বর্ষার বিষয়টি কি কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে?-খোলা মাঠে ক্লাস

ছয়টি শ্রেণীকক্ষ, ৭৫০ জন ছাত্রছাত্রী আর ১১ জন শিক্ষক—এই নিয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলায় এর অবস্থান। ছয়টি শ্রেণীকক্ষ নিয়ে ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলে, সে প্রশ্ন যে কারও মনেই জাগবে।


তবে ‘মডেল’ নামের এই প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অবশ্য চলছে! কীভাবে চলছে, সে প্রশ্ন ওঠার কথা, কিন্তু যাঁদের মনে এই প্রশ্ন জাগলে কাজের কাজ হতো, তাঁরা অবশ্য দেখছেন না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক সম্প্রতি গিয়েছিলেন ওই বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ও প্রথম শ্রেণীর প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী দুই ভাগে ভাগ হয়ে স্কুলের মাঠের গাছতলায় চাটাই বিছিয়ে পাঠ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে বাসা থেকে চাটাই নিয়ে আসে বসার জন্য; বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উদ্যোগী হয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলেও কিছু চট কিনে দিয়েছেন। বিদ্যালয়টি আসলে এভাবেই চলছে। আবহাওয়াটা এখন সহনীয়, গাছতলায় ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের হয়তো তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সামনে যে ঝড়-বাদল আর বর্ষার সময় আসছে! তখন কী হবে এই শিক্ষার্থীদের? কীভাবে চলবে ক্লাস?
সব বিদ্যালয়ের মতো এই বিদ্যালয়টিরও একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। তার সভাপতি যা বলার তা-ই বলেছেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রেণীকক্ষের সংকটের কথা একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’ প্রথম আলোর প্রতিবেদক খোঁজ নিতে স্থানীয় এলজিইডি প্রকৌশলীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ছয় মাস আগে একটি প্রস্তাব প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি এখনো।
আমরা কি ধরে নেব, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৮ মাসে বছর ধরেই কাজ করতে অভ্যস্ত? তা না হলে একটি প্রস্তাবের ব্যাপারে সাড়া দিতে তো ছয় মাস লাগার কথা নয়। স্কুলের শিশুরা খোলা মাঠে ক্লাস করছে, পাঠ নিচ্ছে—এ ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বর্ষার সময় এই শিশুদের কী হবে, সেই বিবেচনা যদি গুরুত্ব পায়, তবে এবার অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টনক নড়বে, সে আশা তো আমরা করতে পারি!

No comments

Powered by Blogger.