দাম নিয়ে শঙ্কা আগেই পাট কাটছেন চাষিরা by স্বপন চৌধুরী,

রংপুর অঞ্চলে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এতে চাষিদের মধ্যে খুশির বদলে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। খাদ্যশস্যের মতো এই ফসলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তাই কেউ কেউ আমন ধান রোপণের জন্য পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেটে নিচ্ছেন পাট।


এ কারণে ভালো ফলন হলেও শতভাগ উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। এ অবস্থায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সোনালি আঁশ বলে খ্যাত এই ফসল উৎপাদন থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুর অঞ্চলের আট জেলায় ৯০ হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬৩৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে দেশি এবং ৮৮ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে তোষা জাতের পাট বোনা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৫ বেল পাট। জেলাভিত্তিক পাটের আবাদ হয়েছে রংপুরে ১৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে, গাইবান্ধায় ১৫ হাজার ২০৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ২১ হাজার ১১১ হেক্টর, লালমনিরহাটে পাঁচ হাজার ৪৭০ হেক্টর, নীলফামারীতে ১২ হাজার ১৮৫ হেক্টর, দিনাজপুরে ১০ হাজার ৪৬৭ হেক্টর, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ হাজার ৪০ হেক্টর এবং পঞ্চগড়ে ১০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাট কাটতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। পাট কাটছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ এলাকার চাষি নমির উদ্দিন। তিনি বলেন, 'ভূইয়োত (জমিতে) পাট থুইয়া আর লাভ কী? ফলন যা হওয়ার হইবে।' ওই জমিতে আগাম আমন লাগাবেন তিনি।
একই এলাকার আবদুল করিম, রহমত উল্লাহ জানান, আমনের চারা তৈরির জন্য ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও পাট কাটা শুরু হয়েছে। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকোরচালী এলাকার পাটচাষি আবুল হোসেন জানান, জমি তৈরি, বীজ, সার, নিড়ানি, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানো- সব মিলে এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ছয় থেকে সাত মণ।
মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট এলাকার পাটচাষি খলিল উদ্দিন জানান, গত বছর পাটের দাম প্রথমে কিছুটা পেলেও শেষে দাম পাননি চাষিরা। বর্তমানে পুরনো পাট এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন পাট বাজারে এলে এই দাম থাকবে না বলেও আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক এই কৃষক। তিনি বলেন, 'ধান ও গমে লোকসান হইছে, এবার পাটোত যে কী দশা হয় আল্লায় জানে।' চাষিরা জানান, পাট আবাদে উৎপাদন খরচ ওঠে না। শুধু পাট খড়ির চাহিদা থাকায় তাঁরা পাট চাষ করেন।

No comments

Powered by Blogger.