চরাচর-মানুষের কল্যাণে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ by আফতাব চৌধুরী

মানবজাতির সঙ্গে বংশগতি সূত্রে প্রতিনিধিত্বকারী গৃহপালিত ও বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রতি গুরুত্বের স্বীকৃতি নিয়ে প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যাপক ধ্বংসের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউসিএফ) বিশ্ব বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কৌশল গ্রহণ করে।


যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত তিনটি_১. প্রাণী ও উদ্ভিদের সব প্রজাতির জীবন্ত মজুদ ভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। অবশ্যই সব প্রজাতিকে সংরক্ষণ করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ বেশির ভাগ প্রজাতির গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান এখনো সীমিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্বল্পজাত নাদাগাস্কার উদ্ভিদ যে ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধক তা সম্প্রতি আবিষ্কৃত হলো। চির শ্যামল লতানো এ জাতের উদ্ভিদের নাম 'ক্যাথরাস্থাস'। ২. ইতিমধ্যে মানুষের জন্য যেসব প্রজাতি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গেছে সেসবের বিপুল মজুদ সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে এসব প্রজাতির চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহ করা যায় অর্থাৎ অনির্দিষ্টকাল যাতে এসব ভোগ করে মানুষ আরো উন্নত জীবন লাভ করতে পারে। ৩. বিশুদ্ধ পানি, বাতাস, উর্বর জমি সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কিন্তু গৃহীত এ তিনটি কৌশল বিশ্বব্যাপী সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নেওয়া হলেও আমাদের বর্তমান সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকারি ও ব্যক্তি-পর্যায়ে এসব উদ্দেশ্য চরমভাবে লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়। আজ মানুষের ব্যাপক অবজ্ঞার ফলে গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। এ ধারাবাহিকতা যদি রোধ করা না যায়, তাহলে ভবিষ্যতে মানবজাতির অবস্থা কী হবে এবং এই সুন্দর পৃথিবীরই-বা কী হবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি এবং অনেক প্রজাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ লক্ষ করা যায় তার মধ্যে প্রজাতিগুলোর অধিক আহরণ এবং বাস্তু ধ্বংসকরণই প্রধানত দায়ী। আমরা যদি একটু অতীতে ফিরে দেখি তাহলে দেখব, বৈধ ও অবৈধ উপায়ে অধিক আহরণের ফলে বিগত শতাব্দীতে দক্ষিণ আমেরিকার প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন (এক ধরনের কবুতর), আমাদের দেশের বাইসন, ক্যালেন্ডার ও হাতির মতো অনেক প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা আরো লক্ষ করেছি, আন্তর্জাতিক তিমি কমিশনের প্রয়াস সত্ত্বেও পৃথিবীর সব সমুদ্রে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্রে অতি শিকারের কারণে হ্রাস পাচ্ছে তিমির সংখ্যা; যদিও বর্তমানে তিমি হত্যা নিষিদ্ধ এবং একে ঘিরে অনেকেই সচেতন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর পরও তিমির অবস্থা যে কাহিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তা ছাড়া উন্নয়নশীল দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে বাড়তি মানুষের প্রয়োজন মেটাতে কাঠ ও কৃষিজমির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু মানুষ অতি-আধুনিকতা ও বিলাসিতার নামে নির্বিচারে বনাঞ্চল, বাগবাগিচা, ফসলি জমি ধ্বংস করে চলেছে। এমনিতে মানুষের সংখ্যা দিন দিন যে হারে বেড়ে চলেছে, সে তুলনায় মাথা গোঁজার ঠাঁই কম। চাহিদার তুলনায় সুপেয় পানির জোগান অনেক কম। তা ছাড়া মানুষের উন্মাদনায় এসব দ্রুত সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের বর্তমান তো বটেই, ভবিষ্যতেও সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চরম হুমকির কারণ। এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে বিশ্বের সব মানুষকে। তা নাহলে আগামী প্রজন্ম কেন, আমরাই যে নির্ঘাত ধ্বংসের মুখে পতিত হব, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আফতাব চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.