পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর আয়াতকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা কত না নিকৃষ্ট কাজ

১৮৭. ওয়াইজ্ আখাজাল্লাহু মিছাক্কাল্লাজিনা উতুল কিতাবা লাতুবায়্যিনুন্নাহু লিন্নাছি ওয়ালা তাকতুমুনাহু; ফানাবাজুহু ওয়ারা-আ জুহুরিহিম ওয়াশ্তারাও বিহি ছামানান কালিলা; ফাবি-ছা মা-ইয়াশ্তারুন। ১৮৮. লা-তাহ্ছাবান্নাল্লাজিনা ইয়াফরাহুনা বিমা-আতাঁও ওয়া ইউহিব্বুনা আইঁয়্যুহ্মাদু বিমা-লাম ইয়াফআ-লু ফালা-তাহ্ছাবান্নাহুম বিমাফাজাতিম্ মিনাল আ'জাবি; ওয়ালাহুম আজাবুন আলিম।


১৮৯. ওয়া লিল্লাহি মুলকুচ্ছামা-ওয়াতি ওয়াল আরদি; ওয়াল্লা-হু আ-লা-কুলি্ল শাইয়িন কাদির। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৭-১৮৯]
অনুবাদ : ১৮৭. যখন আল্লাহ তায়ালা আহলে কিতাবের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে তোমরা অবশ্যই আখেরি নবী-সংক্রান্ত কথাগুলো মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং এগুলো তোমরা গোপন করবে না। কিন্তু তারা এ অঙ্গীকার পেছনে ফেলে দিল এবং অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে তা বিক্রি করে দিল; কত না জঘন্যভাবে এরা তা বিক্রি করল!
১৮৮. এমন সব লোকের ব্যাপারে আপনি কখনো ভাববেন না, যারা নিজেরা যা করে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে আবার নিজেরা যা কখনো করেনি তার জন্যও প্রশংসিত হতে চায়। আপনি ভাববেন না, এরা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে গেছে; এদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
১৮৯. আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মালিকানা একমাত্র আল্লাহর। তিনিই সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।
ব্যাখ্যা : বনি ইসরাইলরা জানত তাদের কিতাব তাওরাত ও জবুরে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদা ও তাঁর ধর্মের সত্যতা সম্পর্কে বিবরণ আছে। কিন্তু তারা এগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাইত না। বিশেষ করে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে যেসব কথা ছিল সেগুলোই তারা গোপন করত। তাদের উদ্দেশ্যটাও বেশ স্পষ্ট। যেহেতু তারা মনে করত ইসলাম গ্রহণ করা তাদের স্বার্থের বিপক্ষে যায়; তা ছাড়া তারা নিজেদের অহমিকা ত্যাগ করতে পারছে না, সেহেতু তারা ইসলাম গ্রহণ করবে না। এ অবস্থায় তাদের কিতাবে বর্ণিত আখেরি নবী-সংক্রান্ত ইতিবাচক বক্তব্যগুলো তারা গোপন করত। এটাও আল্লাহর আয়াতকে স্বল্পমূল্য বা ইহজাগতিক স্বার্থে ব্যবহার করার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইহুদিরা এভাবেই আল্লাহর আয়াতকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করেছে এবং তারা এটা খুব জঘন্য খারাপ কাজ করেছে। আল্লাহর আয়াতগুলোকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করার প্রতিই এখানে ধিক্কার জানানো হয়েছে ১৮৭ নম্বর আয়াতে। অপরদিকে ১৮৮ নম্বর আয়াতে ইহুদি সম্প্রদায়ের কিছু লোকের কিছু বদচরিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একে তো তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে আনন্দ লাভ করত। তারা মনে করত, তারা বেশ চালাকি করতে পারছে। অন্য কেউ এটা বুঝতে পারছে না। আবার তারা নিজেরা যা করেনি, কোনো ভালো কাজ, যা অন্য কেউ করেছে বা আপনাআপনি ঘটে গেছে এমন কাজের কৃতিত্ব দাবি করে প্রশংসা পেতে চাইত। এটাও তাদের একটা নিকৃষ্ট চরিত্র। ইহুদি আলেমরা অহরহই তা করত। এই আয়াতে তাদের কথা উল্লেখ করেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে বলছেন, আপনি এদের কথায় চিন্তিত হবেন না। এরা শিক্ষিত হলেও বদলোক। এদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ১৮৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহর সর্বময় একক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সারা পৃথিবী এবং আকাশমণ্ডল সবই তাঁর একক নিয়ন্ত্রণে এবং সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁর। এই পৃথিবীর ক্ষণকালের দায়িত্ব ও সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে তিনি দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব আল্লাহর_এ কথাই এ আয়াতে বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.