ছয়টি বড় প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থায় এর অ্যালাইনমেন্ট-ঢাকা উড়াল সড়কের ওড়ায় যত বিপত্তি by পার্থ সারথি দাস

প্রস্তাবিত ঢাকা উড়াল সড়কের অ্যালাইনমেন্ট রাজধানীর ছয়টি বড় প্রকল্পের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা মিলেছে। ঋণচুক্তিও হয়েছে। কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত হয়নি।


এ অবস্থায় ১৪ এপ্রিলের মধ্যে সেতু বিভাগকে এসব জটিলতা নিরসনের তাগিদ দিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
ঢাকা উড়াল সড়ক প্রকল্পের জটিলতা বিষয়ে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উড়াল সড়ক প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট যেসব এলাকায় সাংঘর্ষিক অবস্থায় রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠকও করেছি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে।'
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনের জন্য মহাজোট সরকার এই বিশাল প্রকল্প হাতে নেয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-গোলাপবাগহয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত এটি নির্মাণ করা হবে। প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়াল সড়ক বাস্তবায়নের জন্য ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে নির্মাণকাজ শুরুর কথা রয়েছে। কিন্তু অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে জটিলতা নিরসন না হলে এ সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, 'কুড়িল উড়াল সেতু' নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ সেতুর নিচে ঢাকা উড়াল সড়কের দুটো র‌্যাম্প থাকবে। এই দুটো র‌্যাম্পের সমন্বয় কিভাবে করা হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। কুড়িল উড়াল সেতু এলাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ফানেলের মধ্যে পড়ে। এখানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) রাজউককে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২ মিটার উচ্চতায় স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। সে হিসাবে ঢাকা উড়াল সড়কের অ্যালাইনমেন্ট খানিকটা পূর্ব দিকে সরিয়ে ১৯ মিটার উচ্চতায় নির্মাণের নকশা করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেতু বিভাগ জানতে পারে বিমানবন্দরের রানওয়ে দক্ষিণ দিকে দুই হাজার ২০০ ফুট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে ১৯ মিটার উচ্চতায় স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় গত ১১ আগস্ট একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বিমানবন্দরের রানওয়ে দক্ষিণ দিকে সর্বোচ্চ এক হাজার ফুট সম্প্রসারণের বিষয়ে বেবিচক ব্যবস্থা নেবে। বাকিটা সম্প্রসারণ হবে উত্তর দিকে। রানওয়ে দক্ষিণ দিকে এক হাজার ফুট সম্প্রসারণের বিষয়টি মাথায় রেখে বেবিচক কুড়িল সেতু প্রকল্পের উচ্চতায় ঢাকা উড়াল সেতু প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টের উচ্চতার অনুমোদন দেবে। কিন্তু এ অনুমোদন এখনো মেলেনি।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে মিরপুরের মাটিকাটা থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত একটি উড়াল সেতু এবং বনানীতে একটি ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। বনানী ওভারপাসটি প্রথমে চার লেন করার পরিকল্পনা ছিল। এখন এটি ছয় লেনে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কারণে বনানী ক্রসিং এলাকায় নির্মিতব্য ওভারপাসটি ঢাকা উড়াল সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
সওজের অধীনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের চারটি স্থানে ইউ লুপ নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাকলী বাসস্টপ ও আর্মি গলফ ক্লাব এলাকায় দুটো ইউ লুপ ঢাকা উড়াল সেতুর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। মহাখালী উড়াল সেতুর পশ্চিম পাশে প্রস্তাবিত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)-৩ প্রকল্পেও ঢাকা উড়াল সড়কের একটি র‌্যাম্প থাকেবে। এটি কিভাবে সমন্বয় করা হবে, তা ঠিক করা হয়নি।
রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় ঢাকা উড়াল সড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ লিংক থাকবে। কিন্তু একই এলাকা দিয়েই প্রস্তাবিত মেট্রো রেল রুটও যাবে। এই লিংকের মাধ্যমে ধানমণ্ডি ও এর আশপাশের এলাকার যাত্রীরা ঢাকা উড়াল সড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম সড়ক এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এখানে মেট্রো রেলের সঙ্গে উড়াল সড়কের সমন্বয় কী করে হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে নির্মাণাধীন 'মেয়র হানিফ উড়াল সেতু' শনির আখড়া থেকে সায়েদাবাদ হয়ে একটি অংশ কমলাপুরের কাছে অতীশ দীপঙ্কর সড়কে যোগ হবে। অন্যদিকে ঢাকা উড়াল সড়ক কমলাপুর থেকে কুতুবখালি অংশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে নির্মাণের কথা রয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়াল সড়কের কমলাপুর থেকে পরের অংশের সঙ্গে মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর সমন্বয়ের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.