সংবিধান নিয়ে অনিশ্চয়তা by শাহ আবদুল হান্নান
আমি যতটুকু বুঝি, দেশে এখন সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই মুহূর্তে সংবিধানের রূপটি কী তা বলা কঠিন। সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক আপিল মোডিফিকেশনের পর আমরা পরিস্থিতি কিছুটা বুঝতে পারব। আমি যখন লিখছি (০৮/০২/২০১০) তখন মোডিফিকেশন সংক্রান্ত কোনো আদেশ বের হয়নি।
যাই হোক, এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক সাহেব ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব, সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের বিভিন্ন বক্তব্য দেখেছি। দৈনিক প্রথম আলোতে টিএইচ খান সাহেব এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দুটি সাক্ষাত্কার বের হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মনে করেন, এ সংক্রান্ত রায়ের ফলে সংবিধানের জগাখিচুড়ির অবসান ঘটেছে।
অন্যদিকে টিএইচ খান বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের একমাত্র বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে সংসদ দ্বারা তার সংশোধন, যেহেতু সংসদ কর্তৃক ৫ম সংশোধনীটি কনস্টিটিউশন ৫ম অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট হিসেবে পাস হয়েছিল সুতরাং তার সংশোধন কেবল সংসদে হতে পারে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন করা বা ইচ্ছামত কিছু অংশ বদলানো এবং ইচ্ছামত কিছু অংশ রাখা—এগুলো কোর্টের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলে কিছুই নেই এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মৌলিক কাঠামো হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘সামরিক শাসন থাকলে কোর্ট তা মেনে চলেন তখন আর অত বিরক্তি দেখাতে পারেন না’ (প্রথম আলো ০৭/০২/২০১০)। অন্যদিকে মওদুদ সাহেব বলেছেন, কোনো কোর্ট কর্তৃক সংবিধানের সংশোধনের নামে কিছু রাখা এবং কিছু বাদ দেয়া বৈষম্যমূলক। তিনি আরও বলেন, মূল মামলা ছিল সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে। সে ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি টেনে না আনলেও চলত।
আমি মনে করি, এই অবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করেছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যে আপিলটি ছিল (যা পূর্ববর্তী সরকার করেছিল), তা বর্তমান সরকার কর্তৃক তুলে নেয়া বর্তমান জটিলতার কারণ। এর ফলে মূল মামলার গুণাগুণের (মেরিট) ওপর শুনানি করা সম্ভব হয়নি। যা শুনানি হয়েছে তা কেবল যারা নতুন করে এই কেসে পার্টি হতে চেয়েছিলেন তাদের পার্টি করা যায় কিনা সে বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত যদি ধর্মীয় দল করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত থাকে এবং আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা উঠে যায়—এগুলোকে নতুন করে সংবিধান সংশোধন করে পুনর্বহাল করা আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব হবে। কেননা ৯০ ভাগ মুসলিম জাতি আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা মুছে দিয়ে তার পরিবর্তে সেকুলারিজম (রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জনবাদ) করা কখনও সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেবে না। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে গেলে এটা টেকার বিষয় নয়। আমি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এবং শাসনতান্ত্রিক আইনের (সংবিধান আইন) ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, মার্শাল ল’ কখনও সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত নয়। কিন্তু তারপরও ৩০-৪০টি দেশে সামরিক শাসন হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হয়েছে—এটাই বাস্তবতা। ১৯৬২ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট আইউব খান কর্তৃক সামরিক আইনের দ্বারা একেবারে একটি নতুন সংবিধান জারি করা হয়। তখন আওয়ামী লীগসহ সব দল ১৯৬২ সালের সংবিধান মেনে নির্বাচন করে এবং সংসদে যায়। সেই সংবিধানের অধীনে ১৯৬৫ সালে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল মোহতারামা ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এসবের প্রেক্ষিতে বলতে চাই যে, এসব বাস্তবতা অস্বীকার করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, সংবিধান সংশোধন একমাত্র সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত। সুতরাং আওয়ামী লীগ আপিল বিভাগের মামলা তুলে নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি করেছে, এর ফলে যদি বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয় তা আওয়ামী লীগ সরকারকেই সমাধান করতে হবে এবং এর দায়-দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। আমি টিএইচ খান সাহেবের সঙ্গে একমত যে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলতে কিছু নেই। কনস্টিটিউশন সবকিছুই মৌলিক আইন (ঋঁহফধসবহঃধষ খধ,ি সাধারণ আইন নয়), এর সব কিছু মৌলিক। বিশ্বের কোনো সংবিধানে মৌলিক কাঠামো বলে কিছু নেই। তা থাকাও উচিত নয়। সংবিধানের যে কোনো সংশোধন একই পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। যেভাবে বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলোতে করা হয়। মৌলিকের প্রশ্ন থাকলে চিরদিন বিতর্ক হবে। কী মৌলিক, কী মৌলিক নয়, এ বিতর্ক আমাদের প্রয়োজন নেই।
লেখক : সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
অন্যদিকে টিএইচ খান বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের একমাত্র বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে সংসদ দ্বারা তার সংশোধন, যেহেতু সংসদ কর্তৃক ৫ম সংশোধনীটি কনস্টিটিউশন ৫ম অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট হিসেবে পাস হয়েছিল সুতরাং তার সংশোধন কেবল সংসদে হতে পারে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন করা বা ইচ্ছামত কিছু অংশ বদলানো এবং ইচ্ছামত কিছু অংশ রাখা—এগুলো কোর্টের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলে কিছুই নেই এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মৌলিক কাঠামো হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘সামরিক শাসন থাকলে কোর্ট তা মেনে চলেন তখন আর অত বিরক্তি দেখাতে পারেন না’ (প্রথম আলো ০৭/০২/২০১০)। অন্যদিকে মওদুদ সাহেব বলেছেন, কোনো কোর্ট কর্তৃক সংবিধানের সংশোধনের নামে কিছু রাখা এবং কিছু বাদ দেয়া বৈষম্যমূলক। তিনি আরও বলেন, মূল মামলা ছিল সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে। সে ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি টেনে না আনলেও চলত।
আমি মনে করি, এই অবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করেছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যে আপিলটি ছিল (যা পূর্ববর্তী সরকার করেছিল), তা বর্তমান সরকার কর্তৃক তুলে নেয়া বর্তমান জটিলতার কারণ। এর ফলে মূল মামলার গুণাগুণের (মেরিট) ওপর শুনানি করা সম্ভব হয়নি। যা শুনানি হয়েছে তা কেবল যারা নতুন করে এই কেসে পার্টি হতে চেয়েছিলেন তাদের পার্টি করা যায় কিনা সে বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত যদি ধর্মীয় দল করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত থাকে এবং আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা উঠে যায়—এগুলোকে নতুন করে সংবিধান সংশোধন করে পুনর্বহাল করা আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব হবে। কেননা ৯০ ভাগ মুসলিম জাতি আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা মুছে দিয়ে তার পরিবর্তে সেকুলারিজম (রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জনবাদ) করা কখনও সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেবে না। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে গেলে এটা টেকার বিষয় নয়। আমি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এবং শাসনতান্ত্রিক আইনের (সংবিধান আইন) ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, মার্শাল ল’ কখনও সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত নয়। কিন্তু তারপরও ৩০-৪০টি দেশে সামরিক শাসন হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হয়েছে—এটাই বাস্তবতা। ১৯৬২ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট আইউব খান কর্তৃক সামরিক আইনের দ্বারা একেবারে একটি নতুন সংবিধান জারি করা হয়। তখন আওয়ামী লীগসহ সব দল ১৯৬২ সালের সংবিধান মেনে নির্বাচন করে এবং সংসদে যায়। সেই সংবিধানের অধীনে ১৯৬৫ সালে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল মোহতারামা ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এসবের প্রেক্ষিতে বলতে চাই যে, এসব বাস্তবতা অস্বীকার করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, সংবিধান সংশোধন একমাত্র সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত। সুতরাং আওয়ামী লীগ আপিল বিভাগের মামলা তুলে নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি করেছে, এর ফলে যদি বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয় তা আওয়ামী লীগ সরকারকেই সমাধান করতে হবে এবং এর দায়-দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। আমি টিএইচ খান সাহেবের সঙ্গে একমত যে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলতে কিছু নেই। কনস্টিটিউশন সবকিছুই মৌলিক আইন (ঋঁহফধসবহঃধষ খধ,ি সাধারণ আইন নয়), এর সব কিছু মৌলিক। বিশ্বের কোনো সংবিধানে মৌলিক কাঠামো বলে কিছু নেই। তা থাকাও উচিত নয়। সংবিধানের যে কোনো সংশোধন একই পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। যেভাবে বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলোতে করা হয়। মৌলিকের প্রশ্ন থাকলে চিরদিন বিতর্ক হবে। কী মৌলিক, কী মৌলিক নয়, এ বিতর্ক আমাদের প্রয়োজন নেই।
লেখক : সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
No comments