কী অপরাধ করেছে লিমন! by মীর্জা সাকিব
ঝালকাঠির কিশোর লিমনের কথা এক প্রকার ভুলতেই বসেছিলাম আমরা। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, র্যাবের গুলিতে একটি পা খোয়ানোর পর লিমন এক পা নিয়েই মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারবে। তার বিরুদ্ধে করা মামলা যে ভুল ছিল সেটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরাও এক প্রকার স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
মানুষ ধারণা করেছিল, এরপর লিমনের পঙ্গুত্ব বরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু উল্টো লিমনকে নতুন মামলা দিয়ে হয়রানির ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, লিমনের মতো নিরপরাধ কিশোরের বিরুদ্ধে যদি সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র পাকাতে থাকে, তাহলে কোনো সাধারণ মানুষ কি নির্ভয়ে বসবাস করতে পারবে? কী অপরাধ ছিল লিমনের? কার শাস্তি কে ভোগ করছে_ বলে একটা হতাশাজনক উক্তি আমাদের সমাজে চালু আছে। লিমনের অবস্থাও হয়েছে তাই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবিমৃষ্যকারিতা ও অপরাধের ফল লিমনকেই ভোগ করতে হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার এই কিশোরটিকে অপরাধী সাব্যস্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে আছেন এবং যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তারা কি এই মামলার জন্য জনগণের মধ্যে তাদের সম্পর্কে, সরকার সম্পর্কে, সর্বোপরি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কের মধ্যে কী নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে, সে সম্পর্কে আঁচ করতে পারছেন? অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না_ এ উক্তিটি তাদের জানা থাকার কথা। লিমনের ঘটনা দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ জানেন। এখন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? লিমনকে নিয়ে সরকারের এহেন আচরণ, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজের মতো ঘটনাগুলো সম্পর্কে সরকারের অবস্থান নিয়ে জনমনে সন্দেহ আরও ঘনীভূত করবে। মানুষ তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। এই আস্থাহীনতার মানসিকতা দেশে অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। সংসদীয় গণতন্ত্রে যেখানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট সরকারের পক্ষে জনমতের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সরকার চালানো ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ভরাডুবিকে আগাম মেনে নেওয়ার শামিল। মহাজোট সরকার কি এই সত্যটি বুঝতে পারছে না!
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কিশোর লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রাষ্ট্র এরই মধ্যে তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটা যথেষ্ট হয়েছে। সরকারের এ আচরণ যে বিদ্বেষপূর্ণ সেটা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের চোখও এড়িয়ে যায়নি। অথচ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল এ সত্যটা। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের হেফাজত করা; কিন্তু লিমনের ক্ষেত্রে এর উল্টোটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিশোর লিমন সরকারের বিরুদ্ধে তো যুদ্ধ ঘোষণা করেনি_ যে তাকে নিয়ে এতটা টানাহেঁচড়া করতে হবে। সরকার লিমনের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিজের সম্মানই শুধু নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তারা যে আন্তরিক সেটা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। সরকারের দায়িত্ব 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন'। এর অন্যথা মানুষ দেখতে চায় না, তারা সেটা মেনেও নেবে না।
মীর্জা সাকিব : শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কিশোর লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রাষ্ট্র এরই মধ্যে তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটা যথেষ্ট হয়েছে। সরকারের এ আচরণ যে বিদ্বেষপূর্ণ সেটা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের চোখও এড়িয়ে যায়নি। অথচ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল এ সত্যটা। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের হেফাজত করা; কিন্তু লিমনের ক্ষেত্রে এর উল্টোটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিশোর লিমন সরকারের বিরুদ্ধে তো যুদ্ধ ঘোষণা করেনি_ যে তাকে নিয়ে এতটা টানাহেঁচড়া করতে হবে। সরকার লিমনের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিজের সম্মানই শুধু নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তারা যে আন্তরিক সেটা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। সরকারের দায়িত্ব 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন'। এর অন্যথা মানুষ দেখতে চায় না, তারা সেটা মেনেও নেবে না।
মীর্জা সাকিব : শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments