অটোরিক্সা ধর্মঘটের প্রথম দিনে নগরজুড়ে দুর্ভোগ-১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে শ্রমিক ইউনিয়ন

দশ দফা দাবিতে রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অটোরিক্সা ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নসহ একাধিক সংগঠন। বুধবার ধর্মঘটের প্রথম দিনে নগরীতে প্রায় ১৩ হাজার অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ ছিল।


এ কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রিক্সায় দ্বিগুণ কোন কোন ক্ষেত্রে তিন গুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। পরিবহন সঙ্কটের কারণে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ বলছেন, দাবি না মানলে লাগাতার ধর্মঘট চলবে। ইউনিয়ন নেতাদের অভিযোগ, মালিক পক্ষ অটোরিক্সা ভাংচুর করে বুধবার বাড্ডা থানায় ৩৬০ জন শ্রমিককে আসামি করে মামলা করেছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত শনিবার মালিকদের একচেটিয়া ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বৈধ চালকদের বিআরটিএ কর্তৃক পাঁচ হাজার অটোরিক্সা বিতরণসহ ১০ দফা দাবিতে অটোরিক্সা ধর্মঘট আহ্বান করে ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। এর আগে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিএনজি অটোরিক্সার জমা ও ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ ও ১২ জুলাই ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি।
ধর্মঘট আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে মালিক পক্ষের বিভিন্ন দাবি দাওয়া দুই মাসের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলে আহূত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু শ্রমিক পক্ষের দাবি দাওয়া পূরণে যৌক্তিক আশ্বাস না পাওয়ায় ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন ইউনিয়নের নেতারা।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম খসরু জনকণ্ঠকে জানান, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিক ইঊনিয়নের নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা বললেও পরবর্তিতে তারা তা অব্যাহত রাখে। মালিক সমিতির বিভিন্ন দাবি দাওয়া দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে গ্রহণযোগ্য পরামর্শ দেয়ায় আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি। এই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আবারও ধর্মঘট আহ্বান করা হবে।
ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুবুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, মালিকদের পক্ষের এজেন্ট হয়ে কাজ করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। বুধবারের বৈঠকে আমরা অটোরিক্সা নিয়ে সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানাই। কিন্তু বিআরটিএ চেয়ারম্যান সরাসরি বলেছেন, সরকারী সিদ্ধান্ত আগামী দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর ফলে আরও দুই মাস মালিক পক্ষ আমাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ৬০০ টাকার স্থলে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত অটোরিক্সার জমা নিতে পারবে। এই অনিয়ম আর চলতে পারে না। তাই আমরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার ধর্মঘট চলবে।
শ্রমিকদের সমাবেশ ॥ দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত অটোরিক্সা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের এক যৌথ সমাবেশ থেকে তাঁরা এ ঘোষণা দেন।
পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করাসহ দশ দফা দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে ঢাকার অটোরিক্সা চালকরা। এরই সমর্থনে সকালে প্রেসক্লাবের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।
জাকির হোসেন বলেন, দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে। প্রয়োজনে আমরা প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করব। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪০ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
দশ দফা দাবিগুলোর মধ্যে আছে, নতুন ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া, অতিরিক্ত জমা আদায়কারী মালিকদের গ্যারেজে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, পুলিশী হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা, শহরের বিভিন্ন স্থানে অটোরিক্সা পার্কিং জোন স্থাপন, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নকালে পুর্নপরীক্ষার বিষয়টি বন্ধ করা, প্রাইভেট অটোরিক্সা ভাড়ায় চালানো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া ইত্যাদি।
নগরজুড়ে দুর্ভোগ ॥ অটোরিক্সা বন্ধ থাকার কারণে নগরজুড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য সমস্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ সরকারের যে কারণেই হোক আগে থেকেই সমস্যার সমাধান করা উচিত ছিল। মধ্যবিত্তের প্রাইভেট কার হিসেবে পরিচিত অটোরিক্সা যে কতটা জরুরী বুধবার প্রথম দিনের ধর্মঘটে তা প্রমাণিত হয়েছে।
অটোরিক্সা ধর্মঘটের কারণে মিশুকসহ ট্যাক্সিক্যাব চলাচল কম দেখা গেছে। চালকরা জানিয়েছেন, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের ভয়ে অনেকে গাড়ি বের করতে সাহস পাননি। তবে ঢাকা জেলা অটোরিক্সা, অটোটেম্পো-মিশুক যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘটের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের ধর্মঘটের সঙ্গে তারা যুক্ত নয় এ সম্পর্কিত একটি বিবৃতিও দেয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালসহ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে একটিও অটোরিক্সা চোখে পড়েনি। অফিস ছুটির পর গুলিস্তান, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, মহাখালী, বনানী, গুলশান, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ধানম-ি, সায়েন্সল্যাব, কাকরাইল, পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাদুরঝোলা হয়ে বাসে চড়েছেন অনেকে।

No comments

Powered by Blogger.