আইনের শাসনের কথা বললেন প্রধান বিচারপতিঃ কিন্তু উদ্যোগ নেবেন কে?
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম আইনের শাসন ছাড়া গণতন্ত্র টিকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সোমবার প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে বার অ্যাসোসিয়েশন এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে বিচার বিভাগের ওপর দেশের মানুষের শ্রদ্ধা বাড়বে। প্রতি মাসে অসহায় ও দুস্থ মানুষের অন্তত একটি মামলা বিনামূল্যে পরিচালনার জন্য আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষ যাতে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে আদালতে এসে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি না যায়, এজন্য বিচারক ও আইনজীবীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে আমাদের সবার দায়িত্ব।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ দ্বিমত পোষণ করবেন না। আর কথাগুলোও নতুন নয়। বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা তাদের বিদায়ী এবং দায়িত্ব গ্রহণকালীন ভাষণে প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে এসব কথা বলে থাকেন। কথাগুলো আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে এসব কথার মধ্য দিয়ে যে বার্তা প্রকাশ পায়, তা মোটেও খুশি হওয়ার মতো নয়। শুধু বিচারপতিরা নন, প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকরাও বিভিন্ন সময়ে যে কোনো মূল্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে থাকেন। গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকারও প্রায়ই শোনা যায়। এসব কথার মধ্য দিয়ে কিন্তু সরাসরি স্বীকার করে নেয়া হয় যে, আইনের শাসন আমাদের দেশে এখনও প্রতিষ্ঠা পায়নি এবং গণতন্ত্রের ভিত মোটেও সুদৃঢ় নয়। উভয় ব্যাপারে জনসাধারণের অভিজ্ঞতা এতই তিক্ত যে, ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের অনুপস্থিতির কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয় না।
তারপরও নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির কথাগুলোকে কথার কথা বলে উপেক্ষা করা উচিত নয়। একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো। এদেশের মানুষ যে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে, তার লক্ষণগুলো ইদানীং অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে বটে। কিন্তু এই বঞ্চনা চলে আসছে সেই ব্রিটিশ আমল কিংবা আরও আগে থেকে। রবীন্দ্রনাথের গল্পে, কবিতায় বিচারের নামে উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর যেসব বর্ণনা আছে, তার সবগুলোই ব্রিটিশ আমলের। অথচ সে সময়ে বিচার ব্যবস্থা এখনকার চেয়ে অনেক ‘ভালো’ ছিল বলে প্রবীণদের হাহুতাশ করতে দেখা যায়। আমরা ভুলে যাই যে, আদালত নিয়ে প্রচলিত এই কথাগুলো সেই ব্রিটিশ আমলেই চালু হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দু’একটা চাঞ্চল্যকর মামলা সহনীয় সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করে সুষ্ঠু রায় প্রদান করার পাশাপাশি যদি বছরের পর বছর অসংখ্য মামলা ঝুলে থাকে, যদি অর্থাভাবে ভিকটিমের মুখের ওপর ন্যায়বিচারের দরজা দড়াস করে বন্ধ হয়ে যায়, তবে বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলছে—সে কথা বলা যাবে না। বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এন্তার শোনা যায়। পাশাপাশি ‘অর্থের হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে কিন্তু কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। আবার শুধু হস্তক্ষেপবর্জিত বিচার ব্যবস্থা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে বিতর্কও দিন দিন বাড়ছে।
তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা মুখে বলা সহজ হলেও কাজটি কবে হবে অথবা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে আইনের শাসন যথাযথ না হওয়ার কারণে। কিন্তু বিগত চারদলীয় জোট সরকার, জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের কার্যকলাপের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি সরকারের আস্থাতেও চিড় ধরেছে। নইলে তিনটি সরকারের আমলেই অপরাধ দমনের নামে এভাবে ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটত না। অনাস্থার এই ক্রমিক প্রসার বন্ধ করা না গেলে গোটা বিচার ব্যবস্থা অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিমানুষ এবং গোটা সমাজ গুরুতর নিরাপত্তাহীনতায় গিয়ে পড়বে। অতএব, আইনের শাসন সুদৃঢ় করার জন্য এখনই উদ্যোগী হওয়া দরকার। কিন্তু উদ্যোগ নেবেন কে? এ প্রশ্নের উত্তর আসতে হবে বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের শীর্ষ থেকে।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ দ্বিমত পোষণ করবেন না। আর কথাগুলোও নতুন নয়। বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা তাদের বিদায়ী এবং দায়িত্ব গ্রহণকালীন ভাষণে প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে এসব কথা বলে থাকেন। কথাগুলো আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে এসব কথার মধ্য দিয়ে যে বার্তা প্রকাশ পায়, তা মোটেও খুশি হওয়ার মতো নয়। শুধু বিচারপতিরা নন, প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকরাও বিভিন্ন সময়ে যে কোনো মূল্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে থাকেন। গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকারও প্রায়ই শোনা যায়। এসব কথার মধ্য দিয়ে কিন্তু সরাসরি স্বীকার করে নেয়া হয় যে, আইনের শাসন আমাদের দেশে এখনও প্রতিষ্ঠা পায়নি এবং গণতন্ত্রের ভিত মোটেও সুদৃঢ় নয়। উভয় ব্যাপারে জনসাধারণের অভিজ্ঞতা এতই তিক্ত যে, ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের অনুপস্থিতির কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয় না।
তারপরও নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির কথাগুলোকে কথার কথা বলে উপেক্ষা করা উচিত নয়। একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো। এদেশের মানুষ যে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে, তার লক্ষণগুলো ইদানীং অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে বটে। কিন্তু এই বঞ্চনা চলে আসছে সেই ব্রিটিশ আমল কিংবা আরও আগে থেকে। রবীন্দ্রনাথের গল্পে, কবিতায় বিচারের নামে উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর যেসব বর্ণনা আছে, তার সবগুলোই ব্রিটিশ আমলের। অথচ সে সময়ে বিচার ব্যবস্থা এখনকার চেয়ে অনেক ‘ভালো’ ছিল বলে প্রবীণদের হাহুতাশ করতে দেখা যায়। আমরা ভুলে যাই যে, আদালত নিয়ে প্রচলিত এই কথাগুলো সেই ব্রিটিশ আমলেই চালু হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দু’একটা চাঞ্চল্যকর মামলা সহনীয় সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করে সুষ্ঠু রায় প্রদান করার পাশাপাশি যদি বছরের পর বছর অসংখ্য মামলা ঝুলে থাকে, যদি অর্থাভাবে ভিকটিমের মুখের ওপর ন্যায়বিচারের দরজা দড়াস করে বন্ধ হয়ে যায়, তবে বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলছে—সে কথা বলা যাবে না। বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এন্তার শোনা যায়। পাশাপাশি ‘অর্থের হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে কিন্তু কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। আবার শুধু হস্তক্ষেপবর্জিত বিচার ব্যবস্থা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে বিতর্কও দিন দিন বাড়ছে।
তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা মুখে বলা সহজ হলেও কাজটি কবে হবে অথবা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে আইনের শাসন যথাযথ না হওয়ার কারণে। কিন্তু বিগত চারদলীয় জোট সরকার, জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের কার্যকলাপের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি সরকারের আস্থাতেও চিড় ধরেছে। নইলে তিনটি সরকারের আমলেই অপরাধ দমনের নামে এভাবে ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটত না। অনাস্থার এই ক্রমিক প্রসার বন্ধ করা না গেলে গোটা বিচার ব্যবস্থা অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিমানুষ এবং গোটা সমাজ গুরুতর নিরাপত্তাহীনতায় গিয়ে পড়বে। অতএব, আইনের শাসন সুদৃঢ় করার জন্য এখনই উদ্যোগী হওয়া দরকার। কিন্তু উদ্যোগ নেবেন কে? এ প্রশ্নের উত্তর আসতে হবে বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের শীর্ষ থেকে।
No comments