মিসর-মার্কিন দূতের ব্যবসায়িক স্বার্থ by রবার্ট ফিস্ক
কায়রোয় বারাক ওবামার দূত ফ্রাঙ্ক উইসনার। হোসনি মোবারককে আরও কিছুদিন প্রেসিডেন্ট পদে থেকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি হোয়াইট হাউসকে খেপিয়ে তুলেছেন। মিসরের বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের হয়ে কাজ করে এমন দুটি মার্কিন আইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উইসনার সাহেব জড়িত।
বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন উইসনার সাহেব, ‘প্রেসিডেন্ট মোবারকের শাসন অব্যাহত থাকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ: নিজের উত্তরাধিকার নিজে রচনার এটাই সুযোগ।’ এ মন্তব্যে মিসরের স্বৈরতন্ত্রবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো আহত বোধ করেছে। ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিচক্ষণতাও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং উইসনার নিজেও এখন দাবি করছেন, তাঁর এ মন্তব্য ‘নিতান্ত ব্যক্তিগত’। কিন্তু আইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্যাটন বগসের সঙ্গে উইসনারের জড়িত থাকা তো কোনো ‘ব্যক্তিগত’ ব্যাপার নয়। প্যাটন বগস প্রকাশ্যে গর্ব করেই বলে, মিসরীয় সেনাবাহিনী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থাকে প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শ দেয়। তা ছাড়া ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (মোবারক) সরকারের পক্ষে বেশ কিছু মামলা ও সালিসি তারা পরিচালনা করেছে। অদ্ভুত কাণ্ড, একজন সাংবাদিকও এই কর্মকর্তার সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্ক কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্লজ্জ স্বার্থগত দ্বন্দ্বের ব্যাপারে কোনো কথা তুললেন না।
পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া উইসনার সাহেব ৩৬ বছরের পেশাদার কূটনীতিক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি মিসর, জাম্বিয়া, ফিলিপাইন ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেন আটজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে। অর্থাৎ তাঁর নিয়োগ রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়নি। জোরালো গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের মুখে পড়া স্বৈরাচারের পক্ষে এখন উইসনার সাফাই গাইছেন। সেই স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করা কোম্পানির হয়ে উইসনার কাজ করেন—এ কথা হিলারি জানেন না, এত অবিশ্বাস্য। উইসনারের বর্তমান নিয়োগদাতার মক্কেল মোবারক। তা হলে কেনই বা তাঁকে মোবারকের সঙ্গে কথা বলতে পাঠানো হলো?
প্যাটন বগসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আইনজীবীরা ‘মিসরের শীর্ষ বণিক পরিবার ও তাদের কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন’ এবং ‘তাদের পক্ষে তেল, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন’। প্যাটন বগসের অন্যতম অংশীদার মার্কিন-মিসরীয় বণিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সময় মিসরের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করেন। মার্কিন ফরেন মিলিটারি সেলস অ্যাক্টের অধীনে সামরিক কেনাকাটা চুক্তির ঠিকাদারিসংক্রান্ত বিরোধের ব্যবস্থাপনাও করে কোম্পানিটি। মিসরের সেনাবাহিনীকে প্রতিবছর ওয়াশিংটন প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।
প্রায় দুই বছর আগে উইসনার সাহেব প্যাটন বগসে যোগ দেন। এই দীর্ঘ সময়ে হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁর কোম্পানির সঙ্গে মোবারক সরকারের সম্পর্কের কথা না জানার কথা নয়। নিউইয়র্ক টাইমস দুই সপ্তাহ আগে উইসনারের প্রোফাইল ছেপেছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মিসরের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করেনি।
বর্তমানে বৈরুতে বসবাসকারী মার্কিন রাজনৈতিক গবেষক নিকোলাস নো কয়েক সপ্তাহ ধরে প্যাটন বগসের সঙ্গে উইসনারের সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। গবেষক হিসেবে নো এককালে হিলারির পক্ষেও কাজ করেছেন। উইসনারের বিষয়ে তাঁর গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে: ‘হিলারির নির্দেশে উইসনারকে কায়রো পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাটি স্বার্থের দ্বন্দ্বজনিত...। তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র যে এখন অধীন-চুক্তি সম্পাদন করছে কিংবা সংকট ব্যবস্থাপনার ‘বেসরকারীকরণ’ করছে, সেটা আরেক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রে কি কূটনীতিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে?
‘এমনকি অতীতে কোনো প্রেসিডেন্টের বিদায়ের পথ সহজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো দূত পাঠালে সেই দূত নেতার “সম্মানীয়” অথবা “ঘনিষ্ঠ” হলেও তাঁর দেওয়া অর্থ থেকে সম্মানী পাওয়া কেউ ছিলেন না!’
মিসরের প্রধানতম আইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জাকি হাসেমের (১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) সঙ্গে প্যাটন বগস ‘অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক’ বজায় রাখে। মোবারকের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ছিলেন জাকি হাসেম। পরবর্তী সময়ে তিনি ইজিপ্টশিয়ান সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ল-এর প্রধান হন।
তার চেয়েও চমকপ্রদ পরিহাসের ব্যাপার হলো, তাহরির ময়দানে মোবারকের উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভরতদের বেছে নেওয়া ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির অন্যতম নাবিল আল-আরাবি ছিলেন জাকি হাসেমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সাবেক সদস্য নাবিল আল-আরাবি রোববার আমাকে জানালেন, তিন বছর আগে জাকি হাসেমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কচ্ছেদ হয়। উইসনার সাহেব কেন মোবারকের শাসন অব্যাহত রাখার পক্ষে সাফাই গাইলেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। নাবিল মনে করেন, মোবারকের সম্মানজনক ও তাৎক্ষণিক বিদায় জরুরি।
২০০৯ সালের মার্চে ফ্রাঙ্ক উইসনার প্যাটন বগসে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর সম্পর্কে কোম্পানিটি বলে যে তিনি ‘দেশের অন্যতম সম্মানিত কূটনীতিক’, যাঁর কাছ থেকে মক্কেলেরা ‘বাণিজ্য, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে কৌশলগত বৈশ্বিক পরামর্শ’ পাবেন। সুনির্দিষ্টভাবে কোম্পানি জানায়, ‘মার্কিন ও আন্তর্জাতিক মক্কেলদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত বিষয়ে তাঁর বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য কোম্পানিটি তাঁর দিকে চেয়ে আছে।’
সে সময় প্যাটন বগসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার স্টুয়ার্ট প্যাপে বলেছিলেন, ‘কূটনীতিক উইসনার সাহেবকে আমাদের মাঝে পাওয়া কোম্পানির ভেতর সত্যিকারের এক অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা। তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও অত্যন্ত উঁচু মাপের কূটনীতিক। বৈশ্বিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক দুনিয়া নিয়ে তাঁর সুগভীর জ্ঞান আমাদের মক্কেলদের জন্য বিরাট সম্পদ।’
এখনো আমরা জানি না, মিসরের স্বৈরাচারকে তিনি আসলে কী ধরনের ‘বিশেষজ্ঞ জ্ঞান’ দিয়েছেন। তাঁর সপ্তাহান্তের মন্তব্য থেকে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে তিনি বুড়ো লোকটিকে আরও কয়েক মাস ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার পরামর্শই দিয়েছেন। মোবারক সরকারের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ থাকা বিপুলসংখ্যক কোম্পানির বিস্তৃত জালও তো মিসরের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের অন্যতম লক্ষ্যস্থল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁর ধারণা প্যাটন বগসে উইসনার সাহেবের নিযুক্তি এবং কোম্পানিটির সঙ্গে মোবারক সরকারের সম্পর্কের কথা হিলারি জানতেন। কিন্তু তিনি মার্কিন দূতের স্বার্থের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।
ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং উইসনার নিজেও এখন দাবি করছেন, তাঁর এ মন্তব্য ‘নিতান্ত ব্যক্তিগত’। কিন্তু আইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্যাটন বগসের সঙ্গে উইসনারের জড়িত থাকা তো কোনো ‘ব্যক্তিগত’ ব্যাপার নয়। প্যাটন বগস প্রকাশ্যে গর্ব করেই বলে, মিসরীয় সেনাবাহিনী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থাকে প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শ দেয়। তা ছাড়া ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (মোবারক) সরকারের পক্ষে বেশ কিছু মামলা ও সালিসি তারা পরিচালনা করেছে। অদ্ভুত কাণ্ড, একজন সাংবাদিকও এই কর্মকর্তার সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্ক কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্লজ্জ স্বার্থগত দ্বন্দ্বের ব্যাপারে কোনো কথা তুললেন না।
পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া উইসনার সাহেব ৩৬ বছরের পেশাদার কূটনীতিক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি মিসর, জাম্বিয়া, ফিলিপাইন ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেন আটজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে। অর্থাৎ তাঁর নিয়োগ রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়নি। জোরালো গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের মুখে পড়া স্বৈরাচারের পক্ষে এখন উইসনার সাফাই গাইছেন। সেই স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করা কোম্পানির হয়ে উইসনার কাজ করেন—এ কথা হিলারি জানেন না, এত অবিশ্বাস্য। উইসনারের বর্তমান নিয়োগদাতার মক্কেল মোবারক। তা হলে কেনই বা তাঁকে মোবারকের সঙ্গে কথা বলতে পাঠানো হলো?
প্যাটন বগসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আইনজীবীরা ‘মিসরের শীর্ষ বণিক পরিবার ও তাদের কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন’ এবং ‘তাদের পক্ষে তেল, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন’। প্যাটন বগসের অন্যতম অংশীদার মার্কিন-মিসরীয় বণিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সময় মিসরের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করেন। মার্কিন ফরেন মিলিটারি সেলস অ্যাক্টের অধীনে সামরিক কেনাকাটা চুক্তির ঠিকাদারিসংক্রান্ত বিরোধের ব্যবস্থাপনাও করে কোম্পানিটি। মিসরের সেনাবাহিনীকে প্রতিবছর ওয়াশিংটন প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।
প্রায় দুই বছর আগে উইসনার সাহেব প্যাটন বগসে যোগ দেন। এই দীর্ঘ সময়ে হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁর কোম্পানির সঙ্গে মোবারক সরকারের সম্পর্কের কথা না জানার কথা নয়। নিউইয়র্ক টাইমস দুই সপ্তাহ আগে উইসনারের প্রোফাইল ছেপেছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মিসরের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করেনি।
বর্তমানে বৈরুতে বসবাসকারী মার্কিন রাজনৈতিক গবেষক নিকোলাস নো কয়েক সপ্তাহ ধরে প্যাটন বগসের সঙ্গে উইসনারের সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। গবেষক হিসেবে নো এককালে হিলারির পক্ষেও কাজ করেছেন। উইসনারের বিষয়ে তাঁর গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে: ‘হিলারির নির্দেশে উইসনারকে কায়রো পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাটি স্বার্থের দ্বন্দ্বজনিত...। তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র যে এখন অধীন-চুক্তি সম্পাদন করছে কিংবা সংকট ব্যবস্থাপনার ‘বেসরকারীকরণ’ করছে, সেটা আরেক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রে কি কূটনীতিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে?
‘এমনকি অতীতে কোনো প্রেসিডেন্টের বিদায়ের পথ সহজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো দূত পাঠালে সেই দূত নেতার “সম্মানীয়” অথবা “ঘনিষ্ঠ” হলেও তাঁর দেওয়া অর্থ থেকে সম্মানী পাওয়া কেউ ছিলেন না!’
মিসরের প্রধানতম আইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জাকি হাসেমের (১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) সঙ্গে প্যাটন বগস ‘অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক’ বজায় রাখে। মোবারকের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ছিলেন জাকি হাসেম। পরবর্তী সময়ে তিনি ইজিপ্টশিয়ান সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ল-এর প্রধান হন।
তার চেয়েও চমকপ্রদ পরিহাসের ব্যাপার হলো, তাহরির ময়দানে মোবারকের উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভরতদের বেছে নেওয়া ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির অন্যতম নাবিল আল-আরাবি ছিলেন জাকি হাসেমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সাবেক সদস্য নাবিল আল-আরাবি রোববার আমাকে জানালেন, তিন বছর আগে জাকি হাসেমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কচ্ছেদ হয়। উইসনার সাহেব কেন মোবারকের শাসন অব্যাহত রাখার পক্ষে সাফাই গাইলেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। নাবিল মনে করেন, মোবারকের সম্মানজনক ও তাৎক্ষণিক বিদায় জরুরি।
২০০৯ সালের মার্চে ফ্রাঙ্ক উইসনার প্যাটন বগসে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর সম্পর্কে কোম্পানিটি বলে যে তিনি ‘দেশের অন্যতম সম্মানিত কূটনীতিক’, যাঁর কাছ থেকে মক্কেলেরা ‘বাণিজ্য, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে কৌশলগত বৈশ্বিক পরামর্শ’ পাবেন। সুনির্দিষ্টভাবে কোম্পানি জানায়, ‘মার্কিন ও আন্তর্জাতিক মক্কেলদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত বিষয়ে তাঁর বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য কোম্পানিটি তাঁর দিকে চেয়ে আছে।’
সে সময় প্যাটন বগসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার স্টুয়ার্ট প্যাপে বলেছিলেন, ‘কূটনীতিক উইসনার সাহেবকে আমাদের মাঝে পাওয়া কোম্পানির ভেতর সত্যিকারের এক অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা। তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও অত্যন্ত উঁচু মাপের কূটনীতিক। বৈশ্বিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক দুনিয়া নিয়ে তাঁর সুগভীর জ্ঞান আমাদের মক্কেলদের জন্য বিরাট সম্পদ।’
এখনো আমরা জানি না, মিসরের স্বৈরাচারকে তিনি আসলে কী ধরনের ‘বিশেষজ্ঞ জ্ঞান’ দিয়েছেন। তাঁর সপ্তাহান্তের মন্তব্য থেকে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে তিনি বুড়ো লোকটিকে আরও কয়েক মাস ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার পরামর্শই দিয়েছেন। মোবারক সরকারের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ থাকা বিপুলসংখ্যক কোম্পানির বিস্তৃত জালও তো মিসরের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের অন্যতম লক্ষ্যস্থল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁর ধারণা প্যাটন বগসে উইসনার সাহেবের নিযুক্তি এবং কোম্পানিটির সঙ্গে মোবারক সরকারের সম্পর্কের কথা হিলারি জানতেন। কিন্তু তিনি মার্কিন দূতের স্বার্থের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।
ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক।
No comments