পাহাড়ি জনপদে শিক্ষা বিপর্যয় by আমানুল্লাহ নোমান
পাহড়ি জনপদ দুর্গম। দুর্গম এ জনপদে নেই মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা। মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত এ জনপদের অধিবাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামখ্যাত বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি_ এ তিন জেলায় এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলে হয়েছে ব্যাপক বিপর্যয়।
আনুপাতিক হারে এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বাড়লেও বাড়েনি এ তিন জেলায়। উল্টো আরও কমেছে। এ তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা খাগড়াছড়ির। এ জেলায় পাসের হার ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। রাঙামাটি জেলায়ও গত বছরের চেয়ে এ বছর পাসের হার কমেছে। গত বছরও রাঙামটিতে পাসের হার ছিল ৭০ শতাংশ, তার বিপরীতে এ বছর এ জেলায় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বান্দরবানে এ বছর পাসের হার ৬৬ শতাংশ। এ বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষার অভাব। পাহাড়ি এ তিন জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একেবারেই নাজুক। শিক্ষক সংকট চরমে। একে তো শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষার অভাব, সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা চরম সংকটে। সরকারি কিংবা বেসরকারি স্কুল বলে কোনো কথা নেই, সর্বত্রই রয়েছে শিক্ষক সংকট। বছরের পর বছর এ অঞ্চলগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকায় তার প্রভাব পড়ছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবনে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর দেখা দিচ্ছে ফল বিপর্যয়।
প্রায় সব স্কুল পরিচালিত হচ্ছে সীমিতসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে। সীমিতসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে একটা স্কুল ভালোভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় শিক্ষক চাহিদা মেটানোর বিকল্প নেই। কিন্তু পাহাড়ি এ অঞ্চলগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিকল্প এ পদ্ধতি কখনও আলোর মুখ দেখছে না। পার্বত্যাঞ্চলগুলোতে শিক্ষকদের শিক্ষকতা করতে আগ্রহ বাড়াতে নির্ধারিত বেতন স্কেলের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, পার্বত্যাঞ্চলগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিক করা প্রয়োজন। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত আধুনিক হবে, এ অঞ্চলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ তত বাড়বে।
শিক্ষা মানুষের মধ্যে এনে দেয় সচেতনতা। তাই পাহাড়ি জনপদের অধিবাসীদের শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একটা গোষ্ঠীকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই তাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে গভীর নজর দিতে হবে। কোথায় কোন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, তা খুঁজে বের করে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এত দিন অবহেলায় পড়ে থাকা জনশক্তি দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। পাহাড়ি জনপদের শিক্ষার উন্নয়নে অতিদ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে_ সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রইল।
No comments