গলফের রাজ্যে ১৪ রাজা! by সিয়াম রহমান
কে জানত, একটা দুর্ঘটনা খাঁচায় বন্দী করে ফেলবে ‘বাঘ’কে! বদলে দেবে গলফের মানচিত্র! ২০০৯ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন গলফের রাজা টাইগার উডস। রেগে টাইগারের মাথায় আঘাত করেননি তো সুন্দরী স্ত্রী? সেই গবেষণা থেকে বের হয়ে পড়ে থলের বিড়াল। ২০ জনেরও বেশি সুন্দরী দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে উডসের রাত কাটানোর কথা।
কেউ কেউ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে যান বাড়ির সামনেও!
ব্যস, ভাঙল সংসার। ছেড়ে যেতে লাগল স্পনসররা। ক্লাব তুলে রেখে উডস গেলেন মানসিক হাসপাতালে। ফিরলেনও একসময়। তত দিনে যা পালাবদল হওয়ার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি মেজর জেতা এই কিংবদন্তি দেখলেন গত ১৪টি মেজরে নতুন ১৪ চ্যাম্পিয়নকে! বাঘ না থাকলে যেমন শিয়ালও জঙ্গলের রাজা ভাবতে পারে নিজেকে, গলফের রাজ্যে হয়েছে সেটাই। কেউ স্বাদ পাচ্ছেন প্রথম মেজরের, কেউ বা শিরোপা জিতেছেন প্রথমবার অংশ নিয়েই। কেউ আবার বাজিমাত করছেন কোচ ছাড়াই!
পেশাদার কোচ ছাড়া শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি হয়েছে ৮ এপ্রিল শেষ হওয়া ২০১২ সালের প্রথম মেজর ইউএস মাস্টার্সে। কোচ তো বটেই, এমনকি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ বছর বয়সী গলফার বুবা ওয়াটসনকে ছেড়ে গিয়েছিল তাঁর ক্যাডিও। ছেড়ে যাওয়ার সময় সেই ক্যাডিকে বুবা বলেছিলেন, ‘তুমি যাও, ঈশ্বর আছে আমার সঙ্গে।’ অবশ্যই আছে, নইলে গলফের ‘অ, আ, ক, খ’ বিদ্যার বাবার কাছে স্টিক ধরা শিখেছেন যিনি, সেই তিনি মেজর জেতেন কী করে? তাই তো শিরোপাটা উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত বাবাকে। সৌভাগ্যের প্রতীক মানছেন দত্তক নেওয়া ছেলেকেও। সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা নেই জেনেও তিনি বিয়ে করেছিলেন বান্ধবীকে। গত মাসেই তাঁদের পরিবারের অংশ হয়েছে দত্তক নেওয়া ওই ফুটফুটে সন্তান।
প্লে-অফে বুবা অলৌকিক এক শটে হারিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার লুইস উসথুইজেনকে। পিন থেকে ১৬৪ গজ দূরে পড়ার পাশাপাশি কঠিন কোণে ছিল বুবার বলটা। সেখান থেকেই অলৌকিক শটে বাজিমাত। আর এই শিরোপাটা ‘হুক বিশেষজ্ঞ’ বুবাকে পৌঁছে দিয়েছে র্যাঙ্কিংয়ের চতুর্থ স্থানে।
কিগান ব্র্যাডলির কৃতিত্বটাও বা কম কিসে? গত বছরের শেষ মেজর পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে (টেনিসের মতো গলফেও মেজর বছরে চারটি) ২৫ বছরের এই তরুণ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন প্রথমবার অংশ নিয়েই! গলফে এমন কীর্তি এর আগে ছিল কেবল দুজনের—১৯১৩ সালে ফ্রান্সিস ওইমেট ও ২০০৩ সালে বেন কার্টিসের। র্যাঙ্কিংয়ে ১০৮ নম্বরে থেকে পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন ব্র্যাডলি। শিরোপা জেতায় এক লাফে চলে আসেন ২৯-এ। আরও উন্নতি করে তিনি এখন ২০ নম্বরে।
এই ১৪টি মেজরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্র্যাডলি আর বুবা ওয়াটসন ছাড়া শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন কেবল ফিল মিকেলসন। তিনি জিতেছিলেন ২০১০-এর ইউএস মাস্টার্স। এই ১৪ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৭টি পেশাদার শিরোপা আর চারটি মেজর আছে তাঁরই।
১৪ গলফারের মধ্যে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় তারকা মনে করা হচ্ছে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ররি ম্যাকইলরয়কে। ২২ বছর বয়সী আয়ারল্যান্ডের এই তরুণ গত বছর জিতেছেন ইউএস ওপেন। ১৯২৩ সালে ববি জোনসের পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেন জিতেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, রেকর্ড ১৬ আন্ডার পারে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২৬৮ স্কোর করে। আগের রেকর্ডটা ছিল ১৯৮০ সালে জ্যাক নিকলাসের (২৭২)।
এককভাবে কারও না হলেও আইরিশ গলফারদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে বেশি চারটি মেজর জিতেছেন এই দেশের খেলোয়াড়েরাই। দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়াং ইয়ং-ইয়ুন নতুন ইতিহাস গড়েছেন আবার ২০০৯ পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। প্রথম এশিয়ান হিসেবে কোনো মেজর জেতেন ইয়ুন, তাও আবার টাইগার উডসকে হারিয়ে! ‘খাঁচা’ ভেঙে উডস অবশ্য আবারও বেরিয়ে পড়েছেন। একসময় র্যাঙ্কিংয়ের ৫০-এর বাইরে চলে যাওয়া এই কিংবদন্তি ফিরে এসেছেন সেরা দশে। বাঘ আবারও হুংকার ছেড়ে রাজা হবেন, নাকি খাঁচায় থাকা চিড়িয়াখানার গন্ধটা বয়ে বেড়াবেন সারা জীবন, এখন সেটাই দেখার।
গত ১৪ মেজরের ১৪ চ্যাম্পিয়ন
ইউএস মাস্টার্স
২০০৯: অ্যাঞ্জেল কাবরেরা (আর্জেন্টিনা)
২০১০: ফিল মিকেলসন (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১১: শার্ল শোয়ার্তজেল (দ. আফ্রিকা)
২০১২: বুবা ওয়াটসন (যুক্তরাষ্ট্র)
ইউএস ওপেন
২০০৯: লুকাস গ্লোভার (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১০: গ্রায়েম ম্যাকডাওয়েল (আয়ারল্যান্ড)
২০১১: ররি ম্যাকইলরয় (আয়ারল্যান্ড)
পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ
২০০৮: প্যাডরেইগ হ্যারিংটন (আয়ারল্যান্ড)
২০০৯: ওয়াং ইয়ং-ইয়ুন (দ. কোরিয়া)
২০১০: মার্টিন কেমার (জার্মানি)
২০১১: কিগান ব্র্যাডলি (যুক্তরাষ্ট্র)
ব্রিটিশ ওপেন
২০০৯: স্টুয়ার্ট সিংক (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১০: লুইস উসথুইজেন (দ. আফ্রিকা)
২০১১: ড্যারেন ক্লার্ক (আয়ারল্যান্ড)
ব্যস, ভাঙল সংসার। ছেড়ে যেতে লাগল স্পনসররা। ক্লাব তুলে রেখে উডস গেলেন মানসিক হাসপাতালে। ফিরলেনও একসময়। তত দিনে যা পালাবদল হওয়ার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি মেজর জেতা এই কিংবদন্তি দেখলেন গত ১৪টি মেজরে নতুন ১৪ চ্যাম্পিয়নকে! বাঘ না থাকলে যেমন শিয়ালও জঙ্গলের রাজা ভাবতে পারে নিজেকে, গলফের রাজ্যে হয়েছে সেটাই। কেউ স্বাদ পাচ্ছেন প্রথম মেজরের, কেউ বা শিরোপা জিতেছেন প্রথমবার অংশ নিয়েই। কেউ আবার বাজিমাত করছেন কোচ ছাড়াই!
পেশাদার কোচ ছাড়া শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি হয়েছে ৮ এপ্রিল শেষ হওয়া ২০১২ সালের প্রথম মেজর ইউএস মাস্টার্সে। কোচ তো বটেই, এমনকি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ বছর বয়সী গলফার বুবা ওয়াটসনকে ছেড়ে গিয়েছিল তাঁর ক্যাডিও। ছেড়ে যাওয়ার সময় সেই ক্যাডিকে বুবা বলেছিলেন, ‘তুমি যাও, ঈশ্বর আছে আমার সঙ্গে।’ অবশ্যই আছে, নইলে গলফের ‘অ, আ, ক, খ’ বিদ্যার বাবার কাছে স্টিক ধরা শিখেছেন যিনি, সেই তিনি মেজর জেতেন কী করে? তাই তো শিরোপাটা উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত বাবাকে। সৌভাগ্যের প্রতীক মানছেন দত্তক নেওয়া ছেলেকেও। সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা নেই জেনেও তিনি বিয়ে করেছিলেন বান্ধবীকে। গত মাসেই তাঁদের পরিবারের অংশ হয়েছে দত্তক নেওয়া ওই ফুটফুটে সন্তান।
প্লে-অফে বুবা অলৌকিক এক শটে হারিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার লুইস উসথুইজেনকে। পিন থেকে ১৬৪ গজ দূরে পড়ার পাশাপাশি কঠিন কোণে ছিল বুবার বলটা। সেখান থেকেই অলৌকিক শটে বাজিমাত। আর এই শিরোপাটা ‘হুক বিশেষজ্ঞ’ বুবাকে পৌঁছে দিয়েছে র্যাঙ্কিংয়ের চতুর্থ স্থানে।
কিগান ব্র্যাডলির কৃতিত্বটাও বা কম কিসে? গত বছরের শেষ মেজর পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে (টেনিসের মতো গলফেও মেজর বছরে চারটি) ২৫ বছরের এই তরুণ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন প্রথমবার অংশ নিয়েই! গলফে এমন কীর্তি এর আগে ছিল কেবল দুজনের—১৯১৩ সালে ফ্রান্সিস ওইমেট ও ২০০৩ সালে বেন কার্টিসের। র্যাঙ্কিংয়ে ১০৮ নম্বরে থেকে পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন ব্র্যাডলি। শিরোপা জেতায় এক লাফে চলে আসেন ২৯-এ। আরও উন্নতি করে তিনি এখন ২০ নম্বরে।
এই ১৪টি মেজরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্র্যাডলি আর বুবা ওয়াটসন ছাড়া শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন কেবল ফিল মিকেলসন। তিনি জিতেছিলেন ২০১০-এর ইউএস মাস্টার্স। এই ১৪ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৭টি পেশাদার শিরোপা আর চারটি মেজর আছে তাঁরই।
১৪ গলফারের মধ্যে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় তারকা মনে করা হচ্ছে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ররি ম্যাকইলরয়কে। ২২ বছর বয়সী আয়ারল্যান্ডের এই তরুণ গত বছর জিতেছেন ইউএস ওপেন। ১৯২৩ সালে ববি জোনসের পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেন জিতেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, রেকর্ড ১৬ আন্ডার পারে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২৬৮ স্কোর করে। আগের রেকর্ডটা ছিল ১৯৮০ সালে জ্যাক নিকলাসের (২৭২)।
এককভাবে কারও না হলেও আইরিশ গলফারদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে বেশি চারটি মেজর জিতেছেন এই দেশের খেলোয়াড়েরাই। দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়াং ইয়ং-ইয়ুন নতুন ইতিহাস গড়েছেন আবার ২০০৯ পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। প্রথম এশিয়ান হিসেবে কোনো মেজর জেতেন ইয়ুন, তাও আবার টাইগার উডসকে হারিয়ে! ‘খাঁচা’ ভেঙে উডস অবশ্য আবারও বেরিয়ে পড়েছেন। একসময় র্যাঙ্কিংয়ের ৫০-এর বাইরে চলে যাওয়া এই কিংবদন্তি ফিরে এসেছেন সেরা দশে। বাঘ আবারও হুংকার ছেড়ে রাজা হবেন, নাকি খাঁচায় থাকা চিড়িয়াখানার গন্ধটা বয়ে বেড়াবেন সারা জীবন, এখন সেটাই দেখার।
গত ১৪ মেজরের ১৪ চ্যাম্পিয়ন
ইউএস মাস্টার্স
২০০৯: অ্যাঞ্জেল কাবরেরা (আর্জেন্টিনা)
২০১০: ফিল মিকেলসন (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১১: শার্ল শোয়ার্তজেল (দ. আফ্রিকা)
২০১২: বুবা ওয়াটসন (যুক্তরাষ্ট্র)
ইউএস ওপেন
২০০৯: লুকাস গ্লোভার (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১০: গ্রায়েম ম্যাকডাওয়েল (আয়ারল্যান্ড)
২০১১: ররি ম্যাকইলরয় (আয়ারল্যান্ড)
পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ
২০০৮: প্যাডরেইগ হ্যারিংটন (আয়ারল্যান্ড)
২০০৯: ওয়াং ইয়ং-ইয়ুন (দ. কোরিয়া)
২০১০: মার্টিন কেমার (জার্মানি)
২০১১: কিগান ব্র্যাডলি (যুক্তরাষ্ট্র)
ব্রিটিশ ওপেন
২০০৯: স্টুয়ার্ট সিংক (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১০: লুইস উসথুইজেন (দ. আফ্রিকা)
২০১১: ড্যারেন ক্লার্ক (আয়ারল্যান্ড)
No comments