ফিরে এসো তারুণ্য by নাজমুজ্জামান নোমান
কয়েক বছর আগের কথা। আমরা বন্ধুরা মিলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশনে হাজির হলাম। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ট্রেনে উঠতে কিছু দেরি হলো। হঠাৎ চোখে পড়ল, কয়েক তরুণ রেললাইনের মাঝখানে একত্রে বসে মাদক সেবন করছে। বর্তমান সময়ে মাদকের ভয়াবহতা আরও তীব্র।
'নেশাগ্রস্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন', 'পুলিশের হাতে এক হাজার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার', 'দেশ ইয়াবায় সয়লাব'_ এসব এখন দৈনিক পত্রিকার নিত্যদিনের শিরোনাম।
ছোট-বড় মিলিয়ে বাংলাদেশে মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি, যার বৃহৎ একটা অংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। তারা আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। একদল বিষাক্ত রাজনীতির কালো ছোবলে থাকা মাদকসেবী, অন্যরা নিজেদের স্মার্টনেস ও সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশে মাদক বেছে নেয়; যাদের প্রায় ৭০ ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সিগারেটে হাত রাখেনি। এ ক্ষেত্রে সহপাঠী কিংবা কাছের বন্ধুরা মাদক সেবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান, মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী, যাদের ৪০ ভাগ কোনো না কোনো সামাজিক অপকর্মে সম্পৃক্ত। তারা মাদকাসক্ত হওয়ার আগে ধূমপান দিয়ে নেশার জগতে পা রাখে।
আমাদের দেশে এখন উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা মাদকের ছোবলে দিশেহারা। অথচ দুই দশক আগেও ইয়াবা, হেরোইনের নাম ছিল তাদের কাছে অজ্ঞাত। ফলে এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ নেশাগ্রস্তের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতি বছর মাদক ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অবাক করা বিষয় হলো, শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশে 'মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন' পাস করা হলেও আজ পর্যন্ত তা অকার্যকর হয়ে আছে। ওই আইনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রকাশ্যে ধূমপানে ৫০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা সিগারেট কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণীত। প্রতি বছরের বাজেটে আমরা দেখি, মাদকদ্রব্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে; যাতে মাদকদ্রব্যের দাম বাড়ে এবং মাদকের ব্যবহার হ্রাস পায়। কিন্তু এর ফলে নেশাগ্রস্তদের ক্রাইমের দিকেই একরকম উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়। অন্যদিকে মাদকবিরোধী সচেতনতার নামে মাদকের নামসহ প্রাপ্তিস্থান সহজে জেনে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। আমাদের দেশে মাদকবিরোধী কনসার্টগুলোতে শিল্পী ও দর্শকদের মধ্যে মাদকের ছড়াছড়ি দেখে বরাবরই হতবাক হতে হয়। মালয়েশিয়ার সফল ব্যক্তিত্ব মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলের মতো মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড না হোক, কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তরুণ প্রজন্মের মেধা ও মননের সুপ্ত বিকাশে মাদক যাতে বাধা হয়ে একটি পরিবারের জন্য দুঃসহ যন্ত্রণার কারণ না হয়_ সেটাই হোক বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা।
য় নাজমুজ্জামান নোমান
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
noman.ju2010@gmail.com
ছোট-বড় মিলিয়ে বাংলাদেশে মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি, যার বৃহৎ একটা অংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। তারা আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। একদল বিষাক্ত রাজনীতির কালো ছোবলে থাকা মাদকসেবী, অন্যরা নিজেদের স্মার্টনেস ও সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশে মাদক বেছে নেয়; যাদের প্রায় ৭০ ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সিগারেটে হাত রাখেনি। এ ক্ষেত্রে সহপাঠী কিংবা কাছের বন্ধুরা মাদক সেবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান, মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী, যাদের ৪০ ভাগ কোনো না কোনো সামাজিক অপকর্মে সম্পৃক্ত। তারা মাদকাসক্ত হওয়ার আগে ধূমপান দিয়ে নেশার জগতে পা রাখে।
আমাদের দেশে এখন উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা মাদকের ছোবলে দিশেহারা। অথচ দুই দশক আগেও ইয়াবা, হেরোইনের নাম ছিল তাদের কাছে অজ্ঞাত। ফলে এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ নেশাগ্রস্তের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতি বছর মাদক ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অবাক করা বিষয় হলো, শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশে 'মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন' পাস করা হলেও আজ পর্যন্ত তা অকার্যকর হয়ে আছে। ওই আইনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রকাশ্যে ধূমপানে ৫০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা সিগারেট কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণীত। প্রতি বছরের বাজেটে আমরা দেখি, মাদকদ্রব্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে; যাতে মাদকদ্রব্যের দাম বাড়ে এবং মাদকের ব্যবহার হ্রাস পায়। কিন্তু এর ফলে নেশাগ্রস্তদের ক্রাইমের দিকেই একরকম উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়। অন্যদিকে মাদকবিরোধী সচেতনতার নামে মাদকের নামসহ প্রাপ্তিস্থান সহজে জেনে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। আমাদের দেশে মাদকবিরোধী কনসার্টগুলোতে শিল্পী ও দর্শকদের মধ্যে মাদকের ছড়াছড়ি দেখে বরাবরই হতবাক হতে হয়। মালয়েশিয়ার সফল ব্যক্তিত্ব মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলের মতো মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড না হোক, কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তরুণ প্রজন্মের মেধা ও মননের সুপ্ত বিকাশে মাদক যাতে বাধা হয়ে একটি পরিবারের জন্য দুঃসহ যন্ত্রণার কারণ না হয়_ সেটাই হোক বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা।
য় নাজমুজ্জামান নোমান
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
noman.ju2010@gmail.com
No comments