র‌্যাবের বিলম্বিত বোধোদয়

র‌্যাব কথিত সুসমাচার! কয়েক দিন আগের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত লিমন এখন আর সন্ত্রাসী নয়। ঘটনার শিকার। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক স্বীকার করলেন, তাঁর বাহিনী লিমনকে ধরতে যায়নি। লিমনকে খুঁজতেও যায়নি। তাঁর ভাষ্যমতেই লিমন একটি ছোট ছেলে।


লিমন যে সন্ত্রাসী বা খারাপ ছেলে এটাও র‌্যাব বলছে না বলে মহাপরিচালক জানিয়েছেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক লিমনকে নির্দোষ বললেও র‌্যাব-৮-এর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, জনগণের উপস্থিতিতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিমনকে আটক করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এটাও উল্লেখ করা হয়েছিল, লিমন ওই এলাকার সন্ত্রাসী মোর্শেদ জমাদ্দারের সহযোগী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তাকে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মহাপরিচালকের ভাষ্যমতো লিমন যদি সন্ত্রাসী না হয় তাহলে ওই অস্ত্রটি কার?
লিমন এখন সারা দেশেই একটি পরিচিত মুখ। একটি দিনমজুর পরিবারের সন্তান লিমন দিনমজুরি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাত। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে বসার পরিবর্তে তাকে এখন কাটাতে হচ্ছে হাসপাতালে। লিমনের অপরাধ বোধ হয় এটাই যে তার পরিবারটি দরিদ্র। হতদরিদ্র একটি পরিবার তার এক লেখাপড়া করা সদস্যকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সবাই এখন দুঃস্বপ্নই দেখছে। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিশ্চয়ই ছিল লিমনেরও। কিন্তু একটি হতদরিদ্র পরিবারের সব স্বপ্ন এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে র‌্যাব মানবাধিকার রক্ষার দাবি কি করতে পারে? অথচ র‌্যাবের মহাপরিচালক করেছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু লিমন? সে কেন র‌্যাবের গুলির শিকার হলো? লিমন ও তার পরিবারের দাবি, তাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। গোলাগুলির মাঝে পড়ে নয়, গরু চরাতে গিয়ে র‌্যাবের শিকার হতে হয়েছে তাকে। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সাধারণ মানুষ তাদের কাছেও নিরাপদ নয়। গত ২৩ মার্চ র‌্যাবের গুলিতে আহত লিমনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল ঢাকায়। ঢাকায় আসার পর লিমনের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসে। কিন্তু হাসপাতালে লিমনের কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না সংবাদকর্মীদের। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে গেলে বা শুরুতে র‌্যাবের বলা কল্পকাহিনী সংবাদমাধ্যমের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে এ অসহায় নিরীহ পরিবারটিকে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়েই কাটিয়ে দিতে হতো। সংবাদমাধ্যম সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলেই র‌্যাবকে বাধ্য হয়ে তদন্ত করতে হচ্ছে। র‌্যাবের মহাপরিচালককে স্বীকার করতে হচ্ছে, লিমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়। লিমনের মা র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা না করলে র‌্যাব এটা স্বীকার করত বলে মনে হয় না।
মহাপরিচালকের বক্তব্য থেকে ধরে নেওয়া যায়, এটা র‌্যাবের বিলম্বিত বোধোদয়। র‌্যাব এ ঘটনাকে সামান্য ভুল বা সামান্য ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে পারে। কিন্তু তাদের এই সামান্য ব্যর্থতা একটি পরিবারের অসামান্য ক্ষতি করে দিল। এই বিলম্বিত বোধোদয় একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে গেল_এটা তারা উপলব্ধি করতে পারবে কি?

No comments

Powered by Blogger.