পারিবারিক আইন সংস্কারের চিন্তাভাবনা
মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে ১৯৬১ সালেই সর্বশেষ বড় পরিসরে সংস্কারের কাজ করা হয়। পরিবর্তন আনা হয় তালাক, বহুবিবাহ ও উত্তরাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। সময়ের বিবর্তনে সামাজিক প্রয়োজনে মুসলিম পারিবারিক আইনসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের পারিবারিক আইন এখন সংস্কারের দাবি রাখে।
২৪ মার্চ ২০১২ ড. শাহ আলমের নেতৃত্বাধীন আইন কমিশনের আয়োজনে পারিবারিক আইন বিষয়ে বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত এক জাতীয়কর্মশালায় বিভিন্ন পারিবারিক আইন সংস্কারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হয়। সংক্ষেপে এখানে তা তুলে ধরা হলো।
অভিভাবকত্ব ও হেফাজত
নাবালক সন্তানের হেফাজত করার ক্ষমতা প্রথমত মায়ের ওপর বর্তায়। এ বিষয়ে ইসলামি আইনজ্ঞদের মধ্যে কোনো ভিন্নমত নেই। মা যদি কোনো কারণে সন্তানের হেফাজতকারী হতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করেন, শুধু সে ক্ষেত্রেই সন্তানের মাতৃ-সম্পর্কীয় আত্মীয় যেমন—নানি হেফাজত করার অধিকারী হবেন।
প্রচলিত শরিয়াহ আইন অনুসারে পুত্রসন্তান সাত বছর এবং কন্যাসন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকতে পারবে।
এ বিষয়ে যুগান্তকারী রায় দেওয়া হয় মো. আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এস এম এ বকর [৩৮ ডিএলআর (আপিল বিভাগ) ১০৬] মামলায়। এ মামলায় প্রথাগত শরিয়াহ আইনের কিছুটা বাইরে গিয়ে আপিল আদালত সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষায় ছেলের বয়স সাত পার হওয়ার পরও মাকে হেফাজতের ক্ষমতা দেন। এখানে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—এক. মা-ই সন্তানের সবচেয়ে ভালো দেখাশোনা করতে পারবেন, এমনকি পিতার চেয়েও; এই বিষয়ে মুসলিম আইনবিদদের ভিন্নমত রয়েছে।
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী বাবাই সন্তানের শরীর ও সম্পত্তির স্বাভাবিক ও আইনি অভিভাবক। পিতার অবর্তমানে তাঁর নিয়োগ করা ব্যক্তি নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হবেন। মায়ের অভিভাবক হওয়ার বিধান সম্পর্কে বলা হচ্ছে: দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি অভিভাবক হতে পারেন। অর্থাৎ অভিভাবকত্ব কিংবা হেফাজতের ক্ষেত্রে বলা যায়, সন্তানের ওপর মা ও বাবার সমান অধিকার নেই।
কোনো কারণে যদি পারিবারিক আইন এবং সন্তানের স্বার্থ—এ দুয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তবে সে ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় আয়েশা খাতুন বনাম মেজর সাব্বির আহমেদের মামলায়। আশার কথা হলো, হেফাজত বা অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থ সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে ‘Welfare doctrine’-এর প্রচলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বিচার বিভাগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু একে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বিধিবদ্ধ আইনের প্রয়োজন আছে।
প্রস্তাব
অভিভাবকত্ব ও হেফাজতের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই সর্বোচ্চ বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে মা-বাবা দুজনের সমান অধিকার থাকবে।
বিবাহবিচ্ছেদ
মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার বিদ্যমান। আগে নারীরা খুলা ও মুবারা—এ দুই পদ্ধতিতে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারতেন। খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ পাওয়ার বিনিময়ে স্বামীকে কিছু দিতে হতো, যেমন—দেনমোহর। আবার মুবারার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীরা এ সুযোগ নিয়ে স্ত্রীকেই তালাক দিতে বাধ্য করতেন।
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নারীদের তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের তালাকের বিষয়ে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র যুক্ত করা হয়, যেখানে নারীরা চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। আবার ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ ধারা যোগ করে পুরুষদের একচ্ছত্র ইচ্ছাধীন ক্ষমতা একটি পদ্ধতির মধ্যে আনা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো: তালাক-ই-তাওফিজের মাধ্যমে নারীরা কোনো ছাড় না দিয়েই বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষমতা তাঁকে স্বামীর কাছ থেকেই পেতে হবে। স্বামী চাইলে স্ত্রীকে এ ক্ষমতা না-ও দিতে পারেন।
বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। আবার এটিও নিশ্চিত করেছে, সবার সমানভাবে মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের মাধ্যমে কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে নারীরা বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন না, এটি সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
প্রস্তাব
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার।
ভরণপোষণ
ভরণপোষণ বলতে শুধু খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান বোঝায় না। এর অর্থ আরও ব্যাপক। সন্তানের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সবকিছু ভরণপোষণের মধ্যে পড়ে। মুসলিম আইনে বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রী ও রক্তসম্পর্ক অনুযায়ী সন্তান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মা-বাবাও সন্তানের ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন।
আইনিভাবেই স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর। এমনকি বিচ্ছেদের পর ইদ্দতকালীনও তিনি ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বিবাহবিচ্ছেদের পর কত দিন এ বাধ্যবাধ্যকতা থাকবে, সে বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উচ্চ আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। মো. আহমেদ খান বনাম শাহ বানু বেগম [ এআইআর (১৯৮৫) এসসি ৯৪৫ ] মামলায় সিদ্ধান্ত হয়: তালাকের পর নারী দ্বিতীয় বিয়ের আগপর্যন্ত সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী থাকবেন, যদি নিজের ভরণপোষণে তিনি অসমর্থ হন। ২০০১ সালে ড্যানিয়েল লতিফির মামলায় রায় হয়: আবার তালাকের পর, এমনকি ইদ্দতের সময়ের পরও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে।
বাংলাদেশেও ভরণপোষণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে হেফজুর রহমান বনাম শামসুন্নাহার বেগম ও অন্যান্য [৪ বিএলসি (আপিল বিভাগ) ১৪] মামলায়। হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন: স্ত্রীর আবার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। যদিও পরে আপিল বিভাগ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলেন: বিবাহবিচ্ছেদের পর ইদ্দতকালীন পর্যন্তই স্ত্রীকে ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন স্বামী।
এ ছাড়া কাওসার চৌধুরী বনাম লতিফা সুলতানা [২২ বিএলডি] মামলায় সিদ্ধান্ত হয়: আদালত ভরণপোষণ একবার ঠিক করে দিলেও, ভবিষ্যতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভরণপোষণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আবার মামলা করা যায়।
প্রস্তাব
১. স্ত্রী নিজের ভরণপোষণে অক্ষম হলে, বিশেষ ক্ষেত্রে তালাকের পরও তার আবার বিয়ের আগপর্যন্ত স্বামী তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন।
২. ভরণপোষণের পরিমাণ ও হার স্থির হবে চলতি বাজারদর, স্বামী বা স্ত্রীর সামর্থ্য এবং সামাজিক অবস্থা বিবেচনায়। এ ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে।
দত্তক
হিন্দু ও খ্রিষ্টান আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান আছে, কিন্তু প্রচলিত মুসলিম আইনে দত্তকসংক্রান্ত কোনো বিধান না থাকায় নিঃসন্তান মুসলিম দম্পতি বৈধভাবে সন্তান দত্তক নিতে পারে না। দত্তকের বিধান ইসলাম সমর্থন করে, নাকি প্রবলভাবে অস্বীকার করে—বিষয়টি নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বিষয়েও আইনজ্ঞদের মধ্যে কোনো মতৈক্য নেই। কেউ কেউ বলেন, ইসলাম দত্তক সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে অন্যরা মনে করেন, কিছু শর্ত আরোপের মাধ্যমে দত্তক ইসলামে গৃহীত হয়েছে। অভিভাবকত্ব আইন, ১৮৯০-এর মাধ্যমে দত্তকব্যবস্থা ইসলামি আইনে কিছুটা প্রচলিত হলেও মূলত জটিলতার কারণে মানুষ এই আইনের সাহায্য প্রার্থনায় উৎসাহিত হয় না। এই আইনের জটিল দিকগুলো হলো, এ ক্ষেত্রে যাকে প্রতিপালনের জন্য নেওয়া হয়, তার পিতা-মাতা হিসেবে অভিভাবকত্ব গ্রহণকারীদের পরিচয় দেওয়া যায় না। অর্থাৎ সন্তানের অভিভাবক হিসেবে আদালত তাঁদের অনুমতি দিতে পারেন, কিন্তু তাঁর জন্মদানকারী পিতা-মাতার নাম অক্ষুণ্ন থাকবে। দত্তকের বিধান মুসলিম পারিবারিক আইনে না থাকায় সন্তান বেচাকেনার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি অন্যের সন্তানকে নিজের কাছে প্রতিপালনের জন্য অভিভাবকত্ব আইনের জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্যও বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রস্তাব
মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তান ‘দত্তক’-এর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দত্তক ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার সম্পত্তিতে অধিকার পাবে কি না, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হবে।
বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন
মুসলিম আইনে বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং না করাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খ্রিষ্টান আইনেও এ বাধ্যবাধতা থাকলেও, হিন্দু আইনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিয়ে প্রমাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল ‘নিবন্ধন’। দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্যও এটি অপরিহার্য। কিন্তু হিন্দু আইনে এ বিধান না থাকায় অনেক সময় হিন্দু নারীরা তাঁদের অধিকার আদায়ে সমস্যায় পড়েন।
Convention on Consent to Marriage, Minimum Age for Marriage and Registration of Marriage, 1962-এ কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরের মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির জন্য আন্তর্জাতিকভাবেই দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
আবার কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলে, কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তা না থাকায় অনেক সময় ভুয়া বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধনের কাগজ তৈরির মতো ঘটনাও ঘটে। ফলে নারীরা প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হন।
প্রস্তাব
১. সব ধর্মের মানুষের জন্য নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করা যায়।
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধার
বৈধ বিয়ের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি না হলে, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারেন স্বামী। একইভাবে স্ত্রীও পারেন স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে।
এই অধিকার প্রথম স্বীকৃতি পায় মুন্সী বজলুর রহমান বনাম শামসুননিসা বেগম [১৮৬৭ (এমএলএ) ৫৫১] মামলায়। পরে এ বিষয়ে একাধিক মামলায় রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: নেলী জামান বনাম গিয়াসউদ্দীন [৩৪ ডিএলআর (১৯৮২), ২২১, (হাইকোর্ট বিভাগ)] মামলায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সময়ের বিবর্তনে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর দাম্পত্য স্বত্ব প্রয়োগের জন্য স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা এখন আর প্রচলিত কোনো বিধান নয়। রাষ্ট্রীয় আইন, জনস্বার্থ, আইনের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ সমতা ও সম-সুরক্ষা এবং দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের পরিপন্থী। এ ধরনের আইন ও এর অধীনে মামলা আইনত বাংলাদেশে চলতে পারে না। আবার এর বিপরীত রায়ও দেওয়া হয়েছে।
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের অধিকার স্বামী বা স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার নয়। এই অধিকার বিচার বিভাগের বিবেচনায় প্রয়োগ করা যায়। বলা যায়, এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সংবিধানের পরিপন্থী। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তও হলো: দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের অধিকার যে-ই প্রয়োগ করুক, এটি ব্যক্তির স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
প্রস্তাব
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের বিধানকে ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫’-এর এখতিয়ার থেকে বাদ দেওয়া।
বহুবিবাহ
‘বহুবিবাহ’ বিষয়টি ব্যতিক্রমী ঘটনা। একক বিবাহই আমাদের দেশে সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সেই ব্যতিক্রমী ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এ বলা আছে, বহুবিবাহের কারণে স্বামী সমান আচরণ করতে অসমর্থ হলে, স্ত্রী চাইলে তাঁকে তালাক দিতে পারেন। তবে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ১৯৬১ সালে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ ধারায় বলা হয়: আরবিট্রেশন কাউন্সিলের (সালিস পরিষদ) অনুমতি না নিয়ে এক বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে নিবন্ধন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছে কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে তিনি বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সন্তুষ্ট হলেই শুধু অনুমতি দেবেন। কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কাউন্সিল যথাযথভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ না করেই অনুমতি দিচ্ছে কিংবা কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে এবং এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে অন্য মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা অনুসরণীয়। যেমন—মরক্কো, তিউনিসিয়া, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ বহুবিবাহ নিষেধ করে দিয়েছে। আবার মালয়েশিয়ায় এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় আছে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রস্তাব
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে শুধু আরবিট্রেশন কাউন্সিলকে ইচ্ছামতো ক্ষমতা না দিয়ে কয়েকটি শর্ত বসানো যায়। এসব শর্তের ক্ষেত্রেই শুধু দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দেওয়া যাবে।
শীর্ষ মতামত
শফিক আহমেদ
আইনমন্ত্রী
পারিবারিক আইনের পর্যালোচনা এক দিনে হবে না। যাঁরা পারদর্শী, তাঁদের মত নিয়েই করা উচিত। মুফতিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একইভাবে হিন্দু বা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মত নিয়ে তাদের আইন পরিবর্তন করা উচিত। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আইন করা হবে না।
এস কে সিনহা
আপিল বিভাগের বিচারপতি
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। উত্তরাধিকার জন্মগতভাবেই নির্ধারিত হয়। ধর্মান্তরিত হলে সেটা ব্যাহত হবে কি না, তা বিবেচনা করতে হবে। অভিন্ন কোডের কথা বলা হয়েছে। পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি? সময় এসেছে আইন পরিবর্তন করার।
সালমা মাসুদ চৌধুরী
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বলা যায়, মা-ই হবেন সন্তানের হেফাজতকারী। এরপর সাবালক হয়ে সে নিজেই নিজের হেফাজতকারীকে পছন্দ করে নেবে। পিতার দ্বিতীয় বিয়ে তার হেফাজতের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করলে মাতার হবে কেন? দত্তক ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি পাবে কি না, তা নির্ভর করবে পিতা-মাতার ওপর। বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা উচিত, তবে ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ
হিন্দু পারিবারিক আইনে সংস্কারের প্রয়োজন। তবে সবই যে একসঙ্গে করতে হবে, এমন নয়। রেজিস্ট্রেশন, দত্তক—এগুলো আলাদা করে আইন করা দরকার এবং এগুলো এখনই করা যেতে পারে। তবে উত্তরাধিকার পরে করা হোক। অভিন্ন পারিবারিক আইনের কোনো বিকল্প নেই।
শামীম মো. আফজাল
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক
শরিয়াহ আইন বিষয়ে জবাব দেওয়ার এখতিয়ার কেবল মুফতিদের আছে। তাঁদের অনুমতি ছাড়া শরিয়াহ আইনের কোনো রকম পরিবর্তন আনা যাবে না। শরিয়াহ আইনসংক্রান্ত বিষয়ে আমার কাছে প্রস্তাব দিলে আমি মুফতিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাব।
ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও
আইনজীবী
ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে বিবাহসংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। মন্ডলীতে (চার্চ) বিবাহের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। আমরা ক্যানন আইন দ্বারা পরিচালিত। আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ নেই, তবে বিয়ে বাতিল হতে পারে, যদি বিয়েতে কোনো ত্রুটি থাকে। পালক পুত্রের সম্পত্তিতে অধিকার নেই, এর পরিবর্তন হওয়া উচিত। ওয়ারিশের সম্পত্তি দাবি করার একটা সময় বেঁধে দেওয়া দরকার।
হিন্দু পারিবারিক আইন
বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইন তথা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব ও দত্তক বিষয়ে নারীদের অবস্থা খুব বৈষম্যমূলক। এ ছাড়া গোত্রভেদ ও প্রথার ভিত্তিতে প্রচলিত নিয়মও খুব নাজুক। এগুলো মূল হিন্দু দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে হয় না। কারণ, প্রতিটি মানুষকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ করাই হিন্দু দর্শনের মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য গোত্র ও গোষ্ঠী মূলত পেশাভিত্তিক। অতএব, গোত্রগত প্রথার ভিত্তিতে কোনো নিষিদ্ধতা যেমন অন্তর্গোত্রীয় বিবাহের নিষিদ্ধতা বাস্তবতার পরিপন্থী। প্রথাগত হিন্দু আইনে বহুবিবাহের প্রচলন থাকলেও বাস্তবে তা কমই ঘটে। অন্যদিকে, আর্থসামাজিক, পারিবারিক ও অন্যান্য অনেক কারণে বিবাহবিচ্ছেদ অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে, যা বর্তমান আইনে নিষিদ্ধ। পুনর্বিবাহের ক্ষেত্রেও তাঁদের আপত্তির প্রমাণ নেই। বর্তমান সময়ে বিবাহ নিবন্ধনের প্রয়োজন। বিদেশযাত্রা, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিরোধ, আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিবন্ধন অত্যাবশ্যকীয়। এ ছাড়া নিবন্ধনকরণ কোনোভাবেই হিন্দু বিবাহের ধর্ম বা চরিত্র খর্ব করে না।
হিন্দু পারিবারিক আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারহীনতা। নারীর ভরণপোষণ পুরুষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান নাজুক আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নারীর জন্য এ অবস্থা কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে বিরুদ্ধ যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হিন্দু নারী তার সম্পত্তি কতটা ভোগ এবং রক্ষা করতে পারবে, এটি বিবেচনায় রেখে সতর্কভাবে সংস্কারের জন্য এগোনো দরকার।
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, কিছু রোগাক্রান্ত ও অসতী নারীকেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। মনে হয়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারীর শুদ্ধতা আধ্যাত্মিক কাজের জন্য অপরিহার্য মনে করা হতো। সম্পত্তি রক্ষা ও আধ্যাত্মিক কাজের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং শুদ্ধতা অপরিহার্য—এ যুক্তি আধুনিক মানবাধিকারের যুগে গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পত্তি রক্ষা ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক অবস্থার চেয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনি অবস্থার ওপর বেশি নির্ভরশীল। অন্যদিকে, অসতীত্ব সংজ্ঞায়িত করা এখন অধিকতর কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও সতীত্ব একটি বড় গুণ, তবু এ কারণে একজনকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।
উত্তরাধিকার আইনের সংশোধন হলে ভরণপোষণ আইনেরও সংশোধন হতে হবে এবং নারীদের সম্পত্তির অধিকার দিলে বৃদ্ধ ও নাবালকদের ভরণপোষণেও তাদের দায়িত্ব বাড়বে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ভরণপোষণের দায়িত্বও দেওয়া যেতে পারে।
দত্তক দেওয়া-নেওয়া হিন্দু আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনে করা হয়, নিঃসন্তানের দত্তক পুত্র ধর্মীয় কর্ম সাধন করবে। যেমন, পুত্র পিতার মৃত্যুতে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য শেষকৃত্য নিয়ম পালন করবে। এটা যুক্তিসংগত, কিন্তু নিঃসন্তান নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো পুত্র বা কন্যাকে নিজ সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া তার সন্তান লাভের একটি চিরন্তন ও গভীর আকাঙ্ক্ষা, যা দত্তকের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এখানে দত্তক গ্রহীতা ও যাকে দত্তক নেওয়া হবে, উভয় ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকা ঠিক নয়।
প্রস্তাব
১. বিবাহ ও দত্তকের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গোত্রভেদ (caste) প্রথার বিলোপ,
২. বহুবিবাহ প্রথা বিলোপ,
৩. স্বামী বা স্ত্রী যে কারও উদ্যোগে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ থাকা, তবে আইন অনুযায়ী আদালতের শর্ত সাপেক্ষে তা কার্যকর করা,
৪. বিবাহবিচ্ছেদের পর পুনর্বিবাহের সুযোগ রাখা,
৫. বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের নিবন্ধন,
৬. পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলের সঙ্গে বিবাহিত বা অবিবাহিত কন্যার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার লাভ। তবে হিন্দু পুরুষ বা নারী ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে,
৭. বর্তমানে প্রচলিত সম্পত্তিতে নারীর সীমিত অধিকার লাভের স্থলে পূর্ণ অধিকার প্রদান।
৮. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এবং অসতীত্বের কারণে উত্তরাধিকারবঞ্চিত করার প্রচলিত নিয়ম বাতিল,
৯. অবৈধ সন্তানের উত্তরাধিকার লাভের স্বীকৃতি,
১০. বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীর কন্যা বা পুত্র দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার স্বীকৃতি,
১১. কন্যাশিশুর পুরুষ বা নারী কর্তৃক দত্তক পাওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি
১২. পিতা কর্তৃক তৈরি ইচ্ছাপত্রে মাতার সম্মতির প্রয়োজনীয়তা।
খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন
ফস্টিনা পেরেরা, মানবাধিকারকর্মী
দেশ বিভাগের আগে ও পরে হিন্দু বা মুসলিম পারিবারিক আইনে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হলেও খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীদের জন্য প্রযোজ্য আইনে তেমন কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পুরোনো আইনের কারণে খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্যভিচার, বাল্যবিবাহ, গৃহনির্যাতন, বহুবিবাহ, আইনি বিচ্ছেদ ছাড়া পৃথকভাবে বসবাস করা, প্রতারণার মাধ্যমে বিচ্ছেদ, হলফনামাকে বিবাহ বা বিচ্ছেদের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা, সম্পত্তি বণ্টন বা সম্পত্তি আত্মসাৎ, শিশুর ভরণপোষণ, যৌতুক, দত্তক নেওয়া সন্তানের আইনি মর্যাদা, বিবাহবিচ্ছেদে আইনি জটিলতা, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে অসম দাবি ইত্যাদি। উল্লিখিত সমস্যার সমাধানকল্পে বিভিন্ন আইনে সংশোধন আনা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রস্তাব
১. বিবাহবিচ্ছেদ আইনের সংশোধন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য বিলোপে বিবাহবিচ্ছেদ আইন-১৮৬৯-এর ১০ ধারা সংশোধন করা এবং বিচ্ছেদের কারণের পরিধি বৃদ্ধি করা, যেমন—ব্যভিচার, ধর্ষণ ও শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার বা শিকার হওয়ার হুমকি থাকলে আবেদনকারী যেন বিবাদী থেকে আলাদাভাবে বসবাস করার সুযোগ পায়। এ রকম আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাতে কোনো যুক্তিযুক্ত অজুহাত ছাড়া দুই বছর পৃথক থাকার অনুমতি পায়। মানসিক বৈকল্য বা এমন কোনো রোগে আক্রান্ত, যার কারণে বিবাদীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করা অসম্ভব বা যেখানে সম্পর্ক এমনভাবে ভেঙে গেছে যে তা বজায় রাখা এক বা উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর, সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য নতুন ধারা সংযোজন। বিরোধের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালত হবে প্রথম বিচার্য আদালত এবং জেলা জজ আদালত হবে আপিল আদালত, যা সারা দেশে কার্যকর হবে এবং তার ভূতাপেক্ষ প্রয়োগ থাকবে।
২. দত্তক সম্পর্কে নতুন আইন করা ।
৩. উত্তরাধিকার আইন-১৯২৫-এর ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের দত্তক নেওয়া-সম্পর্কিত কোনো আইন না থাকায় দত্তক সন্তানেরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করতে পারে না। যেহেতু তাদের ধর্মীয় প্রথায় দত্তককে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে, তাই এ বিষয়ে সংশোধন আনা দরকার। বর্তমান আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাকে বাদ দিয়ে পিতা উত্তরাধিকারী হন। বৈষম্যমূলক এ ধারাটিও সংশোধন করতে হবে।
৪. কানুন আইনের দ্বারা বিবাহবিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা সংশোধন করতে হবে।
বিচ্ছেদ আইন বিশ্বের সব দেশই [ভ্যাটিকান ছাড়া], এমনকি ক্যাথলিক দেশগুলোও স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে আয়ারল্যান্ড, চিলি, ব্রাজিল ও মাল্টা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ফিলিপাইনেও ২০০১ সালে বিচ্ছেদ আইন ১৮৬৯ সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া [সিবিসি] খ্রিষ্টানদের সিভিল আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি দিয়েছে, যাতে করে খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদের কারণগুলোর ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়।
ইংরেজি থেকে অনূদিত। সংক্ষেপিত।
ঘোষণা
আজকের আয়োজন বিষয়ে পাঠকের যেকোনো প্রতিক্রিয়া বা মতামত আমরা ছাপতে আগ্রহী। আপনার প্রতিক্রিয়া বা মতামত পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়—আইন অধিকার, প্রথম আলো, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। এ ছাড়া ফেসবুকে আইন অধিকার পেজ www.facebook.com/AINADHIKAR-এ যোগ দিয়েও মতামত জানাতে পারেন। ই-মেইলও করতে পারেন
ain@prothom-alo.info।
অভিভাবকত্ব ও হেফাজত
নাবালক সন্তানের হেফাজত করার ক্ষমতা প্রথমত মায়ের ওপর বর্তায়। এ বিষয়ে ইসলামি আইনজ্ঞদের মধ্যে কোনো ভিন্নমত নেই। মা যদি কোনো কারণে সন্তানের হেফাজতকারী হতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করেন, শুধু সে ক্ষেত্রেই সন্তানের মাতৃ-সম্পর্কীয় আত্মীয় যেমন—নানি হেফাজত করার অধিকারী হবেন।
প্রচলিত শরিয়াহ আইন অনুসারে পুত্রসন্তান সাত বছর এবং কন্যাসন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকতে পারবে।
এ বিষয়ে যুগান্তকারী রায় দেওয়া হয় মো. আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এস এম এ বকর [৩৮ ডিএলআর (আপিল বিভাগ) ১০৬] মামলায়। এ মামলায় প্রথাগত শরিয়াহ আইনের কিছুটা বাইরে গিয়ে আপিল আদালত সন্তানের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষায় ছেলের বয়স সাত পার হওয়ার পরও মাকে হেফাজতের ক্ষমতা দেন। এখানে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—এক. মা-ই সন্তানের সবচেয়ে ভালো দেখাশোনা করতে পারবেন, এমনকি পিতার চেয়েও; এই বিষয়ে মুসলিম আইনবিদদের ভিন্নমত রয়েছে।
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী বাবাই সন্তানের শরীর ও সম্পত্তির স্বাভাবিক ও আইনি অভিভাবক। পিতার অবর্তমানে তাঁর নিয়োগ করা ব্যক্তি নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হবেন। মায়ের অভিভাবক হওয়ার বিধান সম্পর্কে বলা হচ্ছে: দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি অভিভাবক হতে পারেন। অর্থাৎ অভিভাবকত্ব কিংবা হেফাজতের ক্ষেত্রে বলা যায়, সন্তানের ওপর মা ও বাবার সমান অধিকার নেই।
কোনো কারণে যদি পারিবারিক আইন এবং সন্তানের স্বার্থ—এ দুয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তবে সে ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় আয়েশা খাতুন বনাম মেজর সাব্বির আহমেদের মামলায়। আশার কথা হলো, হেফাজত বা অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থ সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে ‘Welfare doctrine’-এর প্রচলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বিচার বিভাগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু একে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বিধিবদ্ধ আইনের প্রয়োজন আছে।
প্রস্তাব
অভিভাবকত্ব ও হেফাজতের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই সর্বোচ্চ বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে মা-বাবা দুজনের সমান অধিকার থাকবে।
বিবাহবিচ্ছেদ
মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার বিদ্যমান। আগে নারীরা খুলা ও মুবারা—এ দুই পদ্ধতিতে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারতেন। খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ পাওয়ার বিনিময়ে স্বামীকে কিছু দিতে হতো, যেমন—দেনমোহর। আবার মুবারার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীরা এ সুযোগ নিয়ে স্ত্রীকেই তালাক দিতে বাধ্য করতেন।
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নারীদের তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের তালাকের বিষয়ে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র যুক্ত করা হয়, যেখানে নারীরা চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। আবার ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ ধারা যোগ করে পুরুষদের একচ্ছত্র ইচ্ছাধীন ক্ষমতা একটি পদ্ধতির মধ্যে আনা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো: তালাক-ই-তাওফিজের মাধ্যমে নারীরা কোনো ছাড় না দিয়েই বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষমতা তাঁকে স্বামীর কাছ থেকেই পেতে হবে। স্বামী চাইলে স্ত্রীকে এ ক্ষমতা না-ও দিতে পারেন।
বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। আবার এটিও নিশ্চিত করেছে, সবার সমানভাবে মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের মাধ্যমে কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে নারীরা বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন না, এটি সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
প্রস্তাব
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার।
ভরণপোষণ
ভরণপোষণ বলতে শুধু খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান বোঝায় না। এর অর্থ আরও ব্যাপক। সন্তানের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সবকিছু ভরণপোষণের মধ্যে পড়ে। মুসলিম আইনে বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রী ও রক্তসম্পর্ক অনুযায়ী সন্তান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মা-বাবাও সন্তানের ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন।
আইনিভাবেই স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর। এমনকি বিচ্ছেদের পর ইদ্দতকালীনও তিনি ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বিবাহবিচ্ছেদের পর কত দিন এ বাধ্যবাধ্যকতা থাকবে, সে বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উচ্চ আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। মো. আহমেদ খান বনাম শাহ বানু বেগম [ এআইআর (১৯৮৫) এসসি ৯৪৫ ] মামলায় সিদ্ধান্ত হয়: তালাকের পর নারী দ্বিতীয় বিয়ের আগপর্যন্ত সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী থাকবেন, যদি নিজের ভরণপোষণে তিনি অসমর্থ হন। ২০০১ সালে ড্যানিয়েল লতিফির মামলায় রায় হয়: আবার তালাকের পর, এমনকি ইদ্দতের সময়ের পরও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে।
বাংলাদেশেও ভরণপোষণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে হেফজুর রহমান বনাম শামসুন্নাহার বেগম ও অন্যান্য [৪ বিএলসি (আপিল বিভাগ) ১৪] মামলায়। হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন: স্ত্রীর আবার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। যদিও পরে আপিল বিভাগ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলেন: বিবাহবিচ্ছেদের পর ইদ্দতকালীন পর্যন্তই স্ত্রীকে ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন স্বামী।
এ ছাড়া কাওসার চৌধুরী বনাম লতিফা সুলতানা [২২ বিএলডি] মামলায় সিদ্ধান্ত হয়: আদালত ভরণপোষণ একবার ঠিক করে দিলেও, ভবিষ্যতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভরণপোষণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আবার মামলা করা যায়।
প্রস্তাব
১. স্ত্রী নিজের ভরণপোষণে অক্ষম হলে, বিশেষ ক্ষেত্রে তালাকের পরও তার আবার বিয়ের আগপর্যন্ত স্বামী তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন।
২. ভরণপোষণের পরিমাণ ও হার স্থির হবে চলতি বাজারদর, স্বামী বা স্ত্রীর সামর্থ্য এবং সামাজিক অবস্থা বিবেচনায়। এ ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে।
দত্তক
হিন্দু ও খ্রিষ্টান আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান আছে, কিন্তু প্রচলিত মুসলিম আইনে দত্তকসংক্রান্ত কোনো বিধান না থাকায় নিঃসন্তান মুসলিম দম্পতি বৈধভাবে সন্তান দত্তক নিতে পারে না। দত্তকের বিধান ইসলাম সমর্থন করে, নাকি প্রবলভাবে অস্বীকার করে—বিষয়টি নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বিষয়েও আইনজ্ঞদের মধ্যে কোনো মতৈক্য নেই। কেউ কেউ বলেন, ইসলাম দত্তক সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে অন্যরা মনে করেন, কিছু শর্ত আরোপের মাধ্যমে দত্তক ইসলামে গৃহীত হয়েছে। অভিভাবকত্ব আইন, ১৮৯০-এর মাধ্যমে দত্তকব্যবস্থা ইসলামি আইনে কিছুটা প্রচলিত হলেও মূলত জটিলতার কারণে মানুষ এই আইনের সাহায্য প্রার্থনায় উৎসাহিত হয় না। এই আইনের জটিল দিকগুলো হলো, এ ক্ষেত্রে যাকে প্রতিপালনের জন্য নেওয়া হয়, তার পিতা-মাতা হিসেবে অভিভাবকত্ব গ্রহণকারীদের পরিচয় দেওয়া যায় না। অর্থাৎ সন্তানের অভিভাবক হিসেবে আদালত তাঁদের অনুমতি দিতে পারেন, কিন্তু তাঁর জন্মদানকারী পিতা-মাতার নাম অক্ষুণ্ন থাকবে। দত্তকের বিধান মুসলিম পারিবারিক আইনে না থাকায় সন্তান বেচাকেনার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি অন্যের সন্তানকে নিজের কাছে প্রতিপালনের জন্য অভিভাবকত্ব আইনের জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্যও বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রস্তাব
মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তান ‘দত্তক’-এর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দত্তক ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার সম্পত্তিতে অধিকার পাবে কি না, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হবে।
বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন
মুসলিম আইনে বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং না করাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খ্রিষ্টান আইনেও এ বাধ্যবাধতা থাকলেও, হিন্দু আইনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিয়ে প্রমাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল ‘নিবন্ধন’। দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্যও এটি অপরিহার্য। কিন্তু হিন্দু আইনে এ বিধান না থাকায় অনেক সময় হিন্দু নারীরা তাঁদের অধিকার আদায়ে সমস্যায় পড়েন।
Convention on Consent to Marriage, Minimum Age for Marriage and Registration of Marriage, 1962-এ কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরের মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির জন্য আন্তর্জাতিকভাবেই দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
আবার কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলে, কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তা না থাকায় অনেক সময় ভুয়া বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধনের কাগজ তৈরির মতো ঘটনাও ঘটে। ফলে নারীরা প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হন।
প্রস্তাব
১. সব ধর্মের মানুষের জন্য নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করা যায়।
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধার
বৈধ বিয়ের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি না হলে, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারেন স্বামী। একইভাবে স্ত্রীও পারেন স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে।
এই অধিকার প্রথম স্বীকৃতি পায় মুন্সী বজলুর রহমান বনাম শামসুননিসা বেগম [১৮৬৭ (এমএলএ) ৫৫১] মামলায়। পরে এ বিষয়ে একাধিক মামলায় রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: নেলী জামান বনাম গিয়াসউদ্দীন [৩৪ ডিএলআর (১৯৮২), ২২১, (হাইকোর্ট বিভাগ)] মামলায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সময়ের বিবর্তনে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর দাম্পত্য স্বত্ব প্রয়োগের জন্য স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা এখন আর প্রচলিত কোনো বিধান নয়। রাষ্ট্রীয় আইন, জনস্বার্থ, আইনের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ সমতা ও সম-সুরক্ষা এবং দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের পরিপন্থী। এ ধরনের আইন ও এর অধীনে মামলা আইনত বাংলাদেশে চলতে পারে না। আবার এর বিপরীত রায়ও দেওয়া হয়েছে।
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের অধিকার স্বামী বা স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার নয়। এই অধিকার বিচার বিভাগের বিবেচনায় প্রয়োগ করা যায়। বলা যায়, এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সংবিধানের পরিপন্থী। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তও হলো: দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের অধিকার যে-ই প্রয়োগ করুক, এটি ব্যক্তির স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
প্রস্তাব
দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধারের বিধানকে ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫’-এর এখতিয়ার থেকে বাদ দেওয়া।
বহুবিবাহ
‘বহুবিবাহ’ বিষয়টি ব্যতিক্রমী ঘটনা। একক বিবাহই আমাদের দেশে সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সেই ব্যতিক্রমী ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এ বলা আছে, বহুবিবাহের কারণে স্বামী সমান আচরণ করতে অসমর্থ হলে, স্ত্রী চাইলে তাঁকে তালাক দিতে পারেন। তবে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ১৯৬১ সালে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ ধারায় বলা হয়: আরবিট্রেশন কাউন্সিলের (সালিস পরিষদ) অনুমতি না নিয়ে এক বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে নিবন্ধন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছে কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে তিনি বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সন্তুষ্ট হলেই শুধু অনুমতি দেবেন। কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কাউন্সিল যথাযথভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ না করেই অনুমতি দিচ্ছে কিংবা কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে এবং এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে অন্য মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা অনুসরণীয়। যেমন—মরক্কো, তিউনিসিয়া, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ বহুবিবাহ নিষেধ করে দিয়েছে। আবার মালয়েশিয়ায় এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় আছে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রস্তাব
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে শুধু আরবিট্রেশন কাউন্সিলকে ইচ্ছামতো ক্ষমতা না দিয়ে কয়েকটি শর্ত বসানো যায়। এসব শর্তের ক্ষেত্রেই শুধু দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দেওয়া যাবে।
শীর্ষ মতামত
শফিক আহমেদ
আইনমন্ত্রী
পারিবারিক আইনের পর্যালোচনা এক দিনে হবে না। যাঁরা পারদর্শী, তাঁদের মত নিয়েই করা উচিত। মুফতিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একইভাবে হিন্দু বা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মত নিয়ে তাদের আইন পরিবর্তন করা উচিত। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আইন করা হবে না।
এস কে সিনহা
আপিল বিভাগের বিচারপতি
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের স্বার্থই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। উত্তরাধিকার জন্মগতভাবেই নির্ধারিত হয়। ধর্মান্তরিত হলে সেটা ব্যাহত হবে কি না, তা বিবেচনা করতে হবে। অভিন্ন কোডের কথা বলা হয়েছে। পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি? সময় এসেছে আইন পরিবর্তন করার।
সালমা মাসুদ চৌধুরী
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বলা যায়, মা-ই হবেন সন্তানের হেফাজতকারী। এরপর সাবালক হয়ে সে নিজেই নিজের হেফাজতকারীকে পছন্দ করে নেবে। পিতার দ্বিতীয় বিয়ে তার হেফাজতের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করলে মাতার হবে কেন? দত্তক ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি পাবে কি না, তা নির্ভর করবে পিতা-মাতার ওপর। বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা উচিত, তবে ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ
হিন্দু পারিবারিক আইনে সংস্কারের প্রয়োজন। তবে সবই যে একসঙ্গে করতে হবে, এমন নয়। রেজিস্ট্রেশন, দত্তক—এগুলো আলাদা করে আইন করা দরকার এবং এগুলো এখনই করা যেতে পারে। তবে উত্তরাধিকার পরে করা হোক। অভিন্ন পারিবারিক আইনের কোনো বিকল্প নেই।
শামীম মো. আফজাল
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক
শরিয়াহ আইন বিষয়ে জবাব দেওয়ার এখতিয়ার কেবল মুফতিদের আছে। তাঁদের অনুমতি ছাড়া শরিয়াহ আইনের কোনো রকম পরিবর্তন আনা যাবে না। শরিয়াহ আইনসংক্রান্ত বিষয়ে আমার কাছে প্রস্তাব দিলে আমি মুফতিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাব।
ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও
আইনজীবী
ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে বিবাহসংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। মন্ডলীতে (চার্চ) বিবাহের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। আমরা ক্যানন আইন দ্বারা পরিচালিত। আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ নেই, তবে বিয়ে বাতিল হতে পারে, যদি বিয়েতে কোনো ত্রুটি থাকে। পালক পুত্রের সম্পত্তিতে অধিকার নেই, এর পরিবর্তন হওয়া উচিত। ওয়ারিশের সম্পত্তি দাবি করার একটা সময় বেঁধে দেওয়া দরকার।
হিন্দু পারিবারিক আইন
বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইন তথা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব ও দত্তক বিষয়ে নারীদের অবস্থা খুব বৈষম্যমূলক। এ ছাড়া গোত্রভেদ ও প্রথার ভিত্তিতে প্রচলিত নিয়মও খুব নাজুক। এগুলো মূল হিন্দু দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে হয় না। কারণ, প্রতিটি মানুষকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ করাই হিন্দু দর্শনের মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য গোত্র ও গোষ্ঠী মূলত পেশাভিত্তিক। অতএব, গোত্রগত প্রথার ভিত্তিতে কোনো নিষিদ্ধতা যেমন অন্তর্গোত্রীয় বিবাহের নিষিদ্ধতা বাস্তবতার পরিপন্থী। প্রথাগত হিন্দু আইনে বহুবিবাহের প্রচলন থাকলেও বাস্তবে তা কমই ঘটে। অন্যদিকে, আর্থসামাজিক, পারিবারিক ও অন্যান্য অনেক কারণে বিবাহবিচ্ছেদ অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে, যা বর্তমান আইনে নিষিদ্ধ। পুনর্বিবাহের ক্ষেত্রেও তাঁদের আপত্তির প্রমাণ নেই। বর্তমান সময়ে বিবাহ নিবন্ধনের প্রয়োজন। বিদেশযাত্রা, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিরোধ, আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিবন্ধন অত্যাবশ্যকীয়। এ ছাড়া নিবন্ধনকরণ কোনোভাবেই হিন্দু বিবাহের ধর্ম বা চরিত্র খর্ব করে না।
হিন্দু পারিবারিক আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারহীনতা। নারীর ভরণপোষণ পুরুষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান নাজুক আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নারীর জন্য এ অবস্থা কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে বিরুদ্ধ যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হিন্দু নারী তার সম্পত্তি কতটা ভোগ এবং রক্ষা করতে পারবে, এটি বিবেচনায় রেখে সতর্কভাবে সংস্কারের জন্য এগোনো দরকার।
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, কিছু রোগাক্রান্ত ও অসতী নারীকেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। মনে হয়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারীর শুদ্ধতা আধ্যাত্মিক কাজের জন্য অপরিহার্য মনে করা হতো। সম্পত্তি রক্ষা ও আধ্যাত্মিক কাজের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং শুদ্ধতা অপরিহার্য—এ যুক্তি আধুনিক মানবাধিকারের যুগে গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পত্তি রক্ষা ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক অবস্থার চেয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনি অবস্থার ওপর বেশি নির্ভরশীল। অন্যদিকে, অসতীত্ব সংজ্ঞায়িত করা এখন অধিকতর কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও সতীত্ব একটি বড় গুণ, তবু এ কারণে একজনকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।
উত্তরাধিকার আইনের সংশোধন হলে ভরণপোষণ আইনেরও সংশোধন হতে হবে এবং নারীদের সম্পত্তির অধিকার দিলে বৃদ্ধ ও নাবালকদের ভরণপোষণেও তাদের দায়িত্ব বাড়বে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ভরণপোষণের দায়িত্বও দেওয়া যেতে পারে।
দত্তক দেওয়া-নেওয়া হিন্দু আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনে করা হয়, নিঃসন্তানের দত্তক পুত্র ধর্মীয় কর্ম সাধন করবে। যেমন, পুত্র পিতার মৃত্যুতে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য শেষকৃত্য নিয়ম পালন করবে। এটা যুক্তিসংগত, কিন্তু নিঃসন্তান নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো পুত্র বা কন্যাকে নিজ সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া তার সন্তান লাভের একটি চিরন্তন ও গভীর আকাঙ্ক্ষা, যা দত্তকের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এখানে দত্তক গ্রহীতা ও যাকে দত্তক নেওয়া হবে, উভয় ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকা ঠিক নয়।
প্রস্তাব
১. বিবাহ ও দত্তকের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গোত্রভেদ (caste) প্রথার বিলোপ,
২. বহুবিবাহ প্রথা বিলোপ,
৩. স্বামী বা স্ত্রী যে কারও উদ্যোগে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ থাকা, তবে আইন অনুযায়ী আদালতের শর্ত সাপেক্ষে তা কার্যকর করা,
৪. বিবাহবিচ্ছেদের পর পুনর্বিবাহের সুযোগ রাখা,
৫. বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের নিবন্ধন,
৬. পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলের সঙ্গে বিবাহিত বা অবিবাহিত কন্যার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার লাভ। তবে হিন্দু পুরুষ বা নারী ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে,
৭. বর্তমানে প্রচলিত সম্পত্তিতে নারীর সীমিত অধিকার লাভের স্থলে পূর্ণ অধিকার প্রদান।
৮. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এবং অসতীত্বের কারণে উত্তরাধিকারবঞ্চিত করার প্রচলিত নিয়ম বাতিল,
৯. অবৈধ সন্তানের উত্তরাধিকার লাভের স্বীকৃতি,
১০. বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীর কন্যা বা পুত্র দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার স্বীকৃতি,
১১. কন্যাশিশুর পুরুষ বা নারী কর্তৃক দত্তক পাওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি
১২. পিতা কর্তৃক তৈরি ইচ্ছাপত্রে মাতার সম্মতির প্রয়োজনীয়তা।
খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন
ফস্টিনা পেরেরা, মানবাধিকারকর্মী
দেশ বিভাগের আগে ও পরে হিন্দু বা মুসলিম পারিবারিক আইনে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হলেও খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীদের জন্য প্রযোজ্য আইনে তেমন কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পুরোনো আইনের কারণে খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্যভিচার, বাল্যবিবাহ, গৃহনির্যাতন, বহুবিবাহ, আইনি বিচ্ছেদ ছাড়া পৃথকভাবে বসবাস করা, প্রতারণার মাধ্যমে বিচ্ছেদ, হলফনামাকে বিবাহ বা বিচ্ছেদের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা, সম্পত্তি বণ্টন বা সম্পত্তি আত্মসাৎ, শিশুর ভরণপোষণ, যৌতুক, দত্তক নেওয়া সন্তানের আইনি মর্যাদা, বিবাহবিচ্ছেদে আইনি জটিলতা, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে অসম দাবি ইত্যাদি। উল্লিখিত সমস্যার সমাধানকল্পে বিভিন্ন আইনে সংশোধন আনা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রস্তাব
১. বিবাহবিচ্ছেদ আইনের সংশোধন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য বিলোপে বিবাহবিচ্ছেদ আইন-১৮৬৯-এর ১০ ধারা সংশোধন করা এবং বিচ্ছেদের কারণের পরিধি বৃদ্ধি করা, যেমন—ব্যভিচার, ধর্ষণ ও শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার বা শিকার হওয়ার হুমকি থাকলে আবেদনকারী যেন বিবাদী থেকে আলাদাভাবে বসবাস করার সুযোগ পায়। এ রকম আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাতে কোনো যুক্তিযুক্ত অজুহাত ছাড়া দুই বছর পৃথক থাকার অনুমতি পায়। মানসিক বৈকল্য বা এমন কোনো রোগে আক্রান্ত, যার কারণে বিবাদীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করা অসম্ভব বা যেখানে সম্পর্ক এমনভাবে ভেঙে গেছে যে তা বজায় রাখা এক বা উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর, সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য নতুন ধারা সংযোজন। বিরোধের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালত হবে প্রথম বিচার্য আদালত এবং জেলা জজ আদালত হবে আপিল আদালত, যা সারা দেশে কার্যকর হবে এবং তার ভূতাপেক্ষ প্রয়োগ থাকবে।
২. দত্তক সম্পর্কে নতুন আইন করা ।
৩. উত্তরাধিকার আইন-১৯২৫-এর ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের দত্তক নেওয়া-সম্পর্কিত কোনো আইন না থাকায় দত্তক সন্তানেরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করতে পারে না। যেহেতু তাদের ধর্মীয় প্রথায় দত্তককে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে, তাই এ বিষয়ে সংশোধন আনা দরকার। বর্তমান আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাকে বাদ দিয়ে পিতা উত্তরাধিকারী হন। বৈষম্যমূলক এ ধারাটিও সংশোধন করতে হবে।
৪. কানুন আইনের দ্বারা বিবাহবিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা সংশোধন করতে হবে।
বিচ্ছেদ আইন বিশ্বের সব দেশই [ভ্যাটিকান ছাড়া], এমনকি ক্যাথলিক দেশগুলোও স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে আয়ারল্যান্ড, চিলি, ব্রাজিল ও মাল্টা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ফিলিপাইনেও ২০০১ সালে বিচ্ছেদ আইন ১৮৬৯ সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া [সিবিসি] খ্রিষ্টানদের সিভিল আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি দিয়েছে, যাতে করে খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদের কারণগুলোর ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়।
ইংরেজি থেকে অনূদিত। সংক্ষেপিত।
ঘোষণা
আজকের আয়োজন বিষয়ে পাঠকের যেকোনো প্রতিক্রিয়া বা মতামত আমরা ছাপতে আগ্রহী। আপনার প্রতিক্রিয়া বা মতামত পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়—আইন অধিকার, প্রথম আলো, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। এ ছাড়া ফেসবুকে আইন অধিকার পেজ www.facebook.com/AINADHIKAR-এ যোগ দিয়েও মতামত জানাতে পারেন। ই-মেইলও করতে পারেন
ain@prothom-alo.info।
No comments