চারদিক-অন্য রকম কুচকাওয়াজ by হামিদ উল্লাহ

১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বার্ষিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন ৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে চার শরও বেশি ক্যাডেট। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাও তাতে অংশ নেয়। ১৭ দিনের টানা প্রশিক্ষণ শেষ হয় ২৮ জানুয়ারি। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ছিলেন ১০০ জন নারী।


বিএনসিসি কর্ণফুলী রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হামিদা চৌধুরী সেনাবাহিনীতে মেয়েদের অংশগ্রহণের পটভূমি ব্যাখ্যা করলেন ‘সেটা ১৯৯৬ সালের শেষ দিকের ঘটনা। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর’র (বিএনসিসি) বার্ষিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর সামনে মেয়েরা দড়ি বেয়ে আকাশ থেকে মাটিতে নামে। শেখ হাসিনা তাদের এ যোগ্যতা দেখে বিস্মিত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। এ উদ্যোগের কারণেই এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি।’
কর্ণফুলী রেজিমেন্টের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার জামালুদ্দিন মো. জাকির হোসেন বলেন, টানা প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সবাইকে রাতে একটানা তিন ঘণ্টা প্রতিকূল পথে অন্ধকারে হাঁটতে হয়েছে। ১০ রাউন্ড করে গুলি ছুড়তে হয়েছে। এসব কাজের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাদের মধ্যে অনেক মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীর খোঁজ পেয়েছি আমরা।
ভাটিয়ারি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ মাঠের একপাশে প্রশিক্ষণ উপলক্ষে টানানো হয়েছে অনেকগুলো তাঁবু। সেখানেই থাকা-খাওয়া, চলছে সমতল আর গিরিপথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ। গুলিবর্ষণ, হেলিকপ্টার থেকে নামার কৌশল, ড্রিলিং, ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহার থেকে বেয়নেট চার্জ—কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। যুদ্ধমাঠের প্রয়োজনীয় সব রসদপাতিও হাজির। এভাবে সম্মুখযুদ্ধের সব ধরনের প্রস্তুতিই নিল বিএনসিসির ক্যাডেটরা। সমাপনী অনুষ্ঠানে তা করেও দেখাল তারা। প্রায় দুই ঘণ্টার এ প্রদর্শনী চলাকালে যেন যুদ্ধেরই দামামা বেজে ওঠে।
প্রথমে দেখলে যে কেউ ভুল করতে পারেন সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ মনে করে। তবে কর্মকর্তারা বলেন, বিএনসিসি সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সারির প্রতিরক্ষা বাহিনী। সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি শৃঙ্খলা, সততা ও নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনের শিক্ষাও বিএনসিসিতে দেওয়া হয় বলে জানান বিএনসিসি কর্ণফুলী রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হামিদা চৌধুরী।
সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন। অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে ছিল রেপ্লিং, ফায়ারিং, প্রধান অতিথির সালাম গ্রহণ, কুচকাওয়াজ এবং বেয়নেট চার্জ। কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন নানুপুর লায়লা কবির কলেজের শিক্ষক কলিমউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনসিসি দ্বিতীয় সারির প্রতিরক্ষা বাহিনী। তবে যুদ্ধের মাঠের বাইরে আমাদের অনেক কাজ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে দুর্যোগ মোকাবিলা, ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশকে সহযোগিতা, শীতবস্ত্র বিতরণ কিংবা স্বেচ্ছা রক্তদান—কোনোটাই আমাদের কর্মসূচির বাইরে নয়।
বিএনসিসির প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিরিন আখতার চৌধুরী বলেন, সম্মুখযুদ্ধ বড় কথা নয়, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্মের নৈতিকতা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খেয়ে চলার শিক্ষাটাও ছাত্রছাত্রীরা এখানে পাচ্ছে। এভাবে তারা জীবনে জয়ী হওয়ার অনেকগুলো যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায় এখানে। নিজের রেপ্লিংয়ের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যথারীতি দড়ি বেয়ে ওপর থেকে নামছিলাম। কিন্তু তা দেখে আমার ছোট শিশুটি কেঁদে ফেলে।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলে, বিএনসিসির সবগুলো প্রশিক্ষণের মধ্যে আমার হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেয়ে নিচে নামা (রেপ্লিং) খুবই ভালো লাগে।

No comments

Powered by Blogger.