ইতিউতি-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে by আতাউস সামাদ
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দাম অতি তাড়াতাড়ি খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ নতুন করে হতদরিদ্র হয়ে গেছে। মাত্র চার দিন আগে (১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১১) বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, তাদের হিসাবে সারা বিশ্বে চার কোটি ৪০ লাখ লোক গত বছরের জুন থেকে এবারের জানুয়ারির মধ্যে হতদরিদ্র (extreme poor) শ্রেণীতে নেমে গেছে শুধু খাদ্যে
মাত্রাতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি হওয়ার দরুন। (সূত্র : ব্লুমবার্গ অনলাইন সংবাদ সংস্থা)। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বলেছেন, 'খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি বহু লাখ লোককে (millions of people) দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে এবং যাঁরা নাজুক অবস্থায় আছেন (vulnerable group) তাদের ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করছে।' জোয়েলিক আশা করছেন, এ অবস্থায় কোনো দেশ নতুন করে খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না বা খাদ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক হার বাড়িয়ে দেবে না। তিনি বলেছেন, যেসব দেশের হাতে অন্য দেশের কাছে বিক্রি করার মতো খাদ্যশস্য মজুদ আছে, তারা কোনো বাণিজ্য-বাধা সৃষ্টি করলে তা অভাবী দেশগুলোর জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করবে।
এখানে উল্লেখ করা যায়, বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠিতে যাঁরা দিনে গড়ে ১ দশমিক ২৫ ডলারের কম আয় দিয়ে দিনাতিপাত করছেন তাঁরাই হতদরিদ্র। লাগামহীন মূল্যস্ফীতির ফলে সম্প্রতি কয়েক কোটি লোকের ব্যয় ও আয় দৈনিক ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশে চাল, চিনি, ভোজ্য তেল ও আটার দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় তথ্যাভিজ্ঞ মহলে এ সন্দেহ দেখা দিয়েছিল যে এ দেশে নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। কেউ কেউ হিসাব করেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে আয় বৃদ্ধি না হওয়ার দরুন বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে বলে ধরা হতো। অতি সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরে শ্রমিক ও রিকশাচালকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে তাঁদের মধ্যে দারিদ্র্য বাড়ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে_এমন কথা শুনেছি। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মুখ থেকে আজকাল প্রায়ই শুনি, চেনাশোনা মানুষের মধ্য থেকে আর্থিক সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
গত বুধবার বিবিসি টেলিভিশনে বিশ্বব্যাংকের তিন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের একজন, মাদাম এনগোজি ওকোনজো-আইউইয়ালার সাক্ষাৎকার দেখলাম। বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি ও দারিদ্র্য সম্পর্কেই তাঁকে প্রশ্ন করেন বিবিসির সাংবাদিক। খাদ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দরুন এশিয়ায় যেসব দেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে, সেগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি উদাহরণস্বরূপ প্রথমেই কাজাখস্তান ও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করলেন। অবশ্য জাতিসংঘের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে তাঁদের আশঙ্কা খাদ্যমূল্য, বেকারত্ব ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের পীড়নে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার আরো কিছু দেশে বিক্ষোভ, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তবে এর মধ্যেও দুটি আশার দিক রয়েছে। তার একটি হলো, বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সূচক এখনো ২০০৮-এর মূল্যস্ফীতির চেয়ে কিছুটা কম দেখাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির হার গমের মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। আর বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক এ-ও উল্লেখ করেছে, এ পর্যন্ত কোনো চাল রপ্তানিকারক দেশ বিদেশে চাল বিক্রির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অদূর ভবিষ্যতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা দেখছেন না। এদিকে বিশ্বব্যাংক এ-ও জেনেছে, কয়েকটি আফ্রিকান দেশে চাল উদ্বৃত্ত আছে। তবে সমস্যা হলো, সবাই বাজারের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। এ প্রসঙ্গে প্রারম্ভিক দুর্যোগের দরুন রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় গম ফসল মার খাওয়ার পর উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোও সামনের কয়েকটা মাসের আবহাওয়া কেমন হয় তা পর্যবেক্ষণ করবে। যেমন, চীনে বেশি গম উৎপাদিত হয় যে এলাকায়, সেখানে এখনো খরা চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতিজনিত সংকট কাটাতে কী করা উচিত, সেই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাদাম এনগোজি বিবিসিকে বলেন, প্রথমত, খোঁজখবর নিয়ে জানতে হবে কোন দেশের হাতে কতটা খাদ্য মজুদ আছে। দ্বিতীয়ত, যেসব দেশের কাছে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় বাড়তি খাদ্য আছে, দেখতে হবে তারা যেন খাদ্য রপ্তানি করতে রাজি থাকে অর্থাৎ ঘাটতির দেশগুলো খাদ্যশস্য কিনতে চাইলে উদ্বৃত্ত মজুদের অধিকারী দেশগুলো যেন বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ না করে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। তৃতীয়ত, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি দেশকে জোর উদ্যোগ নিতে হবে। চতুর্থত, হতদরিদ্র ও ক্ষুধার ঝুঁকিতে পড়ার মতো জনগোষ্ঠীকে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার মোটামুটি মাদাম এনগোজি যে পরামর্শ দিয়েছেন সেই পথেই রয়েছে। সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং খাদ্যমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এ বিষয়ে ফলাফল মোটামুটি আশাব্যঞ্জক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, দেশে প্রতি ইঞ্চি চাষযোগ্য জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের পল্লীবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে খুশি হয়ে সাড়া দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে দুটি দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তার একটি হলো, নগর গড়া তথা সরকারি-বেসরকারি আবাসন প্রকল্প এবং চকচকে উন্নয়ন প্রকল্প (যেমন_নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা অব্যবহার্য শিল্পনগরী) যেন ফসলের জমি গ্রাস না করে। রূপগঞ্জে সারি সারি বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের বিলবোর্ড দেখে তো মনে হয় না, আমাদের আবাদি জমি নিরাপদ আছে। দ্বিতীয়টি হলো, কোনো খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা যেন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন। যেমন_এ মুহূর্তে দেশের উত্তরাঞ্চলের আলুচাষিরা তাঁদের বাম্পার ফলন নিয়ে মহাবিপদে পড়ে গেছেন। কারণ সেখানে আলুর দাম পড়তে পড়তে দুই-তিন টাকা কেজিতে ঠেকেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রাইস সাপোর্ট ও ভর্তুকি ছাড়াও বিকল্প আরো কিছু পথ আছে কি না তা চিন্তা করা দরকার। যেমন_উদ্বৃত্ত আলু যদি অদূর ভবিষ্যতে রপ্তানি করার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে হয়তো কৃষক পর্যায়ে এর দাম এখনই কিছুটা বাড়ত। এ কথা অনস্বীকার্য যে কৃষিনীতি নির্ধারণ করা খুবই জটিল কাজ; কিন্তু বাংলাদেশকে এ নিয়ে নিরন্তর চিন্তাভাবনা করে যেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ-ও বলেছেন, খাদ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনে উন্নয়ন কর্মসূচি স্থগিত রেখে সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য আমদানি করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য বড় সমস্যা হলো, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসংস্থান করে ও ব্যবসা-বাণিজ্য সৃষ্টি করে। উন্নয়ন কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে এবং দরিদ্রের সংখ্যা আরো বাড়বে। এমনিতেই তো যারা ইতিমধ্যে গরিব হয়ে গেছেন, তাঁরা কবে যে আবার সচ্ছল হবেন তার ঠিক নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
এখানে উল্লেখ করা যায়, বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠিতে যাঁরা দিনে গড়ে ১ দশমিক ২৫ ডলারের কম আয় দিয়ে দিনাতিপাত করছেন তাঁরাই হতদরিদ্র। লাগামহীন মূল্যস্ফীতির ফলে সম্প্রতি কয়েক কোটি লোকের ব্যয় ও আয় দৈনিক ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশে চাল, চিনি, ভোজ্য তেল ও আটার দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় তথ্যাভিজ্ঞ মহলে এ সন্দেহ দেখা দিয়েছিল যে এ দেশে নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। কেউ কেউ হিসাব করেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে আয় বৃদ্ধি না হওয়ার দরুন বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে বলে ধরা হতো। অতি সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরে শ্রমিক ও রিকশাচালকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে তাঁদের মধ্যে দারিদ্র্য বাড়ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে_এমন কথা শুনেছি। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মুখ থেকে আজকাল প্রায়ই শুনি, চেনাশোনা মানুষের মধ্য থেকে আর্থিক সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
গত বুধবার বিবিসি টেলিভিশনে বিশ্বব্যাংকের তিন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের একজন, মাদাম এনগোজি ওকোনজো-আইউইয়ালার সাক্ষাৎকার দেখলাম। বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি ও দারিদ্র্য সম্পর্কেই তাঁকে প্রশ্ন করেন বিবিসির সাংবাদিক। খাদ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দরুন এশিয়ায় যেসব দেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে, সেগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি উদাহরণস্বরূপ প্রথমেই কাজাখস্তান ও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করলেন। অবশ্য জাতিসংঘের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে তাঁদের আশঙ্কা খাদ্যমূল্য, বেকারত্ব ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের পীড়নে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার আরো কিছু দেশে বিক্ষোভ, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তবে এর মধ্যেও দুটি আশার দিক রয়েছে। তার একটি হলো, বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সূচক এখনো ২০০৮-এর মূল্যস্ফীতির চেয়ে কিছুটা কম দেখাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির হার গমের মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। আর বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক এ-ও উল্লেখ করেছে, এ পর্যন্ত কোনো চাল রপ্তানিকারক দেশ বিদেশে চাল বিক্রির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অদূর ভবিষ্যতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা দেখছেন না। এদিকে বিশ্বব্যাংক এ-ও জেনেছে, কয়েকটি আফ্রিকান দেশে চাল উদ্বৃত্ত আছে। তবে সমস্যা হলো, সবাই বাজারের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। এ প্রসঙ্গে প্রারম্ভিক দুর্যোগের দরুন রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় গম ফসল মার খাওয়ার পর উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোও সামনের কয়েকটা মাসের আবহাওয়া কেমন হয় তা পর্যবেক্ষণ করবে। যেমন, চীনে বেশি গম উৎপাদিত হয় যে এলাকায়, সেখানে এখনো খরা চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতিজনিত সংকট কাটাতে কী করা উচিত, সেই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাদাম এনগোজি বিবিসিকে বলেন, প্রথমত, খোঁজখবর নিয়ে জানতে হবে কোন দেশের হাতে কতটা খাদ্য মজুদ আছে। দ্বিতীয়ত, যেসব দেশের কাছে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় বাড়তি খাদ্য আছে, দেখতে হবে তারা যেন খাদ্য রপ্তানি করতে রাজি থাকে অর্থাৎ ঘাটতির দেশগুলো খাদ্যশস্য কিনতে চাইলে উদ্বৃত্ত মজুদের অধিকারী দেশগুলো যেন বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ না করে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। তৃতীয়ত, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি দেশকে জোর উদ্যোগ নিতে হবে। চতুর্থত, হতদরিদ্র ও ক্ষুধার ঝুঁকিতে পড়ার মতো জনগোষ্ঠীকে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার মোটামুটি মাদাম এনগোজি যে পরামর্শ দিয়েছেন সেই পথেই রয়েছে। সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং খাদ্যমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এ বিষয়ে ফলাফল মোটামুটি আশাব্যঞ্জক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, দেশে প্রতি ইঞ্চি চাষযোগ্য জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের পল্লীবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে খুশি হয়ে সাড়া দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে দুটি দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তার একটি হলো, নগর গড়া তথা সরকারি-বেসরকারি আবাসন প্রকল্প এবং চকচকে উন্নয়ন প্রকল্প (যেমন_নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা অব্যবহার্য শিল্পনগরী) যেন ফসলের জমি গ্রাস না করে। রূপগঞ্জে সারি সারি বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের বিলবোর্ড দেখে তো মনে হয় না, আমাদের আবাদি জমি নিরাপদ আছে। দ্বিতীয়টি হলো, কোনো খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা যেন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন। যেমন_এ মুহূর্তে দেশের উত্তরাঞ্চলের আলুচাষিরা তাঁদের বাম্পার ফলন নিয়ে মহাবিপদে পড়ে গেছেন। কারণ সেখানে আলুর দাম পড়তে পড়তে দুই-তিন টাকা কেজিতে ঠেকেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রাইস সাপোর্ট ও ভর্তুকি ছাড়াও বিকল্প আরো কিছু পথ আছে কি না তা চিন্তা করা দরকার। যেমন_উদ্বৃত্ত আলু যদি অদূর ভবিষ্যতে রপ্তানি করার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে হয়তো কৃষক পর্যায়ে এর দাম এখনই কিছুটা বাড়ত। এ কথা অনস্বীকার্য যে কৃষিনীতি নির্ধারণ করা খুবই জটিল কাজ; কিন্তু বাংলাদেশকে এ নিয়ে নিরন্তর চিন্তাভাবনা করে যেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ-ও বলেছেন, খাদ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনে উন্নয়ন কর্মসূচি স্থগিত রেখে সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য আমদানি করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য বড় সমস্যা হলো, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসংস্থান করে ও ব্যবসা-বাণিজ্য সৃষ্টি করে। উন্নয়ন কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে এবং দরিদ্রের সংখ্যা আরো বাড়বে। এমনিতেই তো যারা ইতিমধ্যে গরিব হয়ে গেছেন, তাঁরা কবে যে আবার সচ্ছল হবেন তার ঠিক নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments