ইলিয়াসকে নিয়ে খবরের ঘনঘটা
‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর ‘খোঁজ’ জানাতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত খবরের পেছনে ছুটেছেন সাংবাদিকরা। ইলিয়াসের বনানীর বাড়িতে রাত ১১টা থেকে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের কেউ কেউ রাত ১টার পরও সেখানে অবস্থান করছিলেন।
বিএনপির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদককে উদ্ধারে গাজীপুরের পূবাইলে সন্ধ্যা থেকে তিন ঘণ্টা র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযান এবং এরপর তার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকরা ইলিয়াসের বাড়ির ফটকে অবস্থান নেন।
সেখানে অপেক্ষমাণ দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রিজওয়ান বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বার্তাপ্রধানের নির্দেশনায় এখানে এসেছি। তিনি অপেক্ষা করতে বলেছেন।”
খালেদার সঙ্গে রাত পৌনে ১১টায় সাক্ষাৎ শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে দিয়েই বাসায় ফেরেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এর কিছুক্ষণ আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের সঙ্গে গাজীপুর অভিযানে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এদিকে ইলিয়াসকে উদ্ধারে সর্বশেষ খবর জানতে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাত ১২ টায় বলেন, “নো নিউজ, নো ডেভেলপমেন্ট।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ইলিয়াসের ব্যক্তিগত গাড়ি গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তার বনানীর বাসার কাছে আমতলীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িতে পাওয়া একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর। ওই সময় গাড়িচালক আনসারকেও পাওয়া যায়নি।
ইলিয়াসের ‘নিখোঁজের’ পরদিন (বুধবার) তাকে ফেরত চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন স্ত্রী তাহসীনা।
শনিবার তাকে উদ্ধারে গাজীপুরের পূবাইলে র্যাব-পুলিশের একটি যৌথ দল অভিযান চালালেও তাতে কোনো ফল হয়নি। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছিল র্যাব।
এরপর খালেদার গুলশান কার্যালয়ে রাত ১০টা থেকে ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন তাহসীনা। তিনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর খালেদাও তার বাসায় ফিরে যান।
এর পরই ইলিয়াস আলীর বনানীর ২/১ সড়কের ‘সিলেট হাউজ’-এর সামনে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক অবস্থান নেন বলে শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় সেখান থেকে জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।
‘এজেন্সির লোক’ বনাম ‘নাটক’
ইলিয়াসের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
এ হরতালের আগের দিন রাজধানীতে অন্তত আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি গাড়ির চালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
বিএনপি অবশ্য ইতিমধ্যে বলেছে, ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়া গেলেই হরতাল প্রত্যাহার করা হবে।
আর না পাওয়া গেলে লাগাতার হরতালের হুমকিও দিয়েছে দলটি।
এ ‘নিখোঁজ’ ঘটনা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বাক্য বিনিময়ও চলে গত কয়েকদিন ধরে।
‘নিখোঁজের’ পরদিন (বুধবার) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের ‘এজেন্সি ও র্যাবের লোকজন’ ইলিয়াসকে তুলে নিয়ে গেছে।
তবে এ ঘটনাকে ‘নাটক’ হিসাবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিই এ কাজ করেছে।
পূবাইলে নিষ্ফল অভিযান
পূবাইলে র্যাব-পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান শনিবার রাত ৯টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি।”
তিন ঘণ্টার অভিযানে গাজীপুরের পূবাইলের চারটি বাড়িতে র্যাব-পুলিশ তল্লাশি চালায় বলে জানান অভিজাত বাহিনীর মুখপাত্র এম সোহায়েল।
ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনাও তাদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানায় র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম ও আইনী শাখার পরিচালক এম সোহায়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার রাত ৮টার দিকে বলেন, “তাহসীনা রুশদীর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার বনানীর বাসায় ডেকে নিয়ে আমাদের জানান, ‘এক ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছেন আমার স্বামীকে পূবাইলে আটকে রাখা হয়েছে’।”
এরপর র্যাব ও পুলিশের দল তাকে উদ্ধারে পূবাইলে অভিযানে যায়।
স্ত্রীর কথার সূত্র ধরে র্যাব এবং পুলিশের একটি যৌথ দল গাজীপুরের পূবাইলের বড়কয়ার এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান চালায়।
যেভাবে নিখোঁজ
যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’, সেই বনানীর ২/১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িটি তার নিজের। ‘সিলেট হাউজ’ নামের এই বাড়িতে দুই মাস আগে পরিবার নিয়ে ওঠেন তিনি। থাকেন ছয় তলা ওই বাড়ির পঞ্চম তলায়।
‘নিখোঁজের’ পরদিন বনানী থানার উপপরিদর্শক ফায়েজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, রাত দেড়টার (বুধবার প্রথম প্রহর) দিকে আমতলী সংলগ্ন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি প্রাইভেটকার পড়ে থাকতে দেখে লোকজন ভিড় করে।
“পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি দেখতে পায়। গাড়ির ভেতরে একটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। ওই ফোনের কললিস্ট ধরে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি ইলিয়াস আলীর মোবাইল। আর গাড়িটি তার স্ত্রীর।”
পরে পুলিশ তাহসিনা রুশদীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন গাড়িটি তাদের এবং ইলিয়াস ঘণ্টা চারেক আগে ওই গাড়িতে করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন।
তাহসিনা পুলিশকে জানান, তার স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুজন লোকের সঙ্গে ওই গাড়িতে করে বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাসা থেকে দুজনকে সঙ্গী করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ইলিয়াস বাড়ির নিচ তলায় তার কার্যালয়ে ৬/৭ জনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। কথা শেষে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেন। অন্যরা দুটি মটর সাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যান।
এদের মধ্যে ২/৩ জন ‘নতুন লোক’ ছিলেন বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক।
ইলিয়াসের নবনির্মিত এই বাড়ির ছয় তলায় শুধু একজন ভাড়াটিয়া উঠেছেন। বাকি তলাগুলো এখনো খালি বলে শফিক জানান।
ইলিয়াসের পরিচিতি ‘সহিংসতায়’
গত শতকের আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে সামরিক একনায়ক জেনারেল এইচ এম এরশাদের সমর্থক ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজে যোগ দেন ইলিয়াস।
১৯৮৬ সালের মে মাসে ২২ দলীয় ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে সাধারণ ছাত্রদের বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়েন তিনি ও তার সঙ্গীরা।
পরে বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও সহিংসতার অভিযোগ আছে। সহিংস কর্মকাণ্ডের দায়ে তাকে ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ দুই নেতা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইলিয়াস ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তারও হন। বিএনপির ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তিনি কারাদণ্ডও ভোগ করেন।
ইলিয়াস একবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন যে কমিটি তিন মাস পর বাতিল করা হয়। সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিতি পেলেও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত ক্ষমতাধর বিএনপি নেতা সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের মূলধারায় আলোচনায় আসেন তিনি।
সেখানে অপেক্ষমাণ দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রিজওয়ান বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বার্তাপ্রধানের নির্দেশনায় এখানে এসেছি। তিনি অপেক্ষা করতে বলেছেন।”
খালেদার সঙ্গে রাত পৌনে ১১টায় সাক্ষাৎ শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে দিয়েই বাসায় ফেরেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এর কিছুক্ষণ আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের সঙ্গে গাজীপুর অভিযানে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এদিকে ইলিয়াসকে উদ্ধারে সর্বশেষ খবর জানতে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাত ১২ টায় বলেন, “নো নিউজ, নো ডেভেলপমেন্ট।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ইলিয়াসের ব্যক্তিগত গাড়ি গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তার বনানীর বাসার কাছে আমতলীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িতে পাওয়া একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর। ওই সময় গাড়িচালক আনসারকেও পাওয়া যায়নি।
ইলিয়াসের ‘নিখোঁজের’ পরদিন (বুধবার) তাকে ফেরত চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন স্ত্রী তাহসীনা।
শনিবার তাকে উদ্ধারে গাজীপুরের পূবাইলে র্যাব-পুলিশের একটি যৌথ দল অভিযান চালালেও তাতে কোনো ফল হয়নি। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছিল র্যাব।
এরপর খালেদার গুলশান কার্যালয়ে রাত ১০টা থেকে ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন তাহসীনা। তিনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর খালেদাও তার বাসায় ফিরে যান।
এর পরই ইলিয়াস আলীর বনানীর ২/১ সড়কের ‘সিলেট হাউজ’-এর সামনে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক অবস্থান নেন বলে শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় সেখান থেকে জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।
‘এজেন্সির লোক’ বনাম ‘নাটক’
ইলিয়াসের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
এ হরতালের আগের দিন রাজধানীতে অন্তত আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি গাড়ির চালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
বিএনপি অবশ্য ইতিমধ্যে বলেছে, ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়া গেলেই হরতাল প্রত্যাহার করা হবে।
আর না পাওয়া গেলে লাগাতার হরতালের হুমকিও দিয়েছে দলটি।
এ ‘নিখোঁজ’ ঘটনা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বাক্য বিনিময়ও চলে গত কয়েকদিন ধরে।
‘নিখোঁজের’ পরদিন (বুধবার) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের ‘এজেন্সি ও র্যাবের লোকজন’ ইলিয়াসকে তুলে নিয়ে গেছে।
তবে এ ঘটনাকে ‘নাটক’ হিসাবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিই এ কাজ করেছে।
পূবাইলে নিষ্ফল অভিযান
পূবাইলে র্যাব-পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান শনিবার রাত ৯টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি।”
তিন ঘণ্টার অভিযানে গাজীপুরের পূবাইলের চারটি বাড়িতে র্যাব-পুলিশ তল্লাশি চালায় বলে জানান অভিজাত বাহিনীর মুখপাত্র এম সোহায়েল।
ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনাও তাদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানায় র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম ও আইনী শাখার পরিচালক এম সোহায়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার রাত ৮টার দিকে বলেন, “তাহসীনা রুশদীর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার বনানীর বাসায় ডেকে নিয়ে আমাদের জানান, ‘এক ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছেন আমার স্বামীকে পূবাইলে আটকে রাখা হয়েছে’।”
এরপর র্যাব ও পুলিশের দল তাকে উদ্ধারে পূবাইলে অভিযানে যায়।
স্ত্রীর কথার সূত্র ধরে র্যাব এবং পুলিশের একটি যৌথ দল গাজীপুরের পূবাইলের বড়কয়ার এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান চালায়।
যেভাবে নিখোঁজ
যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’, সেই বনানীর ২/১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িটি তার নিজের। ‘সিলেট হাউজ’ নামের এই বাড়িতে দুই মাস আগে পরিবার নিয়ে ওঠেন তিনি। থাকেন ছয় তলা ওই বাড়ির পঞ্চম তলায়।
‘নিখোঁজের’ পরদিন বনানী থানার উপপরিদর্শক ফায়েজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, রাত দেড়টার (বুধবার প্রথম প্রহর) দিকে আমতলী সংলগ্ন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি প্রাইভেটকার পড়ে থাকতে দেখে লোকজন ভিড় করে।
“পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি দেখতে পায়। গাড়ির ভেতরে একটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। ওই ফোনের কললিস্ট ধরে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি ইলিয়াস আলীর মোবাইল। আর গাড়িটি তার স্ত্রীর।”
পরে পুলিশ তাহসিনা রুশদীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন গাড়িটি তাদের এবং ইলিয়াস ঘণ্টা চারেক আগে ওই গাড়িতে করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন।
তাহসিনা পুলিশকে জানান, তার স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুজন লোকের সঙ্গে ওই গাড়িতে করে বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাসা থেকে দুজনকে সঙ্গী করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ইলিয়াস বাড়ির নিচ তলায় তার কার্যালয়ে ৬/৭ জনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। কথা শেষে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেন। অন্যরা দুটি মটর সাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যান।
এদের মধ্যে ২/৩ জন ‘নতুন লোক’ ছিলেন বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক।
ইলিয়াসের নবনির্মিত এই বাড়ির ছয় তলায় শুধু একজন ভাড়াটিয়া উঠেছেন। বাকি তলাগুলো এখনো খালি বলে শফিক জানান।
ইলিয়াসের পরিচিতি ‘সহিংসতায়’
গত শতকের আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে সামরিক একনায়ক জেনারেল এইচ এম এরশাদের সমর্থক ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজে যোগ দেন ইলিয়াস।
১৯৮৬ সালের মে মাসে ২২ দলীয় ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে সাধারণ ছাত্রদের বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়েন তিনি ও তার সঙ্গীরা।
পরে বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও সহিংসতার অভিযোগ আছে। সহিংস কর্মকাণ্ডের দায়ে তাকে ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ দুই নেতা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইলিয়াস ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তারও হন। বিএনপির ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তিনি কারাদণ্ডও ভোগ করেন।
ইলিয়াস একবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন যে কমিটি তিন মাস পর বাতিল করা হয়। সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিতি পেলেও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত ক্ষমতাধর বিএনপি নেতা সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের মূলধারায় আলোচনায় আসেন তিনি।
No comments