ভাষার উদ্ভব হয় কীভাবে? by আব্দুল কাইয়ুম
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। প্রতিষ্ঠিত মতটি হলো, মানুষের বিবর্তনের ধারায় ভাষার উদ্ভব ঘটে। এটা মানুষের একটি সামাজিক আবিষ্কার। আদি যুগে বনে শিকারের সন্ধানে মানুষ ঘুরে বেড়াত। তখন একের সঙ্গে অন্যের মনের ভাব প্রকাশ জরুরি হয়ে ওঠে। কারণ কে কোথায় দাঁড়াবে, কার হাতে সড়কি থাকবে,
কার হাতে তীর-ধনুক—এসব ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলে শিকার ফসকে যাবে, না খেয়ে মরতে হবে। আবার দেখা গেল, ঝড় উঠলে শিকার পালিয়ে যায়, তাই আকাশে মেঘ দেখলে দ্রুত কাজ সারতে হবে। এই কথাটা সবার মধ্যে নিয়ে যেতে হলে চাই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অর্জিত জ্ঞান সবাইকে জানানো। আগে মানুষ বিভিন্ন ধ্বনির মাধ্যমে, আকারে-ইঙ্গিতে বা গুহার দেয়ালে ছবি এঁকে এসব করণীয় সঙ্গী-সাথিদের বোঝাত। কিন্তু ওই সব ধ্বনির সমন্বয়ে শব্দ ও বাক্য গঠন না করে জটিল ধারণা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ডলফিন, শিম্পাঞ্জি প্রভৃতি প্রাণী বিভিন্ন ধ্বনির মাধ্যমে কিছু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলেও তারা ধ্বনির সমন্বয়ে শব্দ গঠন করতে পারে না। মস্তিষ্কের বিকাশের ফলে মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়েছে। শিশু মায়ের মুখ থেকে ভাষা শেখে। এই ভাষা শুধু কতগুলো শব্দসমষ্টি নয়, মনের অনুভূতি ও মায়ের মমতামাখা অভিব্যাক্তিরও প্রকাশ। বিদেশি ভাষা বিশেষ চেষ্টায় আয়ত্ত করতে হয় বলে তা মায়ের ভাষার মতো মধুর হয় না। ভাষা ছাড়া কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা, কল্পনা করা, এমনকি স্বপ্ন দেখাও সম্ভব হতো না। সে জন্যই সাধারণভাবে ভাষা, বিশেষভাবে মাতৃভাষা, এত গুরুত্বপূর্ণ।
No comments