কালের আয়নায়-মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির পেছনে আসল মতলব কী? by আবদুল গাফফ্ার চৌধুরী

আওয়ামী লীগ জানে বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি একটা অসার হুমকি। এই দাবির পেছনে কোনো যুক্তি নেই, জনসমর্থনও নেই। সুতরাং এই দাবি মানার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তেমনি বিএনপিও জানে, মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সঙ্গত কারণ সৃষ্টি হয়নি এবং এর পক্ষে জনমতও তৈরি হয়নি


দেশে কিছুকাল দুই নেত্রীই অনুপস্থিত (শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার দেশে ফিরেছেন)। একজন ইউরোপে এবং আরেকজন আমেরিকায়। ওয়ান-ইলেভেনের আমলের মাইনাস টু থিয়োরি সফল হলে বাংলাদেশে কী ঘটত তার একটা ছবি বর্তমানে দুই নেত্রীর অনুপস্থিতিতে পাওয়া গেল কি-না এক বল্পুব্দকে তা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, 'দুই নেত্রী দেশে অনুপস্থিত, কিন্তু মাইনাস হননি। দেশে বসে তাদের লেফটেন্যান্টদের গলার জোর দেখে কি তা বুঝতে পারছেন না? খালেদা জিয়ার গলার জোর এমনিতেই বেশি। তার প্রভাব বর্তেছে তার দলের উপনেতা, পাতি নেতাদের ওপরও। বিদেশে বসে খালেদা জিয়া হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, 'মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই। এই সরকারকে আর একদিনও ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না।' আর দেশে বসে তার দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল গর্জন করে বলেছেন, 'মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আন্দোলন করে আদায় করে ছাড়ব।' তার বক্তব্য কাগজে পাঠ করে আমার মনে হয়েছে, এই বাক্যবীর কত বড় বাপের বেটা!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিদেশে বসেই বিরোধী দলের নেত্রীর হুঙ্কারের জবাব দিয়েছেন। দেশে বসে তার প্রতিধ্বনি তুলছেন তার মন্ত্রী-উপমন্ত্রীরাও। মন্ত্রীরা বলছেন, 'মধ্যবর্তী নির্বাচন? কভি নেহি দেগা।' শেখ হাসিনা প্রথম দফায় যখন (১৯৯৬-২০০১) সরকারপ্রধান ছিলেন, তখন হজ সমাপনান্তে দেশে ফেরার পথে মদিনায় বসে বলেছিলেন, তিনি নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মাস আগেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চান। তখন বিরোধী দল থেকে আপত্তি ওঠেনি। আপত্তি উঠেছিল তার দল থেকেই। তার দুই পূর্ণমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, 'ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের একদিন আগেও ক্ষমতা ছাড়ব না।'
আমার একটা ধারণা, বর্তমানে ক্ষমতায় থাকার মাত্র আড়াই বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না এবং তা তারা দেবেনও না। তবু তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে রাজি হবেন, তাহলে এবারেও আপত্তি উঠবে তার মন্ত্রীদের ভেতর থেকেই। এদের অধিকাংশই নবিশ এবং মাত্র মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেয়েছেন। তাদের অনেকেই জানেন, আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ জেতে, তাহলেও তাদের আবার মন্ত্রী হওয়ার আশা নেই। তখন তাদের গাইতে হবে_ 'আমার সাধ না পুরিল আশা না মিটিলো সকলি ফুরায়ে যায় মা।'
আওয়ামী লীগ জানে, দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান বিরোধী দলের একটি হুজুগে দাবি এবং এই দাবির পেছনে কোনো জনসমর্থন নেই। আর বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে তর্জন-গর্জন এবং হরতালের নামে কিছু দলীয়, কিছু ভাড়াটে লোক রাস্তায় নামিয়ে ভাংচুর করা। সুতরাং আওয়ামী লীগের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো দলের দাবির পেছনে জনসমর্থন না থাকলেই তাদের তর্জন-গর্জন বাড়ে। যেমন হালে মুফতি আমিনীদের তর্জন-গর্জন। সরকার উচ্ছৃঙ্খলতা দমনে শক্ত হতেই আমিনীর বীরত্ব উবে গেছে। ২৭ তারিখে হরতাল ডেকেও তা প্রত্যাহার করেছে। এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা যে শক্তের ভক্ত, নরমের যম এই প্রমাণিত সত্যটা সরকারকে আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে।
আওয়ামী লীগ জানে বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি একটা অসার হুমকি। এই দাবির পেছনে কোনো যুক্তি নেই, জনসমর্থনও নেই। সুতরাং এই দাবি মানার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তেমনি বিএনপিও জানে, মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সঙ্গত কারণ সৃষ্টি হয়নি এবং এর পক্ষে জনমতও তৈরি হয়নি। এই দাবি তারা সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে পারবেন না। আর আন্দোলন করে আদায় করবেন সেই আশায় গুড়ে বালি। কোনো আন্দোলন করার ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বিএনপির ছিল বা আছে কিংবা অতীতে আন্দোলন করে তারা কোনো দাবি আদায় করেছেন, তার কোনো উদাহরণ বিএনপির কুষ্ঠিতে লেখা নেই।
এখন প্রশ্ন, বিএনপি তার দাবির অসারতা এবং অবাস্তবতা জেনেশুনেও কেন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে তর্জন-গর্জন শুরু করেছে? খালেদা জিয়া এবার ব্রিটেন ও আমেরিকা সফরে এসে যেসব কথা বলছেন, তার মুখ্য কথাই তো মনে হতে পারে বিদেশিদের কাছে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের পতিত প্রধান ড. ইউনূস যাতে চাকরি ফেরত পান সে জন্য বিদেশিদের কাছে দেনদরবার করা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে চাকরি রক্ষার আবেদন জানিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ড. ইউনূস এখন অনেকের মতে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিদেশি শক্তির চাপে দেশের সরকার যাতে তাকে চাকরি ফেরত দেয় তার তদবিরে।
লন্ডনে এসে তিনি লেবার পার্টির এক নেতার সঙ্গে দেখা করেও তারা যাতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, তার তদবির করেছেন বলে জানা যায়। তার এই তদবিরে সহায়তা জোগাচ্ছেন বিদেশের মাটিতে এসে খালেদা জিয়াও। একজন হলেন রাজনৈতিক নেতা এবং অন্যজন বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়ী। দু'জনের মধ্যেই দেশপ্রেমের কী অপূর্ব পরাকাষ্ঠা! অনেকের মতে, এছাড়াও খালেদা জিয়ার মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিশ্বভ্রমণে বের হওয়ার পেছনে 'না বলা কথার ঘন যামিনীর মাঝে' একটি কথা ও উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটিই আসল কথা ও আসল উদ্দেশ্য। সে কথায় পরে আসছি।
বাংলাদেশে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করার মতো ইস্যুর অন্ত নেই। শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদি সেক্টরে আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় সাফল্য দেখালেও শহরাঞ্চলের মানুষের আশু এবং মৌলিক কিছু সমস্যা ও সংকট দূর করার ব্যাপারে সরকার গত আড়াই বছরেও আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারেনি। ফলে জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে এবং বিভিন্ন নির্বাচনে প্রোটেস্ট ভোটের বিপুল সংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ইস্যুতে বিএনপি বড়োসড়ো আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তারা যে পারছে না তার বড় কারণ আগেই বলেছি, বিএনপি আন্দোলন করার দল নয়। যে দল সবসময় নেপথ্য শক্তির সাহায্য ও সমর্থনে ক্ষমতায় যেতে এবং থাকতে চায়, তাদের গণআন্দোলন করার অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য এবং ইচ্ছাও থাকে না। বিএনপির বেলায় এখন তাই ঘটেছে।
এই দেখি-বিদেশি নেপথ্য শক্তির সাহায্য ও সমর্থন সংগ্রহ করে আবার দ্রুত ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যেই খালেদা জিয়ার এবারের এই বিদেশ সফর। গত নির্বাচনের পর আড়াই বছরের বেশি কেটে গেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আরও আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হলে নির্বাচনে দলের জয় সম্পর্কে নেতা-নেত্রীরা নিশ্চিত নন। আওয়ামী লীগ সরকার সামনের বছরগুলোতে তাদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সত্য সত্যই শুরু হলে বাংলাদেশে জামায়াতের শক্তি ও সমর্থন সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে। তখন কাদের বা কিসের ভরসায় নির্বাচনে নেমে বিএনপি জয়লাভের আশা করবে? আর এখন যদি বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে বা অন্য যে কোনো উপায়ে দ্রুত ক্ষমতায় যেতে না পারে, তাহলে মুসলিম লীগের মতো তার অস্তিত্ব এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিলুপ্ত হবে। এখন দ্রুত ক্ষমতা দখল করতে না পারলে বিএনপি নেত্রী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি ঠেকাতে পারবেন না। তার দুই সুপুত্রকে ক্ষমতায় বসানো দূরের কথা, গুরুতর দুর্নীতির মামলা থেকেও বাঁচাতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, বিএনপির একমাত্র শক্তির ঘাঁটি (চড়বিৎনধংব) সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাসের রাজনীতি ধ্বংস হবে।
খালেদা জিয়া জানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ব্যাপারে দেশবাসীর আশা পূরণে ব্যর্থ হলে কয়েকটি বড় এবং অসম্ভব কাজ সম্ভব করেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসের তুলনা নেই।
এবার ক্ষমতায় বসেই শেখ হাসিনা কর্তৃক ভয়াবহ বিডিআর বিদ্রোহের একাকী মোকাবেলা এবং বিনা রক্তপাতে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার সাহস ও সাফল্যের নজির নেই বললেই চলে। কে ভেবেছিল, বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পালিত এবং দণ্ড এড়িয়ে চলা বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার শেষ করা ও দণ্ড দেওয়া সম্ভব হবে? শেখ হাসিনা তাও সম্ভব করেছেন। ক্যান্টনমেন্টের বাসায় অবৈধভাবে বাস করে সামরিক হেডকোয়ার্টারকে দলীয় রাজনীতির হেডকোয়ার্টার করে রাখার যে খেলা চালাচ্ছিলেন খালেদা জিয়া, তা এতকাল পর বন্ধ করা এবং তাকে ওই বাসা ত্যাগে বাধ্য করে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করা যাবে, এটাই-বা কারা সম্ভব বলে ভেবেছিলেন? হাসিনা শক্ত হাতে সেটাও সম্ভব করেছেন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদাদের গ্রেফতারের আগে অনেককেই বলতে শুনেছি, এটা অসম্ভব কাজ। জামায়াত নেতাদের গায়ে হাত দিলে দেশে আগুন জ্বলবে। শেখ হাসিনাও গ্রেনেড হামলার চেয়েও ভয়াবহ হামলার সম্মুখীন হবেন। হাসিনা কোনো হুমকি-ধমকি এবং হামলার ভয়ে পিছিয়ে যাননি। নিজামী-সাঈদীরা এখন কারাগারে। তাতে দেশে একটি গাছের পাতাও নড়েনি। বিএনপি নেত্রীকে তাই মাঠে নামতে হয়েছে। তারা প্রচার চালাচ্ছেন বটে, গ্রেফতার করা হলেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করা হাসিনা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তারা মনে মনে জানেন, হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার ও দণ্ডদান কার্যকরী হওয়ার ব্যাপারে ধৈর্য ধরেছেন, সময় নিয়েছেন, কিন্তু পিছিয়ে যাননি; তেমনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান কার্যকর করার ব্যাপারেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাধার মুখে ধৈর্য ধরবেন, সময় নেবেন, কিন্তু পিছিয়ে যাবেন না।
ড. ইউনূসের অন্যায়ভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তটি বাতিল করার ব্যাপারেও ড. ইউনূসের অসম্ভব শক্তিশালী মার্কিনি ও অন্যান্য পশ্চিমা বন্ধুদের প্রচণ্ড চাপের কাছে শেখ হাসিনা কি নতজানু হয়েছেন? ইউনূস সমর্থক ভদ্রজনেরা এবং মিডিয়া তো এই প্রচারে বাজার গরম করে ফেলেছিল যে, সুপার পাওয়ার আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট এবং ক্লিনটন পরিবারের বন্ধু ড. ইউনূস অপরাজেয় মানুষ। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাকে সরাতে গেলে হাসিনাকেই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। এই প্রচার ও চাপের মুখেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ধৈর্য ধরেছেন, সময় নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বীরবাহু ড. ইউনূসকেই গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়তে হয়েছে। হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরেননি। পতিত ব্যাংকার এখনও আশা ছাড়েননি। বিদেশের মাটিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। দেখা যাক না, বিদেশি মুরবি্বরা তাকে রক্ষা করেন কি-না?
বিদেশে এসে খালেদা জিয়া যে দেশের বড় সমস্যাগুলো রেখে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিটি নিয়ে কথাবার্তা বলাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তার মূল কারণ এখানেই। ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক তিনি এখনই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি এহ বাহ্য। ওটা ধুয়া। আসল কথা এখনই ক্ষমতা চাই। তার ভাষায়, 'আর একদিনও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না।' আর এই কাজে দেশে জনসমর্থন নেই জেনে তিনি বিদেশি সমর্থন চান। এ ব্যাপারে তার এবং ড. ইউনূসের লক্ষ্য ও বিদেশের তৎপরতা অভিন্ন। সে জন্য ইউনূস সাহেবের কেসেরও উকিল সেজেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি নেত্রী হয়তো আশা করেন, এখনই মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে হয় ভোটদাতাদের প্রোটেস্ট ভোটে অথবা আগেরবারের ব্যর্থ ইলেকশন ম্যাকানিজমকে এবার সফল করে তিনি ক্ষমতায় যাবেন। একমাত্র ক্ষমতায় গেলেই তিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড ঠেকাতে পারবেন। যেমন দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার ও দণ্ড ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। চাই কি, এবার ক্ষমতায় যেতে পারলে যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদাদের আবার মন্ত্রিত্বের গদিতে বসাবেন। দুই পুত্রকে গুরুতর দুর্নীতির মামলা থেকে সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগে মুক্ত করে এবার সরাসরি ক্ষমতার চূড়ায় বসাতে পারবেন। তারা আরও শক্তিশালী নতুন হাওয়া ভবন গড়ে তুলবেন। ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বৈধ বলে রায় দিলেও তাকে আবার ওই পদে পুনর্বাসন করা যাবে। হয়তো ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটিও পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। কেউ কেউ আশঙ্কা করেন, খালেদা-তারেক ক্ষমতায় ফিরতে পারলে মইন-ফখরুদ্দীন থেকে শুরু করে সামরিক ও অসামরিক অনেক সাবেক কর্তা ব্যক্তির ওপর এমন ভয়াবহভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হবে যে, তার কোনো দ্বিতীয় নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিটি তাই বাহ্য। আসল লক্ষ্য, অবিলম্বে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বর্তমান উদ্যোগ ব্যর্থ করার জন্য বিদেশেও যে প্রোপাগান্ডা ওয়ার শুরু করা হয়েছে, তাকে সাহায্য জোগানো। একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক খালেদা জিয়ার মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির কথা শুনে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, যে নেত্রী ক্ষমতায় না গেলে নির্বাচিত হয়েও সংসদে যান না এবং গণতান্ত্রিক রীতি মেনে বিরোধী দলের ভূমিকা গ্রহণ করতে চান না, তিনি দেশবাসীর কাছে ভোট চান কোন মুখে এবং নির্বাচন দাবি করেন কোন যুক্তিতে? দেশের মানুষ তার কাছে কেন জিজ্ঞাসা করে না, সংসদে না গিয়ে কেবল বেতন-ভাতা খাওয়ার জন্য কি আপনাকে ভোট দেব?
লন্ডন, ২৭ মে ২০১১, শুক্রবার
 

No comments

Powered by Blogger.