সুরে-আনন্দে উচ্ছল দিন by এমিলিয়া খানম

তখন বেলা আড়াইটা। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং শব্দ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা যেন নড়েচড়ে উঠল। যাত্রা এবার মঞ্চ অভিমুখে। মেধাবী মুখগুলো দলে দলে জড়ো হতে থাকে মঞ্চের পাশে। যেন অপেক্ষায় ছিল এই আহ্বানের। মুহূর্তেই মঞ্চের আশপাশে ঠাসাঠাসি। সমস্বরে হর্ষধ্বনি, সুরে-আনন্দে মেতে ওঠা।


গত রোববার প্রথম আলো এসএসসি জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে ফয়’স লেক দাপিয়ে বেড়াল শিক্ষার্থীরা।
প্রথমেই ছিল বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। এরপর এলেন মাহমুদুজ্জামান বাবু; গেয়ে উঠলেন, ‘আমি বাংলার গান গাই’। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাল শিক্ষার্থীরা, যেন সমবেত সংগীত। মোট তিনটি গান গেয়ে বিদায় নেন বাবু। উপস্থাপক বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় সম্পাদক সাইদুজ্জামান রওশন জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগল। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া শিক্ষার্থীদের উত্তর: ‘খুব ভালো।’ উপস্থাপক আরও জানালেন, যাওয়ার সময় আইসক্রিম নিতে ভুলো না যেন। আইসক্রিমের কথা শুনে আরেক দফা আনন্দধ্বনি তোলে তারা।
এরপর মঞ্চে আসেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি বললেন, ‘আজ সকালেও বৃষ্টি ছিল, কিন্তু তোমরা এত ভালো আলো করা মুখ যে তোমাদের দেখে মেঘেরা পালিয়েছে। তোমরা দিনের প্রথম আলোর মতো সুন্দর।’ একটু পরই কনা মঞ্চে উঠে বললেন, অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছিলাম পেছন থেকে। আমার খুবই ভালো লাগছে। হয়তো পাঁচ-ছয় বছর পর আমি ডাক্তার দেখাতে গিয়েছি, তখন হয়তো বলতে শুনব, আপু আপনি আমাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গান করেছিলেন না! তারপর কনা শোনালেন প্রজাপতি সিনেমার গান ‘লাজুক পাতায়...’। এরপর চেষ্টা করলেন বৃষ্টি নামাতে। গেয়ে শোনান ‘ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি’ ও ‘ধিন তানা না’। মঞ্চে আবার উপস্থাপকের আগমন। তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শিল্পীর খোঁজ করেন। পাওয়াও গেল। বাওয়া স্কুলের ফাবিহা ইসলাম শোনায়, ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’। এবার জানতে চাইলেন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। সাদিয়া মান্নান নামের এক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে জানায়, সে রাজনীতিবিদ হবে এবং দেশকে অনেক উঁচু জায়গায় নিয়ে যাবে। উপস্থাপক বললেন, ‘আরেকটু কিছু বলো, রাজনীতিবিদেরা কি এত কম কথা বলে!’ তখন হাসির রোল পড়ে যায় চারদিকে।
কথা আর গান হলো। এবার জাদু। জাদুশিল্পী রাজীব বসাক কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য বাজারে ফুল কিনতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কী করবেন বাজারের সব ফুল তো শেষ। কী আর করা, শেষ পর্যন্ত জাদু দিয়েই ফুল আনতে হলো। তিনি এক গ্লাস পানি নিমেষেই বরফ করে ফেলাসহ বেশ কয়েকটি মজার মজার জাদু দেখালেন।
মাঝে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং কবির বকুল। ন্যান্সি এসে বলেন, ‘আমি সত্যিই এত তারার সামনে গান গাইতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তিনি শোনান ‘বাহির বলে...’, ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’। এরপর আসিফ শোনান প্রথম আলোর থিম সং ‘বদলে যাও বদলে দাও,’ ‘বেশ বেশ সাবাস বাংলাদেশ’। এরপর লালন ব্যান্ড মঞ্চে আসার আগে গল্প শোনাতে আসেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সংগীতে আছে ‘মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি’। আমরা এখন জলে ভাসছি আর আমাদের এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করবে তোমরা নতুন প্রজন্মরা। এরপর তিনি মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মার গল্পটি শোনান। সবশেষে মঞ্চে আসে ‘লালন’। তাঁরা শোনান ‘হিন্দু মুসলমান...’, ‘এক চোখে হাসন আমার আরেক চোখে লালন’সহ বেশ কয়েকটি গান। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় সারা দিনের অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.