জরিপ করে। তাদের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ‘এক দিনের হরতালে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৫৪ কোটি টাকা। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আরও অনেক বেশি।’
ওই গবেষণায় বলা হয়, হরতালের ফলে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশের ৮০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর ক্ষতির পরিমাণ আট হাজার ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হরতাল দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু ১৯৯৯ সালে হরতালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৩৫ কোটি টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত জানান, হরতালের আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণ করা কঠিন। হরতালে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এক দিন হরতাল হলে শিল্প-বাণিজ্যের তিন দিন বন্ধ থাকার সমান ক্ষতি হয়।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, এক দিনের হরতালে শুধু গার্মেন্ট শিল্প খাতেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৮ কোটি টাকার বেশি।
হরতালে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
ইউএনডিপির গবেষণায় আরও বলা হয়, হরতালে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে। দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমছে সঞ্চয়, বাড়ছে খেলাপি ঋণ। হরতালের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানের প্রসার না ঘটানোয় ক্রমাগত বেকারত্ব বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হরতালের কারণে দেশের রপ্তানি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হরতালের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা কোর্স শেষ করতে না পারায় সেশনজট বাড়ছে। তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হওয়ায় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রোববারের হরতালে দেশের একটি পাবলিক পরীক্ষাও বন্ধ করতে হলো।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। হরতালের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হয়। রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দরে কনটেইনার ঢুকতে পারে না। একইভাবে আমদানি পণ্যও বন্দর থেকে বাইরে আনা যায় না। ফলে অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হরতালের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারে না। ফলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।
আগ্রহ হারাতে পারেন বিনিয়োগকারীরা
বিগত সরকারগুলোর সময় শুধু হরতালের কারণেই দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে পুরো দেশ। হরতালের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কেউই সংঘাতময় রাজনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না। গণতান্ত্রিক সংলাপ বন্ধ হয়ে গেলে বাণিজ্যের পরিবেশ উন্মুক্ত থাকার সম্ভাবনাও কমে যাবে। হরতালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি রোধ করতে পারলে বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের মতো অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। বিনিয়োগকারীরা ইতোপূর্বে পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশের উচিত হরতাল সংস্কৃতি বন্ধ করে উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া।
হরতাল এবং একটি তথ্যগত পরিসংখ্যান
১৯৯১ সালে পট পরিবর্তনের পর থেকে হরতালের রাজনীতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হরতাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। ১৯৯১ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সারাদেশে হরতাল করেছে মোট ১৭৩ দিন। ’৯৬ থেকে ২০০১ সময় পর্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বিরোধী দল বিএনপি হরতাল করেছে সারাদেশে ৫৯ দিন। এ সময় স্থানীয় পর্যায়ে ২৩৩ দিন হরতাল করেছে দলটি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি। এ সময় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ হরতাল করেছে সারাদেশে ১৩০ দিন। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে বিএনপি হরতাল পালন করেছে ৯ দিন। আজকের হরতালসহ মোট ১০দিন।
হরতাল নয় বিকল্প চাই
বিরোধী দলের হরতালের মধ্য দিয়ে সেই নিন্দিত সংস্কৃতিই রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বিঘ্ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, আর্থিক ক্ষতি, শ্রমঘণ্টা অপচয়সহ বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ সবাই হরতালের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, হরতাল নয়, বিকল্প চাই। যাদের নামে এ হরতাল ডাকা হয়েছে, সেই সাধারণ জনগণও এখন হরতাল চায় না। এফবিসিআই সভাপতি একে আজাদ মনে করেন, হরতালের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়। হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বেসরকারি খাতের। সব সময়ই বিরোধী দলের উচিত হরতালের বিকল্প কর্মসূচি পালন করা।
বিজিএইএ ও বিকেএমইএ-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও হরতালের বিকল্প কর্মসূচির কথা বলেছেন।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলেছেন, হরতালের কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। হরতালে যানবাহন না থাকায় কারখানার শ্রমিকরাও আসতে পারেন না। এ ছাড়া নিরাপত্তার কারণে বেশির ভাগ গার্মেন্ট মালিক তাদের কারখানা বন্ধ রাখেন। ফলে উৎপাদনের দিক থেকে তারা এক দিন পিছিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়েও এক দিনের ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই শিল্প মালিকদের দাবি হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে অর্থনীতিকে পঙ্গু না করা হয়।
লাগাতার হরতালের হুমকি বিএনপির!
ওয়ান-ইলেভেনের তিক্ত ও করুণ অভিজ্ঞতার পর দেশ কি আবারও সংঘাতের পথে এগোচ্ছে? মহাজোট সরকারের তিন বছরের শাসনামলের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘সংঘাতের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্যই হুমকিস্বরূপ। তিনি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিন, অন্যথায় সবাইকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
এ দিকে ইলিয়াস আলী নিঁখোজ ইস্যুকে কেন্দ্র করে এক সভায় লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। শান্তিতে থাকতে চাই। সরকারের লোকজন অপহরণ, গুম, হত্যা করে বিরোধী দলসহ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। সরকারের যা ইচ্ছে তাতো আর মানা যায় না। আমাদের দলের একজন নেতাকে গায়েব করে ফেলেছে। আমরা ইলিয়াসের সন্ধান চাই অথচ সরকার দিতে পারছে না। দিতে না পারার কারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিএনপির এ হরতাল।’
এ দিকে হরতালে বিরোধী দলকে দমন করতে সরকারের পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা হরতাল দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন আর আমরা বসে থাকবো তা ভাববেন না। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে দমন করতে প্রস্তুত’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়েছে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে তারাও প্রস্তুত। এ পরিস্থিতিতে স্বভাবত উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ দেশবাসী। হরতালের নামে কি তবে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে যাচ্ছে দেশ? এ প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের।
১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট উপমহাদেশে প্রথম হরতাল ডেকেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে মহাত্মা গান্ধী। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এ হরতাল পালিত হয়। তবে মহাত্মাগান্ধী প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এদেশে হরতাল ডাকেন ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল। ওই হরতালে ৩০০ ভারতীয়র মৃত্যু এবং বিপুল সংখ্যক আহত হওয়ার কারণে গান্ধী আর হরতালের মতো কর্মসূচি দেননি।
আমাদের দেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হরতাল পালিত হলেও তা ছিল মা, মাটি ও মাতৃভূমির স্বার্থে। সে সব হরতালে ছিল জনসমর্থন। স্বাধীনতার পর আশির দশকে দেশে ক্রমাগত হরতাল বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে হরতালের অন্যতম ভূমিকা থাকলেও এরপরের হরতালগুলো ছিল দেশের অর্থনীতি ধংস করার প্রধান হাতিয়ার। নব্বইয়ের পর থেকেই হরতাল আমাদের দেশে ধংসাত্মক রূপ নেয়।
বর্তমানে হরতালের অপর নাম হয়েছে গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালানো-পোড়ানো, নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা, সংকট আর আতঙ্ক এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার প্রধান অস্ত্র। হরতালের অসহায় শিকার সাধারণ জনগণ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেখা যায় যখন যারা ক্ষমতায় আসেন তারা হরতালের বিরোধিতা করেন আবার ক্ষমতায় গেলে তারাই এ অস্ত্র প্রয়োগ করেন।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বমন্দা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ও বাড়ছিল, রাজস্ব আদায় টার্গেট অতিক্রমের সাফল্য দেখিয়েছে, রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের রফতানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে পরিমাণগত ও মূল্যগত উভয় দিকে। দেশের দারিদ্র্যসীমা ২০১০ সালে ৩১.৫ শতাংশে নেমেছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি এবং এস অ্যান্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ সালে দেশের জিডিপি অনুপাত ১২.৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সে সঙ্গে এ রিপোর্টে দেশের প্রকৃত মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক অবস্থা বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক কিন্তু রাজনীতির চাকায় আবারও পিষ্ট হতে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক খাত। গার্মেন্ট শিল্পে নানা অস্থিরতার মধ্যেও যখন এ সেক্টরে ঈর্ষণীয় উন্নতি হচ্ছে, একসময়ের সোনালি আঁশ পাট যখন আবার ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, অর্থনীতির সূচকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন হরতাল থামিয়ে দিচ্ছে দেশের উন্নয়নের গতিকে। যার দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এভাবে হরতাল হলে দেশের অর্থনীতির পঙ্গু হয়ে পড়বে।
একদিনের হরতালে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা!
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) গতবছর এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে এফবিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, ‘এক দিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপন করা না গেলেও দেশের ৬৪ জেলায় মোট ক্ষতির পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে হবে না।’
তিনি জানিয়েছেন, হরতালের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয় এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
হরতালে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় বর্তমানে বড় কোনো সংস্থার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও ২০০৫ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) এক জরিপ করে। তাদের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ‘এক দিনের হরতালে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৫৪ কোটি টাকা। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আরও অনেক বেশি।’
ওই গবেষণায় বলা হয়, হরতালের ফলে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশের ৮০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর ক্ষতির পরিমাণ আট হাজার ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হরতাল দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু ১৯৯৯ সালে হরতালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৩৫ কোটি টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত জানান, হরতালের আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণ করা কঠিন। হরতালে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এক দিন হরতাল হলে শিল্প-বাণিজ্যের তিন দিন বন্ধ থাকার সমান ক্ষতি হয়।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, এক দিনের হরতালে শুধু গার্মেন্ট শিল্প খাতেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৮ কোটি টাকার বেশি।
হরতালে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
ইউএনডিপির গবেষণায় আরও বলা হয়, হরতালে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে। দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমছে সঞ্চয়, বাড়ছে খেলাপি ঋণ। হরতালের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানের প্রসার না ঘটানোয় ক্রমাগত বেকারত্ব বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হরতালের কারণে দেশের রপ্তানি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হরতালের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা কোর্স শেষ করতে না পারায় সেশনজট বাড়ছে। তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হওয়ায় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রোববারের হরতালে দেশের একটি পাবলিক পরীক্ষাও বন্ধ করতে হলো।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। হরতালের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হয়। রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দরে কনটেইনার ঢুকতে পারে না। একইভাবে আমদানি পণ্যও বন্দর থেকে বাইরে আনা যায় না। ফলে অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হরতালের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারে না। ফলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।
আগ্রহ হারাতে পারেন বিনিয়োগকারীরা
বিগত সরকারগুলোর সময় শুধু হরতালের কারণেই দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে পুরো দেশ। হরতালের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কেউই সংঘাতময় রাজনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না। গণতান্ত্রিক সংলাপ বন্ধ হয়ে গেলে বাণিজ্যের পরিবেশ উন্মুক্ত থাকার সম্ভাবনাও কমে যাবে। হরতালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি রোধ করতে পারলে বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের মতো অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। বিনিয়োগকারীরা ইতোপূর্বে পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশের উচিত হরতাল সংস্কৃতি বন্ধ করে উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া।
হরতাল এবং একটি তথ্যগত পরিসংখ্যান
১৯৯১ সালে পট পরিবর্তনের পর থেকে হরতালের রাজনীতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হরতাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। ১৯৯১ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সারাদেশে হরতাল করেছে মোট ১৭৩ দিন। ’৯৬ থেকে ২০০১ সময় পর্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বিরোধী দল বিএনপি হরতাল করেছে সারাদেশে ৫৯ দিন। এ সময় স্থানীয় পর্যায়ে ২৩৩ দিন হরতাল করেছে দলটি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি। এ সময় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ হরতাল করেছে সারাদেশে ১৩০ দিন। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে বিএনপি হরতাল পালন করেছে ৯ দিন। আজকের হরতালসহ মোট ১০দিন।
হরতাল নয় বিকল্প চাই
বিরোধী দলের হরতালের মধ্য দিয়ে সেই নিন্দিত সংস্কৃতিই রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বিঘ্ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, আর্থিক ক্ষতি, শ্রমঘণ্টা অপচয়সহ বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ সবাই হরতালের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, হরতাল নয়, বিকল্প চাই। যাদের নামে এ হরতাল ডাকা হয়েছে, সেই সাধারণ জনগণও এখন হরতাল চায় না। এফবিসিআই সভাপতি একে আজাদ মনে করেন, হরতালের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়। হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বেসরকারি খাতের। সব সময়ই বিরোধী দলের উচিত হরতালের বিকল্প কর্মসূচি পালন করা।
বিজিএইএ ও বিকেএমইএ-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও হরতালের বিকল্প কর্মসূচির কথা বলেছেন।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলেছেন, হরতালের কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। হরতালে যানবাহন না থাকায় কারখানার শ্রমিকরাও আসতে পারেন না। এ ছাড়া নিরাপত্তার কারণে বেশির ভাগ গার্মেন্ট মালিক তাদের কারখানা বন্ধ রাখেন। ফলে উৎপাদনের দিক থেকে তারা এক দিন পিছিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়েও এক দিনের ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই শিল্প মালিকদের দাবি হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে অর্থনীতিকে পঙ্গু না করা হয়।
লাগাতার হরতালের হুমকি বিএনপির!
ওয়ান-ইলেভেনের তিক্ত ও করুণ অভিজ্ঞতার পর দেশ কি আবারও সংঘাতের পথে এগোচ্ছে? মহাজোট সরকারের তিন বছরের শাসনামলের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘সংঘাতের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্যই হুমকিস্বরূপ। তিনি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিন, অন্যথায় সবাইকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
এ দিকে ইলিয়াস আলী নিঁখোজ ইস্যুকে কেন্দ্র করে এক সভায় লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। শান্তিতে থাকতে চাই। সরকারের লোকজন অপহরণ, গুম, হত্যা করে বিরোধী দলসহ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। সরকারের যা ইচ্ছে তাতো আর মানা যায় না। আমাদের দলের একজন নেতাকে গায়েব করে ফেলেছে। আমরা ইলিয়াসের সন্ধান চাই অথচ সরকার দিতে পারছে না। দিতে না পারার কারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিএনপির এ হরতাল।’
এ দিকে হরতালে বিরোধী দলকে দমন করতে সরকারের পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা হরতাল দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন আর আমরা বসে থাকবো তা ভাববেন না। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে দমন করতে প্রস্তুত’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়েছে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে তারাও প্রস্তুত। এ পরিস্থিতিতে স্বভাবত উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ দেশবাসী। হরতালের নামে কি তবে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে যাচ্ছে দেশ? এ প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের।
No comments