সময়ের কথা-আলোর সঙ্গে কিছু অন্ধকারও বণ্টন by অজয় দাশগুপ্ত
আরেকটি সমস্যা, রাষ্ট্রের কাছে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের অসীম প্রত্যাশা। চাল-ডাল-ভোজ্যতেল বা চিনি হোক, বাস-মিনিবাস ও ট্রেনের ভাড়া হোক কিংবা বিদ্যুৎ বা ওয়াসার পানি ও রান্নার গ্যাস হোক_ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে তা সরবরাহ করা। এ ক্ষেত্রে দোহাই পাড়া হয় দরিদ্রদের সমস্যা নিয়ে।
বলা হয় তাদের কষ্টের কথা। কিন্তু এটা বলা হয় না যে, যারা বেশি বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস ব্যবহার করে, ভর্তুকির সুফল তাদের বরাতেই বেশি জোটে
এটা কি সম্ভব যে, দেশে যতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা রেশন করে শহর ও গ্রামগুলোর বিপুল সংখ্যক ভোক্তার কাছে পেঁৗছে দেওয়া যাবে? ধরা যাক রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার কথা_ সেখানে পিক আওয়ারের জন্য পাঁচ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হলো ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই অথরিটি বা ডেসা থেকে। কিন্তু চাহিদা রয়েছে সাত মেগাওয়াটের। ডেসা থেকে ওই এলাকার সব গ্রাহককে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়া হলো, আপনি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চেয়েছেন তার চেয়ে কিছুটা কম সরবরাহ করা সম্ভব। অতএব আপনি এলাকায় বরাদ্দ অনুপাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এবং এ কারণে কিছু লাইট-ফ্যান-এয়ারকন্ডিশনড মেশিন বন্ধ রাখতে হবে। উৎপাদন কম এবং বিতরণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় বিধায় সব বাড়িতে যেহেতু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি, তাই নির্দিষ্টসংখ্যক লোক বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধা পায়। সবাই বিদ্যুৎ সুবিধা পায় না, তাই যারা পায় তাদের সুবিধাভোগী বলতে পারি। আবার সুবিধাভোগীদের মধ্যেও ভেদাভেদ রয়েছে_ কেউ বাড়িতে এয়ারকন্ডিশনড যন্ত্র, ফ্যান, বাল্ব, ইস্ত্রি, ফ্রিজ, টিভি, কাপড় ধোয়ার মেশিনসহ অনেক ধরনের সুবিধা পূরণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন; আবার কেউ বা একটি-দুটি বাল্ব এবং টিভি-ফ্যান ব্যবহার করতে পারলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে চলে আসা রীতি হচ্ছে_ যার যত অর্থ, সে তত সুবিধা ভোগ করবে। শ্রেণী-সংগ্রামের তত্ত্বে যাদের অগাধ আস্থা তারা এর মধ্যে ধনী-গরিবের বৈষম্য সৃষ্টিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুঁজে পাবেন।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও রয়েছে, যা তেমন আলোচনায় আসে না। অথচ শ্রেণী সংগ্রামে বিশ্বাসীদের কাছে এটা হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রতি বছর ভর্তুকি দেয়। স্বাভাবিকভাবেই যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তার ভাগে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি পড়বে। তবে একটি 'সুবিধা' ধনী-দরিদ্র সব পরিবার সমভাবে ভোগ করে_ লোডশেডিং। যে এলাকায় যখন বিদ্যুৎ যায়, সব পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। সচ্ছলতা থাকলে আইপিএস বা জেনারেটর ব্যবহার করে এ আঁধার দূর করা যায়। লেখার শুরুতে নতুন যে পদ্ধতির কথা বলেছি, সেটা হচ্ছে আলোর সঙ্গে কিছু আঁধারের বণ্টন বিষয়ে।
রাজধানীর আবদুল গনি রোডের বিদ্যুৎ ভবনে বৃহস্পতিবার এক ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার প্রকৌশলী অজয় সরকারের সৌজন্যে। তিনি সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছেন। তার অনুজ সঞ্জয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭০ সালে জগন্নাথ হলের দক্ষিণ বাড়িতে একই কক্ষ আমাদের দু'জনের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। দু'জনেরই একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের তিনটি লক্ষ্য_ এক. উৎপাদন বাড়ানো; দুই. বণ্টন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং তিন. বিদ্যুতের বিল আদায় বাড়ানো। এ তিন ধারার কার্যক্রম সমান গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান। আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তির ফলে শেষের দুটি কাজ বর্তমানের চেয়ে ভালোভাবে করা যাবে। অনুষ্ঠানে অজয় সরকার জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে তাতে গ্রাহকদের প্রি-পেইড কার্ড কিনে নিতে হবে। তারা নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকদিন বা এক মাসের জন্য টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনবেন। এ জন্য প্রত্যেকের বাসায় বিশেষ ধরনের মিটার বসবে এবং জমা দেওয়া টাকা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। যদি গ্রাহক দেখেন যে এক মাসের জন্য যতটা বিদ্যুৎ কিনেছেন, ২০ বা ২২ দিনে যতটা ব্যবহার করার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে গেছে, তাহলে তিনি পরের দিনগুলোর জন্য কিছুটা মিতব্যয়ী হবেন। তারা তখন এক সঙ্গে সব ঘরের ফ্যান চালাবেন না। কিংবা কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য আয়রন ব্যবহার না করে লন্ড্রিতে পাঠাবেন। অন্যথায় তাকে মাসের বাকি দিনগুলোর জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। আর অর্থ না থাকলে বাকি কয়েকটা দিন কাটাতে হবে অন্ধকারে। বিষয়টি অনেকটা মোবাইল ফোনের প্রি-পেইড কার্ড কেনার মতো_ আপনি যতটা কিনবেন ততটাই ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কেউ চাইলেই কি অঢেল টাকা দিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ কিনে রাখতে পারবেন? যাদের অনেক টাকা আছে, তাদের এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যাদের নেই কিংবা কম আছে তারা এমনটি চাইবেন না। যেহেতু এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় চাহিদার তুলনায় বেশ কিছুটা কম, তাই প্রি-পেইড সিস্টেমে গ্রাহকদের যত খুশি তত বিদ্যুৎ কেনার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
আরেকটি প্রশ্ন আসবে গ্রাহকদের দিক থেকে। সেটা হচ্ছে লোডশেডিং সংক্রান্ত। তারা যেহেতু সরকারকে বা কোনো কোম্পানিকে আগেই বিদ্যুতের জন্য অর্থ পরিশোধ করছে তাই জোর গলায় বলবে, এখন কেন লোডশেডিং? এ ক্ষেত্রে সরকার থাকবে ডিফেন্সিভ অবস্থানে। এভাবে আগাম টাকা নিলে সরকারকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জোর দিতে হবে, একই সঙ্গে বাড়াতে হবে বণ্টন সুবিধা। অন্যথায় এ সুবিধা বেশি দূর ছড়ানো যাবে না। চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের জন্য পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল। এতে সরকারের আয় বেড়েছে এবং একই সঙ্গে গ্রাহকরাও বিদ্যুৎ ব্যবহারে হিসাবী হয়েছে। প্রকৃতই আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে হিসাবী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ_ বিদ্যুতের উৎপাদন ও বণ্টন সুবিধা সৃষ্টির জন্য ব্যয় কমিয়ে রাখা। বহু বছর সরকারের নিয়ন্ত্রণে একচেটিয়া উৎপাদন হতো। এ সময়ে প্রচুর অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন যে বিদ্যুৎকেন্দ্র একশ' কোটি টাকায় নির্মাণ হতে পারত, তার পেছনে নানা অজুহাত-যুক্তি-হিসাবের কারচুপি করে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ২৫ কোটি টাকা গেছে নানা প্রভাবশালী লোকের পকেটে।
গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ জন্য ছোট-বড় নানা ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। সরকার তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িতে বিক্রি করে। আবার কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাদের কিছু বাড়তি অংশ থাকলে সেটাও সরকার কিনে নেয়। এই যে বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে কিনে নেওয়া তার মধ্যে দুর্নীতি থাকে। সরকারের তরফে যারা চুক্তি করেন তাদের পকেটে কিছু নগদ অর্থ গুঁজে দিলে কিংবা সন্তান বা নিকট আত্মীয়কে বিদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার ব্যবস্থার মাধ্যমে অথবা নাইকো কোম্পানি যেমন প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে এক কোটি টাকা দামের জিপ গাড়ি 'উপহার' দিয়েছিল তেমন পদ্ধতিতে এই দুর্নীতি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার বাড়তি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সই করে এবং তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ওপর। দেশে যদি আইনের শাসন থাকে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় সরকারকে আনা যায়, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন ভরসা কি দেশবাসী করতে পারে?
প্রি-পেইড মিটার সংক্রান্ত চুক্তির অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি বিষয় জানার চেষ্টা করেছিলাম_ রাজধানীতে এয়ারকন্ডিশনড যন্ত্রের পেছনে কতটা বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। সঠিক উত্তর তেমন কেউ দিতে পারেননি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে গ্রীষ্ম ও শীতকালে বিদ্যুৎ চাহিদার মধ্যে এখন ২০০ মেগাওয়াট ব্যবধান থাকে। ধরে নেওয়া যায় যে, এ পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় হয় গরমে এসি মেশিন ও ফ্যান চালানোর জন্য। এর মধ্যে অন্তত ১৫০ মেগাওয়াট চলে যায় এসি চালাতে। রাজধানীর বহু অফিস ও বাসভবনে দেখা যাবে মৌমাছির মতো এসি মেশিন গিজগিজ করছে। তারা সীমিত বিদ্যুতের উল্লেখযোগ্য অংশ শুষে নেয়। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা গত বছর পিক আওয়ারে এসি যন্ত্র ব্যবহার সীমিত রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছিলেন। কিছু সচ্ছল গ্রাহকের সাফ কথা ছিল, আগে উৎপাদন বাড়িয়ে বণ্টন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করুন, তারপর নীতি কথা শোনাবেন। তারা সমবণ্টন তো পছন্দ করেনই না বরং পিক আওয়ারে সামান্য কৃচ্ছ্রসাধনেও তাদের ঘোর আপত্তি। প্রি-পেইড ব্যবস্থা তাদের কাছে আদৌ পছন্দ হবে বলে মনে হয় না। বিদ্যুৎ বিভাগ যদি মিটারে বিশেষ পদ্ধতি সংযোজনের মাধ্যমে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সরবরাহ এমনভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যাতে চাইলেও একটি বাড়িতে এক সঙ্গে একটির বেশি এসি ব্যবহারের মতো বিদ্যুৎ মিলবে না, সেটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আদর্শ ব্যবস্থা হতে পারে (যতক্ষণ দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে), কিন্তু সেটা ধনবানদের মানানো কঠিন। যুক্তিতে তো সবসময় সবকিছু চলে না।
আমাদের দেশে আরেকটি সমস্যা, রাষ্ট্রের কাছে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের অসীম প্রত্যাশা। চাল-ডাল-ভোজ্যতেল বা চিনি হোক, বাস-মিনিবাস ও ট্রেনের ভাড়া হোক কিংবা বিদ্যুৎ বা ওয়াসার পানি ও রান্নার গ্যাস হোক_ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে তা সরবরাহ করা। এ ক্ষেত্রে দোহাই পাড়া হয় দরিদ্রদের সমস্যা নিয়ে। বলা হয় তাদের কষ্টের কথা। কিন্তু এটা বলা হয় না যে, যারা বেশি বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস ব্যবহার করে, ভর্তুকির সুফল তাদের বরাতেই বেশি জোটে। এক পরিবার হয়তো দিনের রান্না, স্নান, টয়লেটসহ যাবতীয় প্রয়োজন ৪-৫ বালতি পানিতে মেটায়, আরেকটি পরিবারকে দেখা যায় পানি দিয়ে ঘরের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও গাড়ি ধোয়ামোছা ও বাড়ির লন সবুজ রাখার কাজও করছে। ছাদের ফুল-ফলের বাগানেও পানি দেওয়া হয়। এ পানি সরবরাহ করা হয় যেহেতু ভর্তুকি মূল্যে, তাই বেশি সুফল ধনবানরাই ভোগ করে। এটাও দেখা যায়, যে ধনবানরা সারাক্ষণ রাষ্ট্রের মুণ্ডুপাত করে চলেন, সরকারকে দুষছেন অদক্ষতা ও উদ্যোগহীনতার জন্য তারাই আবার সব ধরনের সেবা চাইছেন সরকারের কাছে এবং সে জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে চাইছেন না, বরং প্রত্যাশায় থাকেন ভর্তুকির। তারা বাজার অর্থনীতির জয়গানে মুখর থাকেন, কিন্তু নিজেদের শ্রীবৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছ থেকে দু'হাত ভরে পেতে চান।
আলোর পাশাপাশি প্রয়োজনে আনুপাতিক হারে অন্ধকার বণ্টনের উদ্যোগে সাফল্য লাভের জন্য এ মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। এটাও মনে রাখতে হবে যে, গুলশান, বনানী কিংবা ধানমণ্ডির একটি পরিবার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তা দিয়ে অন্তত একশ' নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের ঘর আলোকিত হতে পারে। ধনবানরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং এ জন্য অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে, সমাজে তারা প্রভাবশালী এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষায় তারা একজোট রয়েছে। এ বাধা মোকাবেলা অন্ধকার জয়ের চেয়েও কিন্তু কঠিন।
অজয় দাশগুপ্ত : সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
এটা কি সম্ভব যে, দেশে যতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা রেশন করে শহর ও গ্রামগুলোর বিপুল সংখ্যক ভোক্তার কাছে পেঁৗছে দেওয়া যাবে? ধরা যাক রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার কথা_ সেখানে পিক আওয়ারের জন্য পাঁচ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হলো ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই অথরিটি বা ডেসা থেকে। কিন্তু চাহিদা রয়েছে সাত মেগাওয়াটের। ডেসা থেকে ওই এলাকার সব গ্রাহককে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়া হলো, আপনি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চেয়েছেন তার চেয়ে কিছুটা কম সরবরাহ করা সম্ভব। অতএব আপনি এলাকায় বরাদ্দ অনুপাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এবং এ কারণে কিছু লাইট-ফ্যান-এয়ারকন্ডিশনড মেশিন বন্ধ রাখতে হবে। উৎপাদন কম এবং বিতরণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় বিধায় সব বাড়িতে যেহেতু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি, তাই নির্দিষ্টসংখ্যক লোক বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধা পায়। সবাই বিদ্যুৎ সুবিধা পায় না, তাই যারা পায় তাদের সুবিধাভোগী বলতে পারি। আবার সুবিধাভোগীদের মধ্যেও ভেদাভেদ রয়েছে_ কেউ বাড়িতে এয়ারকন্ডিশনড যন্ত্র, ফ্যান, বাল্ব, ইস্ত্রি, ফ্রিজ, টিভি, কাপড় ধোয়ার মেশিনসহ অনেক ধরনের সুবিধা পূরণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন; আবার কেউ বা একটি-দুটি বাল্ব এবং টিভি-ফ্যান ব্যবহার করতে পারলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে চলে আসা রীতি হচ্ছে_ যার যত অর্থ, সে তত সুবিধা ভোগ করবে। শ্রেণী-সংগ্রামের তত্ত্বে যাদের অগাধ আস্থা তারা এর মধ্যে ধনী-গরিবের বৈষম্য সৃষ্টিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুঁজে পাবেন।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও রয়েছে, যা তেমন আলোচনায় আসে না। অথচ শ্রেণী সংগ্রামে বিশ্বাসীদের কাছে এটা হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রতি বছর ভর্তুকি দেয়। স্বাভাবিকভাবেই যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তার ভাগে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি পড়বে। তবে একটি 'সুবিধা' ধনী-দরিদ্র সব পরিবার সমভাবে ভোগ করে_ লোডশেডিং। যে এলাকায় যখন বিদ্যুৎ যায়, সব পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। সচ্ছলতা থাকলে আইপিএস বা জেনারেটর ব্যবহার করে এ আঁধার দূর করা যায়। লেখার শুরুতে নতুন যে পদ্ধতির কথা বলেছি, সেটা হচ্ছে আলোর সঙ্গে কিছু আঁধারের বণ্টন বিষয়ে।
রাজধানীর আবদুল গনি রোডের বিদ্যুৎ ভবনে বৃহস্পতিবার এক ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার প্রকৌশলী অজয় সরকারের সৌজন্যে। তিনি সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছেন। তার অনুজ সঞ্জয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭০ সালে জগন্নাথ হলের দক্ষিণ বাড়িতে একই কক্ষ আমাদের দু'জনের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। দু'জনেরই একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের তিনটি লক্ষ্য_ এক. উৎপাদন বাড়ানো; দুই. বণ্টন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং তিন. বিদ্যুতের বিল আদায় বাড়ানো। এ তিন ধারার কার্যক্রম সমান গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান। আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তির ফলে শেষের দুটি কাজ বর্তমানের চেয়ে ভালোভাবে করা যাবে। অনুষ্ঠানে অজয় সরকার জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে তাতে গ্রাহকদের প্রি-পেইড কার্ড কিনে নিতে হবে। তারা নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকদিন বা এক মাসের জন্য টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনবেন। এ জন্য প্রত্যেকের বাসায় বিশেষ ধরনের মিটার বসবে এবং জমা দেওয়া টাকা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। যদি গ্রাহক দেখেন যে এক মাসের জন্য যতটা বিদ্যুৎ কিনেছেন, ২০ বা ২২ দিনে যতটা ব্যবহার করার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে গেছে, তাহলে তিনি পরের দিনগুলোর জন্য কিছুটা মিতব্যয়ী হবেন। তারা তখন এক সঙ্গে সব ঘরের ফ্যান চালাবেন না। কিংবা কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য আয়রন ব্যবহার না করে লন্ড্রিতে পাঠাবেন। অন্যথায় তাকে মাসের বাকি দিনগুলোর জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। আর অর্থ না থাকলে বাকি কয়েকটা দিন কাটাতে হবে অন্ধকারে। বিষয়টি অনেকটা মোবাইল ফোনের প্রি-পেইড কার্ড কেনার মতো_ আপনি যতটা কিনবেন ততটাই ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কেউ চাইলেই কি অঢেল টাকা দিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ কিনে রাখতে পারবেন? যাদের অনেক টাকা আছে, তাদের এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যাদের নেই কিংবা কম আছে তারা এমনটি চাইবেন না। যেহেতু এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় চাহিদার তুলনায় বেশ কিছুটা কম, তাই প্রি-পেইড সিস্টেমে গ্রাহকদের যত খুশি তত বিদ্যুৎ কেনার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
আরেকটি প্রশ্ন আসবে গ্রাহকদের দিক থেকে। সেটা হচ্ছে লোডশেডিং সংক্রান্ত। তারা যেহেতু সরকারকে বা কোনো কোম্পানিকে আগেই বিদ্যুতের জন্য অর্থ পরিশোধ করছে তাই জোর গলায় বলবে, এখন কেন লোডশেডিং? এ ক্ষেত্রে সরকার থাকবে ডিফেন্সিভ অবস্থানে। এভাবে আগাম টাকা নিলে সরকারকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জোর দিতে হবে, একই সঙ্গে বাড়াতে হবে বণ্টন সুবিধা। অন্যথায় এ সুবিধা বেশি দূর ছড়ানো যাবে না। চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের জন্য পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল। এতে সরকারের আয় বেড়েছে এবং একই সঙ্গে গ্রাহকরাও বিদ্যুৎ ব্যবহারে হিসাবী হয়েছে। প্রকৃতই আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে হিসাবী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ_ বিদ্যুতের উৎপাদন ও বণ্টন সুবিধা সৃষ্টির জন্য ব্যয় কমিয়ে রাখা। বহু বছর সরকারের নিয়ন্ত্রণে একচেটিয়া উৎপাদন হতো। এ সময়ে প্রচুর অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন যে বিদ্যুৎকেন্দ্র একশ' কোটি টাকায় নির্মাণ হতে পারত, তার পেছনে নানা অজুহাত-যুক্তি-হিসাবের কারচুপি করে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ২৫ কোটি টাকা গেছে নানা প্রভাবশালী লোকের পকেটে।
গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ জন্য ছোট-বড় নানা ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। সরকার তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িতে বিক্রি করে। আবার কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাদের কিছু বাড়তি অংশ থাকলে সেটাও সরকার কিনে নেয়। এই যে বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে কিনে নেওয়া তার মধ্যে দুর্নীতি থাকে। সরকারের তরফে যারা চুক্তি করেন তাদের পকেটে কিছু নগদ অর্থ গুঁজে দিলে কিংবা সন্তান বা নিকট আত্মীয়কে বিদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার ব্যবস্থার মাধ্যমে অথবা নাইকো কোম্পানি যেমন প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে এক কোটি টাকা দামের জিপ গাড়ি 'উপহার' দিয়েছিল তেমন পদ্ধতিতে এই দুর্নীতি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার বাড়তি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সই করে এবং তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ওপর। দেশে যদি আইনের শাসন থাকে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় সরকারকে আনা যায়, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন ভরসা কি দেশবাসী করতে পারে?
প্রি-পেইড মিটার সংক্রান্ত চুক্তির অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি বিষয় জানার চেষ্টা করেছিলাম_ রাজধানীতে এয়ারকন্ডিশনড যন্ত্রের পেছনে কতটা বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। সঠিক উত্তর তেমন কেউ দিতে পারেননি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে গ্রীষ্ম ও শীতকালে বিদ্যুৎ চাহিদার মধ্যে এখন ২০০ মেগাওয়াট ব্যবধান থাকে। ধরে নেওয়া যায় যে, এ পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় হয় গরমে এসি মেশিন ও ফ্যান চালানোর জন্য। এর মধ্যে অন্তত ১৫০ মেগাওয়াট চলে যায় এসি চালাতে। রাজধানীর বহু অফিস ও বাসভবনে দেখা যাবে মৌমাছির মতো এসি মেশিন গিজগিজ করছে। তারা সীমিত বিদ্যুতের উল্লেখযোগ্য অংশ শুষে নেয়। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা গত বছর পিক আওয়ারে এসি যন্ত্র ব্যবহার সীমিত রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছিলেন। কিছু সচ্ছল গ্রাহকের সাফ কথা ছিল, আগে উৎপাদন বাড়িয়ে বণ্টন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করুন, তারপর নীতি কথা শোনাবেন। তারা সমবণ্টন তো পছন্দ করেনই না বরং পিক আওয়ারে সামান্য কৃচ্ছ্রসাধনেও তাদের ঘোর আপত্তি। প্রি-পেইড ব্যবস্থা তাদের কাছে আদৌ পছন্দ হবে বলে মনে হয় না। বিদ্যুৎ বিভাগ যদি মিটারে বিশেষ পদ্ধতি সংযোজনের মাধ্যমে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সরবরাহ এমনভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যাতে চাইলেও একটি বাড়িতে এক সঙ্গে একটির বেশি এসি ব্যবহারের মতো বিদ্যুৎ মিলবে না, সেটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আদর্শ ব্যবস্থা হতে পারে (যতক্ষণ দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে), কিন্তু সেটা ধনবানদের মানানো কঠিন। যুক্তিতে তো সবসময় সবকিছু চলে না।
আমাদের দেশে আরেকটি সমস্যা, রাষ্ট্রের কাছে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের অসীম প্রত্যাশা। চাল-ডাল-ভোজ্যতেল বা চিনি হোক, বাস-মিনিবাস ও ট্রেনের ভাড়া হোক কিংবা বিদ্যুৎ বা ওয়াসার পানি ও রান্নার গ্যাস হোক_ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে তা সরবরাহ করা। এ ক্ষেত্রে দোহাই পাড়া হয় দরিদ্রদের সমস্যা নিয়ে। বলা হয় তাদের কষ্টের কথা। কিন্তু এটা বলা হয় না যে, যারা বেশি বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস ব্যবহার করে, ভর্তুকির সুফল তাদের বরাতেই বেশি জোটে। এক পরিবার হয়তো দিনের রান্না, স্নান, টয়লেটসহ যাবতীয় প্রয়োজন ৪-৫ বালতি পানিতে মেটায়, আরেকটি পরিবারকে দেখা যায় পানি দিয়ে ঘরের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও গাড়ি ধোয়ামোছা ও বাড়ির লন সবুজ রাখার কাজও করছে। ছাদের ফুল-ফলের বাগানেও পানি দেওয়া হয়। এ পানি সরবরাহ করা হয় যেহেতু ভর্তুকি মূল্যে, তাই বেশি সুফল ধনবানরাই ভোগ করে। এটাও দেখা যায়, যে ধনবানরা সারাক্ষণ রাষ্ট্রের মুণ্ডুপাত করে চলেন, সরকারকে দুষছেন অদক্ষতা ও উদ্যোগহীনতার জন্য তারাই আবার সব ধরনের সেবা চাইছেন সরকারের কাছে এবং সে জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে চাইছেন না, বরং প্রত্যাশায় থাকেন ভর্তুকির। তারা বাজার অর্থনীতির জয়গানে মুখর থাকেন, কিন্তু নিজেদের শ্রীবৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছ থেকে দু'হাত ভরে পেতে চান।
আলোর পাশাপাশি প্রয়োজনে আনুপাতিক হারে অন্ধকার বণ্টনের উদ্যোগে সাফল্য লাভের জন্য এ মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। এটাও মনে রাখতে হবে যে, গুলশান, বনানী কিংবা ধানমণ্ডির একটি পরিবার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তা দিয়ে অন্তত একশ' নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের ঘর আলোকিত হতে পারে। ধনবানরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং এ জন্য অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে, সমাজে তারা প্রভাবশালী এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষায় তারা একজোট রয়েছে। এ বাধা মোকাবেলা অন্ধকার জয়ের চেয়েও কিন্তু কঠিন।
অজয় দাশগুপ্ত : সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
No comments