সরকার ও বিরোধীদের কাছে সংযত আচরণই কাম্য-বাসে আগুন, হরতাল

গত রোববার রাতে ঢাকা মহানগরে হরতালের সমর্থকেরা আটটি বাসে আগুন জ্বালিয়ে প্রমাণ করেছে যে হরতাল কখনো শান্তিপূর্ণ হতে পারে না। বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে আরও কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।


কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সরকার নয়, বরং বিএনপির কর্মীরাই বাস জ্বালিয়ে নগরবাসীর শান্তি ভঙ্গ করেছেন। হরতালের নামে বাস পোড়ানো কিংবা জোর করে যান চলাচল বন্ধ করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছু নয়। হরতালের দিনও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও পুলিশের সঙ্গে কোথাও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। জনজীবনের শান্তি বজায় রাখতেই সব পক্ষের উচিত সংযত আচরণ করা।
বিএনপি এই হরতালটি এমন সময় করল, যখন দেশবাসী বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে স্বাগত জানাতে অধীর অপেক্ষায় আছে; বিশেষ করে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এ সময় হরতাল পালনের কারণে কিছুটা হলেও সেই প্রস্তুতির কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিএনপির দাবি, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের পতনের প্রতিবাদে তারা হরতাল পালন করেছে। কিন্তু সোমবারের হরতালে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে, সে কথা কেউ বলবে না। বরং পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জিনিসপত্রের দাম আরও এক দফা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এক দিনের জন্য হলেও অনেক মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ ছিল। বিএনপির নেতাদের নিশ্চয়ই জানা আছে, হরতালে সরকারের পতন ঘটে না, জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে।
এ কারণেই আমরা বরাবর হরতালের বিরোধিতা করে এসেছি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হরতাল-অবরোধ প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। হরতালের কারণ হিসেবে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। সরকার ইতিমধ্যে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর করবে না বলে জানিয়েছে, মামলাটিও সরকার করেনি। স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতা করলেও তা নথিভুক্ত হয়নি। তার পরও হরতাল পালনের কী যুক্তি থাকতে পারে?
বর্তমানে জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলছে। বিরোধী দল সেখানে গিয়ে সরকারের ব্যর্থতা ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারে। তাদের কথা বলতে না দিলে সাময়িক সংসদ বর্জনও চলতে পারে। কিন্তু সেই বর্জন অনির্দিষ্টকালের জন্য হতে পারে না। বিএনপির উচিত হবে হরতাল-অবরোধের পথ পরিহার করে সংসদে গিয়ে জনজীবনের অভাব ও সমস্যা তুলে ধরা।
গত দুই দশকে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল সবকিছু গায়ের জোরে করতে চায়। আবার বিরোধী দলও সংসদে না গিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকে। এভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না। নব্বইয়ে যে চেতনা নিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল, দেশ গঠনেও তাদের কাছে সেই চেতনার ধারাবাহিকতা দেখতে চাই। হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যেমন কাম্য নয়, তেমনই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে অন্যের ওপর সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ফলও কখনো ভালো হতে পারে না। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ পরিহার করে সরকার ও বিরোধী দল দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.