পবিত্র শবেবরাত-সৌভাগ্য ও শান্তির বারতা
আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি পবিত্র শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাত হিসেবে অভিহিত। প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে এ রাতটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে বিবেচিত হয়, মুসলিম জাহানের সর্বত্রই এ রাতটি বিশেষ তাৎপর্য ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
মুসলিমরা পবিত্র রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালন করেন। কেননা, এ রাতটি অন্য রাতগুলোর চেয়ে আলাদা_ মুক্তির রজনী বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে আখ্যায়িত। এ রাতে আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের এক অপূর্ব নিয়ামত দান করেন। জীবনের চলার পথে যে পাপ-অপরাধ ও কলুষ জমা হয় তা থেকে মুক্তির এক অপূর্ব সুযোগ মেলে এ রাতে। পাপ থেকে মুক্তি মানুষের জীবনে এক অপূর্ব সৌভাগ্য। মানুষ যে শুধু জেনেশুনে পাপ ও অপরাধ করে তা নয়, নিজের অজান্তে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিও পাপ ও অপরাধ করতে পারেন। তাই এ রাতে জানা ও অজানা সকল পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইবাদত ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান ধর্মপ্রাণ মানুষেরা। বিশ্বাস করা হয়, এ রাতে দোয়া কবুল হলে সমস্ত পাপ মাফ হয়ে যায়। এ রাতে একজন মুমিন ব্যক্তি নবজাতকের মতো শুচি-শুভ্র-নিষ্পাপ জীবনের অধিকারী হন। নতুন উদ্যমে সৎ ও নীতিনিষ্ঠ জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারেন। ফলে পবিত্র শবেবরাত মুসলিমদের জন্য একটি অপূর্ব সুযোগ। আল্লাহর দরবারে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে একজন মুমিনের মধ্যে পাপ সম্পর্কে উপলব্ধি হয়। তিনি ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথে এমন পাপ ও অপরাধ আর করবেন না এমন উপলব্ধিও তার মধ্যে আসে। তবে কিছু কিছু অপরাধের ক্ষমা এ রাতে হয় না। হাদিস শরিফে উলি্লখিত হয়েছে, এ রাতে সবাই ক্ষমার যোগ্য বলে গণ্য হন_ শুধু শিরককারী, হত্যাকারী ও ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তি বাদে। হাদিসের এ বাণীতে স্পষ্ট যে, শিরক, হত্যা ও ঘৃণা ছড়ানো গর্হিত অপরাধ। পবিত্র লাইলাতুল বরাতেও এসব অপরাধের ক্ষমা হয় না। মুসলিমরা স্বভাবতই হত্যা ও ঘৃণা ছড়ানোর মতো গর্হিত অপরাধ করবে না বলেই আশা করা হয়। আজকের পৃথিবীতে মুসলিমরা কি পালনীয় আদর্শ সঠিকভাবে পালন করছে? ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? নইলে মুসলিম জাহানে হত্যা, ঘৃণা-বিদ্বেষ এভাবে শাখা বিস্তার করেছে কেন? শবেবরাতের আরেক শিক্ষা হলো ক্ষমা। আল্লাহপাক যখন সমস্ত বান্দার ক্ষমা করে দেওয়ার অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, তখন আমরা দেখি মুসলিমরাই একজন অপরজনকে ক্ষমা করে পরস্পরের সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকতে পারছেন না। ফলে আজকের প্রেক্ষাপটে শবেবরাতের গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। শুধু পালনের মধ্য দিয়ে নয়, উপলব্ধির মধ্য দিয়ে এ রাতের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। শবেবরাতের রাত নিজের গুণেই মহিমান্বিত। আবার এ রাতটিকে পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতির রাত বলেও মনে করা হয়। আর মাত্র ১৫ দিন পর শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমদের জীবনে রমজানের পদধ্বনি শুরু হয় পবিত্র শবেবরাতে। পাপমুক্তি, ক্ষমা ও শুদ্ধতার আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে তারা পবিত্র রমজানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পবিত্র শবেবরাতের এই শুভক্ষণে তাই আমাদের শুভকামনা। সকল মুসলিমের জীবনে এবারের শবেবরাত সৌভাগ্য ও শান্তি বয়ে আনুক।
No comments