রাজনীতি-ঘরের কাজিয়া পরের দেশে!
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা সংক্ষিপ্ত হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বিস্তৃত তাৎপর্য বহন করে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে অ্যামচেমের (আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ) আলোচনা সভায় তিনি
বলেছেন, সংঘাতময় রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিভিন্ন ধনী দেশের হোটেল ও বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ সামান্যই। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দু'জনেই বর্তমানে বিদেশ সফরে থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তাদের বক্তব্য প্রায় প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ইস্যুতে তারা বিদেশের মাটিতে বসে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের এক সভায় বাংলাদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ে দেশটির সহযোগিতা কামনা করেছেন, তা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, অবাস্তবও বটে। যে কারণে ওই অনুষ্ঠানের হোস্ট কনজারভেটিভ দলীয় এমপি আন মেইন সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি সম্পর্কে করণীয় ক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতা জানিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলকে ঐকমত্যে আসতে হবে। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও অ্যামচেমের সভায় আন মেইনের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলছেন, রাজনৈতিক সংকট কাটাতে দেশের ভেতর থেকেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, এরপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দেশের বাইরে খোঁজা থেকে রাজনীতিকরা বিরত থাকবেন। নিজের দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার এ সংস্কৃতি যদিও নতুন নয়, আমরা এর অবসান চাই। এ ধরনের আলোচনা ও বিতর্কের জন্য সংসদই হচ্ছে সর্বোত্তম স্থান। সরকারি ও বিরোধী দল সচেষ্ট হলে সংসদেই সব সংকটের সমাধান সম্ভব।
No comments