আবার বাঘ হত্যা!
সুন্দরবন আর বাঘের জন্য নিরাপদ নয়। মানুষই এখন বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রু। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাংলাবাজার গ্রাম থেকে গত বুধবার তিনটি বাঘের চামড়া, চারটি মাথা ও ৩১ কেজি হাড় উদ্ধারের পর সংগত কারণেই অনুমান করা যায়, সুন্দরবন এখন আর বাঘের জন্য নিরাপদ নয়; যদিও ওরিঙ্ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে
প্রকাশিত বাংলাদেশের বন বিভাগ ও মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ জরিপের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ বাঘের বসবাসের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। সেই নিরাপদ আবাসের এই কী নমুনা! শুধু বাঘ নয়, কোনো বন্য প্রাণীই এখানে নিরাপদ নয়। কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় বন বিভাগের কর্মীরা জামাল ফকির নামে এক চোরাশিকারিকে আটক করেছে। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, বিষ প্রয়োগে বাঘ তিনটি হত্যা করা হয়। একটি বাঘের মাথা পাওয়া যায় কুড়িয়ে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চোরাশিকারিরা এভাবেই বাঘ মেরে ফেলছে। জামাল ফকিরের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ দল জামাল ফকিরের মতো অনেককেই ভাড়া করে। এদের দিয়েই প্রাণী নিধন করে। জামাল ফকির এর আগেও বাঘ হত্যা করেছে। হরিণ শিকার হচ্ছে অবাধে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলোয় প্রায় প্রকাশ্যেই হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাঘের খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে। এটা সবারই জানা, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দল সক্রিয়। সুন্দরবনের গাছ কাটা থেকে শুরু করে বন্য প্রাণী শিকার করছে এ সংঘবদ্ধ দলগুলো। বাংলাদেশের বন বিভাগ এদের কাছে অনেকটাই অসহায়। এ চক্রগুলোকে মোকাবিলা করার মতো আধুনিক অস্ত্র বাংলাদেশের বন বিভাগের নেই। আবার অপ্রিয় হলেও সত্য, অনেক ক্ষেত্রে বন বিভাগের কর্মীরা এই চোরাকারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করেই চলে। ফলে বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের যে দায়িত্ব বন বিভাগের ওপর ন্যস্ত, তা পালিত হচ্ছে কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। সুন্দরবনের বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি বিভাগের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি এখন বোধ হয় বলার সময় এসেছে। বন বিভাগ বনের প্রাণীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি বিভাগ থাকলে সেই বিভাগ প্রতিবছর শুমারি করে বন্য প্রাণীর সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারত। অন্যদিকে সুন্দরবনের পরিবেশও এখন আর বন্য প্রাণীদের জন্য নিরাপদ নয়। ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। একদিকে ব্যবসায়ী, বাওয়ালি, মৌয়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে বসতি স্থাপন করে সংকুচিত করে ফেলা হচ্ছে সুন্দরবন। এতে বনের প্রাণীর আবাসস্থল ছোট হয়ে আসছে। সংকুচিত হচ্ছে এদের বিচরণের জায়গা। আমাদের মনে রাখা দরকার, শুধু বন বিস্তৃত হলেই সেটা বন্য প্রাণীদের জন্য নিরাপদ আবাস হয় না। বনকে বন্য প্রাণীর বসবাসের উপযুক্ত করতে আরো অনেক শর্ত পূরণ হওয়া দরকার। বনকে বন্য প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বিদেশে কেমন করে বনে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়, সেটা আমাদের দেখা উচিত। নিদেনপক্ষে প্রতিবেশী ভারতের সুন্দরবন অংশে কেমন করে বাঘ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সে উদাহরণ থেকেও শিক্ষা নিতে পারি আমরা। বাঘ হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। বন বন্য প্রাণীর বসবাসের উপযোগী হোক।
No comments