চরাচর-জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে by আফতাব চৌধুরী

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধারা দিন দিন ভয়াবহ পরিণতির দিকে চলে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জলে-স্থলে, এমনকি অন্তরীক্ষে। মানুষ তার বৈষয়িক লাভালাভের কথা ভেবে আত্মঘাতী পন্থায় প্রকৃতির ওপর কুঠারাঘাত করছে। আবার মায়াকান্নায় আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে।


কী কী কারণে প্রকৃতি বিষিয়ে উঠছে, তার প্রতিরোধের উপায়ই বা কী- সে বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই কারোই। থাকলে কিয়োটো চুক্তি বাস্তবায়নে 'ধান খাই, চাল খাই' অবস্থার সৃষ্টি হতো না। কোপেনহেগেনে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হতো না বিশ্বনেতাদের। অথচ অবস্থা সে দিকেই গড়িয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে একদল পরিবেশবিজ্ঞানী পরিবেশ সম্পর্কে পিলে চমকানো কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষায়, সামুদ্রিক পরিবেশে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে, যা জলচর প্রাণিকুলের জন্য, এমনকি সমুদ্রের তলদেশে দীর্ঘদিনের সৃষ্ট প্রবালপ্রাচীর বিপন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ জন্য মূলত দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। আর মানুষই এর অনুঘটক। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, সামুদ্রিক পরিবেশ নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের সমীক্ষা চালিয়ে আসছেন। সর্বশেষ তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত পানির রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে। তাতে যে ফল পাওয়া গেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
বিজ্ঞানীদের অভিমত, সাগরে নিক্ষিপ্ত শিল্পবর্জ্য এবং ইঞ্জিনচালিত নৌযান থেকে নির্গত তেল বা জ্বালানি সাগরকে বিষিয়ে তোলার অন্যতম কারণ। শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত অতিরিক্ত কার্বন বায়ুমণ্ডলে গিয়ে উষ্ণায়নকে আরো উসকে দিচ্ছে। ফলে আর্কটিক অঞ্চলের হাজার হাজার বছর আগেকার জমাট বাঁধা বরফের চাঁই গলতে শুরু করেছে। অবস্থা এমনভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। একই কারণে বিশ্বের বহু অঞ্চল অচিরেই সমুদ্রগর্ভে বিলীন হতে পারে। এককথায়, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? উপায় সম্পর্কেও তাঁরা স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। গবেষকরা দ্রুত কিয়োটো চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সম্পদ তৈরির কথাও বলেছেন। তাঁদের ভাষায়, সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষ অসীম চাহিদা পূরণের যে লক্ষ্যে নেমেছে, তাতে পদে পদে হোঁচট খাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে আমরা একই সম্পদকে ব্যবহারোপযোগী করতে পারি বারবার। বিজ্ঞানীরা আগামী কোপেনহেগেন শীর্ষ সম্মেলনের দিকে চেয়ে আছেন। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণবাদী সংগঠন গ্রিনপিস দাবি করেছে, সম্প্রতি সমাপ্ত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের যৌথ ঘোষণার পূর্ণ বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনো কোনো দেশ পরে তা থেকে সরে গেছে। শিল্পোৎপাদন সভ্যতার চাকা সচল রাখে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু তা যদি জীবন বিপন্ন করে তোলে কিংবা তেমন আশঙ্কা সৃষ্টি করে তাহলে সেটা উদ্বেগের বিষয়। তেমন পরিস্থিতিতে আজ দাঁড়িয়েছে সর্বংসহা ধরিত্রী। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের। নতুবা প্রতিশোধের চাবুক ধরিত্রী মাতা নিজের হাতে তুলে নিলে কারো কিছুই করার উপায় থাকবে না।
আফতাব চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.